অনলাইনে রেসিপি লিখতে গিয়ে আমি অনেক ভাই/বোনের হেল্প নিয়েছি কিংবা অনেক ভাই/বোন আমাকে নানাভাবে প্রটেক্ট করেছেন তাদের মধ্যে আমার এই বোন সুরঞ্জনা আপা তথা আমার এই রান্নাতো বোন উল্লেখযোগ্য। তিনি বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে একজন পরিচিত মুখ, অনেক বিষয়েই তিনি লিখে থাকেন তবে রান্না বা রেসিপি পোষ্ট গুলোতে তিনি অসাধারণ, আমি তার একজন নগন্য ভক্ত। তিনিই প্রথম আমাকে রান্নাতো ভাই বলে ডেকেছেন, বাংলা ভাষায় এই শব্দের অবিস্কারক তিনিই। অনেক কথা জমে আছে, সময় নিয়ে বলা যাবে, আজ রেসিপি নিয়েই কথা। উনার সিলেটি আখনী পোলাউ নিয়ে আমরা নিজেরা রান্না করেছি। তবে সামান্য প্রয়োগ গত চেঞ্জ করছি যাতে রেসিপি লাভার্স ভাই বোনদের বুঝতে আরো সহজ হয়। চলুন, গল্প ও রান্না হয়ে যাক!
রান্নাতো বোনঃ আখনী পোলাও সিলেটে শুধু আখনী নামেই পরিচিত এবং খুবই জনপ্রিয়। রমজান মাসে ইফতারে এই আখনী একটি অপরিহার্য্য আইটেম। এটা না হলে সিলেটের ইফতার পার্টির ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাবে। শুক্রবারে মসজিদে বাচ্চাদের উপস্থিতি ব্যাপক ভাবে বাড়ার কারন নামাজ শেষে এই আখনী শিন্নী হিসেবে বিতরন। চলুন দেখি কি ভাবে আমি এই আখনী রান্না করেছি। আজকাল মুরগী, খাসীর মাংস দিয়েও আখনী রান্না করে। কিন্তু মূলত আখনী রান্না গরুর মান্স দিয়েই হয়। আর সেটাই বেশী সুস্বাদু! সিলেটি আখনী পোলাও (এখানেই আপার আখনী পোলাও এর রেসিপিটা আছে)।
আমিঃ উপরেরে প্যারার কথা গুলো চরম সত্য কথা। আমি প্রথম সিলেটের এই রান্না খাই মধ্যপ্রাচ্যে। আমার রুমমেট বন্ধু সিলেটের নিয়াজ এই রান্না করত শুধু মাত্র রোজার দিনেই। সারা বছর হাতে পায়ে ধরলেও রান্না করত না, রোজার ইফতারিতে ও এই রান্না করত। তখন আমি শুধু খাবারের পর হাড়ি পাতিল প্লেট ধুয়ে মুছে রাখার কাজ করতাম! রান্না জানতাম না, আগ্রহ ছিল না, ইচ্ছাও হত না! হা হা হা। আজ মনে পড়ে কি ভুল না হয়েছে! সেই সময়েই রান্না জানলে জীবন হয়ত আরো নানান বাঁকে নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে নিত! সবই কপাল!
