গ্যালারি

থাইল্যান্ডঃ এক বিবাহ যোগ্য কন্যার নাম!


আমি বেশ কয়েক বার থাইল্যান্ডে গিয়েছি। ১৯৯৬ সালে প্রথম যাই এবং টানা অনেক দিন থাকি। এই সময়ে থাইল্যান্ডের অনেক শহর এবং তাদের জীবন যাত্রা খুব কাছে থেকে দেখি। সময়টাতে আসলে থাইল্যান্ড মুলত গড়ে উঠছিল। চারিদিকে স্থাপনা এবং দেশের একটা অবকাঠামো হচ্ছিলো। বড় বড় ফ্লাইওভার, মেট্রো সহ অনেক রাস্তাঘাট তৈরী হতে দেখেছি তখন। থাই রাজা তখন বুকে ক্যামেরা নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন আর ছবি তুলতেন। শুনেছি তিনি ছবি তুলে কৃর্তপক্ষকে তার নির্দেশ দিতেন, তিনি কি চান সেটা তাদের বুঝিয়ে দিতেন এবং পরবর্তীতে তিনি সেটা বাস্তবায়ন করতে বলতেন এবং নিদিষ্ট সময় পর আবার এসে সেই স্থানের ছবি তুলতেন। বাস্তবায়ন না হলে তাদের ছবি দেখিয়েয়ে জিজ্ঞেস করতেন। এটা আমি জেনেছি সেই সময়ের তাদের পত্রিকা পড়েই। তখন প্রায় প্রতিদিন রাজার ছবি পত্রিকায় ছাপা হত, বুকে ক্যামেরা। যাই হোক, এর পর থেকে শুধু দেখেই আসছি! গত কিছুদিন আগে গিয়ে আমি সত্যিকার ভাবেই দেখেছি, আসলে থাইল্যান্ডের এখন আর অবকাঠামোর বিশেষ পরিবর্তন বা উন্নয়নের দরকার নেই। যা হবার হয়ে গেছে, এখন শুধু পরিচর্যাই।

রাজনৈতিক অনেক উত্থান পতনের পরেও আমি দেখেছি তাদের মৌলিক ব্যবস্থায় তেমন কোন বিপর্যয় হয় নাই। দিনের পর দিন ওরা শুধু এগিয়েছেই। যেখানে একটা বাতি জ্বলেই হয় সেখানে এখন কয়েকটা বাতি! যেখানে এক ফিট হলে চলে সেখানে এখন তিন ফিট। সারা দুনিয়ার মানুষকে তাদের দেশ দেখানোর জন্য যত কিছু নিয়ে বসা দরকার তাই করেছে ওরা। কমতি নেই! থাই যে শহরকে দেখেছি পানির সমতলে সেই শহর এখন পর্বতের উপরে!

যাই হোক থাইল্যান্ড এবং এই নিয়ে আমি অনেক কিছু লিখেছি। এই লিখার কারন হচ্ছে বর্তমান বিশ্বে যে তিনটে দেশ বাংলাদেশীদের খুব সহজে ভিসা বা যেতে দেয় তার মধ্য থাইল্যান্ড অন্যতম। বাংলাদেশের সামান্য ধনী ব্যক্তিরা থাইল্যান্ডে ভ্রমন করেন নাই তা হয় না! প্রায় সবাই গিয়েছেন এবং টাকা উড়িয়ে বা চিকিৎসা নিয়ে ফিরেও এসেছেন! অন্যদিকে বর্তমানে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশীরা অনেক ব্যবসা বানিজ্যেও নাম কামিয়েছেন। অনেক বড় ও ভাল ভাল ব্যবসা পাতি করছেন। মুলত এখনো আমাদের দেশ ছাড়ছেন অনেক ধনী ব্যক্তি, যারা নুতন করে সেখানে ইনভেষ্ট করছেন। সুষ্টু ব্যবস্থাপনা, বিচার, আনন্দপূর্ন জীবনের জন্য আমাদের দেশের অনেক মানুষই থাইমুখী! (তবে সব হচ্ছে গোপনে! আমাদের সরকার কিছুই জানে না!)

