এখন কাঁঠাল ফলের দিন। দেশী জাতীয় ফল কাঁঠাল না খেলে আর কি খাবেন। কাঁঠালের বিচি তাই সহজ লভ্য। অনেক দিন ধরে ভাবছিলাম, কাঁঠালের বিচির একটা সাধারণ ভর্তা আপনাদের দেখিয়ে দেব। সময় সুযোগ না পাওয়াতে দেরী হয়ে গেল। আসলে প্রায় ভর্তা পাটাপুতায় বেটে নিতে হয় বলে বিষয়টা আমি সহজে করতে পারছিলাম না। এদিকে আমার ব্যাটারীও আজকাল করে সময় পার করে দিচ্ছিলেন! যাও হোক গত রাতে তিনি রাজী হলেন এবং আমার সেই সাধারণ ভর্তা বানিয়ে দিলেন। খুব সহজ ও সাধারণ। চলুন দেখে ফেলি।
ভর্তা নিয়ে আগেও অনেক কথা বলেছি, সামনেও বলে যাব। ভর্তা আসলে মুখরোচক খাবার। আপনি খেতে বসলে প্রথমে যদি চারটে ভাত ভর্তা মেখে খেয়ে নেন তখন ভাল লাগবে, মুখের কষ কেটে মুখকে অন্যান্য খাবার খেতে রেডি করে দিবে। ভর্তা নিয়ে মজার একটা কথা না বলে পারলাম না, এক সময় ভর্তাকে গরীবের খাবার বলা হত, টাকা কড়ি নাই, গরীব মানুষ চারটে ভাত খায় ভর্তা দিয়ে! এখন সেই ধারনা পাল্টে গেছে, ভর্তা এখন ধনীদের খাবারের টেবিলে স্থান পেয়ে গেছে! জয়তু ভর্তা! তবে যে কোন ভর্তার কনসেপ্ট পাটাপুতায় বলে অনেক সময় ভর্তা মন চাইলেও অনেক পরিবারে হয় না, এত কষ্ট কে করবে! রান্না যদি ভালবাসা হয়, ভর্তা হচ্ছে সেই ভালবাসায় নুন!
যাই হোক, আগেই বলে নেই, শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য ভর্তা বানালে ঝাল কম বা ঝাল ছাড়া বানাবেন। শিশু এবং বৃদ্ধদের কখনোই বেশী ঝাল খাওয়াবেন না।
প্রয়োজনীয় পরিমান ও উপকরনঃ (মোটামুটি এক গোলা)
– কাঁঠালের বিচি, গোটা ১৫/২০, সাইজ বুঝে!
– লাল মরিচ, গোটা ১০/১৫, ঝাল বুঝে
– পেঁয়াজ, গোটা দুই
– লবন, হাফ চা চামচ
প্রস্তুত প্রনালীঃ
কাঁঠালের বিচি খোলায় টেলে খোসা ছাড়িয়ে নেয়াঃ
ছবি ১, তাওয়াতে অল্প আঁচে এভাবে কাঁঠালের বিচি রেখে দিন। মাঝে মাঝে নাড়িয়ে দিতে হবে।
ছবি ২, কাঁঠালের বিচি গুলো এভাবে আসতে বেশি সময় নিবে না। একটা বিচি হাতে নিয়ে খোসা ছাড়িয়ে দেখুন।
ছবি ৩, ভর্তার জন্য বেশি কড়কড়ে ভাঁজার দরকার নেই। কাঁঠালের বিচি খালিও এভাবে ভেঁজে খেতে পারেন, দারুন স্বাদ।
সাব কিছু সাজিয়ে নেয়াঃ
ছবি ৪, এই হচ্ছে আমাদের ভর্তার আইটেম সমুহ।
পাটাপুতায় বাটাবাটিঃ
ছবি ৫, লাল শুকনা মরিচ সামান্য লবন ও পানি যোগে বাটুন। (অনেকে এই মরিচ টেলে নিয়েও এই ভর্তা বানান, তবে এতে ভর্তার রঙ কালচে হয়ে যায়) মরিচ ভাটার আগে সামান্য সময়ের জন্য পানিতে ভিজিয়ে রাখলে বাটতে কষ্ট কিছুটা কমে।
ছবি ৬, মরিচ বাটায় সতর্কতা জরুরী, শিশুদের দূরে রাখুন। শুধু মরিচই মিহীন করে বাটতে হবে।
