দেশী মোরগ রান্না, টমেটো পিউরি দিয়ে! এই রান্নাটা বিশেষ ভাবে আমার মায়ের জন্য করা হয়েছিল। আপনারা অনেকে হয়ত জানেন যে, আমার আম্মা বছরের কিছু দিন প্রবাসে (ইতালী) থাকেন (বয়স ৬৭ প্রায়) বাবার মৃত্যুর পর থেকেই, ছোট বোনের কাছে, এবার তিনি অনেক দিন পরে ফিরলেন। ঢাকায় এলে তিনি আমাদের ছোট ভাইয়ের বাসায় বেশী থাকেন, আমাদের বাসায় আসেন এবং কিছুদিন থাকেন। এই জীবনে আমার একটা আফসোস, মা বাবার জন্য আসলে তেমন কিছু করতে পারি নাই, মা বাবার সেবা আসলে সব ছেলে মেয়ের কপালে লিখা থাকে না, এটা উপরওয়ালা নির্ধারন করে দেন, কে সইতে পারবে, কে করবে? চাইলেও এই সেবা করা যায় না! যাই হোক, মা বাবার জন্য এখন পর্যন্ত আমাদের ছোট ভাই/বোনই বেশী করেছ, তাদের আল্লাহ সেই তোফিক এবং ক্ষমতাও দিয়েছেন। তাদের জন্য আমি দোয়া করি। উপরওয়ালা সহায় থাকলে আমি সামনের দিন গুলোতে এই সেবার দায়িত্ব নিতে চাই।
সে যাই হোক, এবার মায়ের কিছু কথায় আসি। ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি, তিনি আমাকে একটু বেশী আদর করতেন (এটায় আমার অন্য কোন ভাইরা বা বোন মাইন্ড করেছে এটা আমি দেখি নাই, বড় হয়ে যাবার পর এখন সবাই আরো উদার), এটা অবশ্য আমি প্রকাশ্যে বলি, কারন আমি আমার আম্মাকে অপেক্ষাকৃত একটু বেশী জ্বালিয়েছি, তিনি সহ্য করেছেন! যাই হোক, আজ সেই সব কথা নয়! একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি।
আমি ছোট বেলা থেকে দেখেছি, আম্মা খাবারে একটু বাছ বিচার করতেন! (হা হা হা, এই লাইন পড়ে আম্মা হয়ত হাসবেন!) আর বাবাকে দেখেছি তিনি কখনো কিছুতেই বাছ বিচার করতেন না, যা পেতেন তাই খেতেন এবং আমরাও সব ভাই বোন (৩ ভাই, ১ বোন) বাবার মত হয়েছি। এখন আলোচনা করা যাক, কেন আমরা সব কিছু খেতে অভস্থ্য হয়েছে, হ্যাঁ, এটা আম্মার জন্যই হয়েছি! কারন আম্মা না খেলেও আমাদের জন্য চ্রম স্বাদ করে রান্না করতেন এবং তিনি নিজে খান না, এটা কখনো মুখে বলতেন না! এটাই হয়ত একজন মায়ের টেকনিক! এবার আসি আম্মা কি কি কখনোই খেতেন না এবং এখনো খান না বা কখনো খেতে দেখি নাই! মাছের মধ্য তিনি সাধারন কিছু পরিচিত মাছি খেতেন, যেমন রুই, কাতলা ইত্যাদি! আর বাইম থেকে শুরু করে প্রায় সব সামুদ্রিক মাছ উনার খাবারের তালিখায় কখনো আমরা দেখি নাই! মাংশের মধ্যে শুধু মাত্র দেশি মুরগী ও গরুর মাংশ খেতেন! ফার্মের মুরগী উনাকে আমি কখনো খেতে দেখি নাই! তরু তরকারীর মধ্যেও অনেক বাচ বিচার ছিলো! হা হা হা!
