রান্না যত কঠিন করে করা হয়, ততই রান্না স্বাদ হবে তা নয়! রান্না অনেকটা অংকের মত, একটা অংক যেমন অনেকভাবে করা যায়, তেমনি একই রান্না অনেক ভাবে করা যেতে পারে! ফলাফল একই হবে, শুধু পথ ভিন্ন। আমি অনেকের রান্না অনেকভাবে দেখেছি। মশলাপাতি একেকজন একেক ভাবে দিয়ে থাকেন, মানে মশলাপাতির দেয়ার সময় অনেকে অনেকভাবে করে থাকেন তবে ফাইন্যালে গিয়ে একই জিনিষ পাওয়া যায়। তবে আমি মনে করি, রান্না স্বাদ হয় ভালবাসায় ও মমতায়, রান্না চুলায় দিয়ে আপনি যত কাছে থাকবেন এবং রান্নার আগুন যত সুন্দর করে নিয়ন্ত্রন করবেন ততই রান্না স্বাদ হবে। আর একটা ব্যাপার হল, অভিজ্ঞতা, আপনি যত রান্না করবেন আপনার দিব্যচক্ষু খুলে যাবে, আপনার হাত আপনার মন আপনার রান্নার পরিমান বলে দিবে, রান্না স্বাদ হতে বাধ্য।
ব্যচেলর ভাই বোনদের জন্য আজ আমি একটা সহজ রান্না নিয়ে এসেছি। এমন রান্না আপনারা আপনাদের পারিবারে অনেক দেখেছেন এবং খেয়েছেন। আপনাদের দেখা মত সেই রান্নাই আমাদের আজকের উপস্থাপনা। সহজ এবং সুন্দর করে রান্নার জন্য আগেই হাতের কাছে উপকরণ যোগাড় করে নিন। মানে যা রান্না করবেন তার উপকরণ গুলো মাথায় নিয়ে হাতের কাছে নিয়ে আনুন!
চলুন, আজকের এই সহজ রান্না দেখি, এমন রান্না আগেও দেখানো হয়েছে তবে ওই যে বলছি রান্না মানে অংক, পাটিগণিত! আগে একটু ভিন্নভাবে দেখানো হয়েছে, এবার আরো আরো সহজ করে দেখানো হল। হ্যাঁ, টেমেটোর টক রান্না বা টমেটো খাট্টা! পাতলা ডালের বদলে দারুন লাগে, বিশেষ করে গরমের দিনে দুপুরে এই টক দিয়েও এক প্লেট সাটিয়ে দিতে পারবেন। চলুন দেখে ফেলি!
দেখে ও বেছে বেছে পাকা টমেটো গুলো নিন।
পরিমান ও উপকরনঃ (পরিমান আপনিও অনুমান করতে পারেন, অনুমানিক মাঝারি এক বাটির জন্য বা এক লিটারের জন্য)
– টমেটো, গোটা ৬/৭ মাঝারি, পাকা হলেই ভাল
– রসুন চেঁচা, এক চা চামচ
– পেঁয়াজ চেঁচা, এক চা চামচ
– কাঁচা মরিচ, কয়েকটা
– লাল মরিচ গুড়া, হাফ চা চামচ
– তেল, ৭/৮ চা চামচ বা কম বেশি
– লবন, পরিমান মত
– চিনি, হাফ চা চামচ (আপনার ইচ্ছা, না দিলে নাই)
– পানি, এক লিটার বা এক বাটি (ঘনত্ব আপনি নিজেই এই পানি দিয়ে নির্ধারন করতে পারেন)
– ধনিয়া পাতার কুঁচি, দুই চা চামচ বা কম বেশি।
প্রস্তুত প্রনালীঃ (ছবি কথা বলে)
ছবি ১, কড়াইতে তেল গরম করে তাতে রসুন ও পেঁয়াজ চেঁচা দিন, সামান্য লবন যোগে ভাল করে ভাঁজুন।
ছবি ২, এমনি হলদে হয়ে আসবে।
ছবি ৩, এবার টমেটো (আগেই কেটে ধুয়ে রাখতে হবে) দিয়ে দিন। কাঁচা মরিচ গুলো চিরে দিয়ে দিতে পারেন। আগুন মাধ্যম আঁচে থাকবে।
ছবি ৪, এবার লাল মরিচ গুড়া দিন।
ছবি ৫, ভাল করে নাড়িয়ে মিশিয়ে নিন।
ছবি ৬, আগুন মাধ্যম আঁচে রাখুন।
ছবি ৭, সময় বাঁচাতে ঢাকনা দিয়ে দিন। এই ঢাকনার কারনে টমেটো দ্রুত সিদ্ধ হয়ে নরম হয়ে পড়বে। চুলার ধার ছেড়ে যাবেন না, সামান্য ভুলে পানি শুঁকিয়ে পুড়েও যেতে পারে!
