গ্যালারি

রেসিপিঃ রেড বিন (দেশী কায়দায় রান্না, সময় সাড়ে ৪ ঘন্টা)


বাংলাদেশের বিবাহিত ছেলেরা ঘর সংসারের কাজ করতে চায় এবং বিবাহের কিছু সময় পরে তা করতেও চেষ্টা করে কিন্তু স্ত্রীর কারনেই সে আবার নিজকে তুলে নেয় বা কাজ থেকে বিরত থাকে। এমনও হয় ছেলেরা একটা প্লেট ভাল করে ধুয়ে রাখলেও তাতে ময়লা দেখে স্ত্রীরা! খুটিনাটি বিষয় নিয়েও স্ত্রীরা রান্নাঘরে এমন কি ঘরেও এমন সব কথা বলে যে তা সহ্য করা অনেক সময়েই ছেলেদের জন্য মুস্কিল হয়ে দাঁড়ায়। কাজে কাজেই ছেলেরা ঘর সংসারের কাজ আর করতে চায় না এবং করেও না! বিষয়টা আমার চেয়ে আর কে বেশী জানে! আমাকে যদি কোন দিন অনলাইনে বাংলা রেসিপির জন্য পুরুস্কার দেয়া হয় তবে আমি বলব এর চেয়ে আমাকে আমার ধৈর্য্যর জন্য পুরুস্কার দিন! কারন আমি যে কষ্ট করে রান্নাঘরে টিকে ছিলাম তার জন্যই আমি পুরুস্কার চাই!

যাই হোক, প্রায় রান্নাতে তেমন ধৈর্য্য না ধরতে হলেও এই দুনিয়াতে বেশ কিছু রান্না আছে যার জন্য ধৈর্য্য অপেক্ষা অত্যান্ত জরুরী। হ্যাঁ, আমি রেড বিন রান্নার কথা বলছি। অনেকে এটাকে রেড কিডনী বিনও বলে থাকেন। আসলে এই রেড বিন এতই শক্ত যে, আপনাকে প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা বা তারো বেশী সময় রান্না করতে হবে। আমাদের দেশে রেড বিন জনপ্রিয় খাবার না হলেও, দুনিয়ার অনেক দেশে এই বিন, খুবই জনপ্রিয়। বিশেষ করে নর্থ আমেরিকায় এই বিন প্রতি বেলায় অনেকে খেয়ে থাকেন। তবে এই রেড বিন অনেক পুষ্ঠিকর এবং শরীরের জন্য ভাল। শিশুদের জন্য বেশ দরকারী। অনেক দেশে এই রেড বিনের আটাও চলে।

আমি এক কেজি রেড বিন কলকাতা থেকে নিয়ে এসেছিলাম। পরে নেটে এটা রান্নার অনেক রেসিপি দেখি এবং ব্রাজিল, কলাম্বিয়া, মেক্সিকো সহ নানান দেশের খাবারে এই রেড বিন দেখেছি। সব জায়গাতেই অনেক সময় নিয়ে এই রান্না করা হয়েছে। আমি ওদের মত মশলাপাতি নেই বলে এবং যেহেতু এটা একটা ডাল জাতীয় খাবার তাই আমাদের মত করেই রান্নার চেষ্টা করলাম। চলুন দেখে ফেলি।

উপকরণঃ
– রেড বিন, ৩০০ গ্রাম (চার/পাচ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে)
– পেঁয়াজ কুঁচি বা বাটা, হাফ কাপ
– আদা বাটা, এক টেবিল চামচ
– রসুন বাটা, দুই টেবিল চামচ বা রসুন কুঁচি
– শুকনা মরিচ, কয়েকটা
– শুকনা মরিচ গুড়া, ১ বা হাফ চা চামচ (ঝাল বুঝে)
– হলুদ গুড়া, ১ চা চামচ
– গরম মশলা (এলাচি কয়েকটা, দারুচিনি কয়েক পিস)
– এক টেবিল চামচ ভিনেগার
– এক চা চামচ চিনি
– লবন, পরিমান মত
– তেল, হাফ কাপ কম বেশি
– পানি, পরিমান মত

– বিলাতি ধনিয়া পাতার কুঁচি (চাইলে দেশী ধনিয়া পাতার কুঁচিও দিতে পারেন)

প্রনালীঃ (ছবি কথা বলে)

ছবি ১, রেড বিন দেখেই প্রান জুড়াবে।


ছবি ২, সামান্য লবন যোগে ভাল করে সিদ্ধ করে নিতে হবে।


ছবি ৩, পানি ঝরিয়ে রেখে দিতে হবে।

মুল রান্নাঃ (সাধারণ ডাল রান্নাই)

ছবি ৪, কড়াইতে সামান্য লবন যোগে তেল গরম করে নিতে হবে।


ছবি ৫, পেঁয়াজ, মরিচ, আদা, রসুন ও গরম মশলা দিয়ে একসাথে দিয়ে ভাল করে ভেঁজে নিন।


ছবি ৬, এবার হাফ কাপ পানি দিয়ে দিন।


ছবি ৭, এই রকম হয়ে যাবে, আগুন মাঝারি আঁচে থাকবে, নাড়াতে ভুলবেন না।


ছবি ৮, এবার হলুদ ও মরিচ গুড়া দিয়ে দিন এবং ভাল করে মিশিয়ে আরো হাফ কাপ পানি দিন।


