গত কয়েকদিন আগে আমার সিলেটের রান্নাতো আপা (আমার রান্নার ইতিহাসে Suronjona Maya আপা উল্লেখ করার মত স্থান দখল করে আছেন) ইন্ডিয়া বেড়াতে যাচ্ছিলেন। ফোন করে জানালেন, কিছু ফরাসের বিচি (শব্দটা নিয়ে কারো কারো আপত্তি থাকতে পারে, তবে এছাড়া অন্য কোন শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না) নিয়ে এসেছেন। আমি অফিস শেষে হাজির হয়ে গেলাম। আপা ও দুলাভাইকে আমি এই প্রথম দেখলাম। অনলাইনের এই দুনিয়ায় আমাদের পরিচয় অনেক বছরের হলেও এতদিন দেখা হয় নাই। এর আগে রান্নাতো আপা, অনেকবার ঢাকা আসলেও আমি উনার সাথে পরিচিত হতে পারি নাই। কাজেই দেখা হয়ে যাবার সুযোগ মিস করতে চাইছিলাম না। যাই হোক, আপার সাথে পরিচিত হতে পেরে ভাল লাগছিলো। সেই সব কথা আর একটা ব্লগে তুলে দিব ভাবছি!
Gift from my Rannato Apa Suronjona Maya from Sylhet. ফরাসের বিচি!
যাই হোক, ফরাসের বিচি নিয়ে বাসায় ফিরে এসে খুলে দেখে অবাক হতে হল, আরে এ যে কিডনী বীনের মত বীন। আপা রান্না করার কয়েকটা রেসিপি বলে দিয়েছেন। তবে আমি এই বীনের প্রকৃত স্বাদ ও ঘ্রান নেয়ার জন্য একটা সাধারন রান্নার কথা চিন্তা করি এবং পরদিন কিছু বীন পানিতে ভিজিয়ে অফিসের চলে যাই! এদিকে আমার ব্যাটারী ফরাসের বিচি গুলোর খোসা ছাড়িয়ে রেখে দেন। অফিস ফিরে আমি রান্নায় লেগে যাই। খুব সাধারন রান্না, আমাদের দৈনিক খাবারের রান্নার মতই।
চলুন দেখে ফেলি। তবে শুনেছি সিলেটের এই ফরাস (এই গাছ প্রথম ফান্স থেকে এসেছিল বলে জানা যায়) খুব জনপ্রিয় এবং এই ব্লগে যারা সিলেটী আছেন সবাই আশা করি চিনে থাকবেন। এই ফরাসের আরো কিছু রান্না থাকবে সামনের রেসিপি গুলোতে।
উপকরন ও পরিমানঃ
– ৭৫০ গ্রাম ফরাস (খোসা ছাড়ানো)
– তিনটে বড় পেঁয়াজ কুঁচি,
– কয়েকটা কাঁচা মরিচ, ৫/৬টা
– গরম মসলা (কয়েকটা এলাচি, কয়েক পিস দারুচিনি)
– হাফ চা চামচ হলুদ গুড়া
– হাফ চা চামচ বা তার কম লাল মরিচ গুড়া, ঝাল বুঝে
– লবন, পরিমান মত, শুরুতে কম দিয়েই রান্না শুরু করা উচিত, লাগলে পরে দিতে পারবেন
– পানি, পরিমান মত
– তেল, পরিমান মত, তবে কম তেলেই রান্না করুন
– ধনিয়া কুঁচি (দুই চা চামচ)
প্রনালীঃ (ছবি কথা বলে)
ছবি ১, কড়াইতে তেল গরম করে সামান্য লবন যোগে পেঁয়াজ কুঁচি, কাঁচা মরিচ, এলাচি,দারুচিনি ভেঁজে নিন।
ছবি ২, আদা ও রসুন দিন। পেয়াজের রঙ হলদে হয়ে এসে হাফ কাপ পানি দিন।
ছবি ৩, এই রকম অবস্থায় এসে যাবে।
ছবি ৪, এবার হলুদ ও মরিচের গুড়া দিন।
ছবি ৫, ভেঁজে তেল উপরে উঠিয়ে নিন।
ছবি ৬, এবার ফরাসের বিচি দিন।
ছবি ৭, খোসা ছাড়ানো ফরাসের বিচি আগেই ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে।
ছবি ৮, ভাল করে মিশিয়ে কয়েক মিনিট মাধ্যম আঁচে রেখে দিন।
ছবি ৯, এবার দেড় কাপ পানি দিন।
ছবি ১০, মাধ্যম আঁচে ঢেকে রাখুন।
ছবি ১১, ফরাস সিদ্ধ না হলে আরো পানি দিতে পারেন। আর হয়ে গেলে তো হলই!
ছবি ১২, এবার ফাইন্যাল লবন দেখে লাগলে দিন। এবং এই সময়েই ধনিয়া পাতার কুঁচি দিন।
ছবি ১৩, ব্যস পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত।
ছবি ১৪, দারুন। গরম ভাত কিংবা রুটির সাথে বেশ ভাল লাগবে।
মুলত ফরাসের বিচির এই তরকারী খেয়ে যা বুঝতে পারলাম, এটা এক ধরনের ডাল জাতীয় বটেই। এটা গুড়া করাও নানা প্রকারের খাবার বানানো যেতে পারে। মাছ বা মাংসের সাথেও এই বিচি রান্না করা যেতে পারে।
সবাইকে শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদন্তেঃ রান্নাতো আপা জামিলা হাসান
ফরাসের বিচি গুলোর খোসা ছাড়িয়ে রেখে দেন।—> Pls advise which way ?
LikeLike
ধন্যবাদ রেদোয়ান ভাই। ফরাসের বিচি গুলোকে ১০/১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে নরম হয়ে যাবে এবং হাতের আঙ্গুল দিতে টিপে টিপে খোসা ছাড়াতে হবে। অনেকটা সিমের বিচির খোসা ছাড়ানোর মত। পানিতে অনেকক্ষণ ভিজিয়ে ছাড়া আর কোন উপায় দেখি না। শুভেচ্ছা।
LikeLike
শীতকালে এটা আমি রুই জাতীয় মাছ দিয়ে রান্না করি। ভালোই লাগে।
LikeLike
ধন্যবাদ আপনাকে।
চলুক আমাদের রান্না বান্না।
শুভেচ্ছা।
LikeLike