গ্যালারি

বিয়ে শাদীর খাবার দাবার ও অন্য কিছু – ১২ (বোন রেবেকা বিথীর বিয়ে, ভার্চুয়াল ট্যুর)


গল্পটা সাদামাটা। অনেক বছর আগে, ফেসবুকে এক বোন লিখলেন, মাবাবা বেড়াতে গিয়েছেন, বাসায় খাবার রান্না করা দরকার, গল্প ও রান্না সাইট দেখে তিনি রান্না করছেন, সপ্তম শ্রেনীতে পড়ুয়া ভাই সেই খাবার পছন্দ ও খেয়ে ভাল বলেছে। সেই আনন্দের কথা আমাকে জানালেন! আমি তার সেই কথা কখনো ভুলতে পারি না। এই রকম ছোট ছোট সাহায্য করার জন্যই আমি গল্প ও রান্না সাইট চালিয়েছিলাম। আমার সেই চেষ্টা এই রকম কমেন্টে পূর্নতা পায়। যাই হোক, এর পর সেই বোনটার সাথে আর তেমন কোন যোগাযোগ হয় নাই। তবে ফেসবুকের কল্যাণে আমি অনেকের মত তাকেও চোখে চোখে রেখেছিলাম! ফেসবুক কাজের জিনিষ, কাউকে সহজেই কিছু না বলেও চোখে চোখে রাখা যায়! যাই হোক, এই কয়েক বছরে সেই মেয়েটা পড়াশুনা শেষ করলো এবং সাথে সাথে যে একটা প্রেম (পছন্দ) করছিলো, তা আমি স্পষ্ট টের পাচ্ছিলাম। হা হা হা…

যাই হোক, এই দিন পনর বা কিছু বেশি সময়ে একদিন একটা মেসেজ পাঠলো, ভাইয়া আমার বিয়ে, আমার বিয়েতে আপনি ভাবী এবং ছেলেদের নিয়ে উপস্থিত থাকবেন, দূর থেকে দোয়া করলে চলবে না, খেয়ে দেয়ে দোয়া করবেন! আমি তেমন কোন সাড়া না দিয়ে দিন ক্ষনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম! আমার সিদ্ধান্ত গুলো এমনি যে, হুট করে কিছ বলতে পারি না! এর মধ্যে সে আরো কয়েকবার আমাকে বিয়ের দিন ক্ষনের কথা মনে করিয়ে দিলো, একবার ভেন্যু চেঞ্জ হল সেটাও লিখে জানালো। বিবাহ অনুষ্ঠানের একদিন আগে আবারো লিখলো, ‘ভাইয়া আসবেন তো?’।

বাসায় আলাপ করে তেমন জমাতে পারলাম না, অফিসে কাজের চাপে কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এদিকে বিদেশ ডেলিগেট এসেছে, সেটাও মাথায় ছিল না! এদিকে ২৪ তারিখ এসেই গেল! সকাল থেকে অফিসের কাজের চাপে চ্যাপ্টা প্রায়, সিন্ধান্ত ভাল হয় নাই বলে বেশ কিছু টাকা হারালাম, মনের অবস্থা খারাপ! সন্ধ্যায় অফিসে বসে এই ছোট বোনের বিয়ের কথা মনে পড়ছিলোই! যাব কি যাব না, এমনি ভাবনায় আরো কিছু সময় কেটে গেল! এমনি সময়ে এক বন্ধুকে ফোন দিলাম, বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবে কি না? বিবাহের জায়গার কথা শুনে প্রথমে রাজী হল না! এই শীতের সন্ধ্যায়, যানজট কাঁধে নিয়ে কে বের হতে চায়! তবুও জোর দেয়াতে বলল, কার বিয়ে, গেলে কে কি মনে করবে ইত্যাদি ইত্যাদি! আমি বললাম, স্ত্রী বাইরে যেতে পারমিশন দিলে চলে আয়! যাই হোক, এই উড়নচণ্ডী বন্ধুটা শেষ পর্যন্ত রাজী হয়ে গেল! আমি বিবাহ অনুষানের দিকে পা বাড়ালাম।

সিএনজি’র খোঁজে সময় নষ্ট করে এমনি একজন রিকশাচালক ভাই পেয়ে গেলাম, যিনি স্বেচ্ছায় রাজী হলেন, ভাড়াও চাইলেন না! বলা চলে শান্তি নগর থেকে, ধানমন্ডি ২৭ নং শেষ মাথায় পুরা উলটা পথেই (ট্যাফিক আইন না মেনে, উলটা সাইড দিয়ে) আমাদের বিবাহ অনুষ্ঠান স্থলে পৌঁছে দিলেন, প্রায় রাত ৯টার সময়! এর পরের বা যাত্রা পথের ছবি গুলো দেখুন। পুরা পথে মনে হয়েছে, ঢাকায় বিবাহের ধুম পড়েছে!

