গ্যালারি

রেসিপিঃ ভুড়ি রান্না (বেসিক রান্না, কিছু কাজ আপনার হাতে যোগ করে দিতে পারেন)


গল্প ও রান্নায় গরুর ভুড়ি রান্না নেই, কথাটা এযাবৎ অনেকবার শুনতে হয়েছে। কারন হিসাবে অনেকে বলেন বা বলে আসছেন ভুড়ি রান্না আমাদের দেশের একটা জনপ্রিয় খাবার, বিশেষ করে আমাদের দেশের মহিলা সমাজে এই রান্না খুবই জনপ্রিয়, অনেকে খুব শখ করে খেয়ে থাকেন। আমিও তা মনে করি। আমাদের বাড়ির প্রায় মহিলা, মেয়ে এমন কি অনেক পুরুষের কাছেও এটা একটা মজাদার খাবার। আমি নিজেও পছন্দ করি, বছরে একবার তো কিছু হলেও খাই! এখানে পাঠক/পাঠিকাদের জন্য বলি, আপনাদের পরিচিত ব্যাটারী ও বুলেট এই খাবার খুবই পছন্দ করে থাকেন।

যাই হোক, গত কয়েক দিন আগে প্রবাসী দুই বোন ভুড়ি রান্না নিয়ে অনেক কথা বললেন, এক বোন জানিয়েছিলেন, বিশেষ আনন্দের দিন এলে তিনি তিন দিন আগে থেকে ভুড়ি রান্না করে জ্বাল দিয়ে শুকিয়ে বিশেষ দিনে পরিবেশন করেন। এদিকে অন্য বোন জানিয়েছেন, তিনি এ যাবত কতবার দেশ থেকে ভুড়ি নিয়েছেন সেটার হিসাব বের করতে একাউন্টেন লাগবে! এবং দাওয়াত বা মেহমানদের সামনেও তিনি এই ভুড়ি রান্না পরিবেশন করে থাকেন, যার ইচ্ছা খেয়ে থাকেন! তিনি নিজে দেখেছেন, অনেকে এই ভুড়ি রান্না পেলে আর অন্য তরকারি বা মাংশ জাতীয় রান্না ধরে দেখেন না! তবে পরিমানে অল্প রান্না করেন বলে কাউকে দুই চামচের বেশী নিতে উৎসাহ দিয়ে থাকেন না! হা হা হা।।

এবার আমার ভুড়ির গল্প, অফিস থেকে ফেরার পথে আমি বাস থেকে নেমেই প্রায় প্রতিদিন ভুড়ি রান্নার ঘ্রান পেয়ে থাকি। আমাদের রাস্তার মাথায় এক ফুটপাতের দোকানে এই রান্না হয়ে থেকে। অনেক লোককে দেখি দাঁড়িয়ে এই ভুড়ি রান্না পরোটা দিয়ে খেতে। আমি কখনো খেয়ে দেখি নাই, তবে ঘ্রানেই কাইত হয়ে পড়ি। দাঁড়িয়ে খেতে পারি না যদি আমাদের বাড়ির কেহ বা শ্বশুর পক্ষের কেহ দেখে ফেলে! হা হা হা…। কত কিছু ভেবে এই দুনিয়াতে চলতে হয়!

যাই হোক, গত কয়েকদিন আগে মাংস বিক্রেতা থেকে ভুড়ি কিনে বাসায় চলে আসি, আগেই বলে নেই ভুড়ি পরিস্কার একটা ঝামেলা পূর্ন কাজ এবং এই কাজটা পুরোই করে দিয়েছে মাংশ বিক্রেতা। এমন কি সে চুন দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার করে দিয়েছিলো। পুরো পরিস্কারের পর কেজি দরে বিক্রি করছিলো। এই পরিস্কারের পর আবারো বাসায় পরিস্কার করা হয়েছিলো, আমাদের ঝামেলা কম হয়েছিল। চলুন রান্না দেখি, তবে ধাপ গুলো জানিয়ে দেই।

১) প্রথম ধাপঃ ভুড়ি পরিস্কারের পর সিদ্ধ করে আবারো ভাল করে পরিস্কার করে নিতে হবে এবং এর পর ছোট ছোট টুকরা করে নিতে হবে। এই ধাপ গুলোর ছবি দেখানো হয় নাই। তবে প্রথমে ভুড়ির ময়লা পরিস্কারের পর চুনের পানিতে চুবিয়ে রাখতে হয়, এতে যদি কোন জীবানু থাকে তা মরে যায়, তার পরেও ভাল করে সিদ্ধ করে নিতে হয়।
২) ২য় ধাপঃ ভুড়ি রান্না (পেঁয়াজ ছাড়া)
৩) ৩য় ধাপঃ পেঁয়াজ দিয়ে ভাঁজা বা বাগার

