গ্যালারি

আড্ডাঃ বন্ধুর জন্মদিনে রেস্টুরেন্টে


অফিসে কাজ করছিলাম, না! আজকাল তেমন কোন কাজ নেই। আমাদের কাজ হচ্ছে মানুষ নিয়ে কারবার, মানুষ আমাদের কাছে না আসলে আমাদের ব্যবসাও নেই। আমরা আমাদের অফিসে মানুষের আসা যাওয়া চেয়ে থাকি! সরকারের নানান সিদ্ধান্ত ও বিরোধী দলের প্রতিসিদ্ধান্ত আমাদের ইঙ্কামের বারটা অনেক আগে বেজে এখন তেরটার কাছাকাছি! বন্ধ করে এখন বাসায় বসে থাকাই উত্তম! গত মাসের বেতন কোন রকমে নিতে পারলেও এই মাসে আর বেতনের কোন আশা নাই!

যাই হোক, এমন একটা ভাবনা চিন্তার মধ্যে দিয়ে সময় কাটছিলো। এমন সময় আমার এক বন্ধুর স্ত্রী (ভাবী) ফোন করেন। আমি ভয় পেয়ে যাই! কারন তিনি আমাকে কখনো তেমন ফোন করেন না, তা ছাড়া আমার বন্ধুর সাথে আমার প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় দেখা হয়। কখনো সকালে দেখা বা কথা বলার তেমন প্রয়োজন পড়ে না। ফোন ধরে আমি কাঁপা গলায় বলি, জি ভাবী বলুন। তিনি জানালেন আজ আপনার বন্ধুর জন্মদিন, দুপুর একটার মধ্যে বিজয় নগরের ‘সুং গার্ডেন’এ চলে আসবেন। আপনার বন্ধু আমাদের দুপুরের খাবার খাওয়াবে!

আমার এই বন্ধুর হৃদয় ভাল, এই ধরনের খাবার দাবার করাতে তার জুড়ি নেই! আমি তার বাসা থেকে শুরু করে অনেক জায়গাতেই দেখেছি। কাউকে খাওয়াতে সে সব সময় বলে থাকে, ‘আমি কোথায় খাওয়াচ্ছি, এই খাবারে আল্লাহপাক আপনার রিজিক লিখে রেখেছেন, তিনিই আপনাকে খাওয়াচ্ছেন’। এছাড়া এমন অনেক সময় দেখেছি, না খেতে চাইলে সে বলে, ‘কি খাবারের উপর রাগ করলেন নাকি’! তাছাড়া আমরা যারা তার বন্ধু আছি, সবাই এক বাক্যে আমার সাথে বলবে, তার বাসায় আমাদের খাবারের কোন বাঁধা নেই। চা কফি তো ব্যাপার না, আমরা অনেকে যখন ইচ্ছা খাবার খাই! ভাবীও আমাদের জ্বালাতন তার মতই মেনে নিয়েছেন, আজকাল অবশ্য আমরাও অনেক বেশী জ্বালাত্বন করি। আমাদের অন্য এক বন্ধু কবির, সে তো বাসায় প্রবেশ করেই বলে, তাস্লী (বাসার রান্না সহকারী) চিনি কম দিয়ে এক কাপ কফি খাওয়াও তো! আর সুমনকে (বাসার অ্যাসিস্ট্যান্ট) তো আমরা আমাদের মনে করেই অনেক কিছু বলে থাকি!

যাই হোক, আমি যথা সময়ে অফিস থেকে নেমে একটা গিফট কিনে হেঁটেই সুং গার্ডেনে প্রবেশ করি, এই রেস্টুরেন্ট আমার অফিস থেকে বেশি দূরে নয়, হাটা পথ বলা চলে। অবরোধে রাস্তা ফাঁকা বলে হেঁটেই চলে যাই। তখন প্রায় দেড়টা, আমার প্রবেশের কিছু পরেই আমাদের আরো এক বন্ধু সহ স্বপরিবারে আমার বন্ধু প্রবেশ করে।


সুং গার্ডেন নিজ তলা থেকে ১৫ তলায় উঠে গেছে। নূতন সুং এর সব কিছুই বেশ বড় এবং প্রশস্ত। প্রবেশ করে দেখি পুরাই ফাঁকা। এত বড় রেস্টুরেন্ট অথচ খাওয়ার লোক নেই। মনে হচ্ছে হরতাল অবরোধ এই সকল হোটেলে পুরাই কাজ করেছে! ওয়েটার জানালেন, কিছু পার্সেল যাচ্ছে, কিন্তু লোকজন তেমন খেতে আসছেন না।

আমরা আমাদের খাবারের ওয়ার্ডার দিয়ে অনেক আড্ডা দিলাম। আপনাদের আমাদের খাবার গুলোর না দেখিয়ে পারছি না! তবে খাবার এসে যাবার কিছু আগে আমার একটা ফোন আসায় আমি কথা বলতে বলতেই দেখি, খাবারের বাটি থেকে খাবার নিয়ে খাওয়া শুরু! কাজে কাজেই কিছু খাবারের পূর্ন প্লেটের ছবি তুলতে পারি নাই! হা হা হা। বিশেষ করে স্টাটারের! মেইন ডিশের জন্যও এমন হয়েছে! ভাবী আমাদের জন্য খাবার গুলো পছন্দ করেছেন এবং তা যথাযত হয়েছে।


থাই থিক স্যুপ।


অন্থন।


ফিস ফিংগার।


ফ্রাইড রাইস উইথ কাজু নাটস!


