গ্যালারি

রেসিপিঃ মোরগের মাংস রান্না (আবালবৃদ্ধবনিতা)


আবালবৃদ্ধবনিতা বা সব বয়সি মানুষ খেতে পারে এমন একটা চিকেন রান্না করে আপনাদের দেখাবো ভাবছিলাম অনেকদিন আগে থেকে। সময় ও সুযোগ মিলছিলো না। এদিকে চিকেন রান্না অনেক হয়েছে ভেবে চিকেন রান্না আর দেখানো উচিত কিনা তাও ভাবছিলাম! সব কিছু মিলিয়ে একটা সুযোগ পেলাম। আমার আম্মা আমাদের বাসায় এলেন। আম্মা আবার অনেক কিছু বেছে চলেন, সেই ছোট বেলা থেকে আমরা দেখে আসছি! এই গল্প আমি এই রেসিপি ব্লগে আরো অনেকবার করেছি! হা হা হা… তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে তিনি না খেলেও আমাদের জন্য রান্না করতে কখনো পিছপা হতেন না। তিনি রান্না করে আমাদের জন্য রেখে দিতেন এবং আমাদের বেড়েও দিতেন।

আমার আম্মা কি কি খেতেন না তার একটা লিষ্ট আমি বানাতে পারবো। ‘ফার্মের মোরগ’ তার মধ্যে অন্যতম, আর মাছের মধ্য অনেক মাছ আছে তবে ‘পাঙ্গাস মাছ’ অন্যতম! হা হা হা, আমি আমার আম্মাকে কত কিছু খেতে দেখি নাই। তবে আমরা অনেকেই তা বুঝতে পারতাম না কারন তিনি তা আমাদের বুঝতে দিতেন না! আমরা কিছু জিজ্ঞেস করলে তিনি কিছুই বলতেন না। এদিকে দেশী মুরগী বা অন্যান্য মাছ খেতে দেখে আমরাও এই সব ব্যাপারে আর কিছু বলতাম না।

আমাদের আম্মা এখন আর রান্না ঘরে তেমন একটা প্রবেশ করেন না। বছরে কিছু দিন বাংলাদেশে, কিছু দিন ইতালীতে কাটিয়ে দেন। বাংলাদেশে থাকতে তিনি গ্রামের বাড়ীতেই বেশী সাছন্দ বোধ করেন। আমরা তার ইচ্ছার সন্মান করি। তিনি আরো বুড়ো হয়ে গেলে আমি আশা করি তিনি আমার সাথেই থাকবেন। তবে আমাদের ছোট ভাইয়ের সাথে তিনি থেকে একটা আলাদা মজা পান বলে আমার মনে হয়। দেখা যাক আল্লাহ কি করেন। তবে আমি আমার মায়ের বুড়োকালে সেবা করতে পারলে নিজকে ধন্য মনে করব। আমার এই রান্না করাটাও কাজে লাগবে! ছেলে রান্না করে তার মাকে খাওয়াচ্ছে এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য দুনিয়াতে আর কি হতে পারে!

সে যাই হোক, গতকাল আমাদের আম্মা আবার ইতালী চলে গেছেন। প্লেনে বসে শেষ সময়েও আমাকে ফোন করছিলেন। তিনি যখন আসছিলেন, শেষের দিন আমি ভাবছিলাম, বাজার থেকে একটা দেশী বড় রাতা (পুরুষ মোরগ) মোরগ কিনবো এবং আমি মজা করে রান্না করবো। ঝাল বা গুড়া মরিচ বাদ দিয়ে এমনভাবে রান্না করবো যে, খেয়ে বলতেই হবে ‘ওয়াও’! সেই ভাবা সেই কাজ।

আমি আমার এই রান্নাকে বলবো আবালবৃদ্ধবনিতার রান্না। কারনে ঘরে মায়ের পাশে আছে আমার ছোট ছেলে বুলেট! মানে ঘরে এখন প্রায় সব বয়সিদের আনাগোনা!

চলুন রান্নাটা দেখে ফেলি।
১
রাতা মোরগ বুঝাতে এই ছবিটা নেট থেকে নেয়া হয়েছে! হাসবেন না!

