ঐ যে, অফিস ফেরার পথে বাজারে ঢু মেরে আসা! গতকাল বাজার থেকে আসার সময় মুখের শাক বিক্রেতা জানালেন, আজ একটা নুতন শাক এসেছে! আমি এগিয়ে যেতেই আমার হাতে দুই মুট তুলে দিলেন, মুখে বললেন, এই শাক একবার খেলে আবার খুঁজে বের করবেন! এই শাক বিক্রেতা আমাকে অনেক দিন ধরে চিনে থাকেন, আমার শাক কেনার বাতিকের কথা তিনি জানেন। প্রায় প্রতিদিন তিন আমাকে এক মুট শাক হলেও ধরিয়ে দেন! কখনো তিন পদের শাক এক দিনে ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন! কিছু বললে হেসে বলেন, “আপনার কাজ ভাবীকে মেনেজ করা, আমার কাজ আপনাকে ধরিয়ে আমার বিক্রি শেষ করা”! কি সহজ সরল বিক্রয় গাঁথা! যাই হোক, আমি এদের ভালবাসি, চুরি ডাকাতি বা অন্যায় না করে এরা কষ্ট করে টাকা রুজি করে! ফলে আমি এই সব শাক বিক্রেতার সাথে দাম নিয়ে তেমন কথা বলি না! যে কোন শাক পার মুট দশ/পনর টাকা হলে আমি খুশি! যদিও আপনাদের এই ঢাকা শহরে আমি এমন যে কোন শাঁকের পার মুট ৫০ পয়সা করে কিনেছিলাম আমার মায়ের সংসারের জন্য, আমাদের স্কুল জামানায়! হা হা হা…। দিন কি করে শেষ হয়ে যায়!
যাই হোক, আজকের এই শাঁকের নাম হল, নাপা শাঁক! আমি নিজেও এই শাঁকের নাম প্রথম শুনলাম, দেখতে পাতা গোল, অনেকটা কুমড়া শাঁকের মত তবে এক রকম নয় (ছবি দেখুন)! গাছ গুলো হাত খানেক লম্বা হয়! বিক্রেতা জানালেন, বেশ স্বাদের শাঁক! আমাদের কথোকপনে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক ভদ্রলোক প্রবেশ করলেন, তিনিও জানালেন, তিনি কয়েকবার খেয়েছেন, ভাঁজি বা রান্না (মাছ দিয়ে) করে খাওয়া যায়। তিনি আরো জানালেন যে, তিনিও পেলে এমন শাঁক কিনেন!
চলুন রান্না ও এই শাঁকের ছবি দেখি। আপনাদের এই শাঁকের খাওয়ার কোন অভিজ্ঞতা থাকলে শেয়ার করতে পারেন। আমি এস ইট ইজ, আমার প্রথম শাঁক পেলে যে ভাবে ভাঁজি করে টেস্ট দেখি সেভাবেই রান্না করেছি!
উপকরণ ও পরিমানঃ
– শাঁক, দুই আটি (কেটে কুটে যা হয়)
– পেঁয়াজ কুঁচি, মাঝারি দুইটা
– রসুন কুঁচি, কয়েক কোষ
– শুকনা মরিচ, ঝাল বুঝে কয়েকটা, আমাদের কাছের এই বরিশালের মরিচে তেমন ঝাল নেই বলে আমি একটু বেশি দিয়েছি, আপনারা আপনাদের মত করে দেখবেন।
– লবন, পরিমান মত
– তেল, পরিমাণ মত (কম তেলে ভাঁজলে ভাল)
প্রনালীঃ
ছবি ১, সকালে কিনতে পারলে শাঁক গুলোর ভাল চেহারা দেখা যেত!
ছবি ২, এই একটা পূরো পাতা।
ছবি ৩, ভাঁজি করবো বলে পরিষ্কার করে ধোয়ার পর কেটে কিছুটা কুঁচি করে নিয়েছি!
মুল রান্নাঃ
ছবি ৪, তেল গরম করে লবন যোগে পেঁয়াজ, রসুন ও শুকনা মরিচ ভেঁজে নিচ্ছি।
ছবি ৫, পেঁয়াজের রংটা হলদে হয়ে আসতে হবে।
ছবি ৬, এর পর শাঁক দিচ্ছি।
ছবি ৭, আগুন মাঝারি আঁচে থাকবে, খুন্তি দিয়ে নাড়িয়ে দিতে হবে।
ছবি ৮, চুলার ধার ছেড়ে যাওয়া যাবে না।
ছবি ৯, সামান্য ভুলে শাঁক খাবার উপযুক্ততা হারাতে পারে, ফলে চুলার ধারে দাঁড়িয়ে খুন্তি দিয়ে নাড়ানো উচিত।
ছবি ১০, মাঝে একটু ফাঁকা করে দিলে তাপে পানি শুকিয়ে যাবে।
ছবি ১১, এই দেখুন, আর পানি নেই, ভাঁজা ঝকঝকে!
