গ্যালারি

রেসিপিঃ থাই ফুড সমটাম (অরিজিন্যাল ফ্রম থাইল্যান্ড)


নুতন নুতন খাবারের রেসিপি এখন আমার খুব দরকার। এযাবত প্রায় সাড়ে পাঁচশত রেসিপি লিখে এখন আরো আরো রেসিপি চাই। অবশ্য আমাদের দেশের নিত্য খাবারের বেশীর ভাগ খাবারের রেসিপি কভার করা গেলেও এখন বেশ কিছু রেসিপি বাকী আছে, আমার চেষ্টা থাকবে সে গুলো আগামীতে তুলে আনার। এদিকে যারা আমার রেসিপি গুলো পড়েন এবং যাদের আমাদের রেসিপি গুলো সাহায্য করে তাদের কথা আমি প্রায় চিন্তা করি। অনেকেই এখন প্রায় প্রতিদিন একটা করে রেসিপি চান, যা আমার চাকুরী করে এবং বাসায় আমাদের ছোট ছেলেকে রেখে অনেকটা কষ্টকর বা পারাই যাচ্ছে না। এদিকে বলা যায়, আমরা কোন মতেই চালিয়ে যাচ্ছি, যখন যা পাচ্ছি তাই খেয়ে যাচ্ছি। মানে পরিকল্পনা করে এখন আর আমরা কেহই রান্না করতে পারছি না। সময় একটা বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাই হোক যত বাঁধাই আসুক আমরা আমাদের কাজ করেই যাব।

ইতিমধ্যে আমাদের রেসিপি পাঠক/পাঠিকা ভাই বোন বন্ধুগন হয়ত জেনেছেন যে, আমি ছয়দিন ছয় রাত থাইল্যান্ডে বেড়িয়ে এসেছি। আমি নুতন কোথায়ও গেলে রেসিপি খুঁজেই বেড়াই, সেটা দেশ বা বিদেশ যেখানেই হউক না কেন! তবে এবারে তেমন একটা থাই ফুড খাওয়া হয় নাই, কারন হিসাবে বলা যায় পরিস্থিতি। বিদেশে বসেও অধিক দামে দেশী খাবার খাওয়াতেও একটা আলাদা আনন্দ আছে! হা হা হা। তা পরেও ফাঁক পেয়ে থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় খাবার সমটাম এর রেসিপি সংগ্রহ করতে পেরেছি এবং আরো কয়েকটা খাবারের রেসিপি পেয়েছি (আসছে)।

থাই ফুডের রেসিপি কালেক্ট করার পিছনে অবশ্য একটা বিরাট চাপ ছিল আমাদের একজন খাদ্যরসিক বন্ধু Trishonku Mallick ভাইয়ের। কাজে কাজে এই খাবারটা উনার জন্যই। তিনি ফেবুতে আমাকে বার বার হুমকি দিয়ে আসছিলেন! হা হা হা। এবার আরো সত্য কথা বলি, থাই অরিজিন্যাল ফুড গুলো (থাইল্যান্ডের সাধারন খাবার) আসলে রাস্তার ধারেই বিক্রি হয় আর বিদেশে গিয়েও কি রাস্তার ধারের খাবার খাব! হা হা হা। মুল উপকরণ পেঁপে দিয়ে এই খাবারের রেসিপিটা আমাকে সংগ্রহ করতে হয়েছিল, থাইল্যন্ডের এক রেল স্টেশনের ধার থেকে, যা অনেকটা আমাদের দেশের রেল পথের ধারের দোকানের মতই।

এই সাধারন হোটেলের কোন নাম নেই, ছিল না কোন জৌলুশ! তিন জেনারেশন মানে নানী, মা এবং নাতনী মিলেই এই সাধারন হোটেলটা চলছিলো। তবে প্রচুর বিক্রি হয়। উনারা কেহই ইংরেজী বলতে পারেন না, ভাগ্য ভাল হওয়াতে এক কাষ্টমার পেয়ে যাই এবং তিনি আমাকে সাহায্য করেছেন। পরিশেষে আমি এই খাবার খাই এবং রেসিপির জন্য ছবি গুলো তুলে আনি। উনারা ভিন্ন দেশী হিসাবে আমাকে অনেক খাতির যত্ন করেছেন, এটা আমার মনে থাকবে। একটা টুলে আমাকে বসে খেতে দিয়েছিলেন, যা দেখেছি কারো জন্যই নেই!