চলুন রান্না দেখে ফেলি। খুব সহজ রান্না। ছবিই বলে দেবে তবুও বর্ননাও যোগ করে দিলাম। গরুর গোসত হাতের কাছে ছিল না বলে মোরগের গোসত দিয়েই রান্না করা হয়েছে। আমার রান্নাতো বোন, আলু ও মটরশুঁটির কথা বলেছেন, আমরা তা হাতের কাছে থাকায় দিয়েছি। আরো জোস বেড়েছে, সিলেটের আমার বন্ধু নিয়াজকে এই সময়ে মনে পড়ছে, সে এখনো মধ্যপ্রাচ্যেই পড়ে আছে! এই রান্নাটা তাকেই মনে করে করছিলাম, নিয়াজ দেখো আমি এখন কত ভাল রান্না করতে পারি, এক সময় তোমরা আমাকে দিয়ে প্লেট ধুইয়েছ! হা হা হা। ভাল থেকো সব সময় বন্ধু।
উপকরনঃ (রান্নাতো আপা থেকেই নেয়া)
– মুরগীর গোস্ত ৭৫০ গ্রাম বা এদিক সেদিক (অনুমানিক),
– পোলাও চাল ১ কেজি,
– আদা বাটা ১ টেবিল চামচ,
– রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ,
– জিরা গুড়ো ২ চা চামচ,
– চিনা বাদাম বাটা ১ টেবিল চামচ,
– পেঁয়াজ কুচি ২ কাপ,
– টক দই ১ কাপ,
– কাঁচামরিচ ৫/৬টি (ঝাল বুঝে),
– দারচিনি কয়েক টুকরা,
– এলাচ ৪/৫ টা,
– গোলমরিচ হাফ চা চামচ,
– লং ৭/৮ টা,
– তেজপাতা ৩/৪ টা (আমাদের তেজপাতা ছিলনা বলে ব্যবহার করি নাই, আপনি করুন),
– লবন পরিমান মত,
– তেল ১ কাপ
– কিউব করে কাটা আলু, মটরশুটি সব মিলিয়ে ১ কাপ। (গাঁজর, আলুবোখারাও দিতে পারেন।)
– কিছু কিসমিস (হাতের কাছে থাকায় দেয়া হয়েছে)
– কেওড়া জল ১ বা দেড় চা চামচ (ইচ্ছা)।
প্রনালীঃ
তেল গরম করে এক চা চামচ লবন যোগে পেঁয়াজ কুচি ভাঁজুন।
এর পর একে একে উল্লেখিত সব মশলা দিয়ে যেতে থাকুন এবং ভাঁজুন।
ঠিক এই অবস্থায় এসে যাবে, তেল উপরে উঠে আসবে।
এর পর গোসত দিয়ে দিন।
ভাল করে কষিয়ে নিন। প্রয়োজনে হাফ কাপ পানি দিতে পারেন।
ডাকনা দিয়ে ডেকে আগুন মাঝারি আঁচে রাখুন।
এবার টক দই যোগ করুন। আরো কিছু মরিচ দিতে পারেন।
আবারো ঢেকে রাখুন, অল্প আঁচে, মিনিট ১০।
এবার আলু প্রিপারেশন। সামান্য পানিতে আলু সামান্য সিদ্ধ করে কয়েক চামচ তেলে ভেজে নিন।
আলু দিয়ে দিন।
এমন দেখাবে।
চাল ধুয়ে কিসমিস ও কাঁচা মরিচ সহ এভাবে আগেই রেখে দিন। রান্না চলবে হাতের কাজও চলবে।
এবার চাল দিন।
মটর শুটি দিন। (আমাদের মটরশুঁটি আগেই হাফ সিদ্ধ করে ফ্রীজে রাখা ছিল)
এবার প্রায় তিন কাপ পানি দিন। চালের উপর প্রায় এক ইঞ্চি। মরিচে ঝাল কম বিধায় আরো কয়েকটা মরিচ দিয়েছি। এখানে ফাইন্যাল লবন দেখুন, ঝোল(!) মুখে দিয়ে দেখুন, এটা একটু কটা (বেশি লবন) হতে হবে, তা হলে শেষে লবন সঠিক হবে। (লবন কমের জন্য অনেক সময় বেশ ভাল রান্নাও মার খেয়ে যায়)।
পাত্রের নিছে তাওয়া দিয়ে মাধ্যম আঁচে ঢেকে রাখুন, পোলাউ রান্না গুলোতে শহুরে দম দেয়া, এটা আমি অনেকবার আপনাদের দেখিয়েছি (রেসিপিঃ সাধারন পোলাউ রান্না), আশাকরি মনে আছে বা দেখে আসতে পারেন। মাঝে মাঝে দেখে নাড়িয়ে দিতে ভুলবেন না।
ওহ, এই সময়ে কেওড়া জল দিয়ে দিন।
হয়ে যাচ্ছে! যদি চাল শক্ত থাকে তবে পানির ছিটা দিয়ে নাড়িয়ে আবারো ঢাকনা দিয়ে রাখতে পারেন।
দেখুন কি ঝকঝকে!
