গ্যালারি

রেসিপিঃ ইন্ডিয়ান মুশরী ডাল ভুনা (ঝটপট রান্না)


ডাল রান্না নিয়ে গত কয়েকদিনে বেশ কিছু এক্সপেরিমেন্ট বা পুরানো রান্না গুলো আবার ঝালাই করে নিলাম। মুগ এবং কলাই ডাল অনেক দিন পর রান্না করে খেলাম। বুটের ডাল সহ আরো কিছু ডাল কিনবো ভাবছি এবং এই সকল ডালের রান্না গুলো আবারো করে ফেলবো। গতকাল রাতে মুশরীর ডালের ভুনা করেছিলাম।

আজ দুপুরে পোলাউ এবং মুরগী রান্না হলেও গতরাতের ইন্ডিয়ান মুশরী ডালের ভুনার কথা ভুলতে পারছি না! ইন্ডিয়ান অনেক খাদ্য দ্রব্য আমাদের এখানে বেশ আরামসে পাওয়া যায়। রান্নার প্রায় মশলাই আমাদের ইন্ডিয়া থেকে এসে থাকে। তদুপরি ডালের বাজার ইন্ডিয়া প্রায় দখল করেই রেখেছে। দোকানী আমাকে চিনে এবং জানালো, প্রায় সব রকমের ডালই ইন্ডিয়া থেকে আসে এবং দামেও কিছুটা সস্তা। দেশী মুশরীর দাম কেজি ১২০ টাকা এখন আর ইন্ডিয়ার মুশরীর ডালের দাম কেজি ৮০ টাকা। দোকানী জানালেন ইন্ডিয়ার মুশরী ডালের দানা বড় হলেও সহজে গলে যায় এবং এখনো কোন কাষ্টমান কমপ্লেইন দেয় নাই। আমি আবার সস্তা পেলেই কিনি! হা হা হা…

চলুন খুব সহজ এই রান্নাটা দেখি, মুশরী ডাল ভুনা। আমার আম্মাকে এই রান্না করতে দেখতাম তখন অবশ্য আমাদের দেশে ইন্ডিয়ান জিনিষ পত্র তেমন পাওয়া যেত না! আমার স্ত্রী ব্যাটারীও এই রান্না করেন মাঝে মাঝে। গতকাল রাতে তিনি মুখে মুখে বলে দিলেন আর আমি রান্না করে ফেললাম। এটা এতই সহজ রান্না যে, যে কোন নূতন রান্নায় চেষ্টাকারীও করে ফেলতে পারবেন। স্বাদে অপূর্ব, চ্যালেঞ্জ লাগতে পারেন! আগেই বলে নিচ্ছি, এর চেয়ে সহজ রান্না আর কি হতে পারে।

উপকরন ও পরিমানঃ
– ২৫০ গ্রাম ইন্ডিয়ান মুশরী ডাল (দেশী হলেও চলবে, দেশী হলে সময় একটু বেশী লাগবে মাত্র, পানি একটু বেশি দিতে হবে।)
– দুইটা/তিনটে মাঝারি পেঁয়াজ কুঁচি
– কয়েকটা কাঁচা মরিচ
– রসুন বাটা, এক টেবিল চামচ (ইন্ডিয়ান রসুন হলে আর একটু বেশী লাগবে)
– হাফ চা চামচ হলুদ গুড়া
– হাফ চা চামচ বা তার কম লাল মরিচ গুড়া, ঝাল বুঝে
– লবন, পরিমান মত, শুরুতে কম দিয়েই রান্না শুরু করা উচিত, লাগলে পরে দিতে পারবেন
– পানি, পরিমান মত
– তেল, পরিমান মত (আমি কমেই রান্না করেছি)
– ধনিয়া পাতার কুঁচি

প্রনালীঃ 

মুশরী ডাল ভাল করে ধুয়ে কিছুক্ষন পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। আধ ঘন্টা হলে ভাল, সময় না থাকলে মিনিট দশ ভিজালেও চলবে।


হাড়িতে তেল গরম করে তাতে সামান্য লবন যোগে ভেঁজে নিয়ে দুই তিনটে কাঁচা মরি দিন এবং এর পর আদা ও রসুন দিয়ে ভাল করে ভেঁজে নিন।


এবার মুশরী ডাল পানি ঝরিয়ে নিন এবং মশলায় দিয়ে দিন।


মিনিট কয়েক ভেঁজে নিন।


এবার মরিচ গুড়া এবং হলুদ গুড়া দিন। (এই মরিচ হলুদ গুড়া আগেও দেয়া যেত)


ভাল করে মিশিয়ে নিন। আগুন মাঝারি আঁচে চলবে।


এবার প্রয়োজনীয় পানি দিন। দুই কাপ হলেই ভাল। যারা মাখা মাখা খেতে চাইবেন তারা পানি কম দেবেন আর যারা একটু ঝোল চাইবেন তারা পানি একটু বেশি দিতে পারেন।


এবার একটা ঢাকনা দিয়ে মাধ্যম আঁচে মিনিট পনর রাখুন। মাঝে দুইবার নাড়িয়ে দিতে পারেন।