ছবি ৭, এর পর কাঁঠালের বিচি।
ছবি ৮, এর পর পেঁয়াজ ও আরো সামান্য লবন। ভর্তায় লবন স্বাদ ভাল ও সঠিক হতে হয়।
ছবি ৯, সব কিছু এভাবে নিয়ে আসুন।
ছবি ১০, ভাল করে মাখিয়ে নিন।
ছবি ১১, হাত দিয়ে কচলিয়ে মাখুন, যত মাখা ভাল হবে তত ভর্তার মজা বাড়বে। ভর্তা বাটা ও মাখার পর হাত খুব ভাল করে ধুয়ে নিতে ভুলবেন না।
ছবি ১২, ফাইন্যাল স্বাদ দেখুন, লবন লাগলে দিন।
ছবি ১৩, ব্যস খাবার টেবিলে।
ছবি ১৪, আপনিই বলুন, এটা কি খুব সাধারন একটা ভর্তা নয়।
(তবে আপনি চাইলে বা আপনি যদি শুঁটকী লাভার হয়ে থাকেন তবে একটা চ্যাপা সুটকী পুড়ে নিয়ে এই ভর্তায় বেটে মেখে নিতে পারেন, স্বাদ কয়েক শ গুণ বেড়ে যাবে!)
সবাইকে শুভেচ্ছা।
কৃতজ্ঞতাঃ মানসুরা হোসেন
বি দ্রঃ দেখতে দেখতে অনেক ভর্তা সংগ্রহ হয়ে গেল, ক্লিক এখানে!
স্যার আপনার ব্লগে আসলেই মাথা গরম হয়ে যায় না খাইতে পারার কষ্টে!! 😦 এখন তো বাবা মামা, চাচা চাচীদের সংসারে থাকি। উনারা যা রান্না করে তাই খাই, আবার মাঝে মধ্যে এটা সেটাও করে দিতে বলি!! যেমন এইটা খাবো না, সেইটা রান্না করো ইত্যাদি!! বাট এইসবের কথা বললে দৌড়ান দিবে!!
আপনার ব্লগটাতো থাকবেই! আর আমিও যদি বেঁচে থাকি এবং মহান আল্লাহ্ যদি সেইরকম সামর্থ্য আর সংসার দেয় তাহলে আমরাও তখন এইসব বানানো শুরু করবো ইনশাল্লাহ। 😉
LikeLike
হা হা হা,
তামিম ভায়া, বুঝি! ফেবুতে আপনার স্ট্যাটাস দেখে বুঝি।
তাও চলুক, সময় সুযোগ তো সবার জন্যই আসবে একদিন।
তবে প্রেম্পিরিতের একটা চেষ্টা চালিয়ে যান!
শুভেচ্ছা।
LikeLike
কাঁঠালের বিচির আরো কিছু রান্না চাই।
LikeLike
ধন্যবাদ বোন, আমাদের চেষ্টা চলবেই। সময় এবং সুযোগ পেলে রান্না করবো। ঘরে বেশ কিছু কাঁঠালের বিচি আছে।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
আঙ্কেল,এত ঝালে তো পিত্তি জ্বলে যাওয়ার কথা!!! :O
আমি এমনিতেই ঝাল বেশি খাই! ভর্তাতে ঝাল ই ভালো লাগে।
শুভেচ্ছা
LikeLike
ধন্যবাদ ভাতিজা।
আপনি আমার বাড়ী ওয়ালার ঝাল খাওয়া দেখলে কি করবেন ভাবছি!
আমার দেখা তিনি সেরা ঝাল খোর!
তবে ঝাল কম খাওয়াই ভাল, শরীরের জন্য উত্তম।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
KatAl bichi dea gorur mangsho ranna kore dekun…khub e tasty. .murgi dea onek yumm hoi…
LikeLike
ধন্যবাদ রেহমান ভাই,
ঘরে কাঁঠালের বিচি আছে, দেখি কি করা যায়।
আমি নিজেও আরো শুনেছি কাঁঠালের বিচি আর গরুর গোশত নাকি বেশ জমে উঠে।
শুভেচ্ছা।
LikeLike