শাঁক সজবি, বেগুন চিচিঙ্গা ইত্যাদি আমি খুব পছন্দ করি এবং রান্না করতেও ভালবাসি। এই জীবনে কত প্রকারের খাবার দাবার খেলাম, কত কি দেখলাম। তবে শেষে এসে আমাদের অরিজিন্যাল এই সব খাবারেই আনন্দ পাচ্ছি। সাদা ভাতের সাথে শাঁক সবজি খেয়ে আরামসে মনের আনন্দে ঘুমিয়ে পড়া যায়। আমি সব সময়ে যারা নুতন রান্না করছেন তাদের বলি আগে শাঁক সবজি রান্না করা দিয়েই আপনার রান্নার জগতে হাটা শুরু করুন। হাত অটোমেটিক পেকে যাবে! রান্নার মুল ব্যাপার গুলো আপনার কাছে ধরা দেখেই এবং মনের চোখ খুলে যাবে। রান্না হয়ে উঠবে ভালবাসা! আপনি আপনার প্রিয়জনদের জন্য রান্না করুন।
যাই হোক, চলুন আজ একটা সাধারন শাঁক ভাঁজি দেখাই। গত রাতের রান্না! অফিস ফেরার পথে এক মুট কলমি শাঁক নিয়ে বাসায় ফিরেই কাজে নেমে পড়লাম, তবে সাথে আরো একটা রান্না করেছি, বেগুন দিয়ে চিকেন (এই পোষ্টের নিচে ছবি দিচ্ছি। রেসিপিও লিখবো), এক সাথে দুই চুলার মজা নিয়েছি! হা হা হা… খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো, সাদা ভাতের সাথে আনন্দে কিছু শাঁক খাই! চলুন দেখে নেই! আগেই আশা করছি, আপনাদের ভাল লাগবে।
যে কোন শাঁক বাজার থেকে কিনে নিয়ে কিছু সময় ভিজিয়ে রাখবেন, এতে পোকা মাকড় থাকলে মরে ভেসে উঠবে! হা হা হা…। চলুন দেখে ফেলি!
উপকরন ও পরিমানঃ
– এক মুঠো শাঁক (তিন জনের জন্য এনাফ, সাথে নিশ্চয় আরো কিছু তরকারী থাকবে)
– পেঁয়াজ কুচিঃ মাঝারি দুই টা
– শুকনা মরিচঃ ৪/৫ টা (না থাকলে কাঁচা মরিচ দিয়েও চালানো যেতে পারে)
– লবনঃ পরিমান মত, বুঝে, দুই ধাপে
– তেলঃ ৪/৫ টেবিল চামচ (তেল কম দিয়ে রান্নাই ভাল)
– চিনিঃ এক চিমটি (টুইস্ট বলা যেতে পারে)
প্রনালীঃ (ছবি কথা বলে)
ছবি ১, শাঁক এভাবে কুঁচি করে নিন (ভাল করে বেঁছে নিয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে)
মুল রান্নাঃ
ছবি ২, মুল রান্নায় আসুন। কড়াই চুলায় বসিয়ে তেল দিয়ে গরম করুন। তেল গরম হয়ে গেলে কড়াইয়ের হাতল ধরে তেল কড়াইয়ের গায়ে লাগিয়ে দিন (ঘুরিয়ে)। এর পর পেঁয়াজ কুঁচি, মরিচ ও লবন দিয়ে ভাঁজুন।
ছবি ৩, পেঁয়াজ কুঁচি হলদে হয়ে আসবে।
ছবি ৪, এবার শাঁকের কুঁচি দিন।
ছবি ৫, ভাল করে মিশিয়ে নিন।
ছবি ৬, শাঁক সবজি ভাজিতে আগুন বাড়িয়ে রাখা যায় তবে চুলার ধার ছেড়ে যাওয়া যাবে না। বড় চওড়া খুন্তি ব্যবহার করলে ভাল হবে।
ছবি ৭, শাঁক নরম হয়ে এলে চিনি চিটিয়ে দিন, খুব কম তবে চিনি পছন্দ না করলে না দেয়াই ভাল। চিনিতে শাঁকের তিতে ভাব কেটে যায় এবং শাঁকের রং এর গ্লামার বাড়িয়ে দেয়।
ছবি ৮, মিশিয়ে ভাঁজুন।
ছবি ৯, আপনার চোখ বলে দেবে। এই সময়ে ফাইন্যাল লবন স্বাদ দেখুন। লাগলে দিন, না লাগলে চুলা বন্ধ করে দিন। ব্যস।
ছবি ১০, পরিবেশন করুন। সাদা ভাতের সাথে দারুণ জম্বে, আমি নিশ্চিত!
