বড় হোটেল রেষ্টুরেন্টে খেতে বসলে অনেকেই প্রথমে যে কোন স্যুপ দিয়ে খাবার দাবার শুরু করেন, বিশেষ করে যে কোন চায়নিজ হোটেলেও একই দশা, ইংরেজীতে যাকে বলে ‘স্টাটার’, গলা ভিজিয়ে নেয়া আর কি! ক্লিয়ার কাট কথায় যে কোন থাই স্যুপ দিয়েই আমাদের হোটেলের খাবার শুরু হয়। আজকাল বাসা বাড়িতেও কোন অনুষ্ঠান হলে অনেকেই এমন ধরনের স্যুপ বানিয়ে থাকেন। বিশেষ করে শিশুরা এই ধরনের স্যুপ বেশ পছন্দ করে থাকে।
তবে আমি অনেক আগেই, অনেক লেখায় বলেছি, খাবার দাবার খেতে হয় আবহাওয়া বুঝে। সব খাবার খেতে চাইলেই হবে না, খাবার খেতে ভাল লাগলেই যে খেতে হবে তাও নয়। আমাদের দেশে ঘি, মাখন, পনির, তেলের খাবার আর চলে না, অন্যদিকে ভাল তেল মাখন পাওয়াও মুস্কিল, আবার যদিও পাওয়া যায়, দাম মোটামুটি মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে! এদিকে মাঝে মাঝে এমন মাখন, পনির না খেলে শরীরের ত্বকের উজ্জলতা বাড়বে কি করে, শরীরে মেদ জম্বে কি করে! হা হা হা…। বাংলাদেশের ধনীদের স্ত্রী সন্তানেরা এই জন্যই নাদুস নুদুস, মোটাসুটা!
যাই হোক, ব্যাপার না! চলুন এবং দেখুন। আমাদের আজকের পরিবেশনা, ক্রিমি প্রন স্যুপ!
মোটামুটি এই হচ্ছে উপকরন, নিম্মে উপকরন গুলো দেয়া হল।
উপকরনঃ (চার জনের জন্য, এক লিটার বা কম বেশির পরিমান)
প্রন রেডী করার জন্যঃ
– এক বাটির জন্য ৮/১০টা প্রন (চিংড়ি) হলেই চলে (ইচ্ছা হলে আপনি আর কয়েকটা বাড়িয়ে দিতে পারেন)
– এক চামচ মাখন
– মাঝারি একটা পেঁয়াজ কুঁচি (যারা পেঁয়াজ বেশি পছন্দ করেন আপনারা পেঁয়াজের রিং এবং পরিমানে বেশী দিতে পারেন)
– ১/৪ গোল মরিচের গুড়া
– কাঁচা মরিচ কুঁচি, ঝাল বুঝে কয়েকটা (এটা অনেকেই দেয় না তবে দিলে স্বাদ বাড়ে বই কমে না!)
– এক চিমটি লবন
হোয়াইট সস বা স্যুপের রান্না মুল উপকরনঃ
– বাটার, ৬ টেবিল চামচ
– ময়দা, ১/৩ কাপ (কম বেশিতে স্যুপের ঘনত্ব নির্ভর করবে)
– দুধ, পাঁচ কাপ বা চার বাটি (আগেই স্যুপের বাটি দিয়ে মেপে দুধ নিয়ে রাখতে পারেন)
– জয়ফল গুড়া, ১/৪ চা চামচ (বেশী হলে তিতে ভাব এসে যাবে)
– গোল মরিচের গুড়া, ১/২ চা চামচ
– টেষ্টিং সল্ট, ১/২ চা চামচ বা কম (কম দেয়াই ভাল)
– চিনি, ২ চা চামচ
– লবন, ১ চা চামচ মোট (বা লাগলে পরে দেয়া যেতে পারে, সব সময়ে কম লবনে রান্না শুরু করা উচিত)
– লেমন রাইন্ড, হাফ চা চামচ
– ধনিয়া পাতার কুঁচি, এক চা চামচ বা বেশি
(হোয়াইট সসের একটা আলাদা রেসিপি দেয়া হয়েছে, প্রয়োজনে দেখে নিতে পারেন, রেসিপিঃ হোয়াইট সস)
রান্নার প্রনালীঃ
প্রন রেডী করে নেয়াঃ
কড়াইতে এক চামচ মাখন দিয়ে গরম করে তাতে পেঁয়াজ কুঁচি ও মরিচ কুঁচি এক চিমটি লবন যোগে ভাঁজুন।
এবার চিংড়ি মাছ দিন। ভাঁজুন।
হাল্কা হলদে ভাব হয়ে এলে গোল মরিচ গুড়া দিন এবং আরো কয়েক মিনিট ভেঁজে তুলে রাখুন। প্রন রেডি হয়ে গেল।
হোয়াই ক্রিম সস বানানোঃ
সেই একই কড়াইতে এখন মাখন দিন। গলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন।
এবার ময়দা দিন।
নাড়ানো থামানো চলবে না। আগুন মাধ্যম আঁচে থাকবে।
এবার দুধ দিয়ে দিন। নাড়াতে থাকুন।
এই রকম দেখাবে।
এবার গোল মরিচ গুড়া এবং জয়ফল গুড়া দিন। ভাল করে মিশিয়ে নিন।
প্রথমে হাফ চা চামচ লবন দিন, এর পর চিনি এবং টেষ্টিং সল্ট দিন।
আগুন মাধ্যম থাকবে, নাড়াতে থাকুন। একবার বলক (এর ভাল শব্দ জানা নেই) উঠলেই হয়ে গেল হোয়াইট সস বা ক্রিম স্যুপের সিরা!
