আদনান রনি ভাই, আমার রেসিপি সাইটের পুরানো পাঠক। তিনি আমাকে নানানভাবে শুরু থেকেই উৎসাহ দিয়ে আসছেন। আমি সব সময়েই আদনান ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞ। আমার সাথে অনেক ভাল মানুষ আছেন বলে আমি এযাবত টিকে আছি। বলতে দ্বিধা নেই যে, এই ভাল মানুষ গুলোর জন্য আমি তেমন কিছুই করতে পারি নাই। নিজেরা উৎসাহিত হয়ে অনেক সময় আলোচনায় আসেন যা আমার নানান গল্পের থেকেও উত্তম। চিকেন উইং কোরিয়ান স্টাইলের রান্নায় আদনান ভাই একটা বড় কমেন্ট করেছেন, আমি সেটা এখানে তুলে দিয়ে গল্প শুরু করতে চাই।
সালাম উদরাজী ভাই, আছেন কেমন? আপনার এই পোস্টে ২ টা বিশাল কমেন্ট করব, রেডি থাকেন 🙂
আপনার ভাইয়ের কোরিয়ান খাবার খাওয়ানোর অভিজ্ঞতা পড়লাম, আমারো কিছুটা একই অভিজ্ঞতা। বিদেশী খাবার খাওয়াতে গিয়ে অনেকেই মুখে মুখে খুব ভালো বলেছেন, তবে হয়ত তাদের তেমন ভালো লাগে নাই 🙂 তবে এরপর ভেবে দেখেছি, তাদের তেমন দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমি যখন নিজে বাইরে আসি, প্রথম প্রথম এদের খাবারগুলি জঘন্য লাগতো, তবে আস্তে আস্তে স্বাদ বুঝতে শিখেছি, অনেক কিছুই এখন ভালো লাগে যেটা আগে ভালো লাগতো না। অভ্যস্ততা একটা খুব ইমপর্ট্যান্ট ব্যাপার। ৭ বছর ধরে দেশের বাইরে, এমন অনেক জিনিস খাই, ধরেন এনচোভি অথবা সুশি, যেটা দেশে গিয়ে কাউকে খাওয়ালে বমি করে দিবে, তারপর রান্নাঘর গিয়ে দাও নিয়ে আমাকে তাড়া দিবে 🙂 ।
তাই মাঝে মাঝে ভাবি, কেউ যদি বিদেশী খাবার নিয়ে জানতে চায়, তাহলে তাকে আস্তে আস্তে একটু একটু করে পরিচয় করানোই ভালো, ধরেন কোনো বিদেশী লোক যদি বাংলাদেশী খাবার নিয়ে আগ্রহ দেখায়, তাকে প্রথদিনই হয়তো আমি শুটকি খাওয়াবো না, বরং জাস্ট পাঁচফোড়ন দিয়ে হালকা সব্জী ভাজি খাওয়াবো। আর বিশেষ করে যাকে খাওয়াচ্ছি, তার যদি অন্যদেশী খাওয়ার অভিজ্ঞতা কম থাকে, তাহলে তো আরো সবধানতা দরকার।
এটা নিয়ে আমার একটা মজার কাহিনী শেয়ার না করে পারছিনা। ৩/৪ বছর আগে আমার ছোট দাদা-দাদী আমেরিকায় আমাদেরকে দেখতে এসেছিলেন, তাঁরা থাকেন লন্ডনে। সেই দাদী অনেক শখ করে আমাদের জন্য সুটকেস ভর্তি করে বিভিন্ন খাবার আর মশলাপাতি নিয়ে এসেছিলেন। তিনি একদিন খুব শখ করে একটা চাইনিজ রান্না করে খাওয়ান মাংস দিয়ে, যেটা খেয়ে আমাদের কারোরই খুব ভালো লাগেনি, ওনার সামনেই আমি নাক শিঁটকেছিলাম, আমার মনে আছে। বছর দুয়েক পরে, আমি একটা চাইনিজ দোকানে আসল ঝাল সিচুয়ান খাবার খেয়ে সিচুয়ানের খুব ভক্ত হয়ে পড়ি, আর সেই রান্না বাসায় করার সিদ্ধান্ত নেই। নেট ঘেঁটে রেসিপি খুঁজে দেখলাম, সেই রান্নায় “তোবান জান” বলে একটা মশলা লাগে, আনি আমার শহরের সব চাইনিজ দোকান ঘুরে সেই মশলা পাইনা, কারণ চাইনিজ পড়তে পারিনা। সে রাতে ফ্রিজ পরিষ্কার করতে গিয়ে হঠাৎ দেখলাম, কোণার দিকে একটা হাফ-খালি কাচের ছোট জার পড়ে আছে, সেটার গায়ে ইংরেজীতে লেখা “তোবান জান”!! দাদীর সেই মাংস রান্নার মশলা, যেটা খেয়ে নাক কুচকেছিলাম একদিন, সেটা আসলে ছিলো সিচুয়ান। আজ আমি আর আমার বৌ দুজনই সিচুয়ান খাবার পেলে হামলে পড়ে খাই।
