গ্যালারি

রেসিপিঃ সর্ষে বাটায় জালি (পাঁচ লক্ষ হিট স্পেশাল ও কিছু কথা)


গল্প ও রান্না গত কয়েকদিন আগে ৫,০০,০০০ (পাঁচ লক্ষ) হিট পার করেছে, পারসোন্যাল ওয়ার্ডপ্রেস সাইটে এটা একটা বিশাল এচিভমেন্ট বলে আমাদের মনে হয়। সবই আপনাদের ভালবাসা। আপনারা আমাদের রেসিপি সাইট গল্প ও রান্না পছন্দ করেন, আমাদের ভালবাসেন, এটা তারই প্রমান। এই আনন্দের সময় আপনাদের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও ভালবাসা জানাই। আপনাদের অনুপ্রেরনা আমাদের পাথেয় হয়ে থাকবে।

তবে বিরুপ পরিবেশ, রান্নাঘরের প্রতিকুলতা, নানান অসহযোগিতা, নেট লাইন স্লো, বাসায় কম্পিউটার ধরলে স্ত্রী সন্তানের হাউ কাউ, অর্থিক ইনকাম এখন তেমন ভাল না করতে পারা, যানযটে সময় খেয়ে ফেলা সহ নানান কারনে পিছিয়ে পড়ছি বলে মনে হয়! তবে প্রবাসী, ব্যচেলর ভাই বোনদের কাজে লাগছি, এটাই আনন্দের। আমি আমার চেষ্টা করেই যাব! হা হা হা।

পাঁচ লক্ষ হিটের আনন্দে অনেক কিছুই মনে পড়ছে, অনেক কিছুই আপনাদের বলতে ইচ্ছা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচশত রেসিপি এবং সাথে গল্প বলা বিষয়টা খুব একটা আমার জন্য সহজ ছিল না বা আছে। প্রতিটা রেসিপিতে কমের পক্ষে ১০/১২টা ছবি (অনেক সময় বেশি এবং এই ছবি গুলো আমার রান্নার পাশা পাশি নিজকেই তুলতে হয়, যা কষ্টকর কাজ, ফাঁকি দেয়া যায় না। বার বার হাত মুছে নেয়া এবং আগুনের তাপের দিকে খেয়াল রাখা, ইত্যাদি) দিয়ে সাজানো সহজ নয়। এছাড়া ছবি গুলো প্রথমে নেটে তুলে আবার লিঙ্ক দিয়ে ব্লগে নিয়ে আসা সময়ের ব্যাপার। একটা রেসিপি ব্লগ সাজাতে/লিখতে কমের পক্ষে ঘন্টাখানেক তো লাগেই। আরো ভাল করে সাজিয়ে তুলতে আরো বেশী সময়ের দরকার। পাঠক/রেসিপি লাভার্সদের মনের মত করে সাজাতে সময়ের বিকল্প নেই। যে ব্লগে যত সময় নিয়ে কাজ করেছে সেটা তত পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে বলে আমি দেখেছি।

ছেলে হয়ে অনলাইনে রেসিপি লিখতে গিয়ে, খাবারের ছবি দিতে গিয়ে অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছি আগে, অনলাইনে প্রগতিশীল সেজে বসে থাকা অনেকের মুখোশ দেখেছি নিরবে। কয়েকটা বাংলা ব্লগ থেকে এই কারনে নিজকেও গুটিয়ে নিয়েছি, অথচ আমার এই কাজ গুলো সেই সব ব্লগেই শুরু করেছিলাম। আজ থেকে বছর ৪/৫ আগেও ফেসবুকে সাধারন খাবারের ছবি (ভর্তা জাতীয়, বা রেগুলার খাবারের ছবি) দেখলে অনেক লোকই নাক সিটকাতেন! ছি ছি একটা ভাবে কেটে পড়তেন, এখন উনারাও হাড়ি পাতিলের ছবি দিয়ে যাচ্ছেন অহরহ। দেখে মজাই পাই! নাম জানতে চাইবেন না প্লিজ!

বাংলাদেশের অনলাইনে মেয়েদের সংখ্যা এমনিতেই কম তবুও কিছু বোন আমাকে নিসার্থভাবে অনলাইনে কমেন্ট করে সাহস যুগিয়েছেন, কোন বিতর্ক এলেই উনারা আমাকে সাপোর্ট করে কথা বলেছেন, ফলে কুলোকেরা (এদের আমি আঁতেল বলি) থেমে গিয়েছে, আমি এগিয়ে চলেছি! সেই সব বোনদের আমি সালাম জানাই, আমার শ্রদ্ধা থাকল। (নাম উল্লেখ করা গেলে ভাল লাগত!)

