গ্যালারি

রেসিপিঃ কিউবান মাটন কারী (সাইটের ব্যয় বহুল রান্না!)


অনেকদিন আগের কথা, ইউটিউবে কিউবান রান্না দেখছিলাম। ঘটনা এমনি, বিরাট বড় কৃষক পরিবার, মাঠে কাজ করে অনেক সদস্য, এটাই তাদের পেশা। বিশেষ করে আঁখের ক্ষেতে কাজ করা এই লোক গুলো বেশ কর্মঠ। সারাদিন রোদে পুড়ে কাজ করে, তাদের দুপুরের জন্য শক্ত খাবারের দরকার, বিকেলের দিকে এই আঁখ নিয়ে কারখানায় যায়, সেখানে চিনিকলে এই আঁখ বিক্রি করে। অনেকক্ষণ ধরে এই ভিডিও দেখছিলাম। হ্যাঁ, দুপুরের দিকে সেই পরিবারের মহিলা প্রধান বিরাট ক্ষেতের ধারে এক গাছের ছায়ায় এমটা মাটন কারী রান্না করেন, সেই রান্নাটা আমার মনে গেঁথে যায়, কিছুতেই ভুলতে পারছিলাম না। মোটামটি আমার স্মরণে যা আছে, তবে তাদের কিছু মশলাতো আমাদের কাছে নেই, আমরা আমাদের মত করে তাদের ধাঁচে এই রান্না করে স্বাদ নেয়ার চেষ্টা করি। বলা বাহুল্য, এই এক পাতিল রান্নায় আমাদের বেশ খরচা হয়েছে! সামান্য হিসাব তুলে দিচ্ছি; আর এই ছিল উপকরন ও পরিমান।

আগেই বলে দেই, এই রান্না বেশ সুস্বাদু হয়েছিল, বেশ মজাদার হয়েছিল এবং খেয়ে আমি আশা করছি বিরাট পরিসরে আরো বড় আয়োজনে এই রান্না আমাদের গ্রামের বাড়িতে একদিন রাতে করবো এবং আমার চাচা, চাচী সহ চাচাত ভাই বোনদের নিয়ে একবেলা খাব! সাথে পরোটা বা পোলাউ রান্না করবো। এত মজাদার রান্না সবাইকে নিয়ে না খেলে হয় না! আর একটা তথ্য জানিয়ে দেই, কিউবানরা খেতে বসলে আগে প্লেট দেয় বাড়ির কর্তাকে এবং কর্তা সেই প্লেট থেকে খাবার তুলে প্রথমে কর্তীকে খাইয়ে দেন, এটাই নিয়ম, যিনি রান্না করেন তার মুখে প্রথম খবার দিতে হয়! আর, আমাদের দেশে পুরাই অনিয়ম! হা হা হা…। চলুন রান্না দেখি।

আমি মনে করি এই রান্না খুব সহজ কারন আপনারা ছবিতে দেখতে পারেন! মানে একে একে সব কিছু দিয়ে তার পর মাঝারি আঁচে আগুন, ব্যস। হয়ে পড়বে!

উপকরন ও পরিমান (টাকা সহ);
– মাটন, ২ কেজি; ১৪০০ টাকা (ধুয়ে, চর্বি ফেলে মনে হয় দেড় কেজি টিকেছিল)
– আলু, হাফ কেজি; ১৫ টাকা
– বেবী কর্ন; ১০০ টাকা
– টমেটো, আধা কেজি; ৫০ টাকা
– ক্যাপ্সিকাম, ২টা; ১৫০ টাকা
– পেঁয়াজ; ১৫ টাকা
– কাঁচা মরিচ; ৫ টাকা
– ধনিয়া পাতা; ১০ টাকা
– পুদিনা পাতা; ২০ টাকা
– লেবু, ১টা; ১০ টাকা
– আদা বাটা, দুই টেবিল চামচ; ১০ টাকা (অনুমান)
– রসুন বাটা, দুই টেবিল চামচ; ১০ টাকা (অনুমান)
– মরিচ গুড়া, এক চা চামচ; ৫ টাকা (অনুমান)
– তেল, হাফ কাপ; ৪০টাকা (অনুমান)
– লবন, পরিমান মত; ২ টাকা
– চিনি, দুই/তিন চিমটি
– পানি, যা লাগে।

প্রণালীঃ (ছবি কথা বলে)

ছবি ১, গোশত পরিস্কার করে ধুয়ে নিন, টুকরা গুলো বড় বড় হলে ভাল লাগবে।


ছবি ২, লেবুর রস দিন।


ছবি ৩, আদা, রসুন, মরিচ গুড়া ও লবন।


ছবি ৪, ভাল করে মাখিয়ে কিছু সময় রেখে দিন।

মুল রান্নাঃ

ছবি ৫, পাতিলে তেল নিন, এবার গোশত বিছাতে থাকুন।


ছবি ৬, এক লেয়ার গোশত দিয়ে পরে আলু সাজিয়ে দিন।


ছবি ৭, আবার এক লেয়ার গোশত দিন।


ছবি ৮, ক্যাপ্সিক্যাম লেয়ার।


ছবি ৯, কাঁচা মরিচ, বেবী কর্ন ও পেঁয়াজের লেয়ার।


ছবি ১০, টমেটো গুলো মাঝ বরাবর দুই ভাগ করে এভাবে দিন। হাফ চামচ লবন ছিটিয়ে দিন। দুই/তিন চিমটি চিনি ছিটিয়ে দিন।


ছবি ১১, মাঝ বরাবর পুদিনা ও ধনিয়া পাতার আটি বিছিয়ে দিন। ব্যস, সাজানো শেষ!