উপকরনঃ
– দেশী চিকেনঃ একটা বা ১ কেজির মত
– পেঁয়াজ কুঁচিঃ ১ কাপ
– হলুদ গুড়াঃ ১ চা চামচ
– আদা বাটাঃ ১ টেবিল চামচ
– রসুন বাটাঃ ১ টেবিল চামচ
– জিরা গুড়াঃ ১ চা চামচ
– এলাচিঃ ৪/৫ টি
– দারুচিনিঃ ১ ইঞ্চির ৩/৪ টুকরা
– কাঁচা মরিচঃ ৫/৬ টা (ঝাল বুঝে)
– লবনঃ পরিমান মত
– তেলঃ সয়াবিন তেল হাফ কাপের চেয়ে কম
– পানিঃ পরিমান মত

(লক্ষনীয় বিষয়ঃ মরিচে গুড়া বা বাটা নেই।)

প্রনালীঃ

কড়াইতে তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজ কুচি, দারচিনি, এলাচি, কয়েকটা কাঁচা মরিচ দিয়ে সামান্য লবন যোগে ভাঁজতে থাকুন।


পেঁয়াজ নরম হয়ে এলে তাতে আদা বাটা, রসুন বাটা, হলুদ গুড়া এবং জিরা গুড়া দিয়ে আরেক দফা ভেঁজে নিন। ভাঁজার শেষে হাফ কাপ পানি দিয়ে ঝোল বানিয়ে নিন।


ঠিক এমন ঝোলে এসে যাবেই।


এবার চিকেন দিয়ে দিন।  চিকেন কেমন কাটবেন তা আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে।


ভাল করে মাংস ঝোলে মিশিয়ে নিন।


হালকা আঁচে গরম করতে থাকুন। কষানো।


এবার ঢাকনা দিয়ে মিনিট বিশেকের জন্য মাধ্যম আঁচে রেখে দিন। মাংস থেকে পানি বের হয়ে নিজেই ভাল করে কষিয়ে নরম হয়ে যাবে। মাঝে মাঝে নাড়িয়ে দিতে ভুলবেন না।


যদি মাংস নরম না হয় তবে আরো পানি দিতে পারেন এবং আরো কিছুক্ষন কষিয়ে নিতে পারেন। এবার ফাইন্যাল লবন দেখুন, লাগলে দিন না লাগলে ওকে বলুন!


ব্যস পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত। এমন রান্না পেলে ছেলে মেয়ে, বুড়ো বুড়ি, যুবক যুবতী, নারী পুরুষ, আস্তিক নাস্তিক কে না খাবে? সেজন্যই বলছি আবালবৃদ্ধবনিতা!


বড় এবং ভাল টুকরা গুলো সব সময় ছোটদের এবং বুড়োদের দেয়ার চেষ্টা করবেন। কারন ছোট এবং বুড়োদের সব কিছুতেই অধিকার সবার আগে।

আমার আম্মা এই রান্না খেয়ে খুব খুশি হয়েছেন বলে আমি মনে করি। আমি জিজ্ঞেস করতেই, হেসে ফেলেছিলেন! হা হা হা… তার সব চেয়ে অলস ছেলে হয়ত এখন রান্না শিখে ফেলেছে দেখে আনন্দিত!

সবাইকে শুভেচ্ছা।

8 responses to “রেসিপিঃ মোরগের মাংস রান্না (আবালবৃদ্ধবনিতা)

  1. ভালো এবং বড় টুকরো সবাই এক একদিন একজনের পাতে দেবার চেষ্টা করবেন উদারজী ভাই। নাহলে ছেলেপুলেরা স্বার্থপর মানসিকতার হয়ে উঠে। তারা মনে করে এটা আমার ই প্রাপ্য। তাই আমি কোনদিন আমার একমাত্র সন্তানকেও সবসময় শ্রেষ্ঠ জিনিস টি দেই নি। অ শিখুক সবার সাথে শেয়ার করে খেতে হয়। আর কোন জিনিস ওর মুখে দেবার আগে আমি একটু ভেঙ্গে খেতাম। যার জন্য ও কোন সময় কিছু খেলে আমাদের দিতে চেষ্টা করে। আমি অনেক বাচ্চাদের ভেতর দেখেছি একা একা লুকিয়ে খাবার অভ্যাস।

    Like

    • ধন্যবাদ জুন আপা,
      হ্যাঁ, আপনি ভাল বলেছেন। আমি আসলে খুব সাধারনভাবে চিন্তা করছিলাম। আপনার কমেন্ট পড়ার পর বিষয়টা মাথায় ডুকলো। আশা করি আগামীতে এভাবে লিখবো এবং করবো। এটাই হচ্ছে অভিজ্ঞতা।

      শুভেচ্ছা নিন।

      Like

  2. ei dhoroner moroger mangso ektu shokto hoy

    kintu deshi murgi e ami khai.
    khub dorkar na hole farmer murgi khai na

    Like

  3. Rata morog chinbo na kano? Amar kache apnar ranna valo lage. Thanks for sharing.

    Like

  4. ছেলে রান্না করে তার মাকে খাওয়াচ্ছে এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য দুনিয়াতে আর কি হতে পারে!

    Like

  5. Kataler bichi dea ei murgi ranna kore dekhte paren…katal bichi r gorur mangsho o oshadaraon…

    Like

  6. পিংব্যাকঃ এক নজরে সব পোষ্ট (https://udrajirannaghor.wordpress.com) | BD GOOD FOOD

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]