এই পাঁচ লক্ষ হিটের কৃতিত্ব আমি একা নিলে হবে না! আসলে পুরাই কৃতিত্ব আমার ব্যাটারী তথা মানসুরা হোসেনের। তিনি কষ্ট করে আমাকে রান্না শিখিয়েছেন, বুদ্ধি দিয়েছেন এবং রান্নাঘরে সহ্য করেছেন। অনেক সময় আমি নিজেও উলটা পালটা বলে উনাকে রাগিয়ে তুলেছি কিন্তু আবার আমরা রান্না করতে লেগেছি! আমার টার্গেট প্রতিদিন একটা করে রান্না করা, সেটার জন্য অনেক সময় তিনি নিজেও অপেক্ষা করেছেন, অফিস যানজট ঠেলে বাসায় যেতে দেরী করে রাতের খাবার খেতে দেরী হয়েছে। এদিকে, রান্নাঘরে স্ত্রীর সাথে টিকে থাকার জন্য আমাকে আপনারা কি পুরুস্কার দেবেন তা আপনারাই ভেবে নিন! নুতবা যাদের স্ত্রী আছেন তারা কয়েকটা দিন রান্নাঘরে স্ত্রীর সাথে কাজ করে দেখুন! হা হা হা। (কৌতুক বুঝার জন্য অগ্রীম ধন্যবাদ) ছেলেরা কেন রান্না করে না বা রান্নাঘরে প্রবেশ করে না, তা আমি বুঝি! হা হা হা।

যাই হোক, অনেক কথাই লিখা যায়। শুধু রান্নাঘরের অভিজ্ঞতা দিয়েই একটা বিরাট বই লিখে ফেলা সম্ভব! (আমি সুযোগ পেলে লিখবো) মধ্যবিত্ত এবং হিসাব করে বাজার করা এবং তার থেকে রেসিপির জন্য রান্না করা কঠিন। তবে আপনাদের নিধিদায় বলতে পারি, স্বাদ হয় নাই, মনের মত খাবার না হলে সেটা রেসিপি আকারে প্রকাশ করি নাই। স্বাদ দেখেই রেসিপির জন্য নির্বাচন করেছি। এমন অনেক রান্না আছে, যা প্রকাশ করি নাই, কারন স্বাদ আমার মনের মত হয় নাই!

যাই হোক, এই পাঁচ লক্ষ হিটের জন্য আপনাদের জন্য কি রেসিপি দেয়া যায়, তা নিয়ে কয়েকদিন ধরেই ভাবছিলাম। আপনারা আমার চরিত্র জানেন, আমরা এমন রান্না করতে চাই, যা আমাদের দেশীয় রান্না, খেতে ভাল, আবার সহজ ও সুন্দর, মশলাপাতি ও রান্নার জটিলটাও নাই! খুজে এই রান্নাটা পেয়েছি। কি মনে করে আমি জালি বা চাল কুমড়া কিনে নিয়েছিলাম এবং আমার ব্যাটারী জানালেন, সর্ষে দিয়ে এই রান্নাটা দেখাতে পার! আমি রেসিপি জেনে কাজে লেগে পরলাম। বলে রাখি, এই রান্নার রেসিপিটা আমার শাশুড়ী মায়ের, যিনি আর এই দুনিয়াতে নেই। চলুন দেখে ফেলি।

উপকরনঃ
– কচি জালি কুমড়া/চাল কুমড়া (৭৫০ গ্রাম হতে পারে, তাজা হলে স্বাদ বেশী)
– সরিষা, তিন চা চামচ আস্ত, বাটার পর যা হয়
– মাঝারি পেঁয়াজ দুই/তিনটে
– কাচা মরিচ, ৪/৫ টা
– রসুন, ৪/৫ কোষ
– চিনি, হাফ চা চামচ
– তেল, হাফ কাপ
– লবন, পরিমান মত

– হলুদ গুড়া (সামান্য, শুধু জালি কুমড়াইয় মাখিয়ে নেয়ার জন্য)

– কাচা মরিচ আস্ত কয়েকটা (শেষে দেবার জন্য, এগুলো থেকে ঝাল বের হবে না)

প্রনালীঃ

ছবি ১ কচি জালি বা চাল কুমড়া যত তাজা হবে তত স্বাদ হবে। ভাল করে ধুয়ে পরিস্কার করে কাটার জন্য প্রস্তুত করে নিন।


ছবি ২ এভাবে কেটে নিন। সাইড দিয়ে কুচিয়ে দিন।


ছবি ৩ সামান্য লবন ও হলুদ গুড়া ছিটিয়ে দিন।


ছবি ৪ এভাবে মেখে কিছুক্ষন রাখুন।


ছবি ৫ মশলা প্রস্তুত করন। সর্ষে, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, রসুন বেটে মশলা করে নিন।


ছবি ৬ এই হচ্ছে মশলা। এভাবে তুলে রাখুন।


ছবি ৭ কড়াইতে এবার তেল গরম করে জালি গুলো ভেজে নিন।


ছবি ৮ এভাবে ঢেকে কম আঁচে ভাজুন।


ছবি ৯ এক পিট হয়ে গেলে অন্য পিট উলটে দিন।


ছবি ১০ ভাজা হয়ে গেলে তেল ঝরিয়ে উঠিয়ে নিন


ছবি ১১ এভাবে ভেজে আলাদা করে রাখুন।


ছবি ১২ এবার মুল রান্না। ভাজার কড়াইতে তেল দেখে তাতে মশলা গুলো দিