গ্যালারি

আড্ডাঃ মাদ্রাসায় এক দুপুরের মজাদার খাবার ও নানাবিধ


আমি রামপুরা এলাকায় থাকি সে অনেক দিন আগের কথা, বছর বার পার হয়ে গেছে! আমি যখন এই ভাড়া বাড়িতে উঠে আসি তখন এই এলাকায় মানুষ থাকলেও এত কোলাহল ছিল না (এখন হাতিরঝিল হয়ে যাওয়াতে এত কোলাহল বেড়েছে যে, রাস্তায় বের হতেই মানুষ আর মানুষ)। গলি থেকে বের হয়ে সহজে হেঁটে বড় রাস্তায়  গিয়ে যে কোন স্থানের বাস রিক্সা পাওয়া যেত বলে আমি এই এলাকা পছন্দ করে ছিলাম। তবে এর পিছনে অন্য আরো একটা কারন ছিল, এটা আমার শশুরের অনেক দিনের আবাস ছিল এবং সে সুত্রে আমি এই এলাকার মেয়ের জামাই! হা হা হা…। যাই হোক, এই বাসায় উঠে আসার পর দেখেছিলাম, এর দোয়াল ঘেঁসেই ছোট একটা টিনের মসজিদ। পরে শুনেছিলাম, এই জায়গার মালিক নিজে ব্যক্তি উদ্দোগে এই মসজিদখানা বানিয়েছিলেন। পরে ক্রমে ক্রমে দেখলাম পাশের আরেকজন তার প্লট নাম মুল্যে মসদিজে দিয়ে চলে গেছেন এবং এভাবে মসজিদের একটা বড় জায়গা হয়ে পড়ে। এর পরে আট তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে মসজিদের কাজ শুরু হয়, সাথে মাদ্রাসাও চালু হয়ে পড়ে। ক্রমে ক্রমে এর ব্যপ্তি বেড়ে যায়, এলাকার মানুষের সহযোগীতায় এটা বড় থেকে বড় হতে থাকে। একদিন আরো বড় হয়ে পড়বে।

যাই হোক, আমি নিয়মিত নামাজি না হলেও প্রতি শুক্রবার নামাজ পড়ি। ধর্মে আমার কঠিনভাবে মন না বসলেও আমি কোন ধর্মের বিপক্ষে  নই। দুনিয়াতে ধর্ম না থাকলে মানুষ আরো আরো হিংস্র হয়ে উঠতো, মানুষ আরো আরো দুস্কর্মে পড়তো এটা আমি বুঝি। পরকালের জীবনের কথা চিন্তা করলেও মনে ভয় উঠে, সত্যই আমরা এই দুনিয়াতে এসেছি কি জন্য, কত দিনই বা আমরা এই দুনিয়াতে থাকবো। অনন্ত কালের দুনিয়ায় সবাইকে চলে যেতেই হবে। সামান্য স্মৃতিও এই দুনিয়াতে কেহ মনে করবে বলে মনে হয় না! তা হলে আমি যে ধর্মে জন্মেছি, সেই ধর্মের কাজ করেই যাওয়া উচিত।

যাই হোক, ধর্ম মানুষের কল্যানের জন্যই। মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্যই। মানুষ সঠিকভাবে জীবন পরিচালিত করতে পারে একমাত্র ধর্মীয় জ্ঞান কাজে লাগিয়েই। ধর্ম কখনো মানুষকে ভুল শিক্ষা দেয় না!


ছবি ১, মুসলিম ধর্মের সুন্দর রুপের একটা হচ্ছে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। যারা সঠিকভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন আমি মনে করি তাদের দারা অন্যের অনিষ্ট তো দূরে থাক সামান্য মিথ্যাও বের হবে না!


ছবি ২, আমাদের মনে রাখা দরকার ব্যক্তি চিন্তা বা ব্যক্তিগত ভাবনা ধর্মে চলে না। ধর্মে সব সময়েই সামষ্টিক চিন্তার প্রয়োজন।


ছবি ৩, যাই হোক, আমাদের মাদ্রাসার এই দাওয়াত ছিল যারা আমরা মসজিদে নামাজ পড়ি, কমিটিতে আছি ও ডোনেশন দিয়ে যাই, তাদের জন্যই। এটা একটা বতসরিক দাওয়াত, সবাইকে একাত্রিত করে চালানোর জন্য। কিছু মানুষের চেষ্টাকে আরো আগ্রহ দেয়ার জন্যই।


ছবি ৪, আমি আমার এই জীবনে অনেক হাসি দেখেছি, এই শিশুদের হাসি মনে হচ্ছে এই জীবনে আর ভুলবো না।


ছবি ৫, এটা আমাদের বাসা, সবুজ গাছগাছালিতে ঘেরা, সামনে খোলা জায়গা।


ছবি ৬, মসজিদের উপরের তলায় খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তবে কমিটি প্রথমে বাসসরিক হিসাব নিকাশ দিয়ে দিয়েছিলেন।


ছবি ৭, এমন চমৎকার দৃশ্য সচারাচর দেখা মিলবে না!


ছবি ৮, আমিও প্রস্তুত! আয়োজন দেখে অভিভূত!


ছবি ৯, সাদাভাত, বিউটি এখানেই, খুবই ঝরঝরে।


ছবি ১০, করল্লা ভাঁজি, চিংড়ি মাছ দিয়ে।


ছবি ১১, মোরগের গোশত রান্না, কম ঝোলে।


ছবি ১২, গরুর গোশত রান্না।


ছবি ১৩, ঘন ডাল।


ছবি ১৪, আমার প্লেট। এটা শুরু ছিল মাত্র! হা হা হা…। হাতে তরকারী লেগে গেলে ছবি তোলা মুশকিল!


ছবি ১৫, আমাদের খাবার চলছে।


ছবি ১৬, খাবার শেষ করে নীচ তলায় মসজিদের সৌন্দর্য নিয়ে কয়েকটা ছবি তুলবো বলে ভাবছিলাম। নিচ তলায় এসে অবাক, যে মানুষটা আমার সামনের কাতারে বসে নামাজ পড়ছিলেন, তিনি এখনো কোরান পড়ছেন। আমি নিশ্চিত তিনি দাওয়াতি ছিলেন না বা আমরা যে খাবার খেয়েছি তার কথাও তিনি হয়ত জানতেন না। আমার ধারনা তিনি আমাদের এলাকায় কোন সাধারন মানুষ। তবে এটা সত্যই অবাক ব্যাপার যে, তিনি ধর্ম চর্চা করছেন এবং তিনি তার পথেই আছেন। তাকে দেখে সত্যই ভাল লাগলো। আল্লাহ্‌ তার ও আমাদের সহায় হউন।


ছবি ১৭, মসজিদ ও মাদ্রাসার কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়ে উঠে নাই। বাইরের প্রায় পুরো কাজই বাকী। নিশ্চিত আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শেষ হয়ে উঠবে।


ছবি ১৮, এই মসজিদের একটা বিশেষ দিকের কথা না বললেই নয়, যার মাথা থেকে এই আইডিয়া এসেছে তাকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। এই মসজিদে একটা মোবাইল ফোন ফ্রিকোয়েন্সি ব্লকার আছে, যা নামাজের সময়ে চালু করে দেয়া হয়। ফলে কোন নামাজির কাছে মোবাইল থাকলেও তা বেজে উঠে না। ইমাম সাহেবকে কখনোই মোবাইলের সুইচ বন্ধ করার কথা বলতে হয় না। দারুণ, নামাজীগনের জন্য এটা একটা ভাল ব্যাপার।

সবাইকে শুভেচ্ছা। সবাই ভাল থাকুন, আনন্দে কাটুক আপনাদের জীবন।

ভুল স্বীকারঃ এই রান্না গুলো যে করেছেন তার নামটা ভুলে জানা হয় নাই। আগামীতে জেনে জানিয়ে দেয়ার ইচ্ছা থাকলো। সত্যই ছেলেদের হাতের রান্নায় যাদু আছে!

12 responses to “আড্ডাঃ মাদ্রাসায় এক দুপুরের মজাদার খাবার ও নানাবিধ

  1. আজকাল মসজিদ মাদ্রাসা নিয়ে কেউ লিখে না। আপনি লিখলেন আপনাদের মাদ্রাসা ও মসজিদ সম্পর্কে জানতে পারলাম। অন্তরের অন্তস্থল হতে শুভ কামনা রইল।

    Liked by 1 person

    • ধন্যবাদ ইলিয়াস ভাই।
      হ্যাঁ, আপনি সত্য বলেছেন। এখন এই সব নিয়ে লিখতে সবাই লজ্জা পায়, আমার সেই লজ্জা নেই। আমি সব সময়েই ভাল কাজ এবং গরীব, মেহনতি মানুষের সাথে আছি। তাদের কথা আমি বলবোই, এতে কে কি মনে করলো তাতে কিছু যায় আসে না। যে সত্য ও সুন্দর আমি সব সময়েই তার পিছনে থাকবো। ধর্মকে যারা নিজ স্বার্থে ব্যবহার করে আমি তাদের বিরুদ্ধে আছি। আপনাকেও শুভেচ্ছা।

      Like

  2. ছবি এবং বর্ণনা খুব ভালো লাগলো। প্রথমে ভেবেছিলাম রান্নাটা নিজে ঘর থেকে করে মসজিদে পাঠিয়েছেন।

    Liked by 1 person

  3. ইসলাম ,মসজিদ ,মাদ্রাসা ব্লগে দেখলে ভয়ে আর পড়তে ইচ্ছাই করেনা কারণ এমন বিশ্রী ভাষা থাকে যে ,নিজের উপর নিজেরই রাগ লাগে।ভাল লাগল ,করলা ভাজিটা দেখে সত্যি খিদে পেয়ে গেল। আচ্ছা ভাইয়া ,ওজন কমানোর জন্য উপযুক্ত আমাদের দেশীয় উপকরণের low calorie রেসিপি কি দেয়া যায়। খুব উপকার হত।

    Liked by 1 person

  4. সমীর কুমার বিশ্বাস

    আপনি খুব সহজ সরল ভাবে মনের ভাব আন্তরিক ও অকপটে প্রকাশ করেন বলে ভাল লাগে । তবে আজকাল মানুষের সরলতাকে কেউ কেউ অন্যভাবে দেখেন । কে কি বললো সেটা নিয়ে চিন্তা না করে আপনি মনের আনন্দে লিখে যান । লেখাটা বেশ লাগল ।

    Liked by 2 people

    • ধন্যবাদ সমীর ভাই। আজ আর একটা স্ট্যাটাস লিখলাম। হা হা হা…।। অনেকে আমাকে হতাশ ভাবেন, না আমি টাকাকড়ির জন্য হতাশ নই, দুই দিনের দুনিয়া, টাকা কড়ি এক সময়ে অনেক রুজি করেছি, আবার খুইয়েছি, আবার করতেও পারি, ব্যাপার না! আমি হতাশ অন্য কারনে, আমার বেলা শেষের দিকে, আমাকে প্রচুর লিখে যেতে হবে, আমি সেটাই করতে পারছি না! চোখের সামনে সময় পার হয়ে যাচ্ছে, আমি আমার মনের কথা গুলো লিখতে পারছি না! আমার হতাশার জায়গাটা এখানেই! (বিষয়টা আপনাদের জানিয়ে রাখলাম মাত্র, আর কাকে জানাবো!)

      (শুভেচ্ছা নিন)

      Like

  5. It’s a nice article ,……………..suvo kamona royilo…

    Liked by 1 person

  6. পড়লাম। ভালো লাগলো আপনার বর্ণনা 🙂

    Liked by 1 person

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]