ফাইন্যাল লবন দেখুন, লাগলে দিন। এবার কয়েকটা কাঁচা মরিচ চিঁরে দিতে পারেন এবং স্বাদ কয়েক হাজারগুন বাড়িয়ে দিতে ধনিয়া পাতার কুঁচি দিতে পারেন।


ব্যস পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত।


গরম ভাতের সাথে অসাধারণ লাগে।

আসলে এটা একটা ব্যাচেলর রেসিপি। যারা একা থাকেন এবং নিজে রান্না করে খেয়ে থাকেন তাদের জন্যই এটা একটা ভাল রান্না। সময় কমে, সাথে বেশ সুস্বাদু। তাড়া থাকলে শুধু ভাত, ডিম ভাজি এবং এমন একটা ডাল হলে আর কি চাই!

সবাইকে শুভেচ্ছা। ভাল থাকুন এবং আনন্দে থাকুন।

13 responses to “রেসিপিঃ ইন্ডিয়ান মুশরী ডাল ভুনা (ঝটপট রান্না)

  1. আমারও দারুণ পছন্দ এই ডাল ভুনা, আমার আম্মু দুইবার পেয়াজ ভেজে এই ডাল রান্না করেন। অসাধারণ হয় খেতে,
    দেখতে দারুণ লাগছে!!!!!!!

    ওহ!!!!!! ইন্ডিয়ান মুসুরি ডাল এর উপর আপনার কমপ্লেইন নেই জেনে অবাক হলাম!!!!!!!! সবাই ই তো এই ডাল এর উপর একটা কারনে বিরক্ত কারণ এই ডাল প্রায় ১ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখার পর অনেকক্ষন জ্বাল দিলেও গলেনা, আস্ত আস্ত থেকে যায়

    যাই হোক, ইন্ডিয়ান ডাল দিয়ে এই রান্না করার আইডিয়া টা ভাল ছিল 🙂

    শুভেচ্ছা ও ভালোলাগা 🙂

    Like

    • ধন্যবাদ আঙ্কেল।
      আসলে আমি ইন্ডিয়ান জিনিষ কিনতে অনেক সময় ভেবে দেখি। পার কেজিতে ৪০ টাকার ফের। এটা অনেক টাকা!

      দোকানী আমাকে চিনে বলে সত্য বলেছে। তার আগের কাষ্টমার রা হয়ত তাকে ভাল বলেছিল। মুশরী ডাল গুলো একটু বড় সাইজের ছিল।

      আসলেই খেতে অসাধারণ। এত সহজে এত ভাল রান্না আর কি হতে পারে।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  2. আমি যখন হলে ছিলাম তখন প্রতি সপ্তাহে অন্তত তিনদিন সকালে এই ডাল ভুনা খেতে হত,তখন একদম বিচ্ছিরি লাগতো। আর এখন বাসায় আয়োজন করে রান্না করি!!!! আসলেই সুস্বাদু!

    Like

  3. Vai…apnar ballot er ki khobor? Apnar ei blog ta amar onek priyo….shomoy shujog hole chaler gurir rutir recipe ta ektu diyen….

    Like

  4. আমি এই ডালই ব্যাবহার করি। কারন খুব সহজে গলে যায়। আমিও এভাবে ডাল ভুনা করি। আমার আম্মার মতও করি। আম্মা ডাল ধুয়ে সব মসলা, তেল,পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, লবন দিয়ে হাতে মাখিয়ে আন্দাজ মত পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিতেন। নামানোর সময় ধনেপাতা বা ভাজা জিরার গুড়ো ছিটিয়ে নামিয়ে নিতেন। ওটাকে বলতেন ডাল চচ্চড়ি। এই ডাল রুটি, পরোটা দিয়ে খেতেও খুব ভালো লাগে।

    Liked by 1 person

  5. Sahaj Holeo Khete Bhalo Lage, Kono Apokar hoi na. Ami peter roge bhugi tai halka ranna bhalo lage. Thank you

    Liked by 1 person

  6. রান্না করেছি 😀

    Like

  7. আজকে রাতের বেলা আমি খাইনা এইরকম তরকারি রান্না করছে বলে আপনার এই রেসিপি টা ট্রাই করলাম, (আম্মু বাসায় ছিল না, তাই আম্মুকে জিজ্ঞেস করি নাই)
    একটা কথাই বলব, থ্যাংক ইউ আঙ্কেল। অনেকদিন পর এমন তৃপ্তি নিয়ে রাতে ভাত খেলাম। 😀

    শুভেচ্ছা!!!!

    Liked by 1 person

    • ধন্যবাদ আংকেল। আমাদের দেশের এমন ছোট ছোট মজাদার রান্না আছে, যা আসলেই অসাধারন। শুধু এমন একটা তরকারী দিয়েই এক বেলা পার করে দেয়া যায়। তোমাকে শুভেচ্ছা জানাই। রান্না গুলো খুঁজে ট্রাই করে দেখে খুশি হই। সবাই শুধু পোলাউ কোরমা খুঁজে (আমি এটা দেখতে পাই) যেখানে সেখানে এমন রান্না গুলোর গুরুত্ব কম নয়। ভাল থেকো।

      Like

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]