হোটেল হীরাঝিলঃ সাহাদাত উদরাজী


হোটেল হীরাঝিলঃ সাহাদাত উদরাজী

আমরা দুইজন খাবারের টেবিলের দুই পাশে বসা,
তিনি সরু সাদা ভাত, মুরগী মাসাল্লাম আর কাঁচা মরিচ লেবু সালাদ
আমি ভেড়ার মাংশের খিছুড়ি ও লেবু শসা
দুই জনেরই আছে খাবারের পানির বোতল, একুয়া মিনি!
আমরা কেহ কাউকে চিনি না,
আমি বসার পরে তিনি এসে সামনে বসলেন
আমার ওয়ার্ডার আগে নিয়েও আমার খাবার সামান্য সময় পরে এল
অপেক্ষাকৃত কম সময়েই উনার খাবার আগে চলে এল।
এই হোটেলের সার্ভিসম্যানদের কাছে এ কোন ঘটনা নয়,
তাঁরা প্রতিদিন প্রতিটা চেয়ারে আলাদা আলাদা মানুষকে সার্ভ করে থাকে।
ওরা জানে এখানে মানুষের ভীড় বেশি,
ফলে সবার জন্য আলাদা টেবিল দেয়া সম্ভব নয়,
চারজনের টেবিলে আলাদা আলাদা চার জনেই খেয়ে চলে যায়, অনায়েশে!
এই বান্যিজের স্থান, মতিঝিলে!
আমার কিছু কিছু ফালতু খেয়াল হয়,
খিচুড়ি মুখে দিয়ে আমার বিপরীতে বসা লোকটার মুখের দিকে তাকালাম,
তার মুখমণ্ডলের রেখা গুলো ভাল করে পড়তে লাগলাম।
খুব একটা অপরিচিত মনে হচ্ছে না, আমার চেয়ে দুই তিন বছরের বড় হতে পারেন,
চুলের সত্তর ভাগ পাকা, আজ সকালে সেইভ করেন নি, কদম ফুলের উপরি, তবে গ্ল্যামার ভরা মুখ!
বেশ আয়েসে খাচ্ছেন,
সাদাভাতে প্রথম ঝোল মেখে হলদে করে তাতে মাংশ পুরে নলা তুলছেন,
এর পরেই সালাদ থেকে নেয়া কাঁচা মরিচ দাঁত দিয়ে কেটে চিবুচ্ছেন!
এমন খাবার খুব হোটেলে খাওয়া অভিজ্ঞতায় ভরপুর না হলে হয় না!
আমি উনাকে আরো খুটিয়ে দেখতে থাকি!
মাঝে মাঝে তিনিও দুই একবার আমার প্লেটের দিকে তাকাচ্ছেন,
হয়ত ভাবছেন, আজ খিচুড়ি খেলেই মন্দ হত না!
এদিকে আমারো কিছুটা আফসোস হচ্ছে, এই হোটেলের খিছুড়ি এতএত বার খেলাম
অথচ কখনো সাদাভাতের সাথে এমন মুরগী মাসাল্লাম খেলাম না!
উনার কপালে কিছু বলি রেখা পড়ছে, গায়ের রং এবং চামড়ার ভাষ্য বেশ,
গ্রাম থেকে উঠে আশা কোন তরুণ এই শহরে এই বয়সে যেমন দেখায় তিনি তেমনি!
শিক্ষায়, আর্থিক সাফল্যে তাকে উচুবিত্তের মধ্যবিত্ত মনে হল, পোষাকেও!
আবার খাবারের হাত মুখে তোলার ষ্টাইলে আমি কিছুটা কনফিউজ!
উচুমধ্যবিত্তের পুরুষ গুলো কিছুটা ম্যারা, তেমন রুক্ষ নয়,
কোথায় যেন হারিয়ে ফেলা মন নিয়ে চলা, তিনি তেমনি!
আমার খুব জানতে ইচ্ছা হয় যদি প্রশ্ন করতে পারতাম,
আপনি কেন হোটেলে খেতে এসেছেন!
আপনার কি ঘরে খাবার রান্না হয় না, অফিসে কেন খাবার নিয়ে আসেন না!
আজ সকালে কি নাস্তা খেয়ে বাসা থেকে বের হয়েছেন ইত্যাদি ইত্যাদি!
আবার চিন্তা করি, এই আমি যে কারনে হোটেলে খাচ্ছি, তিনিও হয়ত তাই!
ঘরে প্রিয়তমা স্ত্রী, আদরের পুত্র ও দরদের কন্যা থাকতেও হয়ত কেহ উঠে সকালের নাস্তা বানায় নি,
দুপুরের খাবারের কথা তো অনেক পরের জিজ্ঞাস্য!
আজকাল সংসারে যে ব্যাক্তি আর্থিক যোগান দেয়, সে তো সব সময়েই অবহেলিত এখন!
দুপুর থেকে বিকেল গড়িয়ে এই হোটেলে খেতে আশা প্রতিটা পুরুষের গল্প হয়ত একই!
দুপুরে হোটেলের খাবার শরীরের তাগিদে, মনের তাগিদে নয়!
আশা নিয়ে তবু এই পুরুষ গুলো বেঁচে বেঁচে রয়!

(নয়াপল্টন, ঢাকা, ৪ নম্ভেবর ২০২০, আরো স্থির চিন্তার দরকার ছিলো হয়ত)