সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বা যে কোন বন্ধের দিনে, বাসায় সবাই থাকেন এবং আমাদের সমাজে এই দিনে পরিবারের সবাই মিলে বিশেষ করে দুপুরের খাবারের বেলায় সবাই একটু ভাল খাবার খেতে চান। এই দিনে বিশেষ করে আমাদের মায়েরা যে কোন একটা আইটেম অন্তত ভাল বা ব্যতিক্রম রান্না করেন, যা মুলত রান্নায় দৃষ্টি আকর্ষন এবং ভিন্ন খাবারের প্রতি সবাইকে জানানোই মুল উদ্দেশ্য বলে প্রতীয়মান। এর আরো অনেক ভাল দিক আছে, শিশুরা নানান খাবারের স্বাদ পায়, জানতে পারে। প্রতিদিন বা সব সময়ে একই রান্না করলে, খেতে ভাল নাও লাগতে পারে বা উক্ত রান্নার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়তে পারে শিশুরা। এতে হত সে খাবে না বা উক্ত রান্না ছাড়া ভিন্ন খাবার খাবে না। ফলে জীবনে সমস্যা তৈরী হতে পারে। ভাল সব খাবার খেতে শিক্ষা দেয়া উচিত শিশুদের ছোট বেলা থেকেই। এতে বড় হয়ে তার জীবন সুন্দর হবে, থাকবে রোগ মুক্ত।
যাই হোক, যা বলছিলাম, শিশু বুড়ো সবাই ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের খাবার পছন্দ করে থাকে। চলুন, আজ গরুর গোশতের একটা ভিন্ন রান্না দেখিয়ে দেই, গরুর গোসতের সাদা রান্না। আসলে এই রান্নায় মোটামুটি আমাদের হাতের কাছের প্রায় সব মশলা ভেজষই ব্যবহার করা হয়েছে শুধু মাত্র লাল মরিচ গুড়া এবং হলুদ গুড়া ব্যবহার করা হয় নাই। প্রায় আপনি যে রান্না করে থাকেন, সেটাতেই সামান্য টুইস্ট এনে সবাইকে এই রান্না খাইয়ে প্রশংসা বাড়িয়ে নিতে পারেন।
চলুন, দেখে ফেলি। সাধারন ও সহজ।
পরিমান ও উপকরনঃ
– গরুর গোসতঃ এক কেজি (হাড় বাদ দিতে পারেন বা সামান্য নিতে পারেন)
– পেঁয়াজ কুঁচিঃ হাফ কাপ বা কম
– টক দইঃ দেড় কাপ
– এলাচিঃ ৩/৪ টা
– লবঙ্গঃ ৪/৫ টা
– দারুচিনিঃ ৩/৪ টা (এক ইঞ্চি)
– জয়ত্রীঃ সামান্য/ এক চিমটি
– বাদাম বাটাঃ এক টেবিল চামচ
– রসুন বাটাঃ ২ টেবিল চামচ
– আদা বাটাঃ দেড় টেবিল চামচ
– জিরাঃ এক চা চামচ (বাটা জিরাই উত্তম, প্যাকেটের জিরা গুড়া তেমন ভাল হয় না)
– কেওড়া জলঃ হাফ টেবিল চামচ
– কাচা মরিচঃ ঝাল বুঝে কয়েকটা (৮/১০টা) (ঝাল বাড়াতে হাফ চা চামচ গোল মরিচ গুড়া দিতে পারেন এবং কাচা মরিচ তখন কম দিলেও চলবে)
– লবনঃ পরিমান মত (প্রথমে কম দিয়েই শুরু করা উচিত)
– তেলঃ হাফ কাপ (কম তেলেই রান্না হউক, আপনি চাইলে একটু তেল বেশী দিতে পারেন, এতে আর স্বাদের রিক্স থাকে না!)
– পানিঃ পরিমান মত (যদি লাগে)
– পেঁয়াজ বেরেস্তাঃ কয়েক টেবিল চামচ, রেরেস্তা আগেই করে নেয়া উচিত, বেরেস্তা কি করে করা হয় তা এখানে ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন, রেসিপিঃ বেরেস্তা (সকল স্বাদের কাজী)
প্রনালীঃ
গোসত প্রিপারেশনঃ
গোশত টুকরা করে কেটে ধুয়ে নিন এবং টক দই দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে রেখে দিন। আধ ঘন্টা রাখতে হবে।
মুল রান্নাঃ
কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুঁচি দিন এবং সামান্য লবন (হাফ চা চামচ) দিয়ে ভাঁজুন। এলাচি, দারুচিনি দিয়ে দিন।
পেঁয়াজের রঙ তামাটে হয়ে আসবে। আগুন মাধ্যম আঁচে রাখুন।
উল্লেখিত বাকী মশলা আগেই একত্রিত করে রাখতে পারেন। মশলা গুলো পেঁয়াজে দিয়ে দিন।
ভাল করে ভেঁজে নিন।
তেল উঠে এই রকম হয়ে যাবে। চমৎকার ঘ্রান বের হবে।
এবার দই এ রাখা গোসত দিয়ে দিন।
সামান্য একটু পানি দিতে পারেন, ভাল করে মিশিয়ে নিন।
এবার ঢাকনা দিয়ে আগুন মাধ্যম আঁচে রাখুন, মিনিট ২০/২৫ লাগতে পারে।
দেখেই মন ভরে যাবে, মাঝে মাঝে নাড়িয়ে দিন।
গোশত নরম না হলে আরো কিছু সময় রাখুন, প্রয়োজনে আরো পানি দিতে পারেন।
গোসত নরম হয়ে গেলে, ফাইন্যাল লবন দেখুন। কয়েকটা কাঁচা ও শুকনা মরিচ দিতে পারেন (ইচ্ছা)।
চমৎকার, এভাবে দেখাবে।
এবার বেরেস্তা গুড়া করে ছিটিয়ে দিন।
ব্যস হয়ে গেল।
পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত। গরুর গোশতের সাদা রান্না।
স্বাদ অসাধারন, আশা করি পরিবারের সবাই পছন্দ করবে। মাঝে মাঝে এমন রান্না হলে মন্দ কি!
সবাইকে শুভেচ্ছা।
কৃতজ্ঞতাঃ মানসুরা হোসেন