গ্যালারি

রেসিপিঃ বেঙ্গল ফিস উইথ সাতকরা (ব্লগার বাপ্পী হাসান ভাইকে)


আমার জন্ম সিলেটে। তাই সিলেটের খাবার দাবারের প্রতি আমার ছোটবেলা থেকে প্রবল আগ্রহ, ছোটবেলায় সিলেটের খাবার খেয়েই যে বড় হয়েছি! আমি দেখেছি যে, সিলেটের লোকজন সাতকরা (সাতকড়া) এমন পছন্দ করেন, শুধু সাতকরা সব্জির মত রান্না করে দিলেও খেতে পারেন  অনেকেই। আমার ক্ষেত্রেও তাই, আমিও সাতকরা দিয়ে রান্না যে কোন কিছু খেতে পারি। আমার কোন সমস্যা হয় না। বরঞ্চ বেশ মজাই পাই। সাতকরার ঘ্রান আমাকে মোহিত করে তুলে।

আমার রান্নাতো বোন সুরঞ্জনা আপা (যার পরিচয় নিজেই, সারা বাংলা ব্লগিং দুনিয়ায় তাকে চিনেন না এমন কাউকে দেখি না, যিনি আবার সিলেট থেকেই ব্লগিং করেন এবং তিনি আমাকে বলেন রান্নাতো ভাই) সিলেট থেকে ইয়া বড় দুটো সাতকরা পাঠিয়েছেন আমার জন্য! এই খুশি আমি কোথায় রাখি। খুব যত্বের সাথে সাতকরা দুটো বাসায় নিয়ে যাই। পথে বাসে বসে কয়েক হাজার বার ঘ্রান নিয়েছি মাত্র!


কিন্তু ফিরতে দেরী হবার কারনে সেদিন রাতে আমরা আর রান্না করতে পারি নাই! কিন্তু গতকাল আর মিস করি নাই। রান্নাঘরে রান্না শেষ না হওয়া পর্যন্ত দাড়িয়েই ছিলাম। যাই হোক সাতকরা মাংশে দিলে বেশী জমে জেনেও আমি মাছেই ব্যবহার করেছি। অবশ্য এটা আমি আমার রান্নাতো বোনকে আগেই জানিয়েছিলাম। মোটামুটি রেসিপিটা আমার রান্নাতো বোনেরই বলা যায়। হয়ত অনেকে ভাবছেন কি মাছ দিয়ে রান্না? এই মাছ আমিও প্রথম খেলাম। আমার মত পাগলদের জন্য মনে হয় বাজারে নানান কিসিমের অদ্ভুত মাছ পাওয়া যায়! বেঙ্গল ফিস বলে দোকানী আমাকে বুঝিয়েছিল।


গত কয়েক সাপ্তাহ আগে ঢাকার প্রায় সব চেইন সপে এই মাছ দেখেছিলাম। আমি স্বপ্ন থেকে কিনেছিলাম। কেজির দাম এখন মনে পড়ছে না, তবে এই মাছটা সম্ভবত সাড়ে চারশত টাকা নিয়েছিল (দামটা এই জন্য বলে দিলাম, মাছের অভিজাত্য বুঝাতে!), তবে  আমার কাছে এই মাছের মাথাটা সাপের মাথাই মনে হয়েছে! হা হা হা।। সাপ খেয়েও দেখাতে পারব!

প্রয়োজনীয় উপকরনঃ
– বেঙ্গল ফিস ৫ পিছ
– পেঁয়াজ কুচি হাফ কাপ
– এক চামচ আদা বাটা
– পরিমান মত গুড়া মরিচ (ঝাল বেশি না হওয়া ভাল)
– পরিমান মত গুড়া হলুদ (হাফ চামচই এনাফ)
– দুই চামচ রসুন বাটা
– এক চিমটি জিরা গুড়া
– পরিমাণ মত লবণ
– হাফ কাপ তেল
– কয়েকটা কাঁচা মরিচ
– কয়েক টুকরা সাতকরা

প্রণালীঃ

বেঙ্গল ফিস গোল করে কেটে এক চিমটি হলুদ গুড়া ও সামান্য লবন মিশিয়ে গা গা তেলে এপিট ওপিট ভেজে নামিয়ে রাখতে হবে।


এর পর ঝোল রান্না। কড়াইতে তেল গরম করে সামান্য লবন যোগে হাফ কাপ পেঁয়াজ কুচি দিন। ভেজে হলুদ হয়ে গেলে তাতে এক কাপ পানি, এক চামচ রসুন, সামান্য হলুদ গুড়া ও মরিচ গুড়া, এক চিমটি জিরা গুড়া দিয়ে ভাল করে কষিয়ে কয়েকটা কাঁচা মরিচ দিন। লাগলে আরো  পানি দিয়ে নিন। ব্যস ঝোল হয়ে গেল। (এই ঝোল ভাল রান্না করতে পারলে সব রান্না আপনার হাতের মুঠায়!)


