গ্যালারি

রেসিপিঃ সিজলিং বিফ (এক মন্তব্যেই বাজিমাত! সুবর্ন)


শুক্রবারের অফ ডে কাটিয়ে আজ সকালে কম্পিউটার খুলে নেট চেক করতেই একটি কমেন্ট (মেইল হিসাবে প্রথম দেখেছি) আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। কমেন্টটা করেছেন সুবর্ন (ভাই না বোন, কমেন্ট ও নাম দেখে বুঝতে পারছি না! সরি)। তিনি রেসিপিঃ সাধারন পোলাউ রান্না তে এই কমেন্ট করেছেন। কিন্তু কথা হচ্ছে এই কমেন্ট দেখার পর আমি যদি তাকে মনে করে একটা রেসিপি না দেই তবে তা হবে যাবে আমার ভুল! হা হা হা… এমন সুন্দর কমেন্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ সুবর্ন ভায়া। আপনার কমেন্টে আমি আবার আমাকে খুঁজে পেয়েছি। হা, আমি যে উদ্দেশ্যে রেসিপি লিখি আপনার কমেন্ট পড়ে মনে হচ্ছে আমি আমার জায়গায় ঠিক আছি। শুভেচ্ছা আপনাকে, আশা করি আমাদের রেসিপি প্রিয় বন্ধুদের সাথেই থাকবেন। সুবর্ন ভায়া লিখেছেন –

ভাই বিদেশে পড়াশুনা করতে এসে, খুব বিপদে পড়ে গেছিলাম। সারাজীবন, বাসায় আম্মুর হাতের রান্না খেয়েছি, বড় হয়ে হলে থেকে পড়ালেখা করেছি। কখনো রান্না বান্নার ঝামেলায় যেতে হয়নি। এখানে আসার সময় সাথে করে একটা সিদ্দিকা কবিরের বইও নিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু সেইগুলা অনেক এডভান্সড লেভেলের রান্নাবান্না বলে মনে হয়েছে, আমি রান্নার ব্যাপারে ব-কলম, আমার দরকার ছিল, কিছু বেসিক জিনিস শেখার। মাঝে মাঝে আম্মুকে ফোন করে কিভাবে রান্না করব জানতে চাইতাম, কিন্তু সেভাবেও আর কতদিন রান্না করা যায় ? এইদিকে আসে পাশের রেস্টুরেন্ট গুলাতে খাওয়া যায়, কিন্তু সেখানেও বাঙ্গালী পোলাও মাংস, পাতলা ডাল, মাছের চচ্চরি, এই সব যে পাওয়া যায় না, তা বলাই বাহুল্য। যাই হোক, এইরকম বাজে সিচুয়েসনে, আপনার ওয়েবসাইটটা চোখে পড়ল। সাহস করে রান্না শেখা শুরু করলাম, প্রথম প্রথম ভাল হত না। কিন্তু এদানিং চট করে বেশ ভাল রান্না করা শিখে গেছি। আর সময় পেলেই পছন্দ মত রেসিপি বের করে নিয়ে রান্না করতে শুরু করে দেই। ইদানিং রান্নাবান্না টাকেও আর ঝামেলা মনে হয় না। আর এইসব কিছুই পসিবল হয়েছে আপনার এই সাইট টার জন্য। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনি নিজেও জানেন না আপনার জন্য আমার মত কতজনের রাতের খাবার টা শুধু চিপস, আর সিরিয়ালের মাঝে লিমিটেড হয়ে যাচ্ছে না!

