কৈ মাছের তুলনা নেই! খেতে যেমন স্বাদ তেমনি দেখতেও, তার উপর আসল কথা ‘কৈ মাছের প্রান’। কৈ মাছের মাংশের ঘ্রান বেশ আলাদা, অবশ্য প্রতিটা মাছের মাংশের স্বাদই আলাদা আলাদা।
আমি কৈ মাছ খেতে ভালবাসলেও সাধারণত বাজার থেকে এই মাছ আমি কিনি না। কারন না বললে বুঝাতে পারব না! আমি তখন বেক্সিমকোতে কাজ করি। দুপুরে খাবারের জন্য আমাদের একটা মেস ছিল। কোম্পানি কিছু দিত এবং বাকী টাকা আমরা দিয়ে দুপুরে বেশ ভাল ভাল খাবার রান্না হত। এই মেসে খেতে গিয়েই আমি কৈ মাছের পেটের বাঁকা কাঁটা (কার্ভ) আমার গলায় বিঁধিয়ে ফেলি এবং এর পরে একটা ইতিহাস! আমি প্রায় পনর দিন গলায় কাঁটা নিয়ে এই ঢাকা শহরে এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত ঘুরেছি। কাউকে বিশ্বাস করাতেও আমার অনেক কষ্ট হয়েছিল। হোমিও, ঝাড়ফুক, কবিরাজি কত কি ঔষধ খেয়েছি তার ইয়োত্তা নেই। কাঁটা এমন বিধেছিল যে, কিছুতেই গলা থেকে নামছিল না।
আমি ধরে নিয়েছিলাম, মৃত্যু! অনেকটা সবার কাছ থেকে বিদায়ও নিয়ে নিয়েছিলাম। একটা নোট বানিয়ে আমার কোথায় কি আছে তা লিখে ফেলেছিলাম! এমতাবস্থায় আমি ভাবলাম, ফাইবারস্কোপ, অসিলোস্কোপ (আলো এবং লেন্সের ব্যবহারের মিনিটরে অদেখা কোন জায়গা দেখার যন্ত্র) জাতীয় কোন যন্ত্র থাকলে তা দিয়ে যদি আমার গলা দেখা যেত! খুজতে খুজতে অবশেষ এক বন্ধু জানালো, এমন গলা দেখার যন্ত্র এক মাত্র পিজি হাসপাতালেই আছে (এখন এই টাইপের যন্ত্র অনেক ডাক্তার এর চেম্বারেই আছে, নামটা মনে আসছে না, ডাক্তার সাহেবগন বলতে পারবেন)।
আমি পিজি হাসপাতালের ই এন টি বিভাগে গেলাম। এক ইন্টানি ডাক্তার আমার সমস্যা শুনে আমার গলা দেখলেন, এবং তিনি আমার কাঁটা দেখে ফেললেন! আমাকে হা করিয়ে চিমটা জাতীয় একটা সোন দিয়ে কাটাটা বের করে আমার চোখের সামনে ধরেন! আমি খুশিতে কেঁদে উক্ত ডাক্তার সাহেবকে জড়িয়ে ধরলাম। আসলে গলায় কাঁটা নিয়ে আমি যত বিশেষজ্ঞ বা যার কাছেই গিয়েছি তারা গলা না দেখেই ঔষধ দিয়েছিল। উক্ত ইন্টার্ন ডাক্তার আমাকে হা করিয়ে টস দিয়ে ভাল করে দেখতে গিয়ে কাঁটা দেখে ফেলেন। প্রায় ১০ বছর আগের কথা আমি এখনো সেই ডাক্তার সাহেবের নাম মনে রেখেছি, ডাঃ সেলিম। আমি তার জন্য দোয়া করি, নিশ্চয় তিনি এখন একজন বড় ডাক্তার/বিশেষজ্ঞ।