এবার ঝোলে বুক ফেলে দেয়া টুকরা সাতকরা দিতে হবে। সাতকরা নরম করতে যদি আরো পানির প্রযোজন হয় তবে তা দিতে হবে। সাতকরা নরম হয়ে গেলে হালকা ভাজি করা মাছ গুলো দিতে হবে।


এই ধরনের নরম মাছ কড়াইতে উলটা পালটা করতে খুব যত্বের সাথে করতে হয়। কারন সামান্য গুতা (!) খেলেই ভেঙ্গে যেতে পারে। সুতারাং দেখে শুনে!


সামান্য কষিয়ে আবারো এককাপ পানি দিতে হবে। সাবধানে মাছ উলটে দিন।


এবার হালকা আঁচে ঢাকনা দিয়ে মিনিট ১৫ রেখে দিতে হবে। কেমন ঝোল চান তা আপনি ভেবে নিন। আমি কম ঝোল চাই! এই ফাঁকে ফাইন্যাল লবন দেখে নিতে পারেন, লাগলে দিন, না লাগলে ওকে বলুন!


ব্যস পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত। মাছের সাথে সাতকরা। গরম ভাতে সাতকরা মেখে খেয়ে দেখুন।


আপনাকে বলতেই হবে ‘ওয়াও’!


ধন্যবাদ রান্নাতো বোন। এই রান্নার সময় বাসায় বিদ্যুত ছিল না। রান্নাঘরে (অন্য দুই রুমে জেনারেটর লাইন থাকলেও রান্নাঘরে ছিল না) কেমন সময় কাটিয়েছি তা আর বলে বুঝাতে চাই না। ক্যামেরা, মোবাইলের ফ্লাশে যতদুর ছবি তোলা গেছে! তবে কয়েকদিনের মধ্যে পুরা একটা সাতকরা দিয়ে আমি সব্জির মত করে রান্না করব এবং একাই খাব! শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ আপনাকে।

এই রেসিপিটা আমাদের প্রিয় বাপ্পী ভাইয়ের জন্য। কিন্তু তাকে নিয়ে আমার মনে অনেক কথা জমা হয়ে থাকলেও কোন জানি কিছুই লিখতে ইচ্ছা হচ্ছে না। বাপ্পী ভাই, আপনার জন্য দোয়া করি, আপনি সুস্থ্য হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসুন। আপনার শিশুতোষ অনুবাদ গুলো, কবিতা, ছড়া আমরা পড়তে চাই।

কৃতজ্ঞতাঃ মানসুরা হোসেন

23 responses to “রেসিপিঃ বেঙ্গল ফিস উইথ সাতকরা (ব্লগার বাপ্পী হাসান ভাইকে)

  1. আপনি তো দেখছি মহাখাদক। যা পাচ্ছেন। তা-ই খেয়ে যাচ্ছেন। আবার চাইছেন সবাই যেন আপনার মত খাদক হন! এমন বেশী বেশী খেতে থাকলে খাবারের অভাব যে আরো প্রকট হয়ে আসবে!
    অচেনা, অজানা কিছু খেতে আমার কেমন কেমন যেন লাগে!

