গ্যালারি

রেসিপিঃ পালংশাক পিঠালি (মজাই মজা)


কয়েকদিন আগে টিভিতে (স্যাটেলাইট চ্যানেল) মটরশাক এবং শোল মাছ দিয়ে একটা রান্না দেখি। রান্নাটা দেখেই আমার মনে দাগ কেটে যায়। দুইধাপের এই রান্না কিছুতেই আমার মাথা থেকে যাচ্ছিলো না। রান্নাটা মাথায় এমন ভাবে গেঁথে ছিল যে, মনে হয়েছিল তখনই রান্না করে ফেলি। কিন্তু কচি মটর শাক কোথায় পাই, ঘরে শোল মাছ আছে কিন্তু তা অনেক দিন আগের।

পর দিন বাজারে শাকের দোকানেও দেখেছি, পাই নাই। ভাবছিলাম, অন্য কিছু দিয়ে সেইম টু সেইম রান্নাটা করে ফেলব। যে কথা সেই কাজ! অফিস ফিরতি পথে বাসায় নিয়ে ফিরলাম, পালংশাক এবং তাজা তেলাপিয়া মাছ। আর কে অপেক্ষা করে। মটরশাক ও শোল মাছের পিঠালির বদলে শুরু হয়ে গেল আমার পালংশাক ও তেলাপিয়া মাছের পিঠালি।

চলুন দেখে ফেলি। আপনারা আশা করি জানেন যে, রান্না স্বাদ না হলে আমি সেটা রেসিপি আকারে প্রকাশ করি না। আমি আমার অনেক রান্না স্বাদ হয় নাই বলে প্রকাশ করি নাই বা বাদ দিয়ে দিয়েছি। পালংশাক পিঠালি অসাধারন স্বাদের হয়েছিল এবং আশা করছি মটরশাক পেলে সেইম রান্নাটা আর একবার করব। উল্লেখ্য যে, আমি এখনো মটর শাক খাই নাই (দুনিয়াতে সব কিছু সবার ভাগ্যে লিখা থাকে না) এবং পিঠালি শব্দের কি অর্থ তা আমি জানি না। হা হা হা।। চলুন, আমাদের রান্নাঘরে।

উপকরনঃ
– তিন মুট পালং শাক (শাকে কেজি হিসাব নাই!)
– তেলাপিয়া মাছের তিন টুকরা (তাজা এবং মাছ গুলো বেশ বড় সাইজের ছিল, একটা তেলাপিয়াই এক কেজি ছিল)
– পেঁয়াজ কুঁচি – মাঝারী সাইজের দুটো
– আদা বাটা – এক টেবিল চামচ
– রসুন বাটা – এক টেবিল চামচ
– হাফ চামচ হলুদ গুড়া
– পরিমান মত লাল মরিচ গুড়া (ঝাল বুঝে)
– এক চিমটি জিরা গুড়া
– পরিমান মত লবন
– পরিমান মত তেল/ পানি
– ধনিয়া পাতার কুঁচি
– কয়েকটা কাঁচা মরিচ

প্রথম ধাপের জন্য আলাদা করে কয়েকটা রসুন কুঁচে নিন, একটা পেঁয়াজ কুঁচে ও কয়েকটা কাঁচা মরিচ চিঁরে নিন।

প্রনালীঃ
প্রথম ধাপ

পালং শাক ভাল করে ধুয়ে নিন এবং তার পর কেটে কুঁচি কুঁচি করে নিন।


তার পর সেই কুঁচি শাক ভাপিয়ে নিন। সামান্য পানি দিয়ে তাতে পেঁয়াজ কুঁচি, রসুন কুঁচি ও কাঁচা মরিচ দিন। এক চিমটি লবন দিতে ভুলবেন না।


ঢাকনা দিয়ে এমনি শাক গলিয়ে নিন।

দ্বিতীয় ধাপ, অন্য কড়াইয়ে।

তেল গরম করে সামান্য লবন যোগে পেঁয়াজ কুঁচি ভেজে তাতে উল্লেখিত মশলা গুলো দিয়ে দিন। সামান্য পানি দিয়ে কাঁচা মরিচ দিন এবং ভাল করে ঝোল বানিয়ে নিন। এই ঝোল সাধারণত আমরা যে কোন মাছ রান্নাতেই করে থাকি। এই ঝোলের স্বাদের উপর রান্নার স্বাদ নির্ভর করে থাকে।


তেল উঠে এলে এবার মাছের টুকরা গুলো দিয়ে দিন। ভাল করে মিশিয়ে এক কাপ পানি দিয়ে আবারো ঢাকনা দিন। মাছ নরম না হলে আরো সামান্য পানি দিতে পারেন।


মাছ নরম হয়ে গেলে ভেঙ্গে গুড়া গুড়া করে দিন এবং চাইলে বড় কাটা গুলো বেঁচে ফেলে দিন। ভাল করে মিক্স করুন।


এবার প্রথম ধাপে করে রাখা শাক দিয়ে দিন।


ভাল করে মিশিয়ে নিন, জোরে জ্বাল দিন এবং খুন্তি দিয়ে নাড়াতে থাকুন।


যত সুন্দর করে মাছ শাক মিশে যাবে ততই স্বাদ বেড়ে যাবে।


অনেকটা এমন দেখালে ফাইন্যাল লবন দেখুন এবং কিছু ধনিয়া কুঁচি ছেড়ে দিন।


ব্যস, পালংশাক পিঠালি প্রস্তুত। (ছবিটা ফ্রাশ দিয়ে তোলা)


আসুন খেয়ে দেখুন (ছবিটা ফ্রাশ ছাড়া তোলা)! হা হা হা…।

আপনারা বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, এই রান্না এতই মজার হয়েছিল যে, আমার রান্নার টেষ্টার (যে কি না শাক কম পছন্দ করে) এই তরকারী দিয়েই খেয়ে উঠেছিল।