মুল রান্নাঃ
আগুন খুব কম আঁচে থাকবে, এবার আগে রেডি করে রাখা চিংড়ি বা প্রন গুলো দিয়ে দিন এবং ভাল করে নাড়িয়ে মিশিয়ে নিন।
লেমন রাইন্ড (লেবুর খোসার সবুজ কুঁচি) দিন। (এটা না দিলেও চলে, তবে দিলে স্বাদ বাড়ে)
নাড়ান, থেমে যাবেন না!
এবার ধনিয়া পাতার কুঁচি দিন এবং মিশিয়ে নিন। সেই সাথে ফাইন্যাল লবন স্বাদ দেখে নিন। লাগলে দিন না লাগলে ‘ওকে’ বলে আগে বাড়ুন! বেশি গাঢ় হতে দিবেন না, তার আগেই চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন।
স্যুপের বাটিতে ঢেলে নিন।
পরিবেশনাঃ
খাবার টেবিলে পরিবেশনা একটা বিরাট ব্যাপার। (আমি এই কাজে কম গুরুত্ব দেই কারন আমার উদ্দেশ্য রান্নায় আগ্রহী করে তোলা! হা হা হা)
বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, বাংলাদেশে যে কোন নিম্ম মাঝারি হোটেল বা চায়নিজ রেষ্টুরেন্ট এই ধরনের এক বাটি স্যুপের (চার জনের জন্য) দাম কমের পক্ষে ৬৫০টাকা তো হবেই! অথচ দেখুন, ঘরে বানালে কত কম খরচে, সহজ এবং সাধারন।
খাবার টেবিলে এভাবে সাজিয়ে বসে পড়ুন।
স্বাদ অসাধারণ! আমি বেশি বলছি না কম বলছি আপনারা নিজেই একবার বানিয়ে দেখুন। যারা হোটেলে এই ধরনের স্যুপ খেয়ে ব পান করছেন, তাদের আমি বলি, একবার নিজে বানিয়ে দেখুন, আশা করি আর হোটেলে যেয়ে পান করতে হবে না!
সবাইকে শুভেচ্ছা।
কৃতজ্ঞতাঃ অধ্যাপিকা সিদ্দিকা কবীর এবং মানসুরা হোসেন।
অসাধারণ!!!
আমি ভাবতেও পারিনি হোয়াইট সস দিয়ে স্যুপ তৈরি সম্ভব। এতদিন শুধু হোয়াইট সস দিয়ে পাস্তা বানিয়েছি, এইরকম অসাধারণ একটা স্যুপ যে এতটা সহজভাবে বানানো যাবে !!
আমি এই স্যুপ অবশ্যই ট্রাই করব,তবে শুধু চিংড়ি না,মুরগিও থাকবে এর সঙ্গে।
শুভেচ্ছা ও ভালোলাগা !!
LikeLiked by 2 people
ধন্যবাদ আঙ্কেল।
হ্যাঁ, একই কায়দায় বোনলেস চিকেন বা কয়েক পদের সবজি দিয়ে এই স্যুপকে আরো নান্দনিক, পুষ্টিকর এবং মজাদার করে তোলা যেতে পারে এবং হোটেল গুলোতে তাই করা হয়। প্রাবসী জীবনে আমি এমন নানান ধরনের স্যুপ খেয়েছিলাম, এখন আফসোস হয়, রেসিপি গুলো টুকে রাখি নাই অথচ চাইলেই পারতাম।
শুভেচ্ছা, আশা করি জানতে পারবো।
LikeLike
ইটালিয়ান পাস্তার একটা রেসিপি খাঁড়া করছি। আসছে। আশা করি ভাল লাগবে।
LikeLike
ভাইয়া, দারুন, এত সহজ। ভাল লাগলো।
LikeLike
ধন্যবাদ বোন।
রান্না আসলেই সহজ কাজ যদি একে ভালবাসা যায়।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
পানি দিতে হবে না? শুধু দুধে হবে? হোয়াইট সস অবশ্য আমার প্রিয় কিন্তু এখানে সূপ এর জন্য দুধ বেশি দেয়া হয়েছে তাই না? সবার শেষে ফ্রেশ ক্রিম দেয়া যাবে?
LikeLike
ধন্যবাদ বোন।
দেরীতে উত্তর দেয়ার জন্য সরি।
পানি চাইলে দিতে পারেন, তা হলে ঘনত্ব কমে আসবে।
স্যুপের জন্য দুধ বেশী দেয়া হয়েছে কারন সবাই খাবে বলেই।
ফ্রেশ ক্রিম দিতে পারেন, তবে কম। ক্রিম দিলে স্যুপের উপরের লেয়ার আরো চমৎকার দেখাবে।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
insha allah eta ami ekbar banaboi. hot n sour soup khete khete otishtho hye gesi
LikeLike
ধন্যবাদ বোন।
খুব সহজ ব্যাপার, বানাবেন না কেন?
আশা করি আপনার বানানো স্যুপ আরো মজাদার হবে।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
Wow! Dekhate to kothin shundor lagse…asha korsi khete o darun hoese.InshaAllah! Try korbo
LikeLike
ধন্যবাদ বোন।
হ্যাঁ, এটা সত্যই একটা মজাদার খাবার। আমরা হোটেলে অনেক দাম দিয়ে খেয়ে থাকি অথচ ঘরে কত সহজে বানানো যায়।
শুভেচ্ছা নিন।
LikeLike
অনেক সুন্দর রেসিপি। বাসায় চেষ্টা করব।
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ ব্রাদার। আশা করি মজাদার খাবার হবে।
শুভেচ্ছা।
LikeLike