এবং সে দিন থেকে আমি আর কৈ কিনি না, তবে এই ১০ বছরে হাতে গনা কয়েকবার খেয়েছি, বেশ সাবধান হয়ে। গলায় কাঁটা বিধলে কেমন লাগে, কি কষ্ট তা আমি আপনাদের বলে বুঝাতে পারব না। উপরওয়ালা এই কষ্টকর অভিজ্ঞতা যেন কাউকে না দেন। মাছ ভাল তবে কাঁটাওয়ালা মাছ থেকে সাবধান, শিশুদের খেতে দিলে ভাল করে নিজ হাতেই কাঁটা বেঁছে দেয়া দরকার এবং আলোতে খেতে বসা ভাল।
গতকয়েক দিন আগে রাতে এমনি বাজারে গিয়ে মোটামুটি ভাল সাইজের কৈ কিনে ফেলি এবং বাসায় নিয়ে যথারীতি কৈ ভুনা। যারা আমার রেসিপি দেখেন তাদের জন্য আজ শুধু ছবি দিচ্ছে। আশা করি ছবি দেখেই অনেকে বুঝে যাবেন। কৈ মাছের স্বাদ ভুলে যাবার মত নয়, একবার খেলে বার বার খেতে চাইবে মন! চলুন দেখি। অন্য কোনদিন ছবির নিচের বর্ননা যোগ করে দিব।
প্রনালীঃ
ছবি ১
ছবি ২
ছবি ৩
ছবি ৪
ছবি ৫
ছবি ৬
ছবি ৭
ছবি ৮
ছবি ৯
ছবি ১০
ছবি ১১
ছবি ১২
কৃতজ্ঞতাঃ মানসুরা হোসেন
কৈ মাছ অত্যন্ত সুস্বাদু মাছ, এ ব্যাপারে আপনার সাথে পুরাই একমত। আমাদের বাসায় খুব শখ করে এটা রান্না করা হয়। আরেকটা জিনিস, আমার কাছে চাষের কৈ-ও খুব ভালো লেগেছে, যেখানে অন্যান্য অনেক মাছই বিলের/নদীরটা খেতে অনেক ভালো, চাষের থেকে।
আর মাছের কাঁটা গলায় লাগার কাহিনী শুনে খারাপ লাগলো। নিজের অনেক কিছু মনে পড়ে গেল–আমি ছোটোবেলায় নিয়মিত গলায় কাঁটা লাগাতাম, মাসে ২/১ বার নিয়ম করে গলায় কাঁটা লাগিয়ে পাশের খালার বাসায় যেতাম, কারণ ওনার কাছে বড় চিমটা ছিল। আমার ৯ বছর বয়েসের কাহিনী বলি, কাঁটা লাগিয়ে হাসপাতাল গেছি। ডাক্তার আমার মা কে জিজ্ঞাসা করলেন, কাঁটা কীভাবে লাগলো। মা বললেন, ইলিশ মাছের মাথা খেতে গিয়ে। ডাক্তার হা করে বললেন, এত ছোটো ছেলেকে ইলিশ মাছের মাথা খেতে দিলেন? আসলে মায়ের দোষ নেই, আমি ছোটোবেলা থেকেই খুবই মাছ-ভক্ত।
তবে গলায় কাঁটা লাগলে কিন্তু বেশীদিন থাকেনা, ৩/৪দিন পরেই গলে যায়, যদি না ইয়া বড় চিতল-পাঙ্গাসের কাঁটা হয়। তবে কাঁটা বেকায়দায় বিঁধলে যে সমস্যা হয়, তা হল,ঐ জায়গায় একটা ক্ষত তৈরী হয়, যেটা ব্যাথা দেয় অনেকদিন, কাঁটা গলে গেলেও। আমার ধারণা, আপনারও হয়ত তাই হয়েছিল।
অনেক বড় মন্তব্য করে ফেললাম, সরি 🙂
LikeLike
ওহ, আপনার লেখাটা পুরো খেয়াল করিনি দেখা যায়, ডাক্তার সাহেব তো আপনার কাঁটা পেয়েছিলেন ১৫ দিন পর। আপনার তো খুবই কষ্ট পাওয়ার কথা! ঐ সময়ের জন্য সমবেদনা রইল।
LikeLike
রনি ভাই, উক্ত কাঁটা এবং পিজি হাসপাতালের সেই রিসিট এখনো আমার কাছে আছে। আমার সার্টিফিকেটের সাথে রেখে দিয়েছি।
কৈ মাছের পেটের বাঁকা কাঁটা আমার গলার মাংশে বিধে গিয়েছিল।
