গ্যালারি

রেসিপিঃ কলাপাতায় সরিষার তেলে পুঁটিমাছ (না খেলে আর কি খেলেন!)


আমার দাদুকে আমাদের ছোটবেলায় এমন একটা রান্না করতে দেখতাম। যখন খাল বিলে প্রচুর পুঁটিমাছ পাওয়া যেত এবং মাছ গুলো থাকত খুব তেলতেলে। খুব একটা বেশী খেয়েছি তা নয়, তবে আমরা বাড়ী গেলে একবার দুইবার। আমার মুখে সেই স্বাদ এখনো লেগে আছে। এর পর আমার আম্মাকে এই রান্নার কথা বললে তিনি এড়িয়ে যেতেন, বলতেন এই ঢাকা শহরে কলা পাতা পাব কোথায়! আমার আম্মা এই রেসিপিটা পুরা জানেন বলে আমি মনে করি কিন্তু রান্নায় আমার আগ্রহ হবার পর আর উনার দেখা নাই, তিনি বিদেশে পড়ে আছেন। গত কিছুদিন আগে একবার ভাবলাম, এই কলাপাতায় রান্নার ব্যাপারে উনাকে জিজ্ঞেস করি, কিন্তু সময় মত ভুলে গেলাম।

বেইলী রোডে আমার বন্ধুর পুকুরের পাড়ে অনেক কলাগাছ আছে। হাত বাড়ালেই অনেক কলা পাতা পাওয়া যায়। সকালে পুঁটিমাছ কিনেছিলাম, মনে থাকায় রাতে বন্ধুর সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরার সময় ভাবলাম কিছু কলা পাতা নিয়ে যাই, চেষ্টা করে দেখতে দোষ কি! বন্ধুর বাসা থেকে ছুরি এনে কিছু কলা পাতা জমিয়ে ফেলি, আমার বন্ধু সহ যারা ছিল তারা হয়ত ভাবছিল, পাগলটা কি করে! আমি আর বেশী কিছু বলি নাই। এদিকে বাসায় ফিরতে ফিরতে আবার চিন্তা হচ্ছিলো, আমার ব্যাটারী না জানি আবার কি বলে? কিন্তু আমার হাতে কলা পাতা দেখে তিনি কিছু বলেন নাই, রাত তখ প্রায় ১২টা! আমি আর আমার ব্যাটারী কাজে লেগে গেলাম…। দুজনে মিলে কিছু একটা করে ফেলার চেষ্টা, রেসিপি মন থেকে নেয়া! এত রাতে আর কোন রান্নাবিধকেও ফোন করতে ইচ্ছা হল না!

চলুন আমাদের এই প্রচেষ্টা দেখুন। রাত ২.৩০মিনিটে আমরা খাবার টেবিলে খেতে বসেছিলাম, কিন্তু কলাপাতায় সরিষার তেলে পুঁটিমাছ! আর কি বলব, যারা এমন রান্না এখনো খেয়ে দেখন নাই তাদের বলি, আর কি খেলেন এই দুনিয়ায়! রেসিপি সহ দেখুন…।।


ছবি ১ – আজকাল পুঁটি মাছ পাওয়াও দায়, দামও মাশাল্লাহ!


ছবি ২ – মাছ গুলো কেটে ভাল করে পরিষ্কার করে নিন। ঘরে যদি আমচুর (এখন আমের আচারের দিন) থাকে তবে তা নিন। সাথে কয়েকটা কাঁচা মরিচ।


ছবি ৩ – মশলা পাতিঃ কিছু পেঁয়াজ রিং, রসুন বাটা এক টেবিল চামচ, হাফ কাপ খাঁটি সরিষার তেল, লবণ পরিমাণ মত, হাফ চামচ লাল মরিচ (মরিচ দেখে শুনে), এক চিমটা গুড়া হলুদ। ব্যস এই হচ্ছে মশলা পাতি।


ছবি ৪ – মশলা মিশিয়ে ফেলুন।


ছবি ৫ – সব কিছু ভাল করে মাছের সাথে মেখে কলা পাতায় তুলে ফেলুন।


ছবি ৬ – কলাপাতায় মুড়িয়ে ফেলুন। ভাল করে, কলা পাতার যেন ৫/৬ পরত হয়। প্রয়োজনে সুতা দিয়ে ভাল করে বেঁধে ফেলুন। আমার দাদু কত সুন্দর করে চার কোনা করে ফেলতেন। আমরা তা পারি নাই, আমাদেরটা পাটাপুতার পুতার মত দেখাছিলো! যাই হোক, ভিতরটা হলেই হল…