হা, সুবর্ন ভায়া। আপনি আমার মনের কথাই বলেছেন। আমি যা চাই, তা হচ্ছে যেনে আমি খুশি। রান্না যে একটা ভাল ব্যাপার (এটা আমাদের সমাজে অন্য আরো অনেক ব্যাপারের মত বুঝতে চায় না, বিশেষ করে অনেক পুরুষ এখনো মনে করেন এটা শুধু মেয়েদের কাজ!) এবং এটা ছেলেরাও যে করবে বা শিখবে এটাই আমার উদ্দেশ্য। বিশেষ করে প্রবাসে থাকার অভিজ্ঞতার কারনে আমি দেখেছি, রান্না না জানার জন্য কত কষ্টে জীবন যায়। কত বাজে খাবার খেয়ে দিন পার করতে হয়। আমি নিজেও রান্না না জানার কারনে প্রচুর আজে বাজে খেয়েছি বা অনেক টাকা নষ্ট করেছি। যদি আমিও প্রবাসের সময় রান্না জানতাম নিশ্চয় আরো অনেক ভাল করতাম। হা হা হা… যাই হোক, ধন্যবাদ আপনাকে। প্রথম কমেন্টেই আপনি জয়ী হয়েছেন এবং তাই আজকের এই রেসিপি আপনার জন্যই। আশা করি এই রেসিপির সবই আপনার হাতের কাছে এবং আপনি তা রান্না করে খাবেন। শুভেচ্ছা ও ভালবাসা থাকল। চলুন আর দেরী কি, দেখে ফেলি – সিজলিং বিফ নাকি বিফ সিজলিং!

উপকরনঃ
– হাফ কেজি গরুর গোসত (হাড় ছাড়া, জুলিয়ান কাট, পাতলা)
– সবজি (একটা ক্যাপসিকাম, কয়েকটা পেঁয়াজ, কয়েকটা মরিচ বিচি ছাড়া ঝাল বুঝে)
– এক চামচ সয়া সস
– রেড সস (হাফ চামচ)
– হাফ কাপ টমেটো সস
– হাফ চামচ ভিনেগার
– দুটো রসুন কুঁচি
– সামান্য আদা কুঁচি
– এক চামচ কর্ন ফ্লাওয়ার (যদি না থাকে নাই, এটা শুধু ঝোল গাঢ করবে)
– এক চিমটি মরিচ গুড়া
– পরিমান মত তেল
– পরিমান মত লবন/ পানি

প্রনালীঃ

সবজি কেটে পানি ঝরিয়ে রাখুন।


গোসত (চর্বি না নেয়াই ভাল) ধুয়ে সামান্য লবন (সসে লবন থাকে বলে পরিমান কম দিতে হবে), এক চামচ সয়া সস, রেড সস (হাফ চামচ), হাফ চামচ ভিনেগার দিয়ে  ভাল করে মেখে কিছু ক্ষনের জন্য রেখে দিন।


কড়াইতে তেল গরম করে কয়েকটা রসুন কুঁচি ও সামান্য আদা কুঁচি ভাজুন।


এর পর গোশত দিয়ে আরো ভাজুন।


গোশত থেকে পানি ছাড়বে এবং সেই পানিতে গোসত সিদ্ব হবে কিংবা সিদ্ব না হলে আবারো পানি দিতে পারেন। হাফ চামচ মরিচ গুড়া দিন (ঝাল বুঝে), কিছুক্ষন পর টমেটো সস দিন।


জ্বালে অনেকটা এমন ঝোল সহ গোসত দাঁড়িয়ে যাবে। হালকা ঝোল রাখা ভাল হবে। গোসত মজে নরম হল কি না দেখে নিন।


এবার সবজি দিয়ে দিন।


অনেকটা এমন দাঁড়িয়ে যাবে। সবজি আপনি কতটুকু কচকচে রাখবেন তা আপনি নির্ধারন করবেন। ঝোল গাঢ় করতে চাইলে আপনি এক চামচ কর্ন ফ্লাওয়ার হাফ কাপ পানিয়ে গুলে দিয়ে দিতে পারেন।


চওড়া খুন্তি ব্যবহার ভাল, এতে উল্টা পাল্টা করতে সহজ। এবার ফাইন্যাল লবণ দেখুন। লাগলে দিন কিংবা ওকে বলুন (শুরুতে যে লবন দিয়েছেন তা একটু পরিমান বুঝে দিলে অনেক সময় এই পর্যায়ে আর লবন দিতে হয় না)


পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত। কিছু শষা কেটে মাঝে দিয়ে একটা আকর্ষন তৈরী করা যেতে পারে।


দেখুন কেমন হয়েছে? এমন চমৎকার রং এবং দেখতে ভাল দেখালে কে খেতে চাইবে না!