LikeLike
ধন্যবাদ রনি ভাই, বড় মন্ত্যবের জন্য আরো বেশী ধন্যবাদ।
সাধারণত সবাই বলে কাঁটা নাকি গলে যায়, আমি বড় উদাহরণ যে কাঁটা গলে না! এদিকে আবার অনেক বড় বড় ডাক্তার বলেছিল যে, মাংশে কোন কিছু লাগলে তা মাংশের এন্টি বডি কয়েকদিনের মধ্যে বের করে দেয়, আমার ক্ষেত্রে তা হয় নাই। কাঁটার সরু মাথা ভাল করে বিধেছিল।
ঝাড় ফুতেও কাঁটা নেমে যায়, এমন আমি সচক্ষেও দেখেছিলাম। আমাদের বাড়ীর পাশে এক দাদী ছিলেন তিনি গ্রামে এমন পড়া পানি দিতেন এবং ঘর থেকে কি যেন পড়তেন। কাঁটা আটকানো লোক উঠানে সে পানি খেত এবং কিছু ক্ষনের মধ্যে কাঁটা নেমে যেত। দাদী অনেক আগে মারা গিয়েছেন, আর কেহ এই মন্ত্র শিখতে পারে নাই।
আমাকে বেশি কষ্ট দিয়েছিল এক হোমিও ডাক্তার। তখনি সে আমাকে ৮০০ টাকার ঔষধ দিয়েছিল কিন্তু কাজ হয় নাই। হোমিও ডাক্তার এর নাম শুনে থাকবেন, ডাঃ আলম, আলম এন্ড কোঃ এর মালিক, টিকাটুলিতে বিরাট ব্যবসা। তার সাথে পরে আমার অনেক ঝগড়া হয়। আমার কাছে এটা ছিল একটা প্রতারনা।
যাই হোক, কারো যেন গলায় আর কাঁটা না বিধে।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
স্বাদে ও গুণে অতুলনীয় হলেও কৈ মাছ খাওয়া দারুন রিস্কি! যে কোন মাছ খেতেই আমার সময় লাগে দ্বিগুণ! অতি সতর্কতার কারণ, আপনার মত তিক্ত অভিজ্ঞতা!
কাঁটা কাহিনী চমৎকার, কৈ মাছের মতই মজাদার!
LikeLike
হুদা ভাই, সেই কাটার কথা মনে হলে এখনো ভয় লাগে।
LikeLike
আপনার কাহিনী পড়ে সত্যিই বেশ খারাপ লাগলো সাহাদাত ভাই।
তাও ভাল যে অবশেষে আপনার কষ্ট লাঘব হয়েছিলো। মাছ আসলেই একটু সাবধানে খাওয়া উচিত, বাচ্চাদের তো কাঁটা বেঁছেই দেয়া উচিত। আপনার এই পোস্টটি পড়ে আশা করবো আমরা আরও একটু সাবধান হবো।
কৈ মাছ অনেক প্রিয় একটি মাছ।
এর ভুনা বা কি অন্য রান্না, সবই পছন্দের।
LikeLike
কৈ মাছ নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা শুনে খারাপ লাগছে। গলায় কাটা বিধলে যে কি কষ্ট হয় !!! ভাগ্যভাল দেশে ডাঃ সেলিমদের মতন মানুষ এখনো আছেন।
আপনার এই রেসিপিটা খুব ভাল লেগেছে। রান্নাটা নিশ্চয় খুব সুস্বাদু আর মজাদার হয়েছিল।
LikeLike
ধন্যবাদ বোন। আসলেই।
(আজ দুপুরে কৈ মাছ খেলাম। এখন খেতে খুবই সর্তক থাকি)
LikeLike
In the first picture all he fish look black. In the 2nd photo all the fish look white. Please clarify how did all the fish become white after cleaning?
