হাড়ি কাবাব, নাম শুনলেই খেতে ইচ্ছা হয়! এমনিতেই কাবাব জাতীয় আইটেমে আমাদের সবার আগ্রহ বেশ, আর হাড়ি কাবাবের তো জুড়ি নেই। আমি সাধারণত একটু কঠিন বা বেশি স্টেপস এর রান্না হলে তার রেসিপি থেকে দূরে থাকি! হা হা হা…। গত কিছু দিন আগে আমার ব্যাটারী জানালেন, তুমি শুধু সহজ রান্না গুলো দিয়ে যাচ্ছ, এতে তোমার রেসিপি পাঠক/পাঠিকা বন্ধুরা কি ভাবছে! তিনি আরো জানালেন, এতে নিঃসন্দেহে কিছু পাঠক/পাঠিকা ভাবতে পারেন, তুমি জটিল রান্না গুলো (মশ্লার ভিন্নতার) এড়িয়ে চলছো কিংবা জটিল রান্না গুলো খাচ্ছে না!
বিষয়টা নিয়ে আমিও ভাবছিলাম এবং বললাম, আমি সাধারণত বেসিক রান্না করি এবং সহজ রান্না গুলো তুলে দেই। আমি আমার রেসিপির টার্গেট গ্রুপকে চিনি এবং জানি। আমি চাই যারা নুতন রান্না করতে চান এবং জটিলতা এড়িয়ে আমাদের দেশি খাবার খেতে চান, আমি তাদের সাথেই আছি।
যাই হোক, হাড়ি কাবাব নিয়ে কথা হচ্ছিলো! এই হাড়ি কাবাব পুরাটাই রান্না করেছেন আমার ব্যাটারী মানসুরা হোসেন, আমি সাথে থেকে উনাকে এটা ওটা দিয়ে হেল্প করছিলাম এবং ছবি তুলেছিলাম। অত্যান্ত সুস্বাদু এই খাবার আপনিও চাইলে করতে পারেন, সামান্য ধৈর্য এবং সময় থাকলে আপনিও এই খাবার রান্না করতে পারেন। চলুন দেখে ফেলি।
এই রান্নায় তিনটে স্টেপ আছে –
১। গরুর গোসত স্লাইস করে কেটে নেয়া
২। বিশেষ মশলা মিক্স তৈরী ও পেঁয়াজের পেষ্ট তৈরী
৩। মুল রান্না
উপকরন ও পরিমানঃ
– গরুর গোসতঃ ৭৫০ গ্রাম, হাড্ডি ছাড়া
– সরিষার তেলঃ ৪/৫ টেবিল চামচ
– জিরাঃ এক চা চামচ
– লবঙ্গঃ ৫/৬ টা
– দারুচিনিঃ ৩/৪ টা (এক ইঞ্চি)
– জয়ত্রীঃ সামান্য
– জয়ফলঃ সামান্য
– পেঁয়াজ কুঁচিঃ হাফ কাপ
– রসুন বাটাঃ ২ টেবিল চামচ
– আদা বাটাঃ দেড় টেবিল চামচ
– সরিষা বাটাঃ ১ টেবিল চামচ
– বাদাম বাটাঃ ১ চা চামচ
– টক দইঃ ৪/৫ টেবিল চামচ
– হলুদ গুড়াঃ এক টেবিল চামচ
– মরিচ গুড়াঃ ১ টেবিল চামচের কম, ঝাল বুঝে
– সিরকাঃ ১ টেবিল চামচ
– লবনঃ পরিমান মত
– তেলঃ এক কাপের কম
– পানিঃ পরিমান মত
প্রনালীঃ
* গরুর গোসত স্লাইস করে কাটা
গরুর গোসতকে স্লাইস করে কেটে ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। স্লাইস গুলো পাতলা হওয়া দরকার।
* বিশেষ মশলা তৈরী
একটা ফ্রাই ফ্যানে সামান্য সরিষার তেলে জিরা, লবঙ্গ, দারুচিনি, এলাচি, জয়ত্রী ও জয়ফল ভেজে উঠিয়ে নিন।
একই ফ্রাই ফ্যানে পেঁয়াজ কুচিও ভেজে তুলে নিন।
তুলে নেয়ার পর এভাবে রাখুন।
এবার আলাদা করে মশলা বেটে পেষ্ট করে নিন। ব্যস হয়ে গেল মশলা মিক্স পেষ্ট এবং পেঁয়াজ পেষ্ট। তুলে রাখুন।
* মুল রান্না
এবার মুলরান্না। একটি পাত্রে হাফ কাপের সামান্য কম তেল নিয়ে ভাল করে গরম করে সামান্য লবন যোগে আদা বাটা, রসুন বাটা, সরিষা বাটা, বাদাম বাটা, টক দই, হলুদ গুড়া ও মরিচ গুড়া দিয়ে ভাজতে থাকুন।
ভাল করে ভেজে তেল উঠিয়ে নিন। সব মশলার ঘ্রান একটা আলাদা ঘ্রানে পরিনত হবে।
এবার স্লাইস করে কেটে ধুয়ে রাখা মাংস দিয়ে দিন।
ভাল করে নাড়িয়ে মিশিয়ে নিন। এক টেবিল চামচ সিরকা দিতে পারেন।
এবার ঢাকনা দিয়ে মিনিট ২০/২৫ রেখে দিন। মাঝে মাঝে নাড়িয়ে দিতে ভুলবেন না। আগুন থাকবে মাধ্যম আঁচে। গোসত থেকে পানি বের হবে, যদি সেই পানিতে গোসত নরম না হয়, তবে আলাদা করে আরো এক কাপ গরম পানি দিতে পারেন।
