দুনিয়াতে যে কয়েকজন মানুষ সব কিছু খেতে পারে তার মধ্যে বিয়ার গেলিস অন্যতম। এই লোকটার নানা এডভেঞ্চার দেখি আর ভাবি, একটা মানুষ কি না পারে? চাইলে একটা মানুষ কতটা শক্তিশালী হতে পারে। আকাশ থেকে লাফ দেয়া, পানিতে দিনের পর দিন পড়ে থাকা, বরফে সাতার কাঁটা কত কি! বিশেষ করে তার পথে কুড়িয়ে পাওয়া খাবার খেতে দেখে অবাক না হয়ে পারা যায় না!
Picture Courtesy: Bear Grylls – Weirdest Eating
আমাদের দেশে পরিবার গুলোতে খাবার বাছাবাছি একটা চরম ব্যাপার! চাচা এটা খেলে মামা ওটার ধারে কাছেও যেতে চান না। আবার বড় ছেলে এটা খেলে ছোট ছেলে সেটা দেখলে বমি করে ফেলে! স্বামী খুশি মনে বাজার থেকে ডাটা নিয়ে এলে স্ত্রী হয়ত সেই ডাটা দিয়েই স্বামীকে প্রহার করতে চান! দাদা হয়ত পথে বেল পেয়ে নিয়ে এলেন, হালকা গরমে শরবত পান করবেন, এদিকে দাদী বেল দেখেই রেগে আগুন! তোমার আর এই জীবনে হুঁশ হল না! বেলের গন্ধে আমার নাড়ীভুড়ি বের হয়ে আসে, এতদিনেও এটা তুমি জানতে পারলে না! খাবার দাবার নিয়ে কত কি যে কারবার! পরিবারে যিনি এই খাবার দাবারের ব্যাপারটা খেয়াল করেন (বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ‘মা’) তার যে কত জ্বালা! কত করে যে সবাইকে ম্যানেজ করেন।
সে যাই হোক, আজকের আমাদের রান্না হচ্ছে ছাগলের মগজ ভুনা। অনেকে মগজের এই খাবারের কথা শুনলে হয়ত আর খেতে চাইবেন না! কিন্তু মগজ ভুনা একটা মজাদার খাবার এবং সারা বিশ্বেই এই মজাদার খাবার খাওয়া হয়ে থাকে। যে সকল প্রানীর মাংশ বা গোশত আমরা খেতে থাকি তাদের মগজ মোটামুটি সবাই খেয়ে থাকেন। অবশ্য বিয়ার গেলিস এমন মগজ পেলে নিশ্চিত রান্না করার প্রয়োজন মনে করবেন না!
ছোট বেলা থেকে পরিবারের শিশুদের যা খাবার খাওয়ানো হয় বড় হয়ে সে তাই খেতে চলে। আমাদের পরিবারে বছর দুই একবার এমন মগজ রান্না (ভুনা) করা হত। নিজে পরিবারের প্রধান হয়েছি অনেক আগে, তবে খুব একটা মগজ কেনা হয় না, কদাচিৎ। কয়েকদিন আগে এমনি বাজারে ছাগলের মাথা দেখে ভাবলাম কিনে ফেলি, মাথার মাংস এবং মগজ খাওয়া যাবে এবং সাথে আমাদের ছেলেটার জন্যও একটা নুতন খাবারের অভিজ্ঞতা হবে! রাজধানী ঢাকা শহরের অনেক হোটেলে সকালের নাস্তায় মগজ ভুনা পাওয়া যায় (আমি খেয়েছি কয়েকবার, তবে খেয়ে মন ভরে না!) সাথে চলে পরোটা। যাই ভাবা, তাই কাজ। নিজ হাতে মগজ ভুনা করলাম আমি আর অন্যদিকে আমার ব্যাটারী বানালেন পরোটা! রাতের খাবারটা বেশ জমে ছিল!
চলুন কথা না বাড়িয়ে সেই মগজ রান্না দেখে ফেলি। ছোট বেলার দেখা সেই ভুনা মনে করেই এই রান্না! সাথে আছে আমার ব্যাটারী অভিজ্ঞতা!
উপকরণঃ
– মগজ (আমরা পাঁচটা ছাগলের মগজ নিয়েছিলাম)
– পেঁয়াজ কুঁচিঃ হাফ কাপ
– রসুন বাটাঃ ১ চা চামচ
– আদা বাটাঃ ১ টেবিল চামচ
– দারুচিনিঃ ২ সেমি, ২/৩ টুকরা
– এলাচিঃ ৩/৪ টা
– লাল মরিচ গুড়াঃ পরিমান মত
– হলুদ গুড়াঃ হাফ চা চামচ
– জিরা গুড়াঃ এক চিমটি
– কয়েকটা কাঁচা মরিচ
– লবন পরিমান মত
– তেলঃ হাফ কাপের কম
– পানি (পরিমান মত)
প্রনালীঃ
মগজ গুলো পানিতে চুবিয়ে ভাল করে ধুয়ে নিন। ভেঙ্গে বা কেটে ছোট ছোট পিস করার দরকার নেই। অপ্রয়োজনীয় অংশ গুলো/ রগ ফেলে দিন মাত্র।
কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুঁচি ভাজুন এবং একে একে লবন সহ উপরে উল্লেখিত সব মশলাপাতি দিয়ে ভাল করে ভাজুন/ মিশান।
এর পর এক কাপ পানি দিয়ে ভাল করে কষাতে থাকুন। ব্যস ঝোল হয়ে গেল। এই ঝোলের স্বাদই পুরা রান্নায় আলাদা আনন্দ এনে দেবে। লক্ষ রাখবেন, এই ঝোলের ঘ্রান যেন বেশ হয়!