ছবি ১২, ব্যস হয়ে গেল!
ছবি ১৩, পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত।
ছবি ১৪, ওহ চামচ দিতে হবে, না হলে পাতে তুলবে কি করে! সাদা ভাতের সাথে পরিবেশনা।
স্বাদঃ সত্যই অপূর্ব! মনে থাকবে। এবং আগামীতে পেলে আবারো কিনবো! কিন্তু এই শাঁকের নাম নাপা কি করে হল্ম কে রাখলো! নাপা তো আমাদের দেশের একটা জনপ্রিয় ওষধের নাম! হা হা হা।।
শাঁক শব্জিতে ভিজিটর কম দেখে কিঞ্চিত দুঃখ লাগে! হা হা হা…। অথচ সৎ মানুষের মত শাঁক সবজি হচ্ছে সৎ খাবার!
সবাইকে শুভেচ্ছা।
দেখেই ভাল লাগছে । প্লেটে ধোঁয়া উঠা ভাত , একটা শুকনা মরিচ আর এই শাক । দুই প্লেট ভাত খাওয়া যায় , আর কিছু লাগে ?
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ বোন।
হ্যাঁ, এমনি খাবারই তো আমাদের প্রিয়! আমি তো তাই খাই!
শুভেচ্ছা।
LikeLike
রংপুরের দিকে নাপা শাঁক খুবই পরিচিত একটা শাঁক।
দেশে থাকতে খাওয়া হতো। কত বছর যে খাই না ! 😦
নাপা শাঁক দেখে অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেলো…।
LikeLiked by 1 person
এই শাক নূতন হবে কেন ? উত্তর বঙ্গে্ শত বছর ধরে এই শাক পরিচিত । রান্নার যথাযথ নিয়মে (শুধু পিঁয়াজ ছাড়া) একটু ঝোল করে রান্না করতে হবে । তারপর তেলে পিঁয়াজ ভাজতে হবে । পিঁয়াজ একটু বেশি পরিমাণে হতে হবে এবং লালচে করে ভেজে শাকের ঝোলে মিশিয়ে দিতে হবে ।
LikeLiked by 1 person
Dekhesi but kinte sahosh hoi ni.
LikeLiked by 1 person
হা হা হা, ব্যাপার না, নুতন কিছু দেখলে কিনে নিন! শাক বিক্রেতা নিশ্চয় আমাদের বিষ খাওয়াবে না! হা হা হা…।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
আমার কাছে পালং শাকের ঝোল সাথে মাঝারি আকাড়ের চিংড়ি মাছ খুব পছন্দ !
আপ্নারে ফলো দিয়াও ওয়ার্ডপ্রেস হতে নোটিফিকেশন পাইনা !
মইনুল ভাইর গুলা তো পাই !
LikeLiked by 1 person
হা হা হা, খাটি বাঙ্গালী বলে কথা!
ব্যাপারটা টেকনিক্যাল আমি নিজেও তেমন ভাল জানি না!
শুভেচ্ছা নিন।
LikeLike
অামার চোখে পড়েনি কেন শাকটা???অামি শাক খুবই পছন্দ করি 😦
LikeLiked by 1 person
আমি নিজেও মনে হয় এই প্রথম রামপুরা বাজারে দেখলাম, আর কখনো দেখেছি বলে মনে পড়ে না! খেতে অনেক মজাদার তবে এর কিছু গুনাগুন নিয়ে একটু কৌতুহলে আছি, এই শাক নাকি আয়োডিন নষ্ট করে দেয়! এটা হলে তো ভাল কথা নয়! দেখি এর কার্যকারিতা খুঁজে বের করি! শুভেচ্ছা আপনাকে।
LikeLike
হা হা এই শাক তো আমাদের রংপুরে কতকাল আগ থেকে চলে আসছে,এটা আমরা হালকা ঝোল করে খাই খুব সুন্দর লাগে ,আপনারাও খেয়েন,খুব টেস্টি শাক
LikeLike