চলুন বোন রেবেকা বিথী’র বিয়ের ভার্চুয়াল ট্যুর দেখি! আমার জায়গায় আপনি আপনাকে কল্পনা করে এই বিবাহের মজা নিতে পারেন। তবে আগেই বলে নিচ্ছি, ছবি গুলো আমার সাধারন নকিয়া মোবাইলে তোলা, তেমন ভাল হয় নাই! তবুও, ছবি তো ছবি! চলুন।

ঢাকার আকাশে চাঁদের উপস্থিত এই শহরের মানুষের মনে কোন ভালবাসা নিয়ে আসে কি না তাও ভাবনার বিষয় হতে পারে!


বলা চলে সারা পথেই কঠিন যানযট এবং বেশির ভাগ রাস্তাই উলটা পথে আসতে হয়েছে! চালক ভাইকে সাহস দিতে আমরাও পথে নানান বকাবাধ্য দিয়েছি! সাইড দেন, সাইড দেন, রং সাইডে যাইতে দেন!


আজকাল ঢাকা শহরের বিল্ডিং এর পর বিল্ডিং গড়ে উঠছে, এ গুলো কারা বানাচ্ছে, কি করে, বা আকাশের চাঁদ কারা মাটিতে নামিয়ে নিয়ে আসছে, সেটাও ভাবনার বিষয়! হা হা হা… সরকার গরীবের পক্ষে নাই, আছে টাকাওয়ালাদের কাছে মানুষ হয়ে! এই বিল্ডিং এর নীচে বা ফুটপাতেই হয়ত এই শীতের রাতে শুয়ে আছে অনেক মানুষ, যারা হয়ত আজ রাতে খাবেও না!


ঢাকায় এখন অনেক বিয়ে হচ্ছে! ধনী এলাকা গুলোতে গেলে এটা টের পাওয়া যায়!


দূরে একটা বিল্ডিং দেখুন, এত বড় বিল্ডিং লাইট দিয়ে সাজাতে কেমন খ্রচা পাতি ভেবে দেখুন, কিন্তু আছে, ওদের আছে! বানিয়েছে ওরা!


আমি এগিয়েই চলছি।


অবশেষে গন্তব্য!


বিবাহ হলে প্রবেশে যাত্রা পথে এমনি একটা আলোঝল্মল পরিবেশ মন ভাল করিয়ে দেয়! (লাইটিং মনে হয় মনের আনন্দেই করা হয়ে থাকে!)


হলে প্রবেশেই বরের দেখা, আমি দেখেই চিনে ফেলেছি! এই সেই ছেলে! হা হা হা…  সালাম, কুশল বিনিময়ে মনে হল, সেও আমাকে চিনে!


খুব সুন্দর আয়োজন।


কনের কাছে যেয়ে সালাম দিতেই, বোনটা চিনে ফেললো! বলল, ভাবী বাচ্চাদের আনেন নাই! পাশে বসতে বলল। আমি বললাম, কয়েকটা ছবি তুলে নেই, সময় নেই! হা হা হা… না ছবিটায় আমার জন্য পোজ নয়!


ডজন ডজন প্রফেশন্যাল ক্যামেরা ম্যানদের ভীড়ে মোবাইলে ছবি তোলা যায় না!


খুব চমৎকার সৌম্য শান্ত পরিবেশ।


খাবারের টেবিল গুলো বেশ পরিচ্ছন্ন, দারুণ।


ছোট পরিসরে হাত ধোয়ার জায়গা!


খাবার পরিবেশনা। তবে দুঃখের বিষয়, এই বিবাহের খাবার দাবার অতন্ত্য চমৎকার ও সুস্বাদু ছিল কিন্তু খাবারের ছবি গুলো মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে তুলতে পারি নাই, সেই এক অজানা কারনে! খেতে বসে টেবিলে খাবারের ছবি তোলা, এখনো সোজা কাজ নয়! বিশেষ করে সেই একই টেবিলে যদি দুই পাশে দুইজন অপরিচিত সুন্দরী মহিলা চামচ ও কাটা চামচি দিয়ে রোষ্ট ছিড়ে মুখে পুরেন! আমাদের দুই বন্ধু দুই টেবিলে বস্তে হয়েছিল, সেই গল্প অন্য কোনদিন লিখবো!

খাবার গুলো স্বাভাবিক বিবাহের খাবার, পোলাউ, রোষ্ট, টিকিয়া, গরু ও খাসির রেজালা, বোরহানী, জরদা ও পান। সবজি ছিল বলে মনে হয়েছে তবে আমার টেবিলে দেখি নাই, অন্য টেবিলে দেখেছি! আমাদের টেবিলের খাবার পরিবেশক খুব নিম্ম আচরণ করেছেন! টেবিলের অনেকেই মন ভরে খেতে পারেন নাই, ওরা রেজালা দিতেই চাচ্ছিলো না! এই ব্যাপারে কথাও বলতে শুনলাম! মনে হচ্ছিলো, বেয়ারাদের বলে দেয়া হয়েছিল, কম করে পরিবেশন করার জন্য! ওদের আচরণ তাই বলছিল! কিছু কথা কানে আসছিলো, এই টেবিলে গোশত নেই, ওই টেবিলে রেজালা নেই! যাই হোক, এটা হতেই পারে! তবে একটা ব্যাপার উল্লেখ না করলে চলে না, খাবারের প্রতিটা আইটেম অসাধারন স্বাদের হয়েছিল। বিশেষ করে গরুর রেজালা, অসাধারন! হা হা হা, পাশে বসা সুন্দরী আপা এই কথা তার অন্যপাশে বসা স্বামীকে বলছিলেন, আমিও আপার সাথে নিরবে একমত!