মাধ্যম আঁচে ঝোল অনেকটা এমন দেখাবে। মাঝে মাঝে নাড়াতে ভুলবেন না।
এবার ঝোলে মগজ গুলো দিয়ে দিন।
কিছুক্ষনের জন্য ঢাকনা দিয়ে দিন। সামান্য সময়েই মগজ মিশতে শুরু করবে। এবার আপনি খুন্তি দিয়ে কিছুটা কেটে কেটে দিতে পারেন। চাইলে বড় আকারেও রেখে দিতে পারেন।
এমন রুপে আসতে বেশী সময় লাগবে না। এবার ফাইন্যাল লবন দেখুন এবং ঝোল কেমন রাখবেন তা আপনি নিজে ঠিক করুন। আগুনের আঁচ বাড়িয়ে দিলে ঝোল কমে রিয়েল ভুনা হয়ে যাবে।
ব্যস পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত। টেবিলে নিয়ে চলুন।
খাবার টেবিলে! ভিনেগার/পানি দিয়ে একটা পেঁয়াজ ও কয়েকটা কাঁচা মরিচ কেটে নিতে পারেন। সাথে তো পরোটা আছেই (পরোটার রেসিপিটা রেকর্ড করা হয়েছে, একদিন দেখিয়ে দেব)।
তুলনা নেই! এই রেসিপি লিখতে গিয়ে বার বার মনে পড়ছে, মগজ খেলে কি মগজ বাড়বে! মাথায় কি আরো বুদ্ধি যোগ হবে? অনেক চায়নিজ, কোরিয়ান তো এমনই কথা বিশ্বাস করে!
সবাইকে ধন্যবাদ। এমন খাবার বছরে সবার একবার করে হলেও জুটুক।
প্রিয় বন্ধুরা, আপনাদের অনেকের কমেন্টের জবাব সময় মত দিতে পারছি না। একে নেট লাইন স্লো এবং সময় কিছু কম পাচ্ছি। যে সময় পাচ্ছি তাতে পোষ্টে মন দিচ্ছি বেশি, হাতে এখনো অনেক রেসিপি। আশা করি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাইকে শুভেচ্ছা।
LikeLike
Ami hate guna koyak bar ei brain curry khayachi. Apner ranna dekhe shei kotha mony porlo. Thanks.
LikeLike
ধন্যবাদ জাভেদ ভাই। হা, মগজ ভুনা বছরে এক দুইবারই জুটে।
LikeLike
Wow.
LikeLike
ধন্যবাদ সাদ ভাই।
LikeLike
আমার খুব পছন্দের একটা খাবার। তবে কোরবানী ছাড়া অন্যসময়ে খুব একটা খাওয়া হয়না বলে কিছুটা আফসোস আছে… 😦
LikeLike
ধন্যবাদ জামি ভায়া, কেমন আছেন। হা কথা ঠিক আছে।
(আপনাকে ফেইসবুকে মেসেজের জবাব দিতে পারছিলাম না… এটা উইজার্ড এ my community নামের একটা উইর্জাড। আপনি যে থিম ব্যবহার করেন তাতে আছে কি না জানা নেই)
শুভেচ্ছা।
LikeLike
ধন্যবাদ ভাইয়া। my community add করে নিলাম। 🙂
LikeLike
হা,একটু আগে আপনার ব্লগ দেখে এলাম। চলুক, আমাদের চেষ্টা। একদিন ভাল কিছু দাঁড়িয়ে যাবেই। আজকের ভাবনা আগামী দিনে কাজে লাগতে পারে।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
কথাগুলো দারুণ ভালো লাগলো।
শুভকামনা।
LikeLike
amr ma k dektam mogoz vuna namanor age kacha morich gol gol kuchi kore kete ektu chulay rekhe namato…..onk yummmmmmm
🙂
thx bhaiya
LikeLike
ধন্যবাদ বোন।
হ্যাঁ, আপনার আম্মা রান্নায় যে কাজটা করতেন তাতে অবশ্যই স্বাদ বেড়ে যাবে। আসলে এই ধ্রনের ছোট ছোট কাজে স্বাদ অনেক গুন বেড়ে যায়, যা আমরা করতে পারি না বা করি না।
আপনার আম্মাকে আমাদের সালাম জানাবেন।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
আমাদের বাসায় খুব একটা এটা খাবার চল নেই। আমি ট্রাই করতেও পারি। আপনার হাতের রান্না নিশ্চয়ই অনেক ভালো, কিন্তু এটা আমি রাঁধতে গেলেই কিছু একটা গেঞ্জাম হয়ে যাবে। কেন যেন কোন ভাবেই ভালো রাঁধতে পারিনা আমি 😦
বিয়ার গেলিস এর পিকচার টা ভয়াবহ। আল্লাহ মাফ করুন এভাবে অখাদ্য খাবার সিচুয়েশন যেন কখনও না হয়।
LikeLike
ধন্যবাদ বোন।
প্রথম বার রান্না ভাল নাও হতে পারে, পরের বার নিশ্চয় ভাল হবেই। রান্না যেহেতু অভিজ্ঞতার ব্যাপার তাই চেষ্টা করে যাওয়াই ভাল। আপনিও ভাল রান্না করেন এটা বুঝা যায়।
ছবিটা শুধু মজা করার বা দেখানোর জন্যই দেয়া হয়েছে।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
পিংব্যাকঃ এক নজরে সব পোষ্ট (https://udrajirannaghor.wordpress.com) | BD GOOD FOOD
আজকে আবার রান্না করলাম খাসির মগজ ভুনা। সেই টেস্ট! এই রেসিপিটা আর চিংড়ি ধনিয়া পাতা কাচা মরিচের পেস্ট দিয়ে রান্নার রেসিপিটা আমার ফেভারিট।
LikeLike