LikeLike
ধন্যবাদ অজ্ঞাত ভাই।
আসলে মাছ গুলো কেটে পাটার উলটা পাশে ঘষে পরিস্কার করে নেয়া হয়েছিল। এই জন্যই বেশী পরিস্কার দেখাচ্ছে।
শুভেচ্ছা। দেরীতে উত্তর দেয়ার জন্য দুঃখিত, কমেন্ট আগে চোখে পড়ে নাই।
LikeLike
ভাইয়া, মশলার পরিমান টা শেয়ার করা যাবে কি? ভালো থাকবেন।
LikeLike
ধন্যবাদ বোন। এটাতো খুব সহজ। ছবিতেই পরিমান বুঝা যাচ্ছে বলে আমি মনে করেছিলাম। তার পরও আবারো মশলা পাতির পরিমান লিখে দিচ্ছি।
– মাছ, ৭ টা
– পেঁয়াজ কুঁচি, দেড় কাপ
– কাঁচা মরিচ, কয়েকটা
– আদা বাটা, এক চা চামচ
– জিরা বাটা, হাফ চা চামচ
– রসুন বাটা, দুই চা চামচ
– মরিচ গুড়া, ঝাল বুঝে
– হলুদ গুড়া, এক চা চামচ
– লবন
– পানি/তেল
– ধনিয়া পাতার কুঁচি
(মশলা ভাল করে ভেঁজে কষিয়ে তেল উঠিয়ে নেবেন)
শুভেচ্ছা।
LikeLike
Udraji bhai, amar golateo koi macher kata bidhechilo ratre bhat khete giye. tokhon ami class 8 e portam,1998 er ghotona.tarpordin sokale 7 tar somoy ek ENT specialist er basay giye bose chilam kata tolar jonno!uni torch diye dekhe ekta chimta diye kata ber kore diyechilen. oi doctorer naam er sathe apnar naamer mil ache ,unar naam Dr. Shahadaat.erpor amio onekdin bhaye koi mach khainai.
LikeLike
ধন্যবাদ বোন।
আপনার মাছের কাটা আটকানোর কথা শুনে আমার গলার কাঁটার কথা আবারো মনে হল। আমি অনেকদিন কৈ মাছের দিকে ফিরেও দেখি নাই। অবশ্য এখন আবার খাওয়া শুরু করছি। তবে দেখে শুনে বুঝে খাই। গলায় কাঁটা আটকানোর অভিজ্ঞতা যার নাই, সে আর কি মাছ খেল! হা হা হা…।
আমার নামের ডাক্তার! হা হা হা…। চরম কথা শুনালেন।
শুভেচ্ছা। আশা করছি, মাঝে মাঝেই এই রান্নার ডাক্তারকে দেখে যাবেন।
LikeLike
আনেক্কক্কক্কক্কক্কক্কক ধন্যাবাদ 😀
LikeLike
আপনাকেও শুভেচ্ছা।
LikeLike
by the way bhaiya, আমি রান্না করেসিলাম এটা, মশলা একটু বেশী হয়ে গেছিলো, আবার চেষ্টা করবো 🙂
LikeLike
ধন্যবাদ বোন।
রান্না আসলে অভিজ্ঞতার ব্যাপার। এক সময়ে হাতই বলে দেয় কি লাগবে আর কি লাগবে না।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
Lebu ba malta ek slice chuse khele kata sathe sathe neme jai.onekei eta jane na .It really works..100%!!
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ বোন।
আপনার টিপস আমাদের কাজে লাগবে।
আমরা যারা রান্না করি, আমাদের কত কি জানার আছে। মাঝে মাঝে আপনার অভিজ্ঞতা ও টিপস, টেকনিক বলে যাবেন, এতে আমরা উপকৃত হব।
শুভেচ্ছা।
LikeLike