ছবি ১১, গতকাল এই রান্না শেষ করে খেয়ে উঠে ফেবুতে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। তবে অনেকেই দেখলাম রাতে শাঁক খেতে চান না। কিন্তু আমাদের মত শহুরে জীবনে যারা দুপুরে বাসায় থাকেন না তাদের জন্য রাতে খাবার ছাড়া বিকল্প কি! (অনেকদিন পর কলমি শাঁক ভাঁজি করলাম, এজ ইট ইজ! এক আটি শাঁক, ৪ চামচ তেল, মাঝারি দুইটা পেঁয়াজ কুঁচি, ৪টা শুকনা মরিচ, এক চিমটি চিনি এবং সামান্য লবন, এর চেয়ে সহজ ভাঁজি আর কি হতে পারে! সাদা ভাতের সাথে পরিবেশনা!)
ছবি ১২, এই ছিল গতকাল রাতের তরকারী, মাঝের তরকারীটা কি ছিল আমার জানা নেই! হা হা হা…
আজকাল রান্না ও রেসিপির জন্য তেমন সময় বের করতে পারছি না। নানান ব্লগেও লেখালেখি চালাতে পারছি না। মাথায় সব সময়েই গল্প ও রান্না’র জন্য একটা প্লান থাকে, সেটাও বাস্তবায়ন করতে পারছি না। মনের ইচ্ছা গুলো মনেই মরে যাচ্ছে, এই সময় হয়ত আর ফিরে পাবো না। এই সময় হয়ত আর ফিরে আসবে না, তাই আপনাদের জন্য বলছি সময় কাজে লাগান, সময়ের এক ফোড়, অসময়ের হাজারো চেষ্টা কাজে লাগবে না। যা করুন ভেবে করুন!
সবাইকে শুভেচ্ছা। আসছি আরো আরো রান্না নিয়ে, আপনারা সাথে থাকলে আর কি চাই!
বি দ্রঃ ছবি গুলো মোবাইলে তোলা (ক্যামেরাটা নষ্ট হয়ে গেছে) এবং মোবাইলে এক হাতে ছবি তোলা অন্য হাতে রান্না খুব কষ্টকর কাজ, উপরিউক্ত যেভাবে ছবি চাই সেভাবে ছবি তুলতে পারছি না, ক্যামেরায় তাও কিছুটা সম্ভব। আশা করি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। রান্নার মুল সৌন্দর্য্য হয়ত ব্যহত হচ্ছে, তবে ফিরছি আপনাদের ভালবাসায়।
ভাই প্রথমত ধন্যবাদ এরকম সাধারণ রান্নার রেসিপি শেয়ার করার জন্য। নতুন রাধুনীদের জন্য এগুলো অনেক উপকারে আসে। আর দ্বিতীয় ধন্যবাদ হচ্ছে শাকের গ্লামার বাড়ানোর টিপসটার জন্য। আমি এর পরেরবার শাক রান্নার সময় এই টিিপসটা অবশ্যই ফলো করব।
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ বোন।
আপনার কমেন্ট আমাদের অনুপ্রেরনা যোগালো।
তবে কিছুতেই বেশী চিনি দেবেন না, এতে স্বাদ মিষ্ট হয়ে ভিন্ন হয়ে যাবে, খুব কম, এক চিমটি। এই ধরনের সামান্য তিতে ভাব শাঁকে এই ব্যবস্থা নিলে খেতে আরো স্বাদ হয়ে থাকে।
একবার রান্না করে দেখুন, শুভেচ্ছা থাকলো।
LikeLiked by 1 person
কলমি শাঁক আমারও ভীষণ প্রিয়।
রেসিপির জন্য অনেক ধন্যবাদ শাহাদাত ভাই।
শুভেচ্ছা সতত।
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ সুখেন্দু ভাই।
আপনাদের ভালবাসায় আমরা এগিয়ে চলছি।
শুভেচ্ছা।
LikeLiked by 1 person
Eid e ki korlen etar post dilen na je….?? Onek asha kore chilam janar jonne……
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ বোন।
আসলে কোন সুযোগ ছিল না, লেখালেখি আসলে পরিবেশ, মন এবং চার পাশের মানুষজনের উপর নির্ভর করে থাকে। চাইলেই কি আর লেখা যায়? যারা লেখালেখি করেন তারা সব সময়েই লিখতে চান কিন্তু সময় সহায়ক না হলে কিছুই হয় না।
যাই হোক, আপনার এই কমেন্ট অনুপ্রেরনা পেলাম। ভাল লাগল এই ভেবে যে, কেহ আমার সামান্য লেখার জন্যও অপেক্ষা করেন। আমি আনন্দিত। আশা করি আপনার এই লেখা মার মনে থাকবে। (আপনি আপনার নামটা লিখলে খুশি হতাম)
শুভেচ্ছা নিন।
LikeLike