মাছের ব্যাপারে বলি, আগে আমাদের বাসায় বাবা প্রতিদিন মাছের বাজার করতেন এবং তিনি ছোট মাছ একটু বেশী পছন্দ করতেন বলে কিনতেন এবং সেই মাছ যদি সামান্য নরম হত (এটা হয়ত তিনি ইচ্ছা করে কিনতেন না, মাছ দোকানী ধরিয়ে দিত, আগে বাজারে এমন নরম/পচা মাছ পাওয়া যেত, এটা কাষ্টমারগন না বুঝে কিনে নিয়ে যেতেন, বাসায় গেলেই ধরা পড়ত, এখন বাজারে তো মাছ পচেই না, সবি ফরমালিনের গুন, সাথে অবশ্য বরফ আছে, আগে এমন বরফ দেয়া মাছ পাওয়াও কঠিন হত!) তাও (যা একে বারেই উপযুক্ত নয় সেটা ফেলে দিতেন) তিনি এত মজা করে রান্না করতেন যে, খেতে বসে আমরা টের পেতাম না, কিন্তু তিনি যখন খাচ্ছেন না, তখন আমরা এটা নিয়ে হাসাহাসি করতাম, আজ মনে হয় মাছ পচা ছিল! হা হা হা, এখন সেই সব দিনের কথা মনে পড়লে হাসি আসে, কত আনন্দে না আমাদের শিশুকাল কেটেছে!
প্রিয় রেসিপি পাঠক/পাঠিকা ভাই বোন বন্ধু, আপনাদের অনেকের এমনি অনেক স্মৃতি আছে নিশ্চয়, আমাদের মত মাঝারি পরিবার গুলোর কাহিনী প্রায় একই। বিশেষ করে আপনাদের যাদের বয়স আমার বয়সের কাছাকাছি আপনারা আপনারাও দেখেছেন যে, আগে কি করে প্রতিদিন কাঁচা বাজার করা হত, যা এখন আর করা হয় না! এখন পারলে আমরা দুই মাসের বাজার এক সাথে করে ফেলি! ফ্রীজে রাখতে পারলে আমাদের স্ত্রীরাও খুশি, তিনিও নিশ্চিত হয়ে মাস চলান! সাথে অবশ্য আমরাও খুশি, কারন প্রতিদিনের বাজারের টেনশন নিতে হচ্ছে না, সময় বাঁচছে! তবে এখনো নিন্ম আয়ের মানুষ গুলো প্রতিদিন বাজার করে থাকেন বিশেষ করে যারা প্রতিদিন দিনের রুজি দিনে করে থাকেন।
যাই হোক, অনেক কথা বলে ফেললাম, মাউন্ড খাবেন না! আমার আম্মা যেহেতু দেশি মুরগী পছন্দ করেন তাই উনার জন্য কয়েকটা দেশি মুরগী কিনে ছিলাম। প্রথম একটা রান্নার সময়ে আমি ও আমার ব্যাটারী ভাবলাম, সাধারন রান্নার চেয়ে একটু ভিন্ন রান্না হয়ে যাক, যাতে আমাদের একটা রেসিপি বাড়বে! তবে এর আগে উনাকে জিজ্ঞেস করে নিয়েছিলাম, এভাবে রান্না করলে তিনি খাবেন কি না। বললেন ‘আপত্তি নেই’! প্রাসঙ্গিক ভাবে বলে নেই, আমি আমার আম্মার সাথে এখনো বেশ খোলামেলা আলোচনা করি, গল্প চলে, যদিও আমি দুই ছেলের বাবা এখন, আমিও বুড়ো হতে চলছি! হা হা হা…
চলুন রান্না দেখে নেই, আরো গল্প আছে, পরে হবে!
উপকরন ও পরিমানঃ (সাধারন রান্নাই বটে)
– দেশি মুরগী, এক কেজি কম বেশি (২টা)
– পেঁয়াজ কুঁচি, হাফ কাপ
– দারুচিনি, ৪/৫ টুকরা (হাফ ইঞ্চি)
– এলাচি, ৩/৪ টা
এক বাটি নিন্মের মশলা মিক্সঃ (যা গুলিয়ে নিয়েছি)
– আদা, ১ টেবিল চামচ
– রসুন, দেড় টেবিল চামচ
– জিরা, ১ চা চামচ
– ধনিয়া গুড়া, হাফ চা চামচ
– লাল মরিচ গুড়া, এক চা চামচ, ঝাল বুঝে
– হলুদ গুড়া, এক চা চামচ
আরোঃ
– টমেটো পিউরি (টমেটো পেষ্ট), ৭/৮ টেবিল চামচ, যা হাফ কাপ পানিতে গুলিয়ে নিয়েছি
– কাঁচা মরিচ, ঝাল বুঝে কয়েকটা
– লবন, পরিমান মত (প্রথমে কম দিয়ে শুরু করতে হবে, শেষে স্বাদ দেখে বাকিটা)
– পানি, দেড় কাপ (কম বেশি)
– তেল, হাফ কাপ (তেল কমেই রান্না)
প্রনালীঃ (ছবি কথা বলে)
ছবি ১, কড়াইতে তেল গরম করে তাতে প্রথমে এলাচি ও দারুচিনি দিন এবং পরে দিন পেঁয়াজ কুঁচি। হাফ চা চামচ লবন দিয়ে দিন। ভাল করে ভেঁজে পেঁয়াজ কুঁচি হলদে করে নিন।