যাই হোক, এবারের ভ্রমনে থাই রুপ দেখে আমার মনে হয়েছে, এ যেন বিবাহ যোগ্য কন্যা, সারা শরীরে যৌবন! হা হা হা! দিনের পর দিন শুধু সৌন্দর্য্য ফুটেই উঠছে! চলুন কথা না বাড়িয়ে এই পর্বে কিছু ছবি দেখি, বিশেষ করে খাবার দাবারের তো বটেই! এ গুলো খুচরা খাবার, আগের পর্ব গুলোতে মুল খাবার দাবারের অনেক ছবি ও কথা হয়েছে।


থাইল্যান্ডের সর্বত্র নারিকেলের ডাবের পানি পাওয়া যায়। আমি প্রায় শহরেই দেখেছি কিন্তু আমি অবাক হয়ে লক্ষ করেছি সর্বত্রই একইভাবে ঠাণ্ডা পানিতে চুবিয়ে এই ডাব বিক্রি করা হয়। বিষয়টা ছোট বটে, তবে এই সামান্য ব্যাপার দিয়েই ওদের সাধারন মান (স্ট্যান্ডার্ড) বুঝা যায়। এই ডাবের পানি নিয়ে এবারের সামান্য অভিজ্ঞতার কথা বলি, পাতাইয়াতে ডাবের পানি পান করে বিক্রেতা মহিলাকে বললাম, ডাবটা কেটে দুইভাগ করে দিতে (এটা অবশ্য আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়েছিলাম) কারন আমি ডাব্র শাঁস (লেয়া) খেতে চেয়েছিলাম। বিক্রেতা মহিলা যা বলল তা শুনে আমি অবাক, সে জানাল, এটা করা যাবে না, সরকারের নিষেধ আছে কারন এটা করলে শহর ময়লা হয়! হা হা হা।


থাইল্যান্ডের সর্বত্র দুনিয়ার নানান ব্যান্ডের খাবার পাওয়া যায়। দাম ও মান অসাধারণ। (ছবিটা পাতাইয়া থেকে তোলা)


থাইল্যান্ডের পথের ধারের এই খাবার গুলো আপনি না খেতে পারলেও আপনাকে টানবে! নানা প্রকারের কীট, প্রানী যা আমরা খাবারের কথা চিন্তাও করতে পারি না!


থাইল্যান্ডের প্রায় সব হোটেলে সকালের নাস্তা ভাড়ার সাথে যোগ দেয়া থাকে। নিদিষ্ট সময়ে পেট পুরে খেয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন।


সমুদ্রের ধারে কাঁকড়া ভাঁজা! আমি থাইল্যান্ডে বেশ কয়েকবার কাঁকড়ার নানান তরকারি খেয়েছি, এবার সাগরের ধারের এই কাঁকড়া ভাঁজা খেয়ে দেখলাম। না, মন্দ নয়!


ফলফলাদিতে থাইল্যান্ডকে আমার দুনিয়া সেরা মনে হয়। পথে ঘাটে সে মান বজায় রেখে ফলফলাদি বিক্রি হয় তা মনে রাখার মত। আমাদের দেশের মত ফলফলাদিতে ভেজাল (এটা আমাদের জাতির জন্য চরম লজ্জার বিষয়) থাইল্যান্ডে চিন্তাও করা চলে না।


জামরুল, সাথে মরিচ লবন। সাগরের পাড়ে এই ফল খাবার অসাধারণ অনুভূতি নিয়ে আসে।


আপনি কি ফল খাবেন!


ফল বিক্রেতা এই থাই চাচীকে আমি একটা বাস স্টেশনে দোকানে দেখি, প্রথমে দূর থেকে তাকে অনেক রাগী মনে হলেও কাছে যেয়ে আমি অবাক। ছবি তুলতে অনুমতি চাইলে, এক গাল হেসে দিলেন, তার পর বললেন নো প্রবলেম। তবে এখন আফসোস হচ্ছে, উনার হাতের তৈরি এক গ্লাস জুস পান করি নাই বলে। হয়ত এক গ্লাস জুস পান করলে তিনি আরো খুশি হতেন। কাউকে খুশি করতে পারার মধ্যে আলাদা আনন্দ আছে।


