ছোট বেলায় জানতাম বেগুন হচ্ছে শীতকালের সবজি। কিন্তু এখন দেখি সারা বছর ঢাকার বাজারে পাওয়া যায়। দেশে মানুষ বাড়ার কারনে খাদ্য প্রযুক্তি ও অনেক এগিয়েছে! উপায় নাই গোলাম হোসেন! এত লোকের মুখে খাবার যোগাতে যা খুশি তাই করা দরকার। যাই হউক বেগুন নামটা কে রেখেছে? তাকে যদি আমি পেতাম তবে ভাল করে জিজ্ঞেস করতাম, বে-গুন কেন তিনি রেখেছেন! কে বলে বেগুন গুনহীন! এত মজার তরকারী গুনহারা হয় কি করে?
আমি চিচিঙ্গা লাভার্স তো বটেই, পাশাপাশি বেগুন ভক্তও বটে। মাঝে মাঝেই আমি বাজার থেকে হাফ কেজি করে বেগুন কিনি! হাফ কেজি না, দেখে শুনে সাইজ মত দুইটা কিংবা তিনটে, যাতে করে আমাদের একবেলা হয়ে যায়!
বেগুন, আলু এবং শুঁটকী আমার ব্যাটারী সাহেবানের চরম প্রিয় খাদ্য। আমারো ভালবাসা! সপ্তাহে, ১৫ দিনে একবার বেগুন দিয়ে কিছু না কিছু রান্না হয়। এট লিষ্ট কিছু না হলে বেগুন ভর্তাতো হয়ই!
চলুন আজ বেগুন, আলু এবং ইলিশ মাছের কাঁটা কুটা দিয়ে একটা মিক্স রান্না দেখি। আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে, কারন আমি খেয়ে মজা পেয়েছি। এদিকে বলে রাখি, এমন তরকারী প্রায়ই আমাদের পরিবার গুলোতে রান্না হয় এবং আপনারা সবাই এমন তরকারী খেয়ে দেখেছেন। যারা বেগুনের নাম শুনলে খেতে বসতে চান না, তাদের বলি “ভাইসব/ বোনসব, এই বয়সে খাচ্ছেন না বটে কিন্তু এক বয়স আসবে তখন শুধু বেগুনই খুজবেন”!
প্রয়োজনীয় উপকরনঃ
– বেগুন হাফ কেজি
– আলু (কয়েকটা, বেশী ভাল লাগে না)
– ইলিশের কাঁটা কুটা (অন্য যে কোন মাছ দিলেও চলবে, শুঁটকী হলে আরো মজা)
– পেঁয়াজ কুচি হাফ কাপ
– এক চামচ আদা বাটা
– পরিমান মত গুড়া মরিচ (ঝাল বেশি না হওয়া ভাল)
– পরিমান মত গুড়া হলুদ (হাফ চামচই এনাফ)
– দুই চামচ রসুন বাটা
– এক চিমটি জিরা গুড়া
– পরিমাণ মত লবণ
– হাফ কাপ তেল
– কয়েকটা কাঁচা মরিচ
– ধনিয়া পাতা (দেশী বা বিলাতি)
প্রণালীঃ
ইস, বেগুন না আপেল!
সামান্য তেলে, সামান্য লবণ দিয়ে বেগুন হালকা ভেজে নিন।
আলুও ভেজে নিন। এই ভাজাটা বেশী নয়। শুধু যাতে আলু নরম হয়ে যায়।
এর পর ঝোল রান্না। কড়াইতে তেল গরম করে সামান্য লবন যোগে হাফ কাপ পেঁয়াজ কুচি দিন। ভেজে হলুদ হয়ে গেলে তাতে এক কাপ পানি, এক চামচ রসুন, সামান্য হলুদ গুড়া ও মরিচ গুড়া, এক চিমটি জিরা গুড়া দিয়ে ভাল করে কষিয়ে নিন। লাগলে আরো পানি দিয়ে নিন। ব্যস ঝোল হয়ে গেল। (এই ঝোল ভাল রান্না করতে পারলে সব রান্না আপনার হাতের মুঠায়!)