ছবি ৯, হয়ে গেল ঝোল।


ছবি ১০, জ্বাল দিয়ে তেল উঠিয়ে নিন।


ছবি ১১, এবার সিদ্ধ বিন গুলো দিয়ে দিন।


ছবি ১২, কিছুক্ষন জ্বাল দিয়ে আবারো পানি দিন। সাথে দিন এক চামচ ভিনেগার এবং এক চামচ চিনি।


ছবি ১৩, এবার অল্প আঁচে ঢাকনা দিয়ে রেখে দিন। পানি কমে গেলে আবার পানি দিন এবং যতক্ষনে না বিন গুলো গলে নরম হয়ে যায় ততক্ষন পানি কমে গেলে আবারো দিন এবং ঢাকনা দিয়ে রাখুন। মুল সময়টা এখানে লাগবে। এই রেড বিন অত্যান্ত শক্ত এবং  নরম হয়ে অনেক সময় নেয়। আমার প্রায় ঘন্টা চারেক লেগেছিল তার পরেও মনে হয়েছে আশানুরূপ নরম হয় নাই।


ছবি ১৪, এই অবস্থায় আসলে, ফাইন্যাল লবন দেখুন, লাগলে দিন। রেড বিনের একটা আলাদা ঘ্রান আছে সেটা গেল কি না দেখে নিন।  নরম হয়ে বিন গুলো খাবার উপযুক্ত হল কি না ভাল করে দেখে নিন।


ছবি ১৫, এবার ধনিয়া পাতার কুঁচি ছিটিয়ে দিন।


ছবি ১৬, পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত।


প্লেন খিচুড়ি, পোলাউ বা সাদা গরম ভাতের সাথে খেতে পারেন।

আপনি চাইলে গরুর গোসতের সাথেও এই বিন রান্না করতে পারেন। প্রানালী একই, শুধু মশলাপাতি আরো বাড়িয়ে দেবেন এবং গোশত ভাল করে কষিয়ে তার পরেই এই রেড বিন দেবেন।

আমার রান্না টেষ্টার বুলেট পছন্দ করেছে তবে রেড বিনকে কিছু বকেছেও! এত শক্ত কেন?

সবাইকে ধন্যবাদ। হাতে আরো কিছু এই রেড বা কিডনি বিন আছে, দেখা যাক সামনে আবার কি রান্না করতে পারি। আপনাদের এই রেড বিনের কোন মজাদার রান্না জানা থাকলে জানাতে ভুলবেন না!

ভাল থাকুন।

5 responses to “রেসিপিঃ রেড বিন (দেশী কায়দায় রান্না, সময় সাড়ে ৪ ঘন্টা)

  1. রেড বিন আমাদের বাসায় খুব চলে, পুষ্টিকর একটা খাদ্য। আমরা অবশ্য প্রায় সময়ই টিনের রেড বিন ব্যাবহার করি, সিদ্ধ করার ঝামেলা নেই, পুষ্টিগুণও অক্ষুন্ন থাকে। তবে শুকনা বিন রান্না করলে সেটার স্বাদ আরো ভালো হয়, টিনের থেকে। আমরা এটা দিয়ে সালাদ বানিয়ে খাই, পেয়াজ-সেলেরি-অলিভ তেল ইত্যাদি বা ক্যানের টুনা দিয়ে। অফিস লাঞ্চ হিসেবে চমৎকার—গরম না করেও খেয়ে নেওয়া যায়, এই রেসিপিটা বেশ ফলো করি(http://goo.gl/BIkN0V)। এছাড়াও বিনের আরেকটি জিনিস খুব পছন্দ—বিন চিলি। আমেরিকায় বিশেষ করে দক্ষিণে “চিলি” নামে একটা বেশ সুস্বাদু ঝাল কারি তৈরী করা হয় টমেটো, বিন আর মাংস দিয়ে। এতে একটা মূল উপকরণ থাকে এই কিডনি বীন। হাতে সময় থাকলে আমি এই রেসিপিটা ফলো করি http://goo.gl/dLjBcJ। ভারতীয়রা দেখেছি কিডনি বিনের রাজমা(মূলত বিনের কারি) বেশ পছন্দ করে খায়।

    বিন অনেক সময় দেখেছি পুরোনো হলে সিদ্ধ হতে চায় না, আবার কিছু বিন পেয়েছি এমনিতেই এরকম। হাড়ি ভর্তি পানিতে ১/২ চামচ বেকিং সোডা গুলিয়ে তাতে বিন সারারাত ডুবিয়ে রাখলে বেশ নরম হয়। এদেশে এমনিতেই যেকোন শুকনা বিন একরাত ভিজিয়ে পরেরদিন রান্না করে দেখেছি।