পরিবেশনের আগে আবারো নাড়িয়ে ঝরঝরে দেখুন।
বাহ, এই তো আমাদের আখনী পোলাউ।
আসুন, বসে পড়ুন। আপনার জন্যই এই রান্না।
সবাইকে শুভেচ্ছা নিন। ঝিনাইদহের আরো একটা নুতন রান্না নিয়ে আসছি অচিরেই! ভাল থাকুন, ভাল খাবারে আমাদের সবার দিন কাটুক।
ধন্যবাদ রান্নাতো ভাই। আখনীর স্বাদ আসলেই দারুন। কম সময়ে কম খরচে চালানো যায়। আর সব চাইতে বড় কথা, শুধু সালাদ দিয়েই এই আখনী পেট ভরে খাওয়া যায়।
LikeLiked by 2 people
আমার ছোট ভাইয়ের খুবই পচ্ছন্দের খাবার হচ্ছে পোলাও । ছোট ভাই বোনের আসার কথা আছে ,আসলে এই রান্নাটা করে খাওয়াব ভাবছি । একটা প্রশ্ন , আখনী মানে কি?
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ বোন।
আপনার রান্নায় ওদের মন ভরে উঠুক।
তা হলে বিরিয়ানী মানে খুঁজে আগে বের করতে হবে! (সরি, আমার জানা নেই, দেখি আমাদের সিলোটি আপা কি বলেন।)
LikeLike
আজ ই রান্না করব! সব কিছু রেডি! সাহাদাত ভাই…. Best Of Luck Wish Koiren!!
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ আসিফ ভাই, চমৎকার রান্না, তেমন কঠিন নয়। আমার দোয়া থাকলো। আশা করি খেয়ে আরাম পাবেন। তবে একটা ব্যাপার শেষ দিকে চুলা ছেড়ে মোবাইল, নেট বা টিভি দেখায় লেগে পড়বেন না। তলা লেগে বা পুড়ে যেন না যায়। রানা শেষ করেই রান্নাঘর ত্যাগ করুন।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
ইয়াকনী পোলাও থেকে বিকৃত হয়ে আখনী হয়েছে। কোনো দেশ বা অঞ্চলের নাম থেকে এটা এসেছে।
আমি প্রথম কমেন্ট আর ২য় ভোট দিয়েছিলাম। সেটাও গুম হয়ে গেলো। 😦
LikeLiked by 1 person
আমাদের ফেবু বন্ধু আসিফ ভাই এই রান্না রান্না করে ছবি সহ আপলোড দিয়েছেন।
ধন্যবাদ আফিস ভাই। https://www.facebook.com/photo.php?fbid=10203053702556176
LikeLike
চমৎকার রান্না, দেখেই লোভে পড়তে হয়! (তবে এটা তেহারীর মতই)
LikeLike
Thanks Bondu mone rakar janno
LikeLike
নিয়াজ নাকি! কেমন আছো?
অনেক দিন দেখা নাই। তোমার কথা প্রায়ই মনে পড়ে। বাড়ী এলে জানিও, দেখা এবং কিছু সময় আড্ডা দিতে চাই।
ভাল থেকো বন্ধু।
LikeLike
https://www.facebook.com/groups/Foodography1/permalink/525336014275030/
LikeLike
ভাই, পেয়ারার জেলী বানানোর রেসিপি টা দিয়েন, তাহলে খুবই উপকৃত হব। বিভিন্ন নেট ঘেটে, বানানোর চেষ্টায় আছি, কিন্তু কিছুতেই সুবিধা করতে পারছি না, কেন জানি না, আমার জেলী জমাট বাধেঁ না। তবে আপনি একবার দেখিয়ে দিলই, আমি নিশ্চিত যে, I can do it.
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ দোলন ভায়া।
আপনার কমেন্ট পড়ে ভাল লাগলো। পোয়ারার জেলীর কথা শুনেছি কিন্তু আমি নিজেও এখনো বানাই নাই। যাই হোক, নোটে তুলে নিলাম, কখনো সময় পেলে রেসিপি দেবার চেষ্টা করবো।
শুভেচ্ছা নিন।
LikeLike