এবার ঝোলে মাছ দিন (বেশি মাছ দিতে পারি নাই, ইলিশ মাছের অনেক দাম!) এবং আবারো কষিয়ে নিন। প্রয়োজনে আরো এক কাপ পানি দিতে পারেন। কয়েকটা কাঁচা মরিচ দিতে পারেন।
ঝোলে তেল ভেসে উঠলে হালকা ভাজি করা আলু বেগুন দিয়ে দিন।
ভাল করে মিশিয়ে নিন। হাফ কাপ পানি দিন।
এবার ঢাকনা দিয়ে মিনিট ১৫ রাখুন। খেয়াল করে, এদিক ওদিক চলে গেলে ঝোল কমে পুড়েও যেতে পারে। সাবধান। ফাঁকে ফাইন্যাল লবন দেখে নিন।
আপনার মনের মত হলে কিছু ধনিয়া পাতা ছিটিয়ে দিন।
ব্যস পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত। গরম ভাত, রুটি যার সাথে ইচ্ছা, চালান।
সবাইকে শুভেচ্ছা।
কৃতজ্ঞতাঃ মানসুরা হোসেন
এই পোস্ট পড়ে স্মৃতিকাতর হলাম।
আমাদের গ্রামে তখন সপ্তাহে দু’দিন হাট বসতো। বিকেলে হাট থেকে নতুন শাক-সব্জি-তরকারি আসবে। আগের হাটে কেনা সব কিছু শেষ হবার পথে। এমন কোন হাটের দিনে মা একটা মজার তরকারী রান্না করতেন। মাটির চুলা, গনগনে আগুন। বেশ বড় আকারের একটা লোহার কড়াই চুলায় চাপিয়ে দিতেন। তেতে উঠলে দিতেন তেল। বসতেন বটি নিয়ে। তেল গরম হয়ে ধুয়া উঠলেই পিঁয়াজ কেটে তেলে ছেড়ে দিতেন। এর পর হলুদ মরিচ লবন ইত্যাদি। পানি দিয়ে দিতেন এগুলো একটু ভাজা ভাজা হতেই। এর পর টেনে নিতেন তরকারীর ঝুড়ি। ঝুড়িতে আগের হাট থেকে আনা যত সব্জী সব একে একে কেটে ফুটন্ত ঝোলে ছাড়তে থাকতেন। (কোনটাই আগে থেকে কেটে রাখা হতো না)। এর মধ্যে থাকতো বেগুন, মূলা, ফুলকপি, আলু, শিম, কখনো বা আরো কিছু। রান্নার শেষ পর্যায়ে এসে শিঁকে থেকে নামানো হতো জ্বাল দিয়ে রাখা মাছের হাড়ি। (তখন ফ্রিজ ছিলই না, মিটসেফে অত বড় হাড়ির জায়গা হতো না, তাই পাটের শিঁকেই ভরসা।) বেশি কিছু থাকতো না তাতে। জ্বাল দিয়ে রাখা মাছের কাটাকুটা, বিশেষ করে ইলিশ মাছের, হাড়ি থেকে সেই ফুটন্ত কড়াইতে দিয়ে একটু পরেই নামিয়ে রাখা হতো। কেমন হতো? এখন লিখতে যেয়ে আমার মুখে পানি চলে এসেছে।
LikeLike
আরে হুদা ভাই, আপনি এখানে! আমি আপনাকে শব্দনীড়ে খুঁজে বেড়াছিলাম।
আপনার মায়ের কথা জেনে ভাল লাগল। হা, ঠিক এভাবে এখনো গ্রামে রান্না হয় হয়ত। এই রান্নার মজা কেমন হত বা হবে তা ভাবতে আমারো মুখে পানি চলে আসছে।
আর ভাবতে চাইছি না…। মাঝে মাঝে আমারো মনে হয় খোলা জায়গায় রান্না করি। রান্না শিখে কেমন যেন সারাদিন খাই খাই ভাবে থাকি।
এখনো কি শশুরবাড়ী বেড়াচ্ছেন? কি কি খেলেন, একটা লিষ্ট চাই।
LikeLike
গতকাল সকালে শ্বশুর বাড়ি থেকে চলে এসেছি নিজের বাড়িতে-খুলনায়!