চাচীর দোকানের ডাবের স্ট্যান্ডার্ড সেই ব্যাংকক এর মতই।


খাবার দাবারে থাইল্যান্ড আমাদের মতই, তবে সালাত বা কাঁচা খাবার ওদের প্রিয়।


একটা অরিজিন্যাল থাই ফুডের দোকান। খাবার গুলো আমাদের মতই নানান পদের মশলা দিয়ে রান্না হয়। তবে নানান পদের সস দিয়েই ওদের রান্না হয়ে থাকে। থাই রেললাইনের ধারের টং দোকান থেকে এবার একটা রেসিপি সংগ্রহ করেছি, দারুন। থাই ফুড টমসম! রেসিপিঃ থাই ফুড সমটাম (অরিজিন্যাল ফ্রম থাইল্যান্ড) দেখে আসতে পারেন।


প্রতিদিন সকালে নাস্তার সাথে ফলফলাদির সামান্য খেতে পারা আমরা প্রায় ভুলেই গেছি! অথচ সারা দুনিয়ার রেওয়াজ হচ্ছে এটাই।


ফুটপাতের খাবারের প্রতি আমার একটা আলাদা টান আছে। খুব নিবিড়ভাবে সেই দেশের সাধারন মানুষকে এই খাবারের মাধ্যমে জানা যায়।


এম!


আহ! স্তারবাক্স এর পেষ্ট্রি ও কফি!


মাঝ পথে আমাদের বিমানের খাবার যোগ দিয়ে দিলাম! আমাদের উন্নতির কোন চেষ্টাই কোথায়ও চোখেই পড়ে না! না মাটিতে, না আকাশে!


দেশে ফেরার সময় কয়েক পদের থাই ফল নিয়ে এসেছিলাম। সারা বিশ্ব কাঁপানো রাম্বুথাম, পানিতে না গাছে ধরে তা এখনো জানতে পারি নাই! হা হা হা।


ড্রাগন ফল।


ছোট আম!


ড্রাগন ফলের ভিতরটা এমনি, আমাদের দেশের অনেকেই এই ফল একবার খেলে হয়ত আর সারা জীবনে আবার খেতে চাইবেন না!


রাতের ব্যাংককের রাস্তায় একজন ফল বিক্রেতা।

থাইল্যান্ড নিয়ে আমার লেখা গুলো নিন্মের এই লিঙ্কে গিয়ে দেখার আমন্ত্রন জানিয়ে গেলাম! এখানে ক্লিক করুন! আর থাইল্যান্ডের বড় বড় বিল্ডিং এর ছবি দেখতে চাইলে গুগল মামা আছে না!


সার্ভিসের ক্ষেত্রে থাইল্যান্ড এমন একটা জায়গায় পৌছে গেছে যে, কোথায় গিয়ে আপনাকে চা পানি চাইতে হবে না, এটা আপনার অধিকারের মত হয়ে গেছে! ঠান্ডা পানি এবং কফি আপনার সামনে এসে যাবে অটোমেটিক। যেমন এক বোতল পানি কিনলে দোকানী আপনি না চাইলেও আপনাকে একটা স্ট্র দিয়ে দেবে। এটাই সাধারন শিক্ষা!

যাই হোক, এবার শেষ ব্যাখ্যায় আসি, কেন আমি থাইল্যান্ডকে বিবাহ যোগ্য কন্যার* সাথে তুলনা করছি! আসলে দিনের পর দিন থাইল্যান্ড এমন করে নিজকে সাজিয়ে তুলছে যে, তার রুপ দেখে অবাক হতেই হয়। বিবাহ যোগ্য কন্যা যেমন নিজকে ফুটিয়ে তোলে সব সময়! হা হা হা।

* মাইন্ড করার কিছু নাই! কবিতা লিখতে গেলে কত কি কিসের সাথে কাকে তুলনা করতে হয়!

সবাইকে শুভেচ্ছা। ভাল থাকুন।

4 responses to “থাইল্যান্ডঃ এক বিবাহ যোগ্য কন্যার নাম!

  1. আমাদের দেশের মত ফলফলাদিতে ভেজাল (এটা আমাদের জাতির জন্য চরম লজ্জার বিষয়) so so so sad -_-
    thank u bhaiya…

    Liked by 1 person

  2. Excellent writing. The comparison has been perfect as well.

    Liked by 1 person

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]