গ্যালারি

রেসিপিঃ দুলাল মিয়ার ঝালমুড়ি!


পথের ধারের খাবার নিয়ে আমি আগেও লিখেছি এবং সুযোগ পেলে সামনেও লিখবো! সারা দুনিয়াতে ফুটপাতে যেখানে মজাদার খাবার বিক্রি হয় কমদামে সেখানে আমাদের দেশে এখনো সেই সুযোগই গড়ে উঠে নাই! সরকার থেকে শুরু করে কেহই এই সুযোগ তৈরিতে সামান্য চেষ্টা করেছেন বলে মনেও করতে পারি না! আমরা সব সময়েই নাক সিটকানো অবস্থায় থাকতে পছন্দ করি! অথচ এই জনবল তৈরী করতে পারলে কত মানুষের উপকার হত, কাজ পেত এবং কত মানুষ কম দামে খাবার খেতে পারত! নিদিষ্ট মানুষদের ট্রেনিং দিয়ে ও কিছু পুঁজি দিয়ে রাস্তার ধারে দাড়া করিয়ে দিলে সমাজেরো কত উপকার হত! মানুষের এই দেশ, অথচ আমরা কখনোই মানুষদের কাজে লাগাই নাই! দুনিয়ার কত দেশে এমনি রাস্তার ধারের খাবারের দোকান দেখেছি, কত মজাদার খাবার কত কম দামে বিক্রি করতে দেখেছি, সেই তুলনার আমাদের কিছুই নেই! যাই হোক এত কিছুর পরেও আমাদের দেশের কিছু মানুষ চেষ্টা করেই যাচ্ছেন, জীবিকার তাগিদে বিকেল থেকে রাত রাস্তার ধারেই খাবার বিক্রি করে যাচ্ছেন। গরীব মেহনতি মানুষ যদিও এই সকল খাবারের মুল ক্রেতা, তবুও এত কম টাকায় আর কি খাওয়া যায়! হ্যাঁ, আমি দেখেছি মাত্র ১০ টাকার ঝালমুড়ি বা চিতই পিঠা খেয়ে অনেকে বিকালের নাস্তা সারেন! মানুষের ইনকামের তুলনায় এই সকল খাবার হলে মন্দ কি!

গত কিছুদিন আগে আমি মালিবাগ মোড়ে দাঁড়িয়ে এমনি একজন দুলাল ভাইকে দেখেছি, যদিও আমাদের এই এলাকায় তিনি দুলাল ভাইয়ের ঝালমুড়ি বিক্রেতা হিসাবে পরিচিত। গত প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি এই এলাকায় বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত (যতক্ষন বিক্রি শেষ না হয়) এই ঝাল মুড়ি বিক্রি করে থাকেন। অনেক মজাদার, আমি নিজেও অনেকবার উনার কাছ থেকে এই ঝালমুড়ি খেয়েছি! অফিস ফিরতি পথে সন্ধ্যায় এই ঝালমুড়ি মন্দ লাগে না, একটু ঝাল বেশি দিয়েই এবং এর পর ঝাল মুখে দুধ চা! আহ, অসাধারন ফিলিংস! যাই হোক, আজ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখছিলাম এবং নিজেও ঝালমুড়ি খেয়ে কথা জমিয়ে তুলছিলাম! সেই সব কথা অন্য কোন পোষ্টে বলা যাবে, স্যামহোয়ার ব্লগে আমার ‘বিচিত্র পেশা’ নামে একটা সিরিজ আছে, সেখানে লিখা যাবে! আজ আসুন, দুলাল ভাইয়ের ঝাল মুড়ির রেসিপি দেখে আসি! হা হা হা, তবে এটা ঘরে বানাতে পারবেন বলে মনে হয় না! একটা বিশেষ মশলার রেসিপি সহজে পাওয়া যাবে না কিছুতেই! চলুন তবুও ছবি দেখি! মনে কিছুটা আনন্দ লাগবে!

উপকরন ও পরিমানঃ (ছবিতে দেখুন)
– মুড়ি, ১০ টাকার একটা নিদিষ্ট পরিমানের কাপ/মগ আছে
– সরিষার তেল
– শসা কুঁচি
– মরিচ কুঁচি
– বিট লবন
– তেঁতুলের টক
– বিশেষ মশলা মিক্স (এটার রেসিপি বা মশলার কথা তিনি গোপন রাখতে চান সব সময়ে)
– আলু রান্না (যারা পছন্দ করে, তাদের দেন অথবা কাষ্টমারের পছন্দে আলাদা বিক্রি করেন)
– ছোলা বুট রান্না (যারা পছন্দ করে, তাদের দেন অথবা কাষ্টমারের পছন্দে আলাদা বিক্রি করেন)

প্রনালীঃ

ছবি ১, মুড়ি পরিমাপের জন্য  মগ ব্যবহার হয়, মুড়ি জগে নেয়ার সময়েই খাঁটি সরিষার তেল দেয়া হয়!