ছবি ৮, আপনি ঘুটনী বা দজ্জি বা চামচ দিয়ে টমেটো গুলো গলিয়ে নিতে পারেন।
ছবি ৯, এবার আপনি আপনার প্রয়োজনীয় পানি দিন। আমরা মোটামুটি এক লিটার পানি দিয়েছিলাম (কম হতে পারে)।
ছবি ১০, এবার চিনি দিয়ে দিন। (অনেকে চিনি দিতে চান না, না দিলে নাই, তাতেও স্বাদ কম হবে না!)
ছবি ১১, আগুন মাধ্যম আঁচে থাকবে। ভাল করে এবার ঘুটা দিয়ে দিন। কাজটা সাবধানে করতে হবে, যাতে চিটা হাতে বা পেটে না লাগে! (সোনার শরীরে দাগ ফেলা যাবে না!)
ছবি ১২, আগুন একটু বাড়িয়ে দিতে পারেন। ফাইন্যাল লবন দেখুন, লবন স্বাদ মত না হলে দিন। লবনের স্বাদ এখানে বিরাট ফ্যাক্টর! হা হা হা…
ছবি ১৩, ব্যস প্রস্তুত। পরিবেশনের জন্য। (ফ্লাশ দিয়ে তোলা)
ছবি ১৪, বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, আমি নিজে এক প্লেট সাদা গরম ভাত এই টক দিয়ে সারিয়ে ফেলেছি! আজ আপনাদের পরিচিত মুখ ব্যাটারী ও বুলেটকে অনেক দিন পর ভাল সাটাতে দেখলাম! হা হা হা…
সবাইকে শুভেচ্ছা। আমরা আসছি, আরো আরো মজাদার রান্না নিয়ে। সাথে থাকুন।
কৃতজ্ঞতাঃ মানসুরা হোসেন
আমার খুবই পছন্দের, , সব সময়ই এতে পাঁচপাঁচফোড়ন দেই।
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ বোন,
হ্যাঁ, পাঁচ ফোড়ন দিয়ে বাগাড় দেয়া যায় বা শুরু করা যায়, এতে স্বাদ আরো উন্নত হবে। শুভেচ্ছা নিন।
LikeLike
টোম্যাটোর খাট্টা বা টক এটা আমার ভয়ানক প্রিয় অবশ্য সাধারনত আমরাও বাগার দেই। আমি ভাত ছাড়াও সাটাতে পারি ভাত দিয়েও 😛 Thanks for this post …..
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ বোন।
হা হা হা, পোষ্টে এটা লিখতে ভুলে গিয়েছিলাম যে, এটা আমার বাবার প্রিয় খাবারের মধ্যে একটা ছিল। বিশেষ করে দুপুরের খাবারে তিনি এমন একটা পাতলা টক চাইতেন।
শুভেচ্ছা নিন।
LikeLike
Nice
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ নবী ভাই।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
আমিও মাঝে মাঝে রান্না করি। তবে শুধু টমেটো দিয়ে পুরোপুরি খাট্টার স্বাদ পাওয়া যায়না। আমাদের এলাকায় (সিলেট) এর সাথে শুকনো বা কাঁচা বরই, তেতুল, জলপাই কিংবা আমও দেয়া হয় পরিমান মত। এছাড়া এই রেসিপির সাথে ছোটমাছ বিশেষ করে মলা মাছও যায়।
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ বদরুল ভাই।
হ্যাঁ, আমি এমন রান্নাও খেয়েছি। ছোট মলা বা টেংরা মাছ দিয়েও এমন রান্না খেয়েছি!
শুভেচ্ছা নিন।
LikeLike
আমরা বলি টমেটোর টক।চাঁদপুর বা কুমিল্লার দিকের মানুষের খুব প্রিয়,আমার ও খুব প্রিয় এই আইটেম।বিশেষ করে বোম্বাই মরিচ আর মচমচে মাছ ভাজা(যেকোন মাছ) দিয়ে এই টক অতুলনীয়
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ আপনাকে।
জিবে জল এনে দিলেন!
যাই হোক এই বেসিক রান্না আশা করি আমাদের রান্নায় আরো অনেক অনেক কাজ দিবে।
শুভেচ্ছা নিন।
LikeLike
উফ! এত সহজ! আমি এতদিন অনেক কঠিন ভাবতাম।
এই রেসিপিটা ট্রাই করবো। অনেক ধন্যবাদ 👍
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ বোন।
সাথে আছি, আশা করি একদিন চেষ্টা করবেন। সত্যই মজাদার, আরো একপ্লেট ভাত বেশী খাওয়া যায়, বিশেষ করে যারা ডাল বেশী পছন্দ করেন না তাদের জন্য এটা মজাদার আইটেম। গরমের দিনে দুপুরে এই আইটেম আরো আরো মজাদার!
শুভেচ্ছা নিন।
LikeLike