সুলতানাঃ সাহাদাত উদরাজী


জানো সুলতানা,
আমি এখন আমার নিজের সব কাজ করতে পারি,
কাপড় চোপড় পরিষ্কার, হাড়িপাতিল ধোঁয়া,বিছানা চাদর, শোফা, মেজে,
রান্না তো তোমার কাছ থেকেই শেখা ছিলো!

জানো সুলতানা,
তোমার সেই তাছিল্য কথা গুলো এখনো আমার মনে পড়্,
তুমি কত তাচ্ছিল্যের সাথে বলতে, তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না!
জানে, সেই আমি এখন নিজের সব কাজ নিজেই করি!

জানো সুলতানা,
তোমার অতি আদরের পুত্র গত কয়েকদিন আগে,
বলে দিয়েছে, সে আর এই দেশে ফিরবে না,
এই দেশের নাকি সব কিছুই ভেজাল্‌, সুশাসনের বালাই নেই,
বেঁচে থাকার উপযুক্ত নয়!
তোমার মেধাবী মেয়েটাও আর তেমন খোঁজ নেয় না,
আমেরিকায় গবেষনার কাজে ওর হাতে সময় নেই,
আমি রাজী ছিলাম না, তবু তুমি তাকে পদার্থ বিজ্ঞানে পড়িয়েছিলে!
ছেলেমেয়েদের নিয়ে তোমার অনেক গর্ব ছিলো,
অথচ আমি বার বার বলতাম, ওদের মানুষ করো,
হ্যাঁ, ওরা অনেক বড় মানুষ হয়েছে দেশ ও দশের চোখে,
কিন্তু আমার কাছে ‘অমানুষ’ই!

জানো সুলতানা,
বয়েস ভেদে আমার আগে চলে যাবার কথা ছিলো,
কিন্তু বিধাতা তোমাকেই আগে দেখে নিল, যৌবনের সেই দিন গুলোতে,
মনে পড়ে আমাকে কত নাজেহাল করছিলে!

জানো সুলতানা,
তোমাকে কখনো বলা হয়নি, আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি,
তবে বার বার তোমার সেই রাগি চেহারা দেখে না বলেই ফিরে আসতাম,
অথচ আমরা একত্রিশ বছর একাত্রেই ছিলাম!

জানো সুলতানা,
গতকাল আকাশের চাঁদের রুপ ছিলো অসাধারন, বর্ননা ভাষাহীন,
তোমার কথা বার বার মনে পড়ছিলো, চাঁদের পাশে থাকা একটা তারা,
মিটিমিটি জ্বলছিলো!
এই পৃথিবীর রুপ রসে আমি এখনো তোমায় খুঁজি,
কর্কশ, বদরাগী, স্বার্থপরতার সব গুন গুলো তোমায় ফিট হলেও
কোথায় যেন একটা সুতোয় বাঁধা ছিলে আমাদের জীবন!

জানো সুলতানা,
আমি যেদিন জানতে পারলাম, তুমি ক্যান্সারে আক্রান্ত, শেষ পর্যায়ে।
আমার খুব খুশি লাগছিলো, তোমার মিষ্টি মধুর অত্যাচার গুলো মনে ভেসে উঠছিলো,
মনে হচ্ছিলো, তোমার মৃত্যুর পর আমি একা একা বেশ আনন্দেই থাকবো!
অথচ জানো, মাত্র কয়েক বছরেই আমি হাঁপিয়ে উঠেছি,
এই বৃদ্ধাশ্রম আর মোটেই ভাল লাগছে না!

সুলতানা, এই সুলতানা,
আমাকে নেবে, হাত দুটো ধরবে,
মুখের কাছে এসে বলবে,
তোমার যা ঢং!

(মালিবাগ বাগানবাড়ী, ২রা জুলাই ২০২০ইং)

2 responses to “সুলতানাঃ সাহাদাত উদরাজী

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]