গ্যালারি

আমাদের গ্রামের বাড়ি দেখার আমন্ত্রন


লিখেছেনঃ সাহাদাত উদরাজী (তারিখঃ ১১ নভেম্বর ২০১১, ৬:২৭ অপরাহ্ন)

আমি বড় বাড়ীর সন্তান। আমার মামারা ভাই বোন ১০ জন, চাচারাও ১০ জন! মা বাবার দুই পক্ষই জনসংখ্যায় সমানে সমান। সেয়ানে সেয়ানে! এই বিশ জনের এখন কত জন সন্তান সন্ততি তা বের করতে হলে ক্যাল্কুলেটর বের করতে হবে! খালি মুখে মুখে পারব না! তবে একটা ব্যাপার লক্ষনীয় আমাদের মামাত, চাচাত, ফুফাত ভাই বোনের আবার সন্তান সন্ততি কম। বড় জোরে দুইটা কিংবা একটা! প্রায় সবাই আমরা শিক্ষিত এবং অনেকে বেশ টাকা কড়ির মালিকও বটে! ছেলে কিংবা মেয়ে যাই হোক আমরা সবাই প্রায় একটাতেই আটকে গেছি! আমাদের বাপ চাচারা ও মামারাও আমাদের মত ভাবছিলেন হয়ত! তাদের সবার সন্তান সন্ততি গোটা ৪/৫ এর বেশী হয় নাই!

আজ আমাদের কথাই বলি। আমরা চার ভাই বোন। তিন ভাই, এক বোন। ঈদ চান ছাড়া এখন আর কারো সাথে কারো দেখা হয় না। জীবন জীবিকার প্রয়োজনে সবাই এখন আলাদা আলাদা, বসবাসও আলাদা আলাদা শহরে। পিতার মৃত্যর পর আমাদের মাকে আর কিছুতেই ঢাকা রাখা গেল না। তিনি ইচ্ছা মত এখন ঘুরে বেড়ান। গ্রাম বেশী পছন্দ করেন, বাবার কবরও গ্রামে (এটা বাবার শেষ ইচ্ছা ছিল, প্রায় ৫০ বছর ঢাকা থেকেও গ্রামে কবর দিতে বলে যান যদিও আমি তাকে গ্রাম যেতে তেমন দেখি নাই)। আজ এই ছেলে তো কাল ওই ছেলে, এই শহর তো ওই শহর, তবে ইতালীতে তিনি আসল ঘাঁটি গড়েছেন বলে আমি মনে করি। সেখানে মেয়ের কাছে তিনি ভাল থাকেন। তবে বছরে কোন এক ঈদের দিনে তিনি সবাইকে এক সাথে দেখতে চান। কিন্তু সেটা কোথায়! গ্রামের বাড়ীতে। মায়ের একান্ত ইচ্ছায় আমাদের গ্রামের বাড়ী বানানো হয়।

এদিকে আমিও মোটা মুটি স্থির হয়েছি, যদি বুড়া কালে পৌঁছে যাই তবে গ্রামের বাড়ীই হবে আমার শেষ আস্তানা! বাবার মত আমিও ইচ্ছা পোষন করি আমার শেষ ঠিকানা আমাদের গ্রামের বাড়ীর কবরস্থানই হোক (চাঁদনী রাতে জ্যোৎস্না দেখব বলে হয়ত!)। এদিকে আমার অন্য দুই ভাই যেহেতু মেয়ের বাবা, তারাও মনে হয় বুড়াকালটা গ্রামেই কাটাতে চাইবে। মেয়ের বিয়ে দিয়ে যাবে আর কোথায়! ছোটবেলার মত বুড়োবেলায় আমরা আবার একসাথে থাকব। এক সাথে আড্ডা মারব। কত স্বপ্ন মানুষের!

