গ্যালারি

আড্ডাঃ এক বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় বেনারশী পল্লী শওকত কাবাবে


প্রায় ত্রিশ বছর আগে থেকে আমি শওকত কাবাবের সাথে পরিচিত! আমরা কলেজ বন্ধুরা কখনো মীরপুরে গেলে শওকত কাবাবের একটা আইটেম (এক আইটেম এবং দুইটা পরোটা) খেয়ে আসতাম। জীবিকা জীবনে তেমন একটা মীরপুরে আমি যেতে আগ্রহী নই, আমার ধারনা এই শহরে মীরপুরেই বেশী মানুষের বসবাস! মীরপুর নাম শুনলেই মাথা ভনভন করে! তবুও গত দশ বছরে দুইবার মীরপুর গিয়েছি বলে মনে হয়। লাকিলি, এই দুইবারের শওকত কাবাবে যেতে পেরেছি।

শওকত কাবাব খাবার হোটেল হিসাবে তেমন সাজ গোছে আকর্ষনীয় নয়, বলা চলে ফুটপাতের দোকান। কিন্তু চরম বৈশিষ্ট হচ্ছে এদের কাবাব। তেলে ভাঁজা কাবাব সব আইটেম। মুরগী, খাসী, গরুর কাবাবের সাথে কিছু আলাদা কাবাব পাওয়া যায়। গিলা কলিজা, ক্ষিরি, ব্রেইন সহ আলাদা আলাদা কিছু কাবাব সাধারনত খাবার হোটেলে পাওয়া যায় না।

যাই হোক, সেই কলেজ জীবন থেকে আমি এই হোটেলের কাবাবের একই স্বাদ পেয়ে আসছি। এবার আমার ইচ্ছা ছিল শওকত ভাইয়ের সাথে কথা বলে আসবো কিন্তু ঝড় বৃষ্টিতে আমাদের দেরী করে পৌছানোর জন্য শওকত ভাইয়ের সাথে দেখা হয় নাই, তিনি নামাজে মসজিদে ছিলেন। চলুন, দেখে আসি আমাদের ঘুরাঘুরি এবং খাবার দাবার।


ছবি ১, আমরা যাত্রা সঠিক সময়েই করেছিলাম, উচিত ছিলো সন্ধ্যার সাথে সাথেই পৌঁছে যাওয়া। রাস্তার জ্যাম আমাদের আশা নিরাশা করে দিয়ে ছিল, তবুও পৌঁছাতে পেরেছি এটাই বড় বিষয়! (বন্ধুর গাড়িতে)


ছবি ২, পথিমধ্যে আমরা এক পুরানো বন্ধুর বাসায় থেমেছিলাম কিছু সময়ের জন্য। বন্ধুর বাড়ির সামনের ডেকোরেশন বেশ ভাল লেগেছে।


ছবি ৩, হ্যাঁ, আপনাদের বলতে ভুলে যাচ্ছি, এই হচ্ছে আমার বন্ধু জিতু ও মনু ভাই! জিতু ভাইয়ের বাসায় গিয়ে মনু ভাইয়ের দেখা পাই! দুই দুষ্টুমিষ্টু বন্ধু আমার! তবে আপনারা যারা আমার এই সাইট রেগুলার পড়ে থাকেন তারা জানেন, আমার জিতু পরোটার কথা। এই হচ্ছে সেই জিতু ভাই! দেখুন জিতু ভাইয়ের নাস্তার প্লেট, হ্যাঁ, জিতু পরোটা নিয়ে তিনি বসে আছেন। এই ছবিটা এখানে জিতু পরোটের জন্যই দিয়ে দিলাম। সকাল বিকালের নাস্তায় জিতু পরোটা ছাড়া তিনি অন্য কিছু ভাবতে পারেন না! হা হা হা…


ছবি ৪, আমরা যখন শওকত কাবাবে পৌছি তখন রাত সাড়ে নয়টার কাছাকাছি। তুমুল বৃষ্টিতে আমরা পথ ভুলে বেনারশি পল্লীতে প্রায় ৩০ মিনিট নষ্ট করেছি। বৃষ্টির কারনে কাউকে জিজ্ঞেস করাও যাচ্ছিলো না! যাই হোক, পরে রাস্তা খুঁজে পেয়ে যাই। গাড়ি পার্কিং সহ নানা ঝামেলায় আরো কিছু সময় ব্যহত হয়েছে।


ছবি ৫, কাবার ভাজার জায়গা সেই একটাই! যেমন দেখেছি বছর ত্রিশ আগে তেমনি!


ছবি ৬, একই হাড়িতে যে কোন কাবাব ভাঁজা হয়।


ছবি ৭, এত গরম তেলে যে কোন কিছু ভাঁজতে গেলে অনেক সতর্ক থাকা দরকার। নাড়া ছাড়া তো করতেই হবে, পাশাপাশি পুড়ে না যাওয়ার ব্যপারেও খেয়াল রাখতে হবে। সামান্য বেখেয়ালে পুড়ে যেতে পারে। মশলাপাতির পাশাপাশি আগুন কাবাব স্বাদ হতে ভুমিকা রাখে।


ছবি ৮, তেতুলের টক/সস ও শসা কাঁচা মরিচের সাধারন সালাত।


ছবি ৯, পেঁয়াজের মুল্য বৃদ্ধির জন্য মনে হয় এই অভিনব ব্যবস্থা! এই ধরনের ভাঁজা কাবাবে খানিক কাঁচা পেঁয়াজ না হলে, চলে কি করে!