শ্বশুর নেই, শাশুড়ি নেই- খাওয়াবে কে? অন্যান্য আর দশটা দিনে যেমন খাই, তেমনই খেয়েছি। লিস্ট বানানোর মত কিছুই নেই। মুরগির ঝোল মাংস দিয়ে চিতই পিঠা ছাড়া আর উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই ছিল না (খেজুরের রস এখনও হয়ে পারেনি)।
LikeLike
হুদা ভাই, দুই দিনের দুনিয়া, কথাটা আপনার কমেন্ট পড়ে আবার বুঝতে পারলাম।
আমাদের সবাই কে একদিন এই মায়ার দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে।
আমি ঈদে শশুরবাড়ী যাচ্ছি। দোয়া করবেন।
LikeLike
ওয়াও … অনেক মজার ডিস !!
LikeLike
ধন্যবাদ বোন। হা, বেশ মজার হয়েছিল। বেগুন নিয়ে আর একটা রান্না আছে, শুধু বেগুন আর চিংড়ী মাছ। সেটাও বেশ মজার হয়েছিল।
LikeLike
আহা বেগুন! কত যে গুনের আধার, কিন্তু নাম তার বেগুন। যাক! নামে কিইবা আসে যায়। আলু, বেগুন দিয়ে ইলিশের কাটাকুটি দারুন লাগে। আমি আবার এর সাথে সিলেটি সিদল শুটকি দিয়ে দেই। আহ! কি দারুন যে লাগে।
এমনি করে আলু, মুলা, আলু, সিম দিয়েও মাছ, শুটকি দারুন লাগে।
LikeLike
আলু, মুলা, আলু, সিম দিয়েও মাছ, শুটকি দারুন লাগে। আসলে এই ধরনের রান্না এখন মুখে লাগে, চারটে ভাত বেশী খাওয়া যায়!
আমি প্রতি বেলাতেই এমন খাবার চাই।
LikeLike
বেগুন বা টমেটো দিয়ে যাই দেবেন তাই নিমেষে সাবাড় করবো!
তাহলে বুঝতেই পারছেন কত পছন্দের!!
বাসায় মাঝে মাঝে আপনার এই রান্নাটি তৈরি হয়ে থাকে।
LikeLike
হা হা হা… দাইফ ভাই, বেশি খাবেন না। এমনি অনেক মোটা হয়ে যাচ্ছেন!
LikeLike
হা হা হা।
চিন্তা কি, শসা গাজর আছে না!!!
LikeLike
হা হা হা…
LikeLike
“কিন্তু এক বয়স আসবে তখন শুধু বেগুনই খুজবেন!”
ভাই, এই কথার মাধ্যমে জাতিকে কী ভবিষ্যৎ বানী দিয়েছে তা জানতে মন চাইছে। কারণ আমিও বেগুন পছন্দ করিনা। 😐
LikeLike
হা হা হা।। রুমান ভাই, মানুষের জীবনে বয়স একটা বিশাল ফ্যাক্টর। বয়স বাড়তে থাকলে মন চাইলেও আর অনেক কিছুই খাওয়া যায় না। হাতের কাছে, মুখের কাছে অনেক মজার খাবার থাকলেও ডাক্তারের নিষেধ কিংবা অন্য শারীরিক কারনে খাওয়া যায় না। আমরা এখন যেটা বুঝি। বেগুন এমন একটাই ব্যাপার। বুড়াকালে বেগুন ভাল লাগে, এবং খেতেও মন চায়। শরীর মানিয়ে নেয়।
এটাই বুঝাতে চেয়েছি।
শুভেচ্ছা। আশা করি সব কিছু খাবেন, বাছাবাছি না করে!
LikeLike
হা হা হা। বুঝতে পেরেছি এবার।
LikeLike
যাক, এবার আমার ভাল লাগছে। ধন্যবাদ।
LikeLike
পিংব্যাকঃ এক নজরে সব পোষ্ট (https://udrajirannaghor.wordpress.com) | BD GOOD FOOD
আজ করেছি।দারুন হয়েছে… Thanks 🙂
LikeLiked by 1 person