গোসত নরম হয়ে গেলে এবার বিশেষ মশলা মিক্স দিন এবং ভাল করে মিশিয়ে নিন।
ভাল করে মাধ্যম আঁচে আরো কিছুক্ষন রাখুন, ঝোল শুকিয়ে গা গা হতে দিন।
ঠিক এমন পর্যায়ে এসে যাবে।
এবার পেঁয়াজের বেটে রাখা পেষ্ট দিয়ে দিন এবং ভাল করে মিশিয়ে নিন। আরো মিনিট ১০ কম আঁচে জ্বাল দিন।
ফাইন্যাল লবন দেখুন, লাগলে দিন, না লাগলে ওকে বলুন! তবে যেহেতু কম লবন দিয়ে রান্না শুরু করা হয় এই পর্যায়ে সামান্য লবন লাগেই (আমি সব সময়ে তা করি)। মনে রাখা ভাল, লবন বেশি হয়ে গেলে যে কোন খাবারের স্বাদ শেষ হয়ে যায়! তাই লবন ব্যবহারে সব সময় সতর্ক থাকা উচিত।
বাটিতে তুলে নিন। পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত।
আহ, এমন খাবারের তুলনা হয় না! রুটি, পরোটা বা গরম ভাতের সাথে খেয়ে দেখুন! পোলাউ হলে তো কথাই নেই! পোলাউ/ভাতের সাথে কাবাব! হা হা হা…
আশা করি, আমার প্রিয় বন্ধুরা আপনারা এই হাড়ি কাবাব একবার রান্না করে দেখবেন। হাতের কাছে তো সব আছেই। শুধু সামান্য মশলার এদিক সেদিক ব্যবহার! আশা করছি সহজেই পারবেন।
সবাইকে শুভেচ্ছা।
কৃতজ্ঞতাঃ মানসুরা হোসেন
“Hari” kabab nam keno holo??
LikeLike
রেদোয়ান ভাই, এটা আমি বলতে পারবো না। দেখা যাক, আমাদের কোন পাঠক/পাঠিকা উত্তর দিতে পারেন কি না! (রাতে বাসায় ফিরে আমার গিন্নীকেও জিজ্ঞেস করবো, জানলে জানাবো।)
তবে রান্নার কৌশলের জন্য এই নাম হতে পারে বলে মনে হচ্ছে। (আমার অনুমান এটা)
শুভেচ্ছা নিন।
LikeLike
ফাইনাল জিনিসটা অসম্ভব সুন্দর হয়েছে, ভাবীকে শুভেচ্ছা। আমাদের বাসার সবার প্রিয় এটা, প্রত্যেক ঈদেই রান্না হয়। ছোট বাবুটা কেমন আছে?
LikeLiked by 1 person
আগে তো ননষ্টিক কড়াই ছিলোনা। এটা তামা, পিতলের ভারী হাড়িতেই অনেকক্ষন ধরে রান্না করতে হতো। আর এটা হাড়িতে রান্না করা হতো বিধায় এটাকে হাড়ি কাবাব বলা হতো। অন্য কাবাব তো এভাবে করা হয়না।
LikeLiked by 1 person
অনেক পছন্দের একটি খাবার। আমার মা রান্না করতেন আমার জন্য, পরোটা দিয়ে খেতে তো দারুন লাগেই আবার পোলাও দিয়ে চমৎকার লাগে। সুন্দর একটি রেসিপি। অনেকদিন পর এলাম ওয়ার্ডপ্রেসে। আবারও নিয়মিত হবো ভাবছি।
LikeLike
khaboooooooo 🙂
LikeLike
আমি রান্নায় একদম ই নতুন। মাংস কি করে স্লাইস করব বুঝতেছি না। বটি দিয়ে করা সম্ভব?
LikeLike
বটি দিয়ে মাংস পাতলা করে কেটে নিতে পারেন।
LikeLike
Amio kate chai.
LikeLike
osahdaron luk vi 🙂
LikeLike
রান্না করেছি। তারেক অনেক পছন্দ করেছে। ধন্যবাদ ভাইয়া।
LikeLike
ধন্যবাদ বোন।
আপনাদের ভালবাসায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আপনারা আমাদের রান্না পছন্দ করেন, আমরা কৃতজ্ঞ।
আশা করি, আরো আরো রান্না করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবেন।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
Onek age thekei apnar ranna o tar golpo pore ashci .kono purush manusher ghoroya rannar proti eto aagroho kono din dekhi nai . shudhu apnar karnei samu bloger shathe amar poricoy . onek dhonnobad aponake .
LikeLike
nice
LikeLiked by 1 person