    Like

    • হা হা হা…। হুদা ভাই, আমি কাউকে বেশী খেতে বলি নাই! আমি রান্না শিখতে আগ্রহী করে তুলছি মাত্র। এই সব রান্না দেখে যদি ছেলেরা রান্না শিখে ফেলে তবেই আমার প্রচেষ্টা সার্থক হবে বলে আমি মনে করি। আর সেজন্য জটিল, বেশী মশলাদার খাবার, দামী খাবার এড়িয়ে চলছি। একটু ভিন্ন মাছ, শাক সবজি নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চালিয়ে দেখাতে চাই যে, রান্না সহজ এবং সুন্দর ব্যাপার। একজন পাঠকের কমেন্ট দেখুন –

      মিলন October 10, 2012 at 3:05 am

      কয়েকদিন আগে আপনার একটা রেসিপি ছিলো, কোরাল মাছের উপরে। ২টা কোরাল কিনেছিলাম, বাসার সবার একবার একবার করে ট্রাই করলো, শেষবারে ট্রাই করলাম আমি, আপন্র রেসিপির উপর বেস করে।

      বস, কি আর বলবো, আপনি একটা কামের কাম করলেন? এরপর থেইকা বাসায় কোরাল মাছ আসলেই আর কেউ হাত দিবে না, আমি ছাড়া।

      আমারে পুরাই আটকাইয়া দিলেন।

      ধন্যবাদ দিয়ে আপনার এই অবদানকে ছোট করতে চাই না। ভালো থাকবেন, এই দোয়া করি।

      হুদা ভাই বলেন, এর পর কি আর বসে থাকা যায়!

      Like

  2. I didn’t know u r from sylhet!! satkora is most favourite fruit of sylhet. It goes well with meat, chicken, fish, lentils…a lot more.

    Like

  3. বাহ! রান্নাতো দারুন হয়েছে।আপনার লাক ভালো যে সাতকরা তিতা হয়নি। ডীপফ্রীজে ভরে রাখুন। ঈদের পরে নেহারীতে দিয়ে খেয়ে দেখবেন।

    আমার অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। জ্বর ১০০ এর নিচে যাচ্ছেইনা। সব চাইতে বড় কথা আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি। 😦 কাল রাতে মামা ডাক্তার দেখিয়ে নানান রকম টেষ্ট করিয়ে আনলেন। আমার সেবার জন্য কুম্ভকর্ণকে আবার আসতে হচ্ছে। দোয়া করবেন ভাই।

    Like

    • ধন্যবাদ আপা, আপনার পাঠানো দুটো সাতকরাই অসাধারন। আমি কাঁচাই চিবেয়ে এক পিস খেয়ে ফেলেছি। হা, সাধারন ফ্রীজের নীচে রেখে দিয়েছি। ঈদের পরে আমি নিজে এই সাতকরার চরম ব্যবহার করবো। কি বলে আপনাকে ধন্যবাদ দেই!

      আপনার শরীর এখন কেমন আছেন? দুলাভাই আসছেন? দোয়া থাকল।

      Like

  4. thax for recipe of SATKORA. I m also sylhety.

    Like

  5. বোনরা ভাইদের একটু বেশিই ভালবাসে, তারই প্রমাণ এতো দূর থেকেও আপনার জন্য সুরঞ্জনা আপার সাতকড়া নিয়ে আসা।

    ছবিগুলো চমৎকার হয়েছে আর রেসিপি তো অবশ্যই। কেমন আছেন সাহাদাত ভাই?

    Like

    • ধন্যবাদ দাইফ ভাই। হা, এটাই হচ্ছে ভাই বোনের সম্পর্ক। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমি এখনো আমার রান্নাতো বোন সুরঞ্জনা আপাকে সামনাসামনি দেখি নাই। তিনি সাতকরা এনে আমার অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

      এই আনন্দ আমি কোথায় রাখি।

      Like

  6. চট্টগ্রামে সাতকড়া পাওয়া যায় কিনা খুঁজে দেখতে হবে। তাছাড়া সাতকড়াকে চট্টগ্রামে কী বলে সেটাও জানা মুশকিল!

    Like

  7. বাসায় বড় মাছের মাথা ( রুই / বোয়াল ) এবং ছোট মাছ কিংবা মাছের মাথা ( টেংরা / পাবদা / ) দিয়ে সাতকরা রান্না করা হয় ।
    বেঙ্গল ফিস এটা প্রথম দেখলাম ।
    সাতকরা টক আর তিতা ২ ধরণের থাকে । তিতা টা খাওয়া যায় না ।
    আপনার ভাগ্য আসলেই ভালো মনে হচ্ছে টক সাতকরা পেয়েছেন ।

    Like

  8. পিংব্যাকঃ এক নজরে সব পোষ্ট (https://udrajirannaghor.wordpress.com) | BD GOOD FOOD

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]