ছবি ৭ – পুরানো একটা কড়াইকে গরম করে তাতে সুন্দর করে বসিয়ে দেয়া হল। এবং ঢাকনা দিয়ে আমরা টিভি দেখতে চলে গেলাম…


ছবি ৮ – আমি মাঝে মাঝে এসে উলট পালট করে দিলাম।


ছবি ৯ – এক সময় বুঝতে পারলাম, ভিতরটা হয়ে গেছে। ঢাকনা দিয়ে কমের পক্ষে ৩০/৪০ মিনিট লাগল, আমি সময়টা খেয়াল কই নাই। (এখানে একটা ব্যাপার বলি, আমার ব্যাটারী এক পর্যায়ে বললেন, ইলেকট্রিক ওভেনে দিয়ে দাও, আমি রাজি হই নাই!)


ছবি ১০ – এরপর খুলে দেখার পালা।


ছবি ১১ – ভেতরটা দেখে প্রান ভরে গেল। আহ, আমাদের চেষ্টা সার্থক বলে মনে হল।


ছবি ১২ – কলাপাতায় সাজিয়ে খেতে বসা।


ছবি ১৩ – ওয়াও। একেই বলে, কলাপাতায় সরিষার তেলে পুঁটিমাছ!


ছবি ১৪ – ঢাকা শহরে বসে এক জীবনে এমন রান্না একবার করলেই যথেষ্ট!

(আসলে চেষ্টায় কি না হয়…।। রান্নায় লাগে ধৈর্য আর ভালবাসা।।)

22 responses to “রেসিপিঃ কলাপাতায় সরিষার তেলে পুঁটিমাছ (না খেলে আর কি খেলেন!)

  1. অসাধারন আইডিয়া।

    Like

  2. আরও একটি লোভনীয় খাবারের রেসিপি। ধন্যবাদ রইল সাহাদাত ভাই।
    এই ডিশটি যে কত মজার যে খায়নি এখনও, সত্যিই অনেক মিস করেছে। তাই রান্না করতে বসে পড়া উচিত। সাহাদাত ভাইয়ের রেসিপি তো হাতের নাগালেই আছে।

    Like

    • ধন্যবাদ দাইফ ভাই, আপনি আমার কোন পোষ্টে না আসলে অপূর্নতা থেকে যায়। আমি পোষ্ট দিয়েই বসে থাকি এবং দেখি কখন আপনি কমেন্ট করলেন কিনা।

      এই ডিস আমিও বেশী খেয়েছি তা নয়। তবে ছোট বেলার স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। আমি অন্য ছোট মাছ দিয়ে আবারো বানাবো বলে চিন্তা করছি।

      আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ জানাবো তা খুঁজে পাই না। রান্নায় আপনার আগ্রহ দেখে মন ভরে উঠে। আশা করি আগামী দিনেও সাথে থাকবেন।

      শুভেচ্ছা।

      Like

      • এখন তো আমাকে লজ্জায় ফেলে দিলেন। আপনার ব্লগটি এত চমৎকার যে আমি অনেক আগেই FOLLOW অপশন দিয়ে রেখেছি । তাই আপনি নতুন পোস্ট দিলেই মেইলে আমি নোটিফিকেশন পেয়ে যাই। আর রান্না নিয়ে আগ্রহ তো আছেই (পেটুক মানুষ বলে কথা)।

        এত চমৎকার ব্লগ আর পোস্টগুলোতে না এসে কি পারা যায় বলুন?
        সব সময়ই সাথে থাকা হবে। ধন্যবাদ আবারও সাহাদাত ভাই।

        Like

  3. এই ধরণের একটা খাবার আছে নোয়াখালীতে। সাধারণ মাছ কুচি কুচি করে বেশি পরিমান বাটা মরিচ দিয়ে করা হয়। নাম- মরিচ খোলা। আমার খুব প্রিয়।
    মাঝে মাঝে মাছের ডিম বা বাদাম দিয়েও করা হয়।

    শুভ কামনা।

    Like

    • ধন্যবাদ ওয়াহিদ ভাই। মরিচ খোলার কথা বলে মুখে পানি নিয়ে এলেন। কাউকে দিয়ে কয়েক লাইনের রেসিপিটা দিতে পারলে খুশি হতাম। আমি বানাতে চাই – কি মাছ এবং কি কি মশলা…