হা হা হা, যারা রাতে রুটি খান তাদের জন্য এর চেয়ে মজাদার খাবার আর কি হতে পারে। সাদাভাত কিংবা পোলাউয়ের সাথে বেশ লাগবে বলে আমি মনে করছি।

সবাইকে ধন্যবাদ। সুবর্ন ভায়া, বলুন কেমন হয়েছে? পারবেন তো? বলুন, এমন সহজ রান্না কে না পারবে? আর না পারলে আমিতো আছিই! হা হা হা… বেষ্ট অব লাক!

কৃতজ্ঞতাঃ মানসুরা হোসেন

28 responses to “রেসিপিঃ সিজলিং বিফ (এক মন্তব্যেই বাজিমাত! সুবর্ন)

  1. প্রায় ৩ সপ্তাহ পর ব্লগে এসে সব ক্ষুদা যেন মিঠে গেল!

    Like

  2. এই রকম দূর্দান্ত একটা রেসিপি দেবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। রান্না না করেই বুঝতে পারছি, জিনিসটা সেইরকম হবে। আর এইটা আমার জন্য অনেক আনন্দের যে, আপনি আপনার ছোট ভাইয়ের জন্য এই রেসিপিটা লিখেছেন! আশা করি, আজ কালের মধ্যেই রান্না করে ফেলব!

    Liked by 1 person

    • ধন্যবাদ সুবর্ন ভায়া, আমি আরো খুশি হলাম।
      হা, এটা একটা চমৎকার রেসিপি এবং আপনার হাতের কাছে সব কিছুই আছে বলে মনে হয়। গরুর গোসত না পেলে বোনলেস মুরগী দিয়ে (মশলা একটু কম করে) ও রান্না করে দেখতে পারেন।

      আর রান্না করে শুধু নিজে খেলে চলবে না, প্রবাসী ভাইবেরাদরদেরও খাওয়াতে হবে। যে দেখে থাকেন সে দেশের বন্ধুদেরো খাওয়াতে হবে। এতে অনেক লাভ হবে! হা হা হা…

      এবার দেশে এসে আপনি আপনার মাকে রান্না করে খাইয়ে চমক লাগিয়ে দেবেন বলে আশা করি এবং আমার বিশ্বাস তিনি অনেক অনেক খুশি হবেন।

      আবারো ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা। আশা করি সাথেই থাকবেন। আমাদের চলার পথ আরো সুন্দর হবে।

      Liked by 1 person

    • সুবর্ণ ভাই, খালি রান্না করলেই হবেনা। আমাদের জানিয়ে যাবেন কেমন হলো রান্না। অপেক্ষায় থাকলাম। 🙂

      Liked by 1 person

  3. আহা! এভাবে কতজন যে আপনার দ্বারা উপকৃত হচ্ছে, কতজন এতো লোভনীয় সব খাবার দেখে নিজের দীর্ঘশ্বাস গোপনে লুকাচ্ছে, কতজন যে ঈর্ষান্বিত হচ্ছে… … 😛
    হা হা হা… আমি কিন্তু উপকৃতের দলে 😀

    (আরেকটা কথা ভাইয়া। আমি কিন্তু আপনার কাছ থেকে একটা রেসিপি পাওনা আছি। মনে আছে কি তা? চালতার আচারের রেসিপি 🙂 )

    Liked by 1 person

  4. আপনার উদ্দেশ্য পূরণ হওয়াতে আপনি যেমন খুশি হয়েছেন, তেমন আমিও। অন্যদের খুশি হতে দেখলে আমার ভাল লাগে। সুবর্ণ বিদেশে যে ভাবে উপকৃত হয়েছে, তেমন করে আরও অনেকে উপকৃত হচ্ছে এবং হবে বলে আমার বিশ্বাস।
    চালিয়ে যান। অপরের উপকার করতে পারার মত বড় আর কিছুই নেই। এ সুযোগ প্রায় কেউই গ্রহণ করে না। সবাই শুধু তেলা মাথায় তেল দিতে ব্যাস্ত থাকে।

    Like

    • হুদা ভাই, আজকাল প্রায়ই দিনে বা দুই তিনদিনে এমন প্রবাসীদের ফোন পাই তাতে কত কি জানতে চান এবং অনেকে ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা জানান।