ছবি ১০, গরুর চাপ।


ছবি ১১, ব্রেইন কাবাব (এটা ভেঙ্গে একটা ছবি তুললে ব্যাপারটা ভাল বুঝা যেত, ভেতরটা কত সুন্দর ও মজাদার তা বুঝানো যেত)


ছবি ১২, চিকেন কাবাব।


ছবি ১৩, গিলা কলিজার কাবাব, এটা আমি আগে কখনো খাই নাই। মন্দ লাগে নাই।


ছবি ১৪, পরোটা না হলে চলে না!


ছবি ১৫, আমাদের খাবার দাবার। সাটাসার্ট!


ছবি ১৬, আইটেম গুলোর নাম দেখে নিন।


ছবি ১৭, আমাদের ফিরতি যাত্রা! সামান্য কয়েক ঘন্টার বৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ‘বন্যা’ লেগেছে এই শহরে! এমনি হলে চলে কি করে! সামনে যদি কঠিন কোন দূর্যোগ আসে, তবে আমাদের যাবার কোন রাস্তাই থাকবে না!


ছবি ১৮, অনুমান করতেও কষ্ট হবে যে, আমরা কত সময়ে মীরপুর গোল চক্কর পার হতে পেরেছিলাম!

যাই হোক, তবুও আমরা আমাদের বাসায় পৌঁছেছি, এটাই বড় কথা! আর কতকাল পরে আবার যাব কে জানে?

আপনারা যারা মীরপুরে বিবাহের আমদানী, জামদানী শাড়ী কিনতে যাবেন, দোকানে প্রবেশের পূর্বে শওকতের কাবাব খেয়ে নিতে পারেন। কাবার লাভার্সদের জন্য মন্দ হবে না! দল বেঁধে একসাথে অনেকে গেলে একাত্রে বসে খাবার সুযোগ নাও পেতে পারেন, ছোট দোকান বলে, তবে খাবারের স্বাদে আলাদা একটা আনন্দ লাগবেই।

আমার কাছে এই কাবাবের দোকানকে একটা সংগ্রাম মনে হয়, তরুণ বয়সে শওকত ভাই যে প্রচেষ্টা চালু করেছিলেন, সেটা থেকে তিনি অনেক কিছু পেয়েছেন, নাম অর্থ সব কিছুই তার কাছে ধরা দিয়েছে। দুনিয়ার কোন চেষ্টাই বৃথা যায় না, সারা দুনিয়া না হউক মীরপুরের মানুষেরা এই শওকত কাবাবের কথা সবাই জানেন, এটাও বা কম কিসে! সামনে হয়ত একদিন ফকরুদ্দিনের মত সারা দুনিয়াতে নাম কামিয়ে ফেলবে তার পরবর্তী জেনারেশনের মাধ্যমে, এটা হয়ত শওকত ভাই কিংবা আমরা নাও দেখতে পারি, কিন্তু তাতে কি! চলুক, আমাদের খাবারের ভালবাসা।

সবাইকে শুভেচ্ছা।

12 responses to “আড্ডাঃ এক বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় বেনারশী পল্লী শওকত কাবাবে

  1. bhaijan kobe aisilen?? amar basa to kasey silo…..ami asle ki vage kom porto…ha ha…valo thakun

    Liked by 1 person

  2. Ami onek din vebechi apna k jodi Shawkat Kabab khawate partam tahole apni recipe ta bujhte parten abong golpo o ranna te tule diten…… bishesh kore gorur chap r vaja murgi…… Dhonnobad apna k shundor ekta lekhar jonne amar pochonder khabar niye….. ami mirpurer e bashinda, golpo o rannar (apnar) ekjon shuvakangkhi o niyomito pathok.

    Liked by 1 person

    • ধন্যবাদ সুজন ভাই।
      আপনি মীরপুরে থাকেন জেনে নিলাম। হ্যাঁ, আমি অনেক দিন ধরেই দেখেছি, একই মান ধরে রাখা এবং একই ভাবে রান্না করা কম ব্যাপার নয়।
      আমি আছি আপনাদের সাথেই, যা ভাল বলে যাব। যা মন্দ তার কথাও বলে যেতে চাই, কিন্তু মন্দ কথা বলা কঠিন কাজ। হা হা হা…
      শুভেচ্ছা নিন।

      Like

  3. ধারাবাহিক বর্ণনা এবং ছবির সমাহার। খুব ভাল লাগল।

    Liked by 1 person

  4. apner site e protidin ekber hole o ghure jai…notun kichu na thakle purono gulo abar dekhi…valo lage…gotokal office shesh kore basai jete jete late hoye jai…beshi ranna banna korte ichcha korsilo na…ki r kora…apner site khule boslam….recipe choose korlam…..shadharon khichuri r shahi dim bhuna……ki r bolbo…..dinner ta fatafati holo………apnake onek dhonnobad…..allah apnake shukhi rakhook…..

    Liked by 1 person

  5. আগে যখন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এ জব করতাম তখন বিভিন্ন কাজে অফিস হতে মিরপুর পাঠাতো ! তখন এখানে কাবাব খেতাম ! একদিন আমাদের আড্ডায় আসার নিমন্ত্রন ! ভালো থাকবেন সবসময় ভাই ।

    Liked by 1 person

  6. মিরপর-১০ অনেক দিন থেকেছি, শওকক্ত কাবাবের নাম অনেক শুনেছি কিন্তু দর্ভাগ্য কখনো খওয়া হয়নি 😦 । এখন আর মিরপুরে থাকিনা কিন্তু ইচ্ছা আছে একদিন গিয়ে খেয়ে আসবো 😛

    Liked by 1 person

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]