পরিমান ও উপকরনঃ (পরিমান আপনিও অনুমান করতে পারেন, অনুমানিক মাঝারি এক বাটির জন্য বা অনুমানিক ৭০০ গ্রামের জন্য, পরিস্কারের পর যা পাওয়া গিয়েছিল)
– অনুমানিক ৭০০ গ্রাম ভুড়ি, পরিস্কারের পর যা পাওয়া গিয়েছিল
– গরম মসলা (এলাচি ৩/৪টা, দারুচিনি, ২/৩ পিস)
– কাঁচা মরিচ, কয়েকটা
– লাল মরিচ গুড়া, হাফ চা চামচ
– হলুদ গুড়া, এক চা চামচের কম
– আদা বাটা, এক টেবিল চামচ
– রসুন বাটা, এক টেবিল চামচ
– ধনিয়া গুড়া, হাফ চা চামচ
– জিরা গুড়া, হাফ চা চামচ
– তেল, ৮/১০ চা চামচ বা কম বেশি (প্রথম ধাপে কম)
– লবন, পরিমান মত
– পানি, পরিমান মত

বাগারের জন্য/ ভাজার জন্যঃ
– পেঁয়াজ কুঁচি, এক কাপ (একটু বেশী হলেই ভাল)
– কয়েকটা কাঁচা মরিচ, আস্ত
– তেল, ৮/১০ চা চামচ (কম বেশী, বুঝে, অনুমান আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন)

আপনি আরো যা এড করতে পারেনঃ
– টমেটো কুঁচি, যা স্বাদ বাড়াবে আরো
– ধনিয়া পাতার কুঁচি, দুই চা চামচ বা কম বেশি, যারা ঘ্রান আরো কমাতে চাইবেন

প্রস্তুত প্রনালীঃ (ছবি কথা বলে)
১ম ধাপঃ ভুড়ি পরিস্কারের পর সিদ্ধ করে আবারো ভাল করে পরিস্কার করে নিতে হবে এবং এর পর ছোট ছোট টুকরা করে নিতে হবে। এই ধাপ গুলোর ছবি দেখানো হয় নাই। তবে প্রথমে ভুড়ির ময়লা পরিস্কারের পর চুনের পানিতে চুবিয়ে রাখতে হয়, এতে যদি কোন জীবানু থাকে তা মরে যায়, তার পরেও ভাল করে সিদ্ধ করে নিতে হয়।

২য় ধাপঃ সাধারন মাংশ রান্নার মতই (মিক্স পদ্ধতিতে আমরা দেখিয়েছি তবে আপনি চাইলে সাধারন রান্নার মত আগে ঝোল বা কষিয়েও করতে পারেন, ব্যাপার না)

ছবি ১, সব মশলা, সামান্য লবন, সামান্য তেল  দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে রাখা ভুড়ি গুলো একটা হাড়িতে নিন।


ছবি ২, দুই/তিন কাপ পানি দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। (সিদ্ধ না হলে পরেও পানি দিতে পারবেন) টমেটো কুঁচিও এই সময়ে দিয়ে দিতে পারেন।


ছবি ৩, এবার মাধ্যম আঁচে ঢাকনা দিয়ে মাধ্যম জ্বাল দিতে থাকুন।


ছবি ৪, চলুক।


ছবি ৫, সময় লাগবে অনেক। ব্যাপার না। (অনুমানিক ঘন্টা দুয়েক জ্বাল চলবে) শক্ত (আসলে ভুড়ি শক্তই থাকবে, তবে যেন খাবার মত হয় সেটাই বিবেচ্য হবে) থাকলে আরো পানি দিতে পারেন।


ছবি ৬, পানি শুঁকিয়ে এই অবস্থায় নিয়ে আসবেন।

২য় ধাপঃ

ছবি ৭, এবার অন্য একটা কড়াইতে তেলে পেঁয়াজ কুঁচি, মরিচ ভাঁজুন।


ছবি ৮, পেঁয়াজ কুঁচি হলদে হয়ে আসবে।


ছবি ৯, এবার অন্য পাত্রে রান্না করা ভুড়ি গুলো এই পাত্রে দিয়ে দিন।


ছবি ১০, মিশিয়ে নিন।


ছবি ১১, আগুনের আঁচ অল্প থাকবে।


ছবি ১২, ভাঁজা চলুক। তবে সতর্কতা হচ্ছে, ভুড়ি এইভাবে ভাঁজতে গেলে ফুটে উঠে, তাই সর্তকতা জরুরী, নিরাপদ দূরে থাকুন।


ছবি ১৩, খেয়াল রাখবেন, যাতে তেল শেষ না হয়ে যায়। এই পর্যায়ে ফাইন্যাল লবন স্বাদ দেখুন, লাগলে লবন চিটিয়ে দিন, না লাগলে ওকে!