ছবি ১২, এবার চুলায় তুলে দিন।


ছবি ১৩, ঢাকনা দিন, আগুন বাড়িয়ে দিন।


ছবি ১৪, মিনিট ১৫ পর দুই কাপ পানি দিয়ে দিন।


ছবি ১৫, আরো মিনিট ৩০ পর ঢাকনা খুলে পুদিনা ও ধনিয়া পাতার আটি তুলে ফেলে দিতে পারেন। যদি এই ঘ্রান ভাল লাগে তবে আরো কিছু সময় রেখে দিতে পারেন।


ছবি ১৬, আরো মিনিট ২০ পর টমেটো গুলোর চামড়া তুলে ফেলে দিন।


ছবি ১৭, আরো মিনিট ৩০ পর এমন দেখাবে।


ছবি ১৮, আরো সময় জ্বাল দিন।


ছবি ১৯, এবার ফাইন্যাল লবন দেখুন। লাগলে দিন। গোশত নরম হল কিনা দেখুন। গোশত নরম না হওয়া পর্যন্ত আগুন থামানো যাবে না! যদি গোশত নরম না হয় বা ঝোল কমে যায় তবে আরো পানি দিতে পারেন।


ছবি ২০, মোটামুটি ঘন্টা ২ জ্বাল দেয়ার পর এমনি অবস্থায় এসে যাবে।


ছবি ২১, ব্যস, হয়ে গেল। কিছুটা ঝোল রাখার দরকার আছে! আগুন নিবিয়ে ঢাকনা দিয়ে মিনিট ১০ রাখুন।


ছবি ২২, পরিবেশনা।


ছবি ২৩, দেখেই শান্তি।


ছবি ২৪, মজাদার, সুস্বাদু।

সবাইকে শুভেচ্ছা, আমাদের সাথে থাকুন, আমরা আসছি আরো আরো রান্না নিয়ে।

নোটঃ আপনারা যারা মোশান মানে ইউটিউবে রেসিপি দেখে রান্না করতে চান বা করেন তাদের একটা সমস্যার কথা বলি। ঘন্টা তিঞ্চারেকের রান্না মাত্র ১০ মিনিটে এই সব মোশান ভিডিওতে দেখিয়ে দেয়া হয়, অনেক কিছু হাইড করে থাকেন এরা। ফলে আপনি যখন এই সব রান্না দেখে রান্না করবেন তখন কিছুটা মুস্কিলে পড়তেই হবে। যেমন গোশত নরম হচ্ছে না, তিনি পানি দিলেন, পোলাইয়ের চাল নরম হচ্ছে না, পানি দিলেন এই সব হাইড করে গেলেন, আপনি জানলেন না। ফলে আপনি যখন রান্না করবেন, তখন এই সন সমস্যায় পড়বেন। মশলা পাতিতেও এমন দেখা যায়। লম্বা সময়ের রান্নায় এমন কাটের কারনে নুতন যারা রান্না করেন তাদের ধৈর্য থাকে না বা বুঝতে পারেন না। রেসিপি দেখে নিজের ইনোভেশন কাজে লাগাতে না পারলে সেই খাবার মুখে দেয়া যায় না! কয়েকদিন আগে আমি নেটে রেসিপি দেখে রান্না করলাম, আমার রান্না সাদা রঙ্গের হল, কিন্তু নেটের রেসিপির রঙ লাল! আসলে তিনি লাল মরিচের গুড়া দিয়েছেন, কিন্তু রেসিপিতে লিখেন নাই, আমি তার রেসিপি ফলো করতে গিয়ে মরিচের গুড়া দেই নাই, ফলে আমার রান্না সাদা! কিয়েক্টাবস্থা!

কৃতজ্ঞতাঃ মানসুরা হোসেন

6 responses to “রেসিপিঃ কিউবান মাটন কারী (সাইটের ব্যয় বহুল রান্না!)

  1. এরকম রান্না আমার খুব পছন্দে।

    Liked by 1 person

    • ধন্যবাদ বোন, খুব সাধারন রান্না, আমার মনে হয় এর চেয়ে আর সহজ রান্না নেই। একদিন সন কিছু কিনে বাসায় ফিরে রান্না ছড়িয়ে দিন। তবে হাতে কমের পক্ষে ৪/৫ ঘন্টা সময় নিয়ে এই রান্না করুন। গোশত নরম হতে সময় নিতে পারে। বেশ মজাদার এবং আনন্দদায়ক খাবার বলে আমার মনে হয়েছে। শুভেচ্ছা নিন।

      Like

  2. কিয়েক্টাবস্থা

    Liked by 1 person

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]