      বেশ উপভোগ করছি। রান্না রেসিপি দেখার একটা আলাদা পাঠক/পাঠিকা সমাজ গড়ে উঠছে।

      আপনাদের হেল্প ও কমেন্ট আমাকে বেশ সাহায্য করছে। দিনে ৪০০/৫০০ হিট কিন্তু কমেন্ট কম আর ওয়ার্ডপ্রেস এ কমেন্ট অনেকেই করতে চান না। এদিকে কমেন্ট হলে পোষ্ট আরো জমে উঠে।

      শুভেচ্ছা আপনাকে।

      Like

  5. এই রেসিপি করতে হবে। করলে জানাবো কেমন হলো।

    Like

    • ধন্যবাদ বোন। এটা চমৎকার একটা খাদ্য। আপনি রান্না করে দেখতে পারেন। মাঝে মাঝে একটু পরিবর্তন জরুরী। ও, আমি আবার কাকে কি বলছি, আপনি হচ্ছেন রান্না বিষয়ক সাংবাদিক, আপনি সব জানেন। তা প্রতিদিনেতো খাবার দাবারের ছবি দেখিই না!

      শুভেচ্ছা।

      Like

  6. প্রতিদিনে মানুষ কেবল খবর দেখতে চায়। তবে আশা করি খাবারের আয়োজনও পাতায় থাকবে ভবিষ্যতে ইনশাল্লাহ।

    Like

  7. এত সোজা !!!! আমি রান্নাঘরের দিকেই যাচ্ছি তাহলে !!!!

    Like

  8. kintu sizling er poribeson ta ektu different hoi na?

    Like

    • ধন্যবাদ জিনাত বোন।
      হা, আপনি সত্য ধরেছেন। আসলে আমরা হোটেলে যে ধরনের সিজলিং জাতীয় খাবার খাই তা ঘরে সেভাবে পরিবেশন করা সম্ভব নয়। কারন আমাদের কাছে সেই লোহার এবং কাঠের ট্রে কোথায় পাব।

      শুভেচ্ছা। তবে আপনার কমেন্টে এবার মনে হল, হাতের কাছে ট্রে এবং অনুসাঙ্গিক পেলে কিনে ফেলবো।

      Like

      • vai…salam niben.
        gorom lohar tray-er upor butter dea golea tar upor onion slice dilei dhoa utha suru hobe. er upor chot pot uporer recepi dea lohar tray ta kather tray ba patatoner upor rekhe shobdo korte korte nea asen baritei restaurent style. agei jodi daining table e candle light er bebostha kore rakhen tahole to kothai nai… r tray to new market er pisone crocariz market e paoa jai…

        Like

        • ধন্যবাদ বোন। আপনি সিজলিং ভক্ত বলে মনে হচ্ছে। আমিও নানান হোটেলে বেশ কয়েকবার সিজলিং খেয়েছি। আপনার বর্ননার সাথে হুবহু মিল পাচ্ছি।

          নিউ মার্কেটে গেলে কিনতে চেষ্টা করবো। আগামীতে এমন সিজলিং বিফ বাসায় বানিয়ে দেখবো।

          শুভেচ্ছা।

          Like

  9. ভাই… এই রেড সস টা কি জিনিস?? আমি ফিশ সস দেখেসিলাম কোথাও। আর oyester সস ও দিয়েসিল। আমি করেসিলাম।খারাপ হয় নি।

    Like

    • ধন্যবাদ রহমান ভাই, আমার প্রথম দিকের রেসিপির ছবি গুলো ফটোবাকেটে রেখেছিলাম। কয়েক্মাস আগে থেকে ওরা আমার ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে মাসের প্রথম দিকে ছবি দেখা যায়, পরে ব্যন্ড উইথ শেষ হলে আর দেখা যায় না। এই সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছি। নেট লাইন স্লো এবং সময়াভাবে এখনো পারছি না। আশা করি পারবো, তবে নুতন রেসিপি গুলোতে এই সমস্যা নেই। শুভেচ্ছা।

      Like

  10. রেড সস কি?

    Like

  11. পিংব্যাকঃ এক নজরে সব পোষ্ট (https://udrajirannaghor.wordpress.com) | BD GOOD FOOD

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]