ধন্যবাদ রনি ভাই। এবার আমার একটা গল্প বলি। ১৯৯৮ সালের দিকের কথা, আমি থাইল্যান্ডে অনেকদিন থেকে বাসায় ফিরে আসছি। একদিন থাই ষ্টাইলে বাসায় একটা পুরা শোল মাছের ঝোল বা স্যুপ রান্না করলাম (মানে চেষ্টা), আমার এখনো মনে আছে, আমাদের বাসার কেহ ধরেও দেখে নাই। আমি আর আমার এক ফুফু মিলে মাছটা খেয়েছিলাম। হা হা হা। আমার আম্মা এখনো আমার এই মেঝো ফুফুকে এই মাছ খাবার কথা বলে থাকেন এবং হাসেন! আপনার সাথে আমি একমত। আসলেই ভিন্নদেশি খাবার খেতে হলে আস্তে আস্তেই শুরু করতে হয় এবং আমাদের খাবারও তাদের আস্তে আস্তে দিতে হবে!
আমার প্রথম প্রথম অনেক দেশের খাবারের ঘ্রানই অসহ্য মনে হত, হয়ত আমাদের অনেকেরই এমন মনে হয়। তবে রান্নার মত খাবার খাওয়াও একটা অভিজ্ঞতার ব্যাপার। সাথে থাকতে হবে খাবারের প্রতি ভালবাসা এবং জানা শোনা! যে কোন খাবারের প্রতি (যেটা আমাজান জঙ্গলের কোন জাতির খাবার হলেও) আপনার একটা ধরদ থাকতে হবে, আপনাকে বুঝতে হবে, যে খাবারটা আপনার কাছে হাস্যকর মনে হচ্ছে সেটা অন্যের কাছে উপভোগ্য। যাই হোক, আপনার মত গুছিয়ে লিখতে পারি নাই।
একটা উদাহরণ দেই এবং সাথে থাকছে রেসিপি! আমাদের পাশের বাসায় পটলের এই রকম ভাজি করা হত। পটলের চামড়া পুরা মাত্রায় না ফেলে শুধু ছেঁচে তা নিন্মের রেসিপি মত ভেঁজে উনারা খেতেন বা খান। আমরা জানলেও এভাবে কখনো খেতে পারতাম না! পটলের চামড়া ভাল করে না ফেলে কি করে ভাঁজা যায় এবং তদুপরি পটলকে ভাল তরকারিও মনে হত না! কয়েকবার নিন্মের মত করে ভাঁজা খেয়ে এখন আমরাও মাঝে মাঝে এমন করে পটল ভাঁজা খাই। মুখে মেনে গেছে, পটলের মত এমন তরকারী এত সহজে ভেঁজে খেতে এখন আর আপত্তি নেই।
(রেসিপি শুরু করার আগেই বলে দেই, যারা পটলের এভাবে ভাজি খেতে পারবেন না, তারা আমাদের পূর্বের রেসিপিটা দেখে নিতে পারেন। পটলের ওই ভাজিটা খেয়ে এভাবে ভাজিতে এসে যেতে পারেন)
উপকরনঃ
– কয়েকটা পটল
– লাল মরিচ গুড়া
– হলুদ মরিচ গুড়া
– সামান্য জিরা গুড়া
– সামান্য চিনি
– লবন
– তেল (কম তেলেই সময় নিয়ে ভাঁজা উচিত)
প্রনালীঃ
পটলের চামড়া চামচ দিয়ে তুলে নিতে হবে।
জিরা গুড়া, লবন দিন।
চিনি হলুদ মরিচ গুড়া দিন (পরিমান নিজেই অনুমান করুন, মরিচ গুড়ার ঝাল দেখে দেয়া উচিত)
ঠিক এভাবে দেখাবে।
ভাল করে মেখে আধাঘন্টা রেখে দিন।
কড়াইতে তেল গরম করে ভাজুন।
একপিট হয়ে গেলে অন্য পিট উলটে দিন। প্রয়োজনে ঢাকনা দিন।
যে কোন কিছু তেলে ভাজতে সাবধানে করুন। ভেতরটা নরম হয়ে যাবে। ভাঁজাটা কেমন রাখবেন সেটা আপনি নিজেই নির্ধারন করুন।
তেল ঝরিয়ে পরিবেশনের জন্য তুলে নিন। ব্যস হয়ে গেল। গরম ভাতের সাথে খেয়েই দেখুন না!