ছবির কারিগরদের শুধু কনের সামনে বসে থাকা ভাল লাগে না! আরে ব্যাটারা ঘুরে ফিরে কিছু আপা দুলাভাইদের ছবি তুলিস না ক্যান! আপা দুল্ভাইরা বিয়েতে যে সাজ গোজ করে যায়, সেটার কি কোন মুল্য নেই! আপা দুলাভাইদের কি ছবি তুলতে ইচ্ছা হয় না!


আমাদের বিদায় নেয়ার পালা! আনন্দ ও সুখী জীবন কামনা করছি এই নবদম্পতির জন্য।


বিবাহের অনুষ্ঠানের এই পরিছন্ন আড্ডা মনে আনন্দ দেয়!


হা হা হা, নিচে নেমে দেখি, আমার পাশে বসা সেই আপা দুলাভাই! চলে যাচ্ছেন!


বিদায়!


আজকাল ঢাকা শহরে অনেক বড় বড় খাবার হোটেল হেয়ে গেছে! এই বিষয়ে লিখার ইচ্ছা থাকলো!

সবাইকে শুভেচ্ছা। যারা বিবাহ করেন নাই, সুযোগ থাকলে করে ফেলুন তবে শিল্প সাহিত্যে যদি অবদান রাখতে চান তবে বিবাহের ধারে কাছে যাবেন না, নারী পুরুষ দুইজনের জন্যই প্রযোজ্য! অনুরোধ জানিয়ে গেলাম মাত্র!

5 responses to “বিয়ে শাদীর খাবার দাবার ও অন্য কিছু – ১২ (বোন রেবেকা বিথীর বিয়ে, ভার্চুয়াল ট্যুর)

  1. হাওয়াই প্রবাসী আমার ভার্চুয়াল বন্ধু/আপু রানার ছেলের বিয়ে আগামী মাসের ১০ তারিখে। স্থপতি মাজহারুল ইসলামের বড় ছেলের নাতি। বিয়ের অনুষ্ঠান পুরান ঢাকার হিস্টোরিক রোজ গার্ডেনে। খুব ইচ্ছা ছিলো যাবার, কিন্তু কুম্ভকর্ণ রিক্সা থেকে পড়ে হাত ভেঙ্গেছেন ৪ দিন আগে। 😦

    Liked by 1 person

    • রান্নাতো বোন, আপনাকে অনেকদিন পরে দেখে আনন্দিত হলাম। দুলাভাইয়ের কথা শুনে মনে দুঃখ বাড়লো। রিক্সা থেকে পড়ে যাওয়া কঠিন কষ্টের ব্যাপার। আল্লাহর কাছে দোয়া চাই, যেন তিনি সুস্থ্য হয়ে উঠেন।

      ব্যাপার না, এমনি কত দাওয়াত আমরা মিস করি! আশা করি আগামীতে আরো দাওয়াত পাবেন।

      শুভেচ্ছা ও সালাম নিন।

      Like

  2. Suronjona mam…sorry for you. i think you may try to eat with another hand….if still not okay we can proxy for you…. ha ha…..

    Hello Sahadat bhai, few days ago I attend a weeding program at Radisson Blu…where menu was “fixed menu” type….only 1pcs Chicken Tonduri, 1 pc Tikiya, some mutton biriani ..All item serve in one plate ….and green salad and 1 glass of Borhani.+ firni cup and jorda in small glass….no option to get more….ha ha…but one point I marked lots of guest can not finished this fixed menu food…also no body arguing for more food…..

    Liked by 1 person

    • ধন্যবাদ রেদোয়ান ভাই।
      আপার কিছু হয় নাই, হয়েছে আমাদের দুলাভাইয়ের! দুলাভাইকে রেখে তিনি ঢাকা এসে বিবাহের অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন তা কি করে হয়! হা হা হা…

      রেডিশন হোটেলে আমি খেয়েছি তবে বিবাহের দাওয়াত নয়। ওদের রান্না ভাল। ফিক্স মেনুর চেয়ে অনেক সময় বুফে ভাল লাগে, যেটা মন চায় সেটা খাওয়া যায়!

      বিবাহ অনুষ্ঠান এই ধরনের হোটেলে আয়োজন, বিরাট ব্যাপার! অনেক টাকা থাকতে হয়! হা হা হা…

      শুভেচ্ছা নিন।

      Like

  3. সুরঞ্জনা mam, Sorry…dula vier jonno doa roilo….
    Shadat bhai….Thanks also for you..

    Liked by 1 person

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]