ছবি ২, এবার মশলা মিক্স দিয়ে দিন।
ছবি ৩, ভাল করে ভেঁজে তেল উঠিয়ে নিন।
ছবি ৪, তেল উঠে গেলে ধুয়ে রাখা মোরগের মাংশ দিন।
ছবি ৫, ভাল করে মিশিয়ে নিন। মাধ্যম আঁচে মিনিট ৫/৭ রাখুন এবং এর পর এক কাপের কম পানি দিন।
ছবি ৬, আগুন মাধ্যম আঁচ করে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন।
ছবি ৭, মাঝে মাঝে উল্টে দেখুন, এমনি হয়ে উঠবে।
ছবি ৮, মাংশ সিদ্ধ হয়ে নরম হল কি না দেখুন, নাড়িয়ে দিন।
ছবি ৯, ঝোল কমে যাবে এবং এই অবস্থায় এসে পড়বে।
ছবি ১০, এবার টেমেটো পিউরি দিন।
ছবি ১১, এটাই এই রান্নায় স্বাদের ভিন্নতা এনে দেবে।
ছবি ১২, কয়েকটা আস্ত কাঁচা মরিচ দিন, যারা ঝাল পছন্দ করবেন তারা এই মরিচ মলে খেতে পারবেন। ভাল করে মিশিয়ে নিন।
ছবি ১৩, আগুন মাধ্যম আঁচে থাকবে, মিনিট ১০ পরেই ফাইন্যাল লবন স্বাদ দেখুন, লাগলে দিন, না লাগলে ওকে বলে আগে বাড়ুন। আগুন নিবিয়ে কিছু সময়ের জন্য ঢাকনা দিয়ে রাখুন। ব্যস!
ছবি ১৪, ব্যস পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত। (ছবিটা ফ্লাস দিয়ে তোলা)
ছবি ১৫, ছবিটা ফ্লাস ছাড়া সাধারন আলোতে তোলা!
ছবি ১৬, আসুন এবার স্বাদ নিয়ে কথা বলি। আমরা সবাই মিলে খেতে বসেছিলাম। সাথে আরো কিছু তরকারী ছিল এবং ভাত ছিল না, পোলাউ ছিল। আম্মাকে এই রান্নার স্বাদ কেমন হয়েছে জিজ্ঞেস করতে তিনি কোন কথা বললেন না, শুধু হাসলেন! হা হা হা, আসলে এটাই সত্য, রান্না স্বাদের হলে কারোই মুখে কোন কথা থাকে না! আমিও স্বাদের রান্না হলে চুপচাপ থাকি, আমার ছেলে বুলেটও স্বাদ হলে কথা বলে না, মুচকি হাসে আর আপনাদের ব্যাটারী ভাবী! তিনি তো স্বাদ হলে কথা বলেনই না, তবে মুচকি হাসি হাসেন বটেই!
আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন। আপনারা আপনাদের মা বাবার প্রতি যত্ন নেবেন, কারন দুই দিনের দুনিয়া, একবার কেহ কাউকে হারিয়ে গেলে আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না! মনে রাখুন, আপনার বাবা মা আপনারই সম্পদ, আপনারই ভালবাসা। একটু ভেবে দেখুন, আপনি এখন আপনার শিশুকে যেভাবে কষ্ট করে পেলেপুষে বড় করছেন, উনারাও আপনাকে তেমনি আদর, যত্ন, সোহাগে বড় করেছেন, নিজেরা না খেয়ে, না পরে, বুকে আগলে ধরে আপনাকে আমাকে মানুষ করেছেন, লেখাপড়া শিখিয়েছেন, যার ফলে এখন আপনি সুন্দর জীবন পেয়েছেন, ভাল খাচ্ছেন, ভাল পরছেন। সুতারাং বাবা মায়ের কাছেই থাকার চেষ্টা করুন, সেবা করার সুযোগ নিন, অন্ততকালের যাত্রায় আপনাকে আমাকে সবাইকে একদিন এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। বিচার দিনে, মাথা উঁচিয়ে বলতে পারবেন, আমি আমার মা বাবা’র সেবা করেছি।
সবাইকে শুভেচ্ছা। বলতে ভুলে যাচ্ছি, রান্না করে প্রিয়জনের মুখে তুলে দেয়ার চেয়ে আর বেশী আনন্দ এই দুনিয়াতে নেই।
কৃতজ্ঞতাঃ মানসুরা হোসেন
Vaia, sotti apni osadharon.apner tolona hoyna.apner moto mon manusekota jodi sobar thakto ta hole kono Ma Baba ke biddhasrom a jete hoto na.vaia apner amma r akta picture deben onek dekhte issa korse please please please.
