গ্যালারি

রেসিপিঃ বাইম মাছ ভুনা (হোটেল স্পেশাল)


ঢাকা শহরের মাঝারি মানের হোটেলে যারা দুপুরের খাবার খান তারা বাইম মাছের সাথে বেশী পরিচিত বলে আমি মনে করি, আমাদের দেশের মায়েদের/মেয়েদের এই অভিজ্ঞতা এখনো কম। এই মাঝারি মানের হোটেল গুলোতে দুপুরের খাবারে বাইম মাছের তরকারী থাকেই থাকে, ভুনা, ঝোল কম দিয়ে রান্না। আমি নানান হোটেলে খেয়ে এবং জিজ্ঞেস করে দেখেছি। কিন্তু কেন? গ্রীন রোড়ের এক হোটেল মালিককে আমি কেন রান্না করেন জিজ্ঞেস করতে তিনি জানিয়েছিলেন, অনেকে এই বাইম মাছ বেশ পছন্দ করেন। বিশেষ করে আমার মনে আছে তিনি জানিয়েছিলেন, বয়সী পুরুষরা বাইম মাছ থাকলে আর অন্য কোন মাছ খান না। বাইম মাছ খাওয়া সাহসের ব্যাপার, পুরুষরা সাহসী না হলে কে হবে? হা হা হা… ফালতু যুক্তি!

আমি নিজে বাইম মাছ পছন্দ করি। হোটেলে সামান্য দুই টুকরা (এক ইঞ্চি হতে পারে) একশত বিশ টাকা দিয়ে খাবার অভিজ্ঞতা আমার আছে! আমি নিজে প্রচুর বড় বাইম মাছ কিনেছি মাছ বাজার থেকে। আসলে ছোট বেলায় আমরা বাইম মাছ খেয়েছি বলেই ভয় লাগে না! বাইম মাছ খেতে বেশ আনন্দ পাই! আমার আম্মা নিজে কখনো বাইম মাছ খেতেন না কিন্তু আমাদের জন্য রান্না করতেন।


সে যাই হোক, এবারের বাইম মাছের চামড়া দেখতে একদম সাপের মত, কথাটা আমার ব্যাটারী আমাকে জানিয়েছিলেন। (মডেল বুলেট)

চলুন রান্না দেখে ফেলি। একদম সাধারন মাছ রান্না। বাড়তি কিছু নেই। একটু আগে আমি নিজে রান্না করে খেয়ে এসে পোষ্ট দিতে বসেছি।

উপকরণঃ (সাধারন রান্নাই বটে) 
– কয়েক টুকরা বাইম মাছ (আমি আর বুলেট খাব বলে কম রান্না হয়েছিল, ৮ পিস অনলি, এক বেলা)
– পেঁয়াজ কুঁচি (হাফ কাপের কম)
– হাফ চা চামচ হলুদ গুড়া
– হাফ চা চামচ মরিচ গুড়া (ঝাল বুঝে)
– হাফ চা চামচ জিরা গুড়া
– এক চা চামচ রসুন বাটা
– হাফ চা চামচ আদা বাটা
– কয়েকটা কাঁচা মরিচ
– কিছু ধনিয়া পাতা কুঁচি
– পরিমান মত লবন
– পরিমান মত পানি
– পরিমান মত তেল

প্রনালীঃ

বাইম মাছের চামড়া খাওয়া চলে না! তবে ছোট বাইম মাছের চলে। মাছের গা থেকে চামড়া তুলে বা ছিলে ফেলা কঠিন নয়। আমার ব্যাটারী কাজটা বেশ নিপুনভাবে করেছেন (তিনি বাইম খান তবে আজ খান নাই, সে কথা পরে জানাব)। এর পর বাকী কাজ আমি নিজেই করেছি। লবন পানিতে ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে।


কড়াইতে তেল গরম করে সামান্য লবন যোগে পেঁয়াজ কুঁচি ভেঁজে সামান্য পানি দিয়ে তাতে রসুন, আদা, জিরা, মরিচ, হলুদ একে একে দিয়ে  দিন। কয়েকটা কাঁচা মরিচ দিতে পারেন।


তেল উঠে এমন একটা ঝোল হয়ে যাবে।


এবার ঝোলে মাছ গুলো দিয়ে দিন। ভাল করে মিশিয়ে কিছুক্ষন কষিয়ে নিন।


এক কাপ পানি দিয়ে এবার ঢাকনা দিয়ে রাখুন মিনিট ১৫/২০ এর জন্য। আগুনের আঁচ খেয়াল রাখবেন। বেশি হলে পানি শুকিয়ে পুড়ে যেতে পারে তাই এই সময়ে রান্নাঘর ছেড়ে যাওয়া উচিত হবে না। মাঝে ঢাকনা উলটে দেখে নিন।