ছবি ২, শসা কুঁচি।


ছবি ৩, কাঁচা মরিচ কুঁচি (যারা ঝাল বেশি চান তাদের এই মরিচ কুঁচি বেশি দেয়া হয়)।


ছবি ৪, বিট লবন।


ছবি ৫, তেঁতুল টক, ঝাল মুড়ি স্বাদ বাড়িয়ে দেয়।


ছবি ৬, এই সেই বিশেষ মশলা মিক্স! দুলাল ভাই জানালেন, এই মশলা রাতে তিনি নিজ হাতে রান্না করেন। খাঁটি সরিষার তেলে পেঁয়াজ কুঁচি ভেঁজে নানান পদের মশলা দিয়ে কষিয়ে এই মশলা তৈরী করা হয়! কি কি মশলা দেন তা জানতে চাইলে হেসে বলেন, কমের পক্ষে ১২ টি মশলা দিয়ে এটা রান্না করা হয়ে থাকে! ঝাল মুড়িতে এটা একটা বিশেষ উপকরণ, এর জন্যই ঝাল মুড়ির ঘ্রান ও স্বাদ বেড়ে যায়!


ছবি ৭, সাধারন ছোলা রান্না তবে মশলা একটু বেশি থাকে।


ছবি ৮, আলুর দম, প্রতি ১০ টাকার ঝাল মুড়িতে এক পিস আলুর দম স্বাদ বাড়িয়ে দেয়।


ছবি ৯, (এই হছেন আমাদের দুলাল ভাই, গ্রামের বাড়ি শরিয়তপুর জেলায়) এভাবে একে একে সব একটা জগে নিতে থাকেন, পরিমাণ এখন মুখস্থ! তবে কিছু কাষ্টমার আছে, যারা এটা বেশী, ওটা কম চান বলে মাঝে মাঝে তাদের কথাও শুনতে হয়!


ছবি ১০, তবে সাধারণত তিনি নিজের ইচ্ছায় যখন ঝাল মুড়ি বানিয়ে দেন তখন উপরে উল্লেখিত সব কিছুই নিয়ে নেন।


ছবি ১১, এর পরেই চামচ/কাঠি দিয়ে শুরু হয় নাড়ানো বা মিশ্রন!


ছবি ১২, ব্যস হয়ে গেল! কেহ কাগজের ঠোঙ্গায় বা কেহ প্লেটে এই ঝাল মুড়ি খেয়ে থাকেন।

শুধু ঝাল মুড়ির ছবি মিসিং! যাই হোক, আবার গেলে তুলে এনে যোগ করে দিব!

আমি এই বিচিত্র পেশা এবং খেটে খাওয়া মানুষদের পছন্দ করি, এই মানুষ গুলো আমাদের দেশের সম্পদ। পড়ালেখা শেখার ভাগ্য হয় নাই তাতে কি! লেখাপড়া শিখে বড় বড় চাকুরী, ব্যবসা বানিজ্য, ডাক্তার, উকিল, মোক্তার হয়ে যারা দেশমাতার সাথে অন্যায় করছে, ঘুষ, দূর্নীতি, কমিশন সহ জনগণের হক নষ্ট করছে তাদের তুলনায় এই মানুষ গুলোকে ফেরেস্থাই বলা চলে! আমি সব সময়ে এই মানুষ গুলোর দলেই আছি!

সবাইকে শুভেচ্ছা।

  • ছবি তোলা উনার অনুমতি নেয়া হয়েছে।

6 responses to “রেসিপিঃ দুলাল মিয়ার ঝালমুড়ি!

  1. ঝালমুড়িওয়ালাদের সেই “বিশেষ মশলা মিক্স” এর রেসিপি আমি জানি। ১২ পদের মশলা আসলে মনগড়া কথা,আপনাদের ইম্প্রেস করার জন্য এই কথা বলে, নরমাল কোনো মাংস রান্না করার সময় যেমন একটা মশলা কষিয়ে তেল উঠানো হয় গরম মশলা যোগ করে,এক্সাক্টলি সেইটাই সেই বিশেষ মশলা,কিন্তু আপনাদের মুখে অন্যরকম লাগে কারণ প্রচুর পরিমাণে টেস্টিং সল্ট যোগ করা হয়।

    শুভেচ্ছা

    Liked by 1 person

  2. How long have you suffered from explosive diarrhea after a handful of that? Lol..

    Liked by 1 person

  3. আমি জালমুড়ির ব্যবসা করতে চাই দোকানে পারবো কি

    Liked by 1 person

তারেকুর মিঠু এর জন্য একটি উত্তর রাখুন জবাব বাতিল