শুরুতেই বলে নেই, এই খাবারের স্বাদ আমি কখনো ভুলতে পারবো না, অসাধারণ। এর পর আমি থাইল্যান্ডে গেলে কাউকে না জানিয়ে আবারো উনাদের কাছে চলে যাব এবং এই খাবার খাব। এটা মুলত এক ধরনের সালাত, যা থাইদের নিজস্ব ডিস, সাথে অনেকে রাইস, চিকেন ফ্রাই বা মাছ ভাজা খেয়ে থাকেন। আমিও একটা চিকেন ফ্রাই খেয়েছিলাম। যাই হোক, আরো অনেক গল্প আছে, সেগুলো আগামীতে লিখে ফেলবো। চলুন রেসিপিটা দেখে ফেলি। এটা আমাদের দেশেও করা যেতে পারে, আমি ভেবে দেখেছি শুধু একটা উপকরণ ছাড়া বাকী সব উপকরণ আমাদের বাসায়ই আছে। আমি নিজেও একদিন রান্না/বানিয়ে ফেলবো এবং সেটার রেসিপিও আপনাদের দেখাবো। চলুন দেখে ফেলি।

উপকরণ ও পরিমানঃ (এক প্লেট বা একজনের জন্য)
– দুইকাপ কাঁচা পেঁপের কুচি
– দুই/তিন কোষ রসুন
– দুই/তিনটা লাল/সবুজ মরিচ (ঝাল বুঝে দিতে হবে)
– দুই টেবিল চামচ ভাজা বাদাম
– ছোট টমেটো কুচি দুইটা
– এক চিমটি লবন
– দেড় টেবিল চামচ ফিস সস
– তিন টেবিল চামচ শুকনা চিংড়ী (চিংড়ী শুকিয়ে তেলে ভেজে নিতে হয়)
– ১/২ চামচ প্লাম সুগার (এটা অনেকটা আমাদের তাল মিছরির মত)
– এক টেবিল চামচ লেবুর রস
– কয়েক পিস (এক/দেড় ইঞ্চি করে কাটা) বরবটি
– এক চা চামচ সরিষার তেল

– শুকনো কাঁকড়া (তেলে ভাজা, এটা অফশন্যাল, আপনি না খেলে না দিলেও চলে, আমি খেয়েছি, ভাল লেগেছে)

ভেজষের ছবিঃ (মুল উপকরনের কয়েকটা ছবি পেশ করা হল)

মরিচ ও রসুন দিয়ে শুরু করা হয়।


পেঁপে কুচি ও বরবটি।


থাই ফিসসস।


বাদাম, চিংড়ী ও প্লাম সুগার।


প্লাম সুগার। (এটা তাল গাছের রস থেকে তৌরী একটা সুগার, যা খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে দেয়, বিকল্প হিসাবে আমাদের তাল মিছরি ব্যবহার করা যেতে পারে)


কাঁকড়া ভাজা! এটা অফশন্যাল ব্যাপার, আপনি না খেতে চাইলে নাই তবে আমি খেয়েছি। মচমচে!