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ বোন।
বিবেকবোধ বড় কথা, আমরাও একদিন বুড়ো হব, আমাদেরও একদিন এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে।
তিনি ছবি তুলতে চান না। তবুও দেখি যদি ছবি তুলেন তবে পোষ্ট দিব।
শুভেচ্ছা নিন।
LikeLike
Sobi na tolai valo…. jodi Khalamma sobi na tulte chay ta hole request korar dorkar naiy…. thanks!
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ রেদোয়ান ভাই।
হ্যাঁ, তিনি এখন আর ছবি তুলতে চান না। আমি সেজন্য জোর করি নাই। ছবি তোলা আসলে ব্যক্তিগত ব্যাপার, কেহ ছবি তুলতে না চাইলে জোর করা উচিত নয়। শুভেচ্ছা।
LikeLike
চমৎকার রেসিপি, আপনার আম্মাকে আমাদের সালাম দিবেন।
LikeLiked by 1 person
ধনব্যাদ সালাম ভাই।
আপনার কমেন্টের জন্য খুশি হলাম। আমাদের আম্মা আপনার এই কমেন্ট পড়বেন বলে আশা করি।
শুভেচ্ছা নিন।
LikeLike
তিক্ত অভিজ্ঞতা দিতে পারে মধুর স্বাদ- করলার ক্ষেত্রে খেটে যায় এ কথা। গরমের বিস্বাদে করলায় স্বাদ পান অনেকেই। এরমধ্যে অন্যতম করলা ভাজা। আসুন জেনে নেই এর সহজ প্রণালি। রেসিপি দিয়েছেন রীমা জুলফিকার।
উপকরণ
বড় করলা ৩-৪টি
লবণ ২ চা চামচ
চালের গুঁড়া ২ টেবিল চামচ
বেসন ২ টেবিল চামচ
মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ
প্রণালি
প্রথমেই করলাগুলো ভালো করে ধুয়ে চাক করে কেটে নিন। এরপর এতে লবণ মাখিয়ে ঘণ্টাখানেক রেখে দিন। এরপর করলাগুলো টিস্যুতে ভালো করে চেপে বাড়তি পানি শুষে নিন। বেসন, চালের গুঁড়া, মরিচ একসঙ্গে মিশিয়ে চেলে নিন। এরপর এ মিশ্রণটি করলার ওপর ঢেলে ভালো করে ওপর-নিচ করে ঝাঁকিয়ে নিন, যাতে সব করলার গায়ে মিশ্রণটি সমানভাবে লাগে। ডুবো তেলে মচমচে করে ভেজে নিন।
সৌজন্য: শৈলী, সমকাল
See more at: http://www.priyo.com/food/recipes/6491.html#sthash.DRzEDWwL.dpuf
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ বোন।
আমার মনে হয় না এটা বোন রীমা করেছেন, এটা নিসন্দেহে প্রিয়র কোন সাংবাদিক করেছেন এবং আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, এই সব সাংবাদিকরা কোন মতে কিছু একটা করেই দায়িত্ব শেষ করতে চান। এই ত্রুন অনলাইন সাংবাদিকদের আমি খেয়েল করে দেখেছি, কাজের চেয়ে আকাজ করতেই এরা বেশি চায়। ফলাফল তো এমনি হবার কথাই। কোন ক্রস চেক নেই।
ধরিয়ে দেয়ার জন্য শুভেচ্ছা কিন্তু আমি কাকে বলবো। কাউকে খুঁজে পাওয়াও সম্ভব নয়।
যাই হোক, সেইম।
শুভেচ্ছা আবারো।
LikeLike
upore dewa link e ghure asben……………..apner dewa pic unar recipe hoi kibhabe bujlam na…….
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ বোন।
হ্যাঁ লিঙ্কটা দিয়ে পোষ্ট দেখে এলাম। প্রিয় ডট কম এমন ভুল করবে তা মেনে নেয়া কষ্টকর। আমি নিশ্চিত ওদের সাংবাদিকরা এই ভুল করেছে। সেইম। আমার কয়েকটা রেসিপি আগেও প্রিয়তে এসেছিল।
যাই হোক, কিছু বলার নেই।
শুভেচ্ছা।
LikeLike