বিফ ফ্রাই।


চিলি প্রনকারী।


বিফ চিলি।


লেমন স্পাইট।


আমার প্লেটের অবস্থা!


বলতে গেলে পুরাই ফাঁকা। আমরা প্রায় ঘন্টা খানেক ছিলাম, তেমন কাষ্টমার নেই!


আমার বন্ধুর পরিবারের জন্য দোয়া থাকল। শুভ জন্মদিন বন্ধু। আনন্দে দিন কাটুক।

যাই হোক, ‘সুং গার্ডেন’ নিয়ে কয়েকটা কথা না বললে চলে না। এটা এই বিজয়নগর এলাকার অনেক পুরাতন চাইনিজ হোটেল। হোটেল ব্যবসায় অভিজ্ঞতা প্রচুর। আগে নীচতলায় ছিল এখন নূতন বিল্ডিং, উপরের তলায় উঠে আরো আকর্ষনীয় করে সাজিয়ে তুলেছে। আমি এই হোটেলে আগেও অনেকবার এসেছি এবং পরিবার নিয়ে খেয়েছি। তবে এবার মনে হল –
– খাবার দাবারের মান তেমন আহমারী নয়, যারা নিয়মিত হোটেলে খাবার খান তাদের চোখে পড়বেই।
– কিন্তু খাবারের দাম, পরিমান এবং মানের তুলনায় অনেক বেশি।
– ওয়েটারদের আচরণ ভাল নয়, মনে হয়েছে কোন কাউন্সিলিং নেই। কাষ্টমারদের সাথে ওদের কথা এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ মোটেই ভাল লাগেনি, কর্কশ।
– সব বিষয়ে সাধারণ, মনে রাখার মত কিছু নেই।

রেসিপি/খাবার প্রিয় সবাইকে শুভেচ্ছা।

9 responses to “আড্ডাঃ বন্ধুর জন্মদিনে রেস্টুরেন্টে

  1. ছবি গুলো মোবাইলে তোলা বলে ভাল হয় নাই!

    Like

  2. দেশী চাইনিজের খাবার খুব মিস করি। দেশের চাইনিজ রেস্টুরেন্টের খাবার পুরো নিজস্ব একটা স্টাইল, এটার সাথে অরিজিনাল চীনদেশী খাবারের যেমন মিল নেই, তেমন আমেরিকান/ইউরোপিয়ান চাইনিজ খাবারের সাথেও মিল কম। শুনেছি চায়নাম্যান ও ওম্যানরা যেখানেই গিয়েছেন, সেখানেই লোকাল স্বাদের সাথে তাদের খাবার মিলিয়ে তৈরী করতেন, তাতেই এক এক দেশে চীনা খাবার এক একেক রকম। যেমন আমেরিকায়, বেশীরভাগ চীনা খাবারেই একগাদা চিনি দিয়ে মিষ্টি করে ফেলে, সে চিকেন বলেন আর বীফ! কারণ হলো, আমেরিকানরা অত্যন্ত মিষ্টি-প্রিয়।

    এখানকার বড় শহরগুলোয় “ইন্দো-চাইনিজ” কিছু রেস্তোরা থাকে, সেগুলোর খাবার অনেকটা আমাদের দেশী চাইনিজের মত, দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো আর কি!

    Like

    • ধন্যবাদ রনি ভাই।
      দেরীতে উত্তর দেয়ার জন্য ক্ষমাপ্রাথী।
      আসলেই, আমাদের এখানে যেটা চায়নিজ খাবার বলা হয় আসলে কি এটা চাইনিজ। আমার মনে হয় না। আমি বিদেশে বেশ কয়েকবার চাইনিজ রেষ্টুরেন্টে খেয়েছি। আমাদের মত নয়।

      আমার এক আমেরিকান বন্ধু বলে আমেরিকায় নাকি অনেক চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট আছে, তার কাছ থেকেই ওদের খাবারের গল্প শুনে থাকি।

      ইন্দো-চাইনিজ মানে ইন্দোনেশিয়ার চায়নিজদের খাবার। হা হা হা

      ভাল থাকুন। মাঝে মাঝে আশা করছি দেখে যাবেন।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  3. অনেক গুলো খাবারের নাম তো শুনিই নাই…

    Like

  4. Without Cake birth day pardty.:)

    Like

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]