গল্প ২২, আমার বন্ধু


গল্পঃ আমার বন্ধু

১।

আমার অনেক বন্ধু, আমি বন্ধুত্বে বিশ্বাসী, কখনো এই সম্পর্ক নষ্ট করি না। টাকা ধার দেয়া উচিত না, তবুও কেহ চাইলে পকেটে থাকলে না করি না, যদিও এখন আর সেই সময় নেই, ফুরিয়েছে। তেমনি আমার এক বন্ধুর কাছে বেশ কিছু টাকা পাই, ডেইটের পর ডেইট, তবুও হতাশ হই না, হাসি মুখে থাকি! কয়েকদিন আগে সে নিজেই জানালো, জুন পনর তারিখে কিছু টাকা পরিশোধ করবে, আমি মহা খুশি, সামনে কোরবানীর ইদ, কাজে লাগবে, আজকাল উপার্জন কমেছে। কয়েকদিন আগে তারিখ মনে করিয়ে দিতে ফোন দিলাম।

; হ্যালো, বন্ধু, কই!

– দোস্ত আমি কুমিল্লাতে আছি।

নানান কথা বলে ফোন রাখছি, গতকাল সন্ধ্যায় অফিস থেকে রাস্তায় নেমে ফোন দিলে সে আবারো জানালো কুমিল্লাতে, আমার সন্দেহ হল। তার এপার্ট্মেন্ট আমার অফিসের কাছে, আমি হাটতে থাকলাম, গলা চড়িয়ে মিথ্যা বললাম!

– হুর ব্যাটা, আমি তো তোদের এপার্ট্মেন্টের নিচে, তোদের দারোয়ান তো জানালো, তুই বাসায়, নাম নিচে, আমি আছি, অপেক্ষা করছি!

আমি এত দিনের চলাচলে বুঝতে পারছিলাম, সে কিছুতেই এতদিন কুমিল্লা বেড়াতে পারেই না, তার স্ত্রী তার গলা টিপেই মেরে ফেলবে! হা হা হা। আমি আরো ঝাড়ি দেয়াতে সে বলল।

; দোস্ত থাক, আমি নিচে নামছি!

আমি জলদি ওর এপার্ট্মেন্টের নিচে গেলাম। দেখি সে হাফ প্যান্ট পরে নেমেছে! আমাকে হাসি মুখে জানালো, তোর সাথে মজা করছি!

আমি ওর চেহারা দেখে ভাবছিলাম, আহ আমার বন্ধু!

২।

বহু বছর আগের কথা, হবে প্রায় ১৪/১৫ আগের। আমাদের বন্ধু সাথে আড্ডা দেয় আর বলে আমার জন্য একজন পাত্রী দেখ, বিয়ে করতে হবে, তখন আমরা বন্ধুদের মধ্যে প্রায় অনেকেই বিবাহিত, সন্তানের পিতাও। আমরা জনি সে এখনো বিয়ে করে নাই! ফলে আমাদের পাত্রী দেখানোর একটা টেনশন কাজ করে, আফটার অল আমাদের বন্ধুর বিয়ে হচ্ছে না! সেই সময়ে এভাবেই বিয়ে হত, আমিও আমার এক বন্ধুর মামাতো বোনকে এভাবে বিয়ে করেছি, সেই সল্পসল্প আরেক দিন লিখে আপনাদের জানাবো বটে।

একদিন বাসা থেকে একটু আর্লি আড্ডা দিতে বের হয়েছি, বেইলী রোডে এখন গেলে কাউকে পাব না, ফলে ভাবলাম, এই বন্ধুর বাসায় যাই, ওদের বাড়িটা বেশ সুন্দর (যা এখন ভেঙ্গে এপার্ট্মেন্ট করা হয়েছে), ওকে পাবই, ওর সাথে সময় কাটিয়ে বেইলী রোডে সন্ধ্যায় বৃহৎ আড্ডায় যাব। ওদের বাসাটা ৪ তলা, নিচে খোলামেলা জায়গা। নিজেই গেইট খুলে প্রবেশ করলাম, গেইটের পরেই দেখি একটা ছোট ছেলে, বয়স ৩/৪ হবে, শিশুদের সাইকেল চালাচ্ছে, পাহারায় আছে ওই বন্ধুর বাসার কাজের লোক, আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম।

– এই ছেলেটার কার রে?

; কেন আপনি জানেন না, এই ছেলে তো আপনাদের বন্ধুর!

আমার আকাশ ভেঙ্গে পড়ার অবস্থা, বলে কি! মানে আমাদের বন্ধু বিবাহিত এবং সে এই কথা আমাদের মধ্যে এত বছর গোপন করে বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজে আমাদের পেরেশানী করছে! সেখানে আর কথা না বাড়িয়ে ফিরে বেইলী রোডে এলাম। সন্ধ্যার আড্ডায় সবাইকে জানালাম!

সন্ধ্যায় মাঞ্জা মেরে সেই বন্ধু এলো, সবাই মিলে চেপে ধরলো, কি রে কবে বিয়ে করলি, আবার বাচ্চার আব্বাও হয়ে গেলি!

বন্ধুর ঠান্ডা মাথার উত্তর ছিলো, তোদের সাথে মজা করছিলাম!

৩।

উপরের দুই গল্পের নায়ক একজনই! এই হচ্ছে বন্ধু ভাগ্য, আমার বন্ধু!

(গল্প ও রান্না সাইটে অদ্য প্রকাশিত, ১৪ জুন ২০২৩ইং)

1 responses to “গল্প ২২, আমার বন্ধু

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]