      আশা করি জানাবেন।

      শুভেচ্ছা ও ভালবাসা থাকল…।

      Like

      • আগামী হপ্তায় আম্মার সাথে দেখা করতে যাবো। তার কাছ থেকে ভালো করে জেনে নেবো।
        পারলে ছবি তুলে রাখব।
        ভালো থাকুন।

        Like

        • ধন্যবাদ সুজন ভাই। আপনার জন্য শুভেচ্ছা এবং খালাম্মার প্রতি সালাম জানাই। এছাড়া আরো মজাদার কিছু রেসিপি থাকলেও খাতায় তুলে আনবেন, চেষ্টা করে দেখব। আমাদের খাবার গুলো আমাদেরই বাঁচিয়ে রাখতে হবে, কত মজাদার খাবার যে হারিয়ে যাচ্ছে!

          কোনটা অভাবে আর কোনটা স্বভাবে। আবারো শুভেচ্ছা।

          Like

  4. আশাকরি হয়ে যাবে একদিন দেখা।
    এসে পড়বো না হয়। আপনাকেও আমন্ত্রণ রইল আমার কুটিরে।

    Like

  5. ওয়াও! আপনার ও ভাবীর ধর্য্যকে স্যালুট!
    ছোট মাছ, মলা, ঢেলা, কাঁচকি, পাঁচমিশালি, এসব মাছ এভাবে কলাপাতায় মুড়ে রান্না করলে কাঁটা বাছার ঝামেলা থাকেনা। খেতেও দারুন লাগে। বহু বছর আগে বিটিভি্তে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী জনপদের এক রান্নায় এমনটি দেখেছিলাম।

    Like

    • আপা, এই পুঁটিমাছ এমন স্বাদের হয়েছিল যে, আমি আবার একদিন অন্য কোন ছোট মাছ ঠিক এভাবে রান্না করব বলে সিদ্বান্ত নিয়েছি।

      আপনি ঠিক বলেছেন, এই ধরনের রান্না পাহাড়ের পরিবার গুলোতে বেশী রান্না হয়। আমরা কলা পাতা পাব কোথায়?

      দেখে এবং কমেন্ট করে যাবার জন্য আপনাকেও স্যালুট জানাই।

      Like

    • ধন্যবাদ রুমান ভাই, এটা আসলেই একটা অসাধারণ রান্না। ছোট বেলার দাদুর হাতে এমন রান্না দেখেছি কিন্তু মশলা পাতির কথা কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারি নাই। মন থেকে রান্না করে দেখি চমৎকার হয়েছে।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  6. আমার বাবা মাছ ভক্ত মানুষ। তাই এই রেসিপিটা মাকে ফোন করে বোলেছিলাম। আজকে তিনি রবিবার দেখে রান্না করেছিলেন। এবং বাবা টেস্ট করে এত্ত খুশি হয়েছেন যে, ওনারা দুজনে আপনাকে ও বৌদিকে অনেক আশীর্বাদ জানিয়েছেন। খুব ভালো থাকুন এবং এমনি রাত জেগে রেসিপি এক্সপেরিমেন্ট করুন। শুভেচ্ছা রইল।

    Like

    • ধন্যবাদ বোন। আপনার এই কমেন্ট দেখে আমরা অনেক অনেক খুশি হয়েছি। আপনার বাবা মাকে আমার সালাম জানাবেন। আসলে আমাদের শহুরে জীবন যাপন আমাদের অনেক কিছু কেড়ে নিচ্ছে। আমরা আমাদের অনেক কিছু হারিয়ে ফেলছি। এই ধরনের রান্নাও আমরা হারিয়ে ফেলছি। এই রান্নাটা আসলেই অনেক স্বাদের হয়েছিল।

      আপনাদের পরিবারের সবার আরো আরো সুন্দর জীবন ও ভাল দিন কামনা করছি। সাথে আছেন যেনে ভাল লাগল।

      আমি প্রায় রান্নাই করি রাতে, কারন রাতে ছাড়া আর সময় কোথায়? আরো বেশ কিছু মজাদার রান্নার রেসিপি আছে এবং তা দিয়ে যাব।

      শুভেচ্ছা থাকল।

      Like

  7. halka molsa diye halka jhol rekhe boro boro puti mach darun lage. ei recepita kore khete hobe dekhci 🙂

    Like

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]