যাই হোক, আমাদের চার ভাই বোনের সন্তানই একজন করে। বড় জনের মেয়ে, আমার ছেলে, ছোটজনের মেয়ে এবং ছোট বোনের ছেলে! অনেকে প্রশ্ন করে, কি রে তোরা কি আর ছেলে পুলে নিবি কিনা! আমরা তিন ভাই পিঠাপিঠি, হাসি! আমাদের উত্তর জানা নাই! আমার মনে হয় না, আর আমাদের কারো সন্তানের ইচ্ছা আছে! আমরা সবাই এক সন্তানেই বিশ্বাসী! জয় বাংলা। আমরা ভাই বোন সবাই দেশ ভালবাসি। চলুন, আমাদের গ্রামের বাড়ী দেখে আসি।


বছরে এখন বেশীর ভাগ সময়ে তালা বন্ধ থাকে তবে যার যখন ইচ্ছা ঘুরে আসে। আমি আমার অনেক বন্ধু নিয়ে যাই। নিজেরা রান্না করি, অধিক রাত জেগে থাকি, দুপুরে পুকুরে সাঁতার কাটি। আমি একবার কয়েক রাত একাই কাটিয়ে নিজের সাহসের পরীক্ষা দিয়েছি। রাত যত বাড়ে ভয় তত বাড়ে!


বাড়ীর চার পাশ নানা গাছ গাছালিতে ভরা।


গ্যাস বিদ্যুৎ পানি কোন কিছুর অভাব নেই। প্রসস্থ রান্নাঘর। খোলা মেলা।


রান্নাঘর ও ড্রাইনিং/ড্রইং রুমের মাঝে ছোট একটা জানালা আছে। অনেকটা ‘আবুল হোটেল’ টাইপ! এটা নিয়ে অনেক হাসাহাসি হয় কিন্তু আমার এই আইডিয়া এখন অনেক কাজে লাগে। আমাদের ভাইদের স্ত্রীরা রান্নাঘর থেকে বেশী হাঁটাহাঁটি করে না! ডাক দিয়ে বলে, অমুকের বাপ – বাটিটা ধর! গ্লাস গুলো নাও।


টিভি দেখার মজাই আলাদা, বড় রুম। আগামীতে একটা বড় টিভি দেয়ালে ফিট করার ইচ্ছা আছে।


সবার জন্য আলাদা আলাদা রুম, এটাচ বাথরুম। ছোট বোনের জন্যও একটা রুম বরাদ্দ আছে।


অনেক বই পত্র ছিল, কে যে কোথায় নিয়ে যাছে কে জানে! আমাকে আবার কিনে সংগ্রহ বাড়াতে হবে।


শুয়ে পড়লেই ঘুম!


ঈদের পরদিন আমার ফাজিল চাচাত ভাইরা টিভি দেখছে আর আমি নেটে।


আপনাদের জন্য হালকা ব্যবস্থা করা হয়েছে – ফালুদা, পুড়িং ও দুই পদের মিষ্টি। আর শেষে চা থাকবেই।

আমাদের গ্রামের বাড়ী দেখার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। আর যদি কোন বন্ধু তার স্ত্রী, সন্তান নিয়ে নিরিবিলি কয়েকটা দিন কাটিয়ে আসতে চান তবে যেতে পারেন, রান্না নিজেরা করে খেতে হবে মাত্র। চাবি আমার কাছেই!

[বিঃ দ্রঃ গ্রামে বাড়ী করাতে (অন্য দুইভাইও টাকা দিয়েছে) অনেকে আমাকে বোকা বলে (ঢাকায় কিছু করা হয় নাই), কিন্তু আমি অনেক ভেবে দেখেছি – কাজটা মনে হয় সঠিক হয়েছে]

3 responses to “আমাদের গ্রামের বাড়ি দেখার আমন্ত্রন

  1. 🙂 প্রশ্নটা দরকারী কিনা বুঝতেছি না। তারপরও জিগেস করি আপনার গ্রামের বাড়ি কোথায়। বড়ই সৌন্দর্য। যাইতাম চাই।

    Like

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]