ছবি ১৪, ভাঁজাটা কেমন হবে সেটা আপনি নিজেই নির্ধারন করুন, ইচ্ছা হলে পোড়া পোড়া করতে পারেন। রুটি ভাজির সাথে খেতে হলে, একটা বেশী ভাঁজতে হয়। (অনেকে ধনিয়া পাতার কুঁচি এই সময়ে দিয়েই নামিয়ে নেন)


ছবি ১৫, পরিবেশনা।


ছবি ১৬, অসাধারন স্বাদ। এই ভুড়ির স্বাদ বুঝানো যাবে না, কারন আমি এমন দেখেছি, যারা একবার খেয়েছেন, তারা বার বার খেতে চান!

সবাইকে শুভেচ্ছা।

কৃতজ্ঞতাঃ মানসুরা হোসেন

ফেবু লিঙ্কঃ

11 responses to “রেসিপিঃ ভুড়ি রান্না (বেসিক রান্না, কিছু কাজ আপনার হাতে যোগ করে দিতে পারেন)

  1. Dakhe jib a jol ase gese. kokhono khai ni.apner ranna dakhe khub khete issa korse.

    Liked by 1 person

    • ধন্যবাদ বোন।
      ফেবুতে কমেন্ট গুলো নিশ্চয় দেখেছেন। হ্যাঁ, এটা এমনি এক খাবার যে, একবার খেলে বার বার খেতে ইচ্ছা হয়! ভুড়ি আমাদের দেশের অনেকের অত্যান্ত প্রিয়। ইনবক্স এক বোন লিখেছেন, উনাদের পরিবারে গোসত যদি ১ক কেজি কেনা হয়, এক কেজি ভুড়িও কেনা হয়! হা হা হা… ভুড়ির মজা একবার পেলেই হল।
      শুভেচ্ছা নিন।

      Like

  2. একটু খেলে সাধ মেটে না……i want more. …….😊😊😊

    Liked by 1 person

  3. ওহ!! আই লাভ ভুড়ি!!

    Liked by 1 person

  4. ভাই,ভুড়ি রান্না কি ইন্সট্যান্ট পরিবেশন করা যায়,নাকি দু-তিনদিন ধরে রান্না করতে হবে?

    Liked by 1 person

    • ধন্যবাদ বোন।
      হ্যাঁ, ইন্সট্যান্ট রান্না করেও খাওয়া যেতে পারে তবে স্বাদ কম হয় এবং শক্ত থাকে। ভুড়ির রিয়েল ফ্লেভার এবং মজা কম হয় মাত্র। আমি একবার ইন্সট্যান্ট মানে সন্ধ্যায় রান্না করে রাতে খেয়েছিলাম। ব্যাপার না।
      শুভেচ্ছা নিন।

      Like

  5. ভুড়ি আমার আমার পুত্রের খুব প্রিয়। এই রান্না আমি আমার বুয়ার কাছ থেকে শিখেছি। ভুড়ি অল্প হলুদ, আদা, তেজপাতা দিয়ে ২/৩ দিন সকাল বিকাল জ্বাল দিয়ে তারপর ভুড়ি রান্না করতো। এতো মোলায়েম আর সুস্বাদু হতো যে ভুড়ির প্রেমেই পড়ে গেলাম। আমি অবশ্য প্রেশার কুকারে ২ ঘন্টা জ্বাল দিয়ে পানি ঝরিয়ে তারপর রান্না করি।

    Liked by 1 person

    • রান্নাতো আপা, সরি ফর লেট রিপ্লাই।
      ভাগিনার পছন্দ, আমাদের পছন্দ! আমিও বেশ পছন্দ করি, তবে কেনা হয় খুব কম।
      দাঁড়ান, কালকেই আবার কিনবো। আপনার বুয়ার দেয়া ফরমুলা আনুযায়ী আমিও সকাল বিকাল জ্বাল দিয়ে রান্না করবো।
      ভুড়ি বেশ মজাদার খাবার নিঃসন্দেহে!
      শুভেচ্ছা নিন।

      Like

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]