    Liked by 1 person

    • ধন্যবাদ রনি ভাই। আগে বলেন, কেমন আছেন? অনেকদিন পর পর আপনার দেখা পাওয়া যাচ্ছে। ভাবী ভাল আছেন? পরিবারে নুতন মেহমান আসছে কি! হা হা হা…

      যাই হোক, এই রেড বিন নিয়ে আমি আসলে কিছুটা কনফিউজড ছিলাম। আমি ভেবেছিলাম, সিদ্ধ হতে বাধ্য! হা হা হা… তবে এটা ঠিক সারা রাত ভিজিয়ে রাখলে অবশ্যই সিদ্ধ হয়ে নরম হয়ে যাবে। আমি বিদেশী রান্না গুলোর সময় দেখে পরে বুঝতে পেরেছিলাম।

      হাতে এখনো ৬০০ গ্রামের মত রেড বিন আছে, দেখি সামনে আর কি কি রান্না করা যায়। আপনার দেয়া লিঙ্ক গুলো ঘুরে আসছি। দারুন।

      ইন্ডিয়াতে রেড বিন ভালই চলে, আমি এগুলো ইন্ডিয়া থেকেই কিনেছিলাম।

      শুভেচ্ছা। মাঝে মাঝে উকি দিয়ে যাবেন? দেশে আসবেন কবে?

      Like

  2. সাহাদাত ভাই, আমি সোমনাথ, কলকাতা (হাওড়া বললে আরো ঠিক বলা হবে) থেকে লিখছি। এই রেড কিডনি বিন কে আমরা বাংলায় এখানে রাজমা বলি। আমাদের বাঙালি দের মধ্যে রাজমা খাবার চল খুব বেশি না থাকলেও মারাঠি আর কাশ্মিরিরা রাজমা খেতে খুব ভালোবাসেন। আপনি রাজমা সেদ্ধ করতে গিয়ে যে বিপদে পড়েছেন (৪ ঘন্টায় ও সেদ্ধ হয়নি) সেটা থেকে আপনি খুব সহজে উদ্ধার পেতে পারেন। আমরা বাড়িতে রাজমা রান্না করি প্রেশার কুকারে। প্রথমে সেদ্ধ করে নিই ৪ খানা সিটি দিয়ে। সময় লাগে ২০ মিনিট। তারপর তাকে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, জিরে, ধনে, লঙ্কা গুঁড়ো আর টমেটো দিয়ে রান্না করুন কষে। টক দই দিতে পারেন, ভালো লাগবে। নামাবার আগে, একটা বড় হাতায় কিছুটা ঘি নিন, গরম করুন, এবারে তাতে কিছু গোটা জিরে, শুকনো লঙ্কা আর কয়েকটা দারচিনির টুকরো দিন। কয়েক সেকেন্ড পর এটা রাজমার ছড়িয়ে দিন। এবারে দিন কিছুটা মেথি পাতা (কাসুরি মেথি বলেন অনেকে), আর একদম শেষে পাঞ্জাবী গরম মশলা গুঁড়ো (দারচিনি,লবঙ্গ, ছোটোএলাচ, জিরে, ধনে) ছড়িয়ে দিন ওপরে। এক বার নেড়ে নিয়ে উনুন থেকে নামিয়ে নিন। খুব সরু সরু করে আদা কুচি, ধনেপাতা আর লেবু সাজিয়ে পরিবেশন করুন। আশাকরি আপনার খুদ ভালো লাগবে। মারাঠিরা খান রুটি বা পরটার সঙ্গে, আর কাশ্মিরিরা খান ভাতের সঙ্গে। মারাঠিদের ধরনে রান্নায় ঝোল খুব কম থাকে, আর ঝাল, টক ভাব বেশি থাকে। কাশ্মিরি দের ঝাল কম আর মৌরি বাটা দেন ওনারা নামাবার আগে, আর টক দই ওনারা দেন না। এইটুকুই তফাত। আমি মারাঠি ধরনেই করে থাকি বাড়িতে।

    পুঃ – আমার ব্লগে (http://dwitiyaadhyay.blogspot.in/) রসনা বিভাগে সামান্য তিন চার খানা রান্না দেওয়া আছে। আপনার ভান্ডারের কাছে তা কিছুই না যদিও।

    Liked by 1 person

    • ধন্যবাদ সোমনাথ ভাই,
      আপনার কমেন্ট এবং বিস্তারিত লেখার জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমি এই রেডবিন কলকাতা নিউমার্কেট থেকেই কিনেছিলাম। আমি বিদেশী রান্না গুলো খুজতে গিয়েই কনফিউজড হয়ে পড়েছিলাম। আশা করি আগামীতে আপনাদের দেয়া তথ্য মতে রান্না করতে পারবো এবং ভাল হবে।

      আপনার সাইট দেখে ভাল লাগলো। আমাদের চেষ্টা চলুক। সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষীরা আমাদের দেখুক।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  3. খালেদা এদিব খান

    রেডবিন অষ্ট্রেলিয়াতেও খেয়ে থাকে, তবে সাইজ আর একটু বড়।

    Like

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]