সবাইকে শুভেচ্ছা। প্লিজ, এই রান্নাটা করে খেয়ে দেখুন।

13 responses to “রেসিপিঃ পালংশাক পিঠালি (মজাই মজা)

  1. we find tin fish here like sardine in sunflower oil….n….frozen spinach ….. l cook this recipe ….. n …it was tasty…. ur carry look’s soooo yammy…..try to cook it to day,my amma use to cook fish head n few pieces with any shag….or vegetable …….salam to ur family…anjuman

    Like

    • ধন্যবাদ বোন। গতকাল এই ধরনের রান্না নিয়ে আমার এক মেরিকা প্রবাসী বন্ধুর সাথে কথা হয়েছিল। সে এমন ধরনের একটা রান্না করে, টোনা ফিস এবং পালং শাক দিয়ে। গতকাল সে আমাকে তার রেসিপিটা বলেছে। আপনার সাথে কিছুটা মিল আছে।

      আপনার আম্মার মত আমার মাকেও এমন দেখেছি। সে কোন শাক বা তরকারীতে এক টুকরা মাছ বা মাছের মাথা দিতেন এবং সেটার স্বাদ বেড়ে যেত। আমিও সেই চেষ্টা করি।

      এদিকে আখাউড়া (আমার শশুরবাড়ী) তে নাকি শাকে কখনোই মাছ দেয় না এবং এটাকে উনারা ভাল চোখে দেখেন না! আমার শশুর মশাই তার মেয়ের সাথে নাকি এটা নিয়ে হাসাহাসি/মশকরা করতেন! ব্যাপারটা শুনে আমিও হেসেছিলাম!

      আসলে অঞ্চল ভেদে খাবারের প্রকারভেদের জন্য আমাদের এই সমস্যা হচ্ছে, অবশ্য এটা মানসিক সমস্যা, মেনে নিলেই হয়ে যায়। হা হা হা…

      ধন্যবাদ আপনাকে।

      Like

  2. কয়েকমাস আগে অফিসে একজন ‘পিঠালি’ নামের রেসিপি খাওয়ালেন। ভাত্যার শাক দিয়ে করেছে। চালের গুড়াও দেন বলে শুনেছি। রেসিপি জানা হয়নি।
    ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর অনকমন রেসিপির জন্য।

    Like

    • ধন্যবাদ বোন।
      ঢাকার মানিকগঞ্জ/ সাভার এলাকায় এই ধরনের রান্না হয় বলে শুনেছি। যে কোন শাকের এই ধরনের রান্নাকে মনে হয় পিঠালি বলা হয়।

      ভাত্যার শাক অনেক আগে একবার খেয়েছিলাম, আমার কাছে ভাল লেগেছিল। কিছুদিন আগে বাজারে দেখেছি, কিনতে সাহস পাই না।

      কত প্রকারের রান্না আছে, আমরা কয়টা জানি বা এক জীবনে কে কয়টা রান্না খেতে পারে।

      ধন্যবাদ।

      Like

  3. ভাত্যার শাক আমার খুবই প্রিয় শাক। সিজনে একবার খাই। বিচিওয়ালা দেশি শিম, আলু ছোট করে কেটে বড় সাইজের ছুরি শুটকি টুকরা করে মটরের ডাল দিয়ে মাখা মাখা করে রান্না করা হয়। অসাধারণ!

    Like

  4. পালং শাক দিয়ে আমি রুই, পাঙ্গাসের মাথা ভেঙ্গে এভাবে রান্না করি। খুব সুস্বাদু হয়।
    পিঠালি কি জিনিস বুঝি নাই, তবে শাক চালের গুড়ির গোলার মাঝে ডুবিয়ে ভাজলেও ওটাকে অনেকে পিটুলি বলে। মেইনলি চালের গুড়ির গোলাকেই পিটুলি বলে।

    শাক দিয়ে মাছ, বা সব্জী দিয়ে মাছ আমার আম্মার রান্নাঘরেও রান্না হয়নি। এসব আমি নিজে নিজেই রান্না করে যেটা ভালো লেগেছে সেটা রেখেছি আর যেটা ভালো লাগেনি সেটা আর কোনো দিন রান্না করিনি।

    আমি এক হিন্দু পরিবারে বাধাকপি দিয়ে ভাজা মলা মাছ রান্না খেয়েছিলাম। অসাধারন স্বাদ হয়েছিলো।

    Like

    • ধন্যবাদ বোন।
      চালের গুড়ার তরকারী রান্না দেখেছি কয়েকদিন আগে। এমন একটা তরকারী রান্না করে খেতে হবেই।

      মাছ ভেঙ্গে শাক সবজি রান্না নুতন কিছু না হলেও অনেকে দেখি এটা পছন্দ করেন না। আসলে ছোট বেলায় যে যা দেখে আসে তাই তার কাছে ভাল লাগে।

      মলা দিয়ে বাঁধাকপি! শুনেই ওয়াও!

      শুভেচ্ছা।

      Like

  5. এই রান্না খেয়েছি আগে, তবে এর সাথে বেগুন কয়েক পিস দিয়ে দিলে স্বাদ আরো খোলতাই হয়। আপনার রেসিপি গুলো চমতকার। অনেক শুভেচ্ছা আপনাকে এবং ব্যাটারী ভাবীকে।

    Like

  6. I cooked this with spinach and small salmon fish fillet. It turned out to be really good.

    Like

  7. পিংব্যাকঃ এক নজরে সব পোষ্ট (https://udrajirannaghor.wordpress.com) | BD GOOD FOOD

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]