আপনি খাদ্যরসিক হলে পটলের মজা তুলে নিতে পারবেন! আর না বুঝতে পারলে, এই পটল মুখে দিয়েই কাইকাই করে উঠবেন এবং যিনি রান্না করেছেন বা যিনি পটল কিনেছেন উনাকে খুঁজে বের করে কিছু কথা শুনাবেন! হা হা হা।
মনে রাখুন, খাবার হিসাবে প্রস্তুতকৃত দুনিয়ার কোন কিছুই খারাপ নয়। আপনার কাছে ভাল না লাগতে পারে বটে তবে সেটা খাবারই এবং অন্যদের জন্য প্রিয় খাবার। আমি আমার রেসিপি প্রিয় ভাই বোনদের সব সময়েই অনুরোধ করবো, খাবার দেখেই কখনো সরে যাবেন না, বরঞ্চ খাবার প্রস্তুতকারীকে উৎসাহ দিন এবং নিজেও অংশ গ্রহন করুন। আপনার একটু উৎসাহ পেলে হয়ত তিনি আরো আরো ভাল রান্না করবেন।
সবাইকে শুভেচ্ছা, ধন্যবাদ রনি ভাই।
কৃতজ্ঞতাঃ নীপা ভাবী, মানসুরা হোসেন
হাহাহা, আস্ত শোল মাছের ঝোলএর কাহিনীতে মজা পেলাম 🙂 আর ঠিক বলেছেন উদরাজী ভাই, “থাকতে হবে খাবারের প্রতি ভালবাসা এবং জানা শোনা! যে কোন খাবারের প্রতি (যেটা আমাজান জঙ্গলের কোন জাতির খাবার হলেও) আপনার একটা ধরদ থাকতে হবে, আপনাকে বুঝতে হবে, যে খাবারটা আপনার কাছে হাস্যকর মনে হচ্ছে সেটা অন্যের কাছে উপভোগ্য।” —এইটাই হলো আসল কথা। দুনিয়ার খাবার-দাবারে আগ্রহ থাকলে কত চমৎকার সব অভিজ্ঞতা হয়, কত দেশের কত সংস্কৃতির কথা জানা হয়, সেটা আসলেই দারুণ একটা ব্যাপার। আর শুধু বিদেশই বা বলি কেন, দেশের কত জায়গাতেই যে কতরকম মজার খাওয়াদাওয়া ছড়িয়ে আছে, সেটার উদাহরণ তো আপনার ব্লগেই অনেক আছে।
আপনার এই ব্লগের লেখাগুলি সেই হিসাবে খুবই মূল্যবান, এতো এতো পাঠককে আপনি ভালো রেসিপির সাথে সাথে বিভিন্ন নতুন রকমের খাবারের সাথেও পরিচিত করিয়ে দিচ্ছেন, সেটাও কিন্তু পাঠক-পাঠিকাকে আগ্রহী করে তোলে। এই সুবাদে আপনার একটা বিশাল সাধুবাদ প্রাপ্য!
পটলকে আসলেই অনেকে একটু অপছন্দ করেন, অনেকে বলেন পটলের খোসায় আর বিচি খেলে গ্যাস হয়, আমার বাবাও তাই বলেন। তবে আমার পটল খুব পছন্দ, আমি আর আমার মা ঠিক এইরকম খোসা-চাঁছা পটল ভাজি করে পোলাও দিয়েও খেয়ে দেখেছি, আমাদের খুবই ভাল লেগেছে, আশা করি অন্যান্য পাঠক-পাঠিকারাও এটা ট্রাই করে দেখবেন 🙂
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ রনি ভাই।
দেরীতে উত্তর দেয়ার জন্য মনে কিছু নিবেন না। আসলে এই কমেন্টের পর আর কিছু বলার থাকে না। তাই চুপ থাকাই উত্তম বলে মনে করেছি।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
আমাদের বাড়িতেও এভাবে পটল ভাজা হয় । এভাবে ভাজলে পটল ক্রিসপি হয় আর সেটাই ভাল লাগে।
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ বোন।
LikeLike