যাই হোক, কত কথাই তো মনে আসে, সব কি আর লিখে রাখতে পারি। যে বয়সে এসে পৌঁছে গেছি, তাতে তো এখন পরপারের দিন গোনা ছাড়া আর উপায় দেখি না। দুনিয়ার কত কিছুই তো কত ভাবে বুঝে যেয়েও কাউকে সামান্য বুঝাতে পারলাম না। নিজের বেঁচে থাকার জন্যও যতটুকু অন্যের থেকে পাওয়ার কথা ছিল, সেটাও পেলাম কই! যা হবার তা হবেই, এই সব ভেবে আর কি হবে?
চলুন রান্না দেখি, এই ভালবাসাই হয়ত অবশিষ্ট আছে! আমার প্রিয় একটা রান্না, গোশতের সাথে কাঁকরোল। এমন রান্না আমি আমার ছোট বেলায় মায়ের কাছে দেখেছি, কিন্তু কাঁকরোল খেতে তখন পছন্দ করতাম না। এখন বুঝি, মিস করেছি, সেই সময়ে যদি স্বাদ নিতে পারতাম! আহ।
উপকরণ ও পরিমানঃ
– গরুর গোশত, ৪০০ গ্রাম (হাড় থাকলেও আপত্তি নেই, আপনি চাইলে মুরগীর গোশত নিতে পারেন)
– কাঁকরোল, ২০০ গ্রাম
– আলু, ১৫০ গ্রাম
– এলাচি, ২/৩ টা
– দারুচিনি, ২/৩ পিস, ইঞ্চি
– পেঁয়াজ কুঁচি, মাঝারি ৪ টা
– আদা বাটা, এক চা চামচ
– রসুন বাটা, দেড় চা চামচ
– মরিচ গুড়া, হাফ চা চামচ (ঝাল বুঝে)
– হলুদ গুড়া, হাফ চা চামচ
– জিরা গুড়া, হাফ চা চামচ
– ভিনেগার, এক কর্ক (না থাকলে নাই)
– চিনি, দুই চিমটি
– কাঁচা মরিচ, কয়েকটা
– লবন, পরিমান মত
– তেল, কয়েক চামচ (কাঁকরোল আলু ভাঁজাতে আরো কয়েক চামচ লাগবে)
– পানি, এক কাপ বা তারো বেশী, গোশত শক্ত হলে আরো লাগতে পারে
প্রস্তুত প্রনালীঃ (ক্যামেরার লেন্স একদিকে ঘোলা হয়ে ছিল, যা চোখে পড়ে নাই!)
ছবি ১, আলু এবং কাঁকরোল কেটে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে এক চিমটি হলুদ, লবন দিয়ে মিশিয়ে কড়াইতে তেল গরম করে হাল্কা আঁচে ভেঁজে নিতে হবে।
ছবি ২, মুল রান্না, কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুঁচি, সামান্য লবন, কাঁচা মরিচ, এলাচি, দারুচিনি দিয়ে ভেঁজে নিন।
ছবি ৩, পেঁয়াজ হলদে হয়ে গেলে আদা ও রসুন বাটা দিন এবং ভাঁজুন। ভাঁজা হলে এতে হাফ কাপ পানি দিন।
ছবি ৪, এবার হলুদ গুড়া, মরিচ গুড়া এবং জিরা গুড়া দিন।
ছবি ৫, ভাল করে মিশিয়ে নিন, আগুন মাধ্যম আঁচে রাখুন।
ছবি ৬, মোটামুটি তেল উঠে গেলে গোশত দিন।
ছবি ৭, নাড়িয়ে মিশিয়ে, আগুন মাধ্যম আঁচে রেখে ঢেকে দিন। ভিনেগার দিয়ে দিন। চলুক।
ছবি ৮, এই পর্যায়ে চিনি দিয়ে দিন। গোশত নরম না হলে আরো পানি দিতে পারেন।
ছবি ৯, গোশত নরম হল কিনা সেটা খেয়াল রাখতে হবে। (মুরগীর গোশত দিয়ে রান্না হলেও এটা খেয়াল করতে হবে)
ছবি ১০, এবার হাল্কা ভেঁজে রাখা কাঁকরোল, আলু দিয়ে দিন।
ছবি ১১, মিশিয়ে নিন।
ছবি ১২, ঝোল রাখতে চাইলে আরো পানি দিন।
ছবি ১৩, ঢাকনা দিয়ে দিন, আগুন কম আঁচে রাখুন।
ছবি ১৪, ফাইন্যাল লবন দেখুন, লাগলে দিন, না লাগলে ওকে বলে আগে বাড়ুন।
ছবি ১৫, ব্যস পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত।
ছবি ১৬, স্বাদ কাকে বলে? গরম ভাতের সাথে নিয়ে বসে পড়ুন।
রেসিপি লিখার আগেই ছবি ফেবুতে প্রকাশ করে দিয়ে ছিলাম, কাঁকরোল, আলু ও গোশত!
সবাইকে শুভেচ্ছা।
(একক হাতে রান্না এবং ছবি তুলতে গিয়ে কখন ক্যামেরার লেন্স ঘোলা হয়ে পড়েছিল, খেয়াল করতে পারি নাই, ছবি গুলো কম্পুটারে ট্যান্সফার করার পর ছবি দেখে মন খারাপ হলেও কিছু করার নাই, এত ভাল রেসিপি না দিয়ে থাকি কেমন করে!)
ভালো মত খানা পিনা পাই না। ঘরের কারো রান্না ঠিক নাই। 😦 নিজে নিজে রান্না না করা পর্যন্ত ভালো মন্দ খাবার কপালে নাই দেখছি। উদরাজি ভাইয়ের রান্না ঘর আশার আলো দেখিয়েছে আমার মনে। 😀 যেই পোস্টই দেখি ইচ্ছে করছে সেই রান্নাটাই করে ফেলি! আর ছবি গুলো দেখে তো জিভে জল এসে যাচ্ছে এই রমজানেও!!!
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ সেলিম ভাই। আপনি যখন আমাদের সাইটে এসেই পড়েছেন, আর চিন্তা কি? আমি প্রথমে বলবো খুব সহজ কয়েকটা রান্না (শাঁক ভাঁজি) নিয়ে কাজ শুরু করুন, তার পর মাছ বা গোশত নিয়ে রান্না করুন, প্রথম দিন হয়ত ভাল হবে না, পরের দিন আপনার রান্না খেয়ে তারিফ করতেই হবে। সামান্য ভালবাসা এবং ধৈর্য থাকলেই হল। রান্না হচ্ছে ভালবাসা, আপনি আপনার প্রিয়জনদের জন্য যা করবেন।
আর একটা ব্যাপার, রান্নাঘরে যাবার আগে রেসিপির উপকরণ গুলো লিখে বা টুকে নিয়ে যাবেন। ধারাবাহিক ছবি তো মনে থাকবেই।
আপনার সাথে আমরা আছি। চলুন, হয়ে যাক।
শুভেচ্ছা।
LikeLike