এমন একটা পর্যায় এসে গেলে কয়েকটা মরিচ এবং ধনিয়া পাতার কুঁচি দিয়ে দিন।


ফাইন্যাল লবন দেখুন। আশা করি হয়েছে, নতুবা লাগলে দিন। (সে কোন ভুনা টাইপ কিছু রান্না করতে গেলে প্রথমে সামান্য লবন দিয়ে রান্না শুরু করবেন, ঝোল না থাকার কারনে সামান্য লবনেই হয়ে যেতে পারে, আর লবন কম দিলে শেষে দেয়ার চান্স থাকে, কিন্তু বেশী হয়ে গেলে, খেলা শেষ হয়ে যাবে। সুতারাং মনে রেখে!)


পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত।


খাবার দাবার আসলে কোপালের লিখন। কোপালে থাকলে বাইম কেন, সাপও জুটে যেতে পারে!

সবাইকে শুভেচ্ছা। ভাল থাকুন এই সময়ে। নিজের পরিবারের প্রতি যত্ন নিন।

14 responses to “রেসিপিঃ বাইম মাছ ভুনা (হোটেল স্পেশাল)

  1. খাইনি কোন দিন। তবে খেয়ে দেকতে আপত্তি নেই। কিন্তু মাছ টা একটুও না ভাজলে আঁশটে গন্ধ ছাড়বে না ????

    Like

    • ধন্যবাদ বোন। হা এই ধরনের বাইম মাছ অনেকেই খেতে চান না বা সারা জীবনে একবারো খান না। এটা হতেই পারে।

      মাছ ভেঁজে রান্নার পক্ষে আমি নই (যদি মাছ তাজা হয়), আমি মনে করি এই ভাজাতে তাজা মাছের ঘ্রান এবং স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। আপনি কি মাছ খেলেন তার ঘ্রান যদি আপনার নাকে না লাগে তবে কি খেলেন, বুঝবেন কি করে? হা হা হা।। তবে আমি যতদুর জানি বাংলাদেশের কুমিল্লা অঞ্চল প্রায় সব মাছই ভেঁজে রান্না করা হয়। হা হা হা…।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  2. নমস্কার দাদা। আমি ঠিক আপনার মত করে রান্না করে দেখব। আমি কলকাতায় থাকি। আমরাও সব মাছ হাল্কা ভেজে রান্না করি। সুধু ইলিস মাছ ছাড়া। আপনার সজনে ডাঁটা হিয়া মুসুর ডাল আজ বাড়ি তে করে ছিলাম। খুব ভাল হয়েছে।
    ভাল থাকবেন।

    Like

    • ধন্যবাদ বোন। হা হা হা… কলিকাতায় কুমিল্লা। ইলিশ মাছের মত মজার মাছ এই দুনিয়াতে আর একটাও নেই। যেমন স্বাদ তেমন ঘ্রান। ইলিশ দিয়ে যে কোন রান্না বা শুধু ইলিশ ভাজা বা রান্না অসাধারন।

      কলকাতায় ইলিশের জনপ্রিয়তা দেখে বেশ মজা পাই।

      আপনি আমাদের রান্না দেখে রান্না করেন জেনে ভাল লাগল। আসলে এটা আমাদের একটা চেষ্টা। রান্নার বেসিক ব্যাপার গুলো দেখিয়ে রান্নায় সবাইকে সাহসী করে তোলা।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  3. এবারের বাইম মাছের চামড়া দেখতে একদম সাপের মত….thats why Vabi বাইম খান নাই….হা হা হা…..। …Radowan.

    Like

  4. ভাবি কেন খায় নাই এখন কি জানতে পারি ভাইয়া?

    Like

    • ধন্যবাদ বোন,
      আপনার ভাবী এই রান্নার বাইম মাছ খান নাই কারন তখন আমাদের ছোট ছেলে ‘ব্যালট’ উনার গর্ভে ছিল। তিনি কোথায় যেন শুনেছেন যে, গর্ভে থাকা অবস্থায় বাইম মাছ খেলে নাকি গর্বের সন্তান বেশি মোড়ামুড়ি করে। হা হা হা, তাই তিনি খান নাই। আমিও জোর দেই নাই।

      অনেকদিন পরে আপনি এটা জানতে চেয়ে আমাদের স্মৃতিতে নিয়ে গেলেন।
      (এই কমেন্ট আপনার ভাবীও দেখছেন এবং হাসছিলেন, তিনি আপনাকে সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়েছেন)

      শুভেচ্ছা।

      Like

  5. ভাবি কেও আমার সালাম এবং অনেক অনেক শুভেচ্ছা

    Like

  6. পিংব্যাকঃ এক নজরে সব পোষ্ট (https://udrajirannaghor.wordpress.com) | BD GOOD FOOD

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]