মার্গারেট উল্ক (Margot Wölk বা Margot Woelk) দুনিয়াতে বেঁচে থাকা সব চেয়ে প্রবীণ একজন খাদ্য পরীক্ষক (Food Tester)। বর্তমানে তার বয়স ৯৭ বছর এবং তিনি জার্মানীর বার্লিন শহরে এখন বাস করেন। আজ আমি আপনাদের এই প্রবীণ খাদ্য পরীক্ষকের গল্প শুনাবো।
১৯৪২ সালে তিনি জার্মানীর হিটলারের খাবার পরীক্ষা করে দেখার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন, তবে এই চাকুরী যে তিনি নিজে ইচ্ছা করে নিয়েছিলেন তা নয়, অনেকটা জোর করেই তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। জার্মান চ্যন্সেলর হিটলার এবং তার প্রেয়সী ইভা তাদের নিত্য বা দৈনিক খাবার/খাদ্য খেয়ে পরীক্ষা করার জন্য যে পনরজন মহিলা কর্মী নিয়োগ করেন মার্গারেট তাদের মধ্যে একজন। খাবারের স্বাদ কেমন তা জানা এই পরীক্ষকদের কাজ ছিল না! এই পরীক্ষকদের কাজ ছিল খাবারে বিষ মেশানো আছে কি না তা নিজে খেয়ে পরীক্ষা করা! কাজের নমুনা বুঝে নিন, ভাবুন কি কঠিন পরীক্ষায় তারা নিয়োজিত ছিলেন!
দীর্ঘ দিনের মৌনতা ভেঙ্গে মার্গারেট গত বছর তিনি হিটলারের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা এক ব্রিষ্টিশ সাংবাদিকে বলেন এবং এর পর তাকে নিয়ে সারা দুনিয়ার মানুষের মধ্যে আড়লোন সৃষ্টি হয়। তিনিই উক্ত পনরজন খাদ্য পরীক্ষকের মধ্যে একমাত্র জীবিত সদস্যা!
চ্যান্সেলর হিটলার এবং প্রেয়সী ইভা খাদ্যরসিক ছিলেন। তবে তাদের ভয় ছিল যে, খাদ্য কেহ বিষ মিশিয়ে তাদের মেরে ফেলতে পারে। এই ভয়েই তারা তাদের জন্য রান্না করা খাবার তাদের সামনে আনা হলে তা আগে এই সব রান্না পরীক্ষকদের খাইয়ে টেষ্ট করা হত, পয়েজন আছে কি না বা এই খাবার খেয়ে তারা মারা পড়বে কি না! মার্গারেট জানান, আগত খাবার খাবারের আগেও কাঁদতে (তার ভাষায় ‘কুকুর কান্না’) হত এবং খাবার খেয়েও কাঁদতে হত (বেঁচে যাবার আনন্দের কান্না শেষেরটা)। খাবার খেয়ে এই পরীক্ষকদের ঘন্টা খানেক দাঁড় করিয়ে রাখা হত, খাবারের বিক্রিয়া কি তা জানার জন্য, এবং পরীক্ষা সফল হলেই হিটলার, ইভা ও তার সঙ্গীরা ওই সব খেত।
আগের দিনের রাজা বাদশার অনেক কাহিনী শোনা যেত যে, তারা খাবার গ্রহনের আগে তা বিড়াল বা অন্য কোন প্রানী দিয়ে খাবার টেষ্ট করিয়ে নিত, তাতে কোন বিষ আছে কি না তা দেখার জন্য। সম্ভবত হিটলারই মানুষ দিয়ে এই কাজ করিয়ে নিতেন! শুধু এই মার্গারেট নন, এই কাজে অনেক তরুণীকে তিনি নিয়োগ দিয়েছিলেন এবং মার্গারেট জানান, অনেক তরুণীর কান্নার শব্দ তিনি শুনেছিলেন।
তবে হিটলারের খাবারের গল্প অনেক কম জানা গেলেও মার্গারেট থেকে জানা যায়, হিটলার যুদ্ধ শুরুর আগে খোলা মাঠেই সৈনিকদের সাথে নানান ধরনের তাজা ফলমূল খেতেন। এস্পারাগাস ছিল তার পছন্দের একটা খাবার, ক্যাপ্সিকাম তিনি পছন্দ করতেন।
যাই হোক, প্রায় তিন বছর মার্গারেট হিটলারের অফিসে এই কঠিন দায়িত্ব পালন করেছেন এবং হিটলারের পতনের সময় তিনি অন্য একটা অফিসে থাকায় বোমার আঘাত থেকে প্রানে বেঁচে পালিয়ে যান। রাশিয়া জার্মানী দখল করে নিলে তিনি বুড়োর বেশ ধারন করে বার্লিনে কোনমতে জীবন ধারন করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি, রাশিয়ার সৈন্যদের হাতে তিনি ধরা পড়ে যান এবং ১৪ দিন তিনি রাশিয়ার সৈন্যদের দ্বারা ধর্ষিত হন। এই রাশিয়ার সৈন্যদের ধর্ষনের ঘটনা তার জীবনে এক বিভীষিকাময় অধ্যায়, যা ভুলে থাকা প্রায় অসম্ভব।
খাদ্য পরীক্ষক মার্গারেট একবার বিবাহ বা লিভ টুগেদার করেছিলেন বলে জানা যায়, স্বামী বা সংগী যুদ্ধের সময় প্রায় ছয় বছর নিখোঁজ ছিলেন এবং পরে দেখা হলেও আর একসাথে থাকেন নাই। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন, বয়স পঞ্চাশের কিছু আগে তিনি একজন মেয়ে সন্তান কামনা করছিলেন কিন্তু তার সেই আশা আর পূর্ন হয় নাই। ৯৭ বছর বয়সে এসে তিনি ভাবেন, এখন যদি তার একজন মেয়ে থাকত তবে তার বয়স ৫০ হত!
বার্লিনে এখন তিনি একাকি জীবন যাপন করেন এবং মাঝে মাঝে সেই কঠিন দিন গুলোর কথা মনে করেন। বিশেষত খাবার টেষ্ট করার আগে ও পরের কান্না তার এখনো কানে বাজে, প্রতিবেলা খেয়ে মরে যাবার কান্না এবং আবার সেই খাবার খেয়ে বেঁচে থাকার কান্না!
তথ্য সুত্রঃ ডেইলী মেইল অনলাইন, উইকিপিডিয়া এবং অন্যান্ন অনলাইন নিউজ
ছবিঃ ডেইলী মেইল ও নেট থেকে
Ekhono emon hoy, nanan deshi eamon ekhono hocche.
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ বোন।
আসলে একদিন সারা বিশ্ব এক হয়ে যাবেই!
শুভেচ্ছা।
LikeLike