প্রস্তুত করন/ মিক্স করনঃ

এই রকম একটা লোহার হামান দিস্তা (দিস্তা কাঠের হয়ে থাকে) এই খাবার তৈরীতে লাগে।


প্রথমে রসুন, মরিচ, একচিমটি লবন ও এক মুট পেঁপে কুচি দিয়ে হামান দিস্তায় চেঁচা হয় এবং একে একে উপকরণ দেয়া হতে থাকে এবং চেঁচাও চলতে থেকে।


উলট পাল্ট করার জন্য একটা চামচ থাকে। দিস্তাটা কাঠের হয়।


সব কিছু দিয়ে তেল এবং প্লাম সুগার।


এবার চিংড়ী, কাঁকড়া সব।


লেবুর রস ভুলে গেলে চলবে না! এবার লেবুর রস দিয়েই বাকী পেঁপে কুচি এবং বরবটি দিয়ে ফাইন্যাল এক দফা চেঁচা দিতে হবে।


ব্যস হয়ে গেল সমটাম।


এবার প্লেটে তুলে পরিবেশনের পালা।


আহ, অপূর্ব।


দারুন স্বাদ।


আপনি চাইলে সমটামের সাথে ভাজা মাছ খেতে পারেন। থাইল্যান্ডে তেলেপিয়া, মাগুর ভাজা পথে পথেই পাওয়া যায়।


কিংবা চিকেন ফ্রাই।


আমার খাবারের মাঝামাঝি। আমি কাঁকড়া গুলোও চিবিয়ে খেয়েছিলাম।

অসাধারণ স্বাদ, বলে বুঝাতে পারবো না!

যাই হোক, আমি আশা করছি এই রেসিপি দেখে আমাদের Trishonku Mallick ভাই খুশি হবেন এবং একদিন বানিয়ে ফেবুতে ছবি পোষ্ট দিবেন। আমি হিসাব করে দেখেছি এটা বানানো উনার জন্য হাতের তুড়ির মতই ব্যাপার হবে। উপকরণ গুলোতো হাতের কাছেই।

রেসিপি প্রিয় ভাই বোনদের জন্য শুভেচ্ছা। এই রকম খাবার খেলে পেটে মেদ জম্বে কি করে? তাই তো থাইরা মেদহীন! হা হা হা।

16 responses to “রেসিপিঃ থাই ফুড সমটাম (অরিজিন্যাল ফ্রম থাইল্যান্ড)

  1. এরকম একটা রান্না মনে হয় ব্রিটিশ শেফ রিক স্টাইন তার থাইল্যান্ড সফরের একটা প্রোগ্রামে দেখিয়েছিলেন। তখনও দেখে অনেক ইয়াম্মি লাগছিলো আর এখনোও ইয়াম্মি লাগছে 🙂

    Like

    • ধন্যবাদ বোন।
      এটা আসলে থাইল্যান্ডের একটা বিশেষ খাবার রেসিপি সব জায়গাতেই একই রকম। পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই। তাই যেখানেই রান্না বা বানানো হউক, একই রকম লাগবে। তবে ভেজষ ও মশলার কম বেশী ব্যবহারে স্বাদে কিছু তারতম্য হতে পারে।

      কমেন্ট করার জন্য আবারো ধন্যবাদ।

      Liked by 1 person

  2. Ingrediance dekhai monay hocche shad hobe.

    Like

  3. দারুন লাগছে দেখতে!! আপনি যে সময় ফেসবুকে ছবি দিয়েছিলেন আমি মনে করেছিলাম হয়ত আম ভর্তা এর ছবি দিয়েছেন। পরে দেখলাম এটা একটা থাই সালাদ!!
    ঠিকই তো, যারা মেইন কোর্স সালাদ আর সাইড ডিশ অন্য কিছু খায় তাদের মেদ জমবে কিভাবে!! :p

    সব উপকরণ দেশে পাওয়া না গেলেও অনেক কিছু সাবস্টিটিউট করে নিজের মত কাস্টমাইজ করেই দারুণ এক সালাদ বানানো যায়!!

    আঙ্কেল,যে মাছ ভাজার ছবি দিলেন দেখে তো মনে হচ্ছে না এটা তেলাপিয়া মাছ। আমার মনে হচ্ছে আমাদের দেশে যেটাকে মেনি মাছ বলে অথবা নাইলোটিকা।

    শুভেচ্ছা ও ভালোলাগা

    Like

    • ধন্যবাদ ভাতিজা,
      এটা আসলে অদের একটা ট্রেডিশন্যাল খাবার। এই খাবার খায় নাই এমন থাই খুঁজে পাওয়া যাবে না এই দুনিয়াতে। আমি খেয়ে আমিও অভিভূত। দারুন।

      না, এখন এই রেসিপি সব কিছুই বাংলাদেশে পাওয়া যায়। ফিস সস, প্লাম সুগার এখন আগোরায় পাওয়া যায়। প্লাম সুগার হলদে চাক চাক আকারে প্যাকেটে আগোরায় পাওয়া যায়।

      অনেক পদের ভাজা মাছ ছিল। এটা আমার কাছে ছোট তেলাপিয়া মনে হয়েছিল, তবে নাইলোটিকা হতেই পারে। মাগুর ভাজাও ছিল তাদের দোকানে।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  4. অনেকটা সালাদের মত কিন্তু ফিস সস দেয়া হল, রান্না করা হল না, কাচা কাচা লাগে না? পেপেও তো কাচা… প্রণালী দেখে কেমন কেমন লাগছে ..

    Like

    • ধন্যবাদ বোন।
      এটা থাই একটা ট্রেডিশন্যাল খাবার। না রান্না করতে হয় না। ফিস সসে স্বাদ বেড়ে যায়, যদিও একটা ঘ্রান আছে। কাঁকড়া বা চিংড়ি আগেই প্রসেস করে রাখা হয়, সামান্য তেলে করকরে করে ভাজা হয়।

      খেতে চমতকার স্বাদ। আমি অভিভূত হয়েছি। ওরা এটার সাথে আরো অনেক কিছু খায় তবে যাদের কাছে বেশি টাকা থাকা না, ওরা এটা খেয়েই বেলা পার করে দেয়। দাম ২৫ বাথ। খুব সস্থাও একটা চিকেন ফ্রাই (লেগ পিস) মাত্র ১৫ বাথেই পাওয়া যায়, একটা মাছ ভাজা গড়ে ২০ বাথ।

      আমি প্রায় দেখেছি ওরা অনেক মিলে অনেক আইটেম কিনে একসাথে বসে ভাগাভাগি করে খায়। দেখতেও দারুন লাগে। আগামীতে গেলে আমি আরো রেসিপি কালেক্ট করবো।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  5. থাই খাবার মোটামুটি স্পাইসি হয়। আর এটা দেখে মনে হচ্ছে বেজায় স্পাইসি। অনেক ধন্যবাদ কষ্ট করে পোস্ট করার জন্য! 🙂

    Like

    • হা হা হা। শরীফ ভাই আপনি সত্য বলেছেন। ওরা ঝাল বেশি খায়। আমি আমার জন্য কম ঝাল তথা কাঁচা মরিচ দিতে মানা করেছি।

      সময় নিয়ে আসলে ওদের আরো কিছু রেসিপি যোগাড় করা উচিত ছিল।যাই হোক আগামীবার সেই চেষ্টা করবো।

      দলে থাকা লোকেরা যদি আলাদা হতে দিত তবেই এই সব খাবার আরো বেশি দেখা যেত।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  6. পিংব্যাকঃ থাইল্যান্ডঃ এক বিবাহ যোগ্য কন্যার নাম! | রান্নাঘর (গল্প ও রান্না)

  7. পিংব্যাকঃ থাইল্যান্ডঃ এক বিবাহ যোগ্য কন্যার নাম! | রান্নাঘর (গল্প ও রান্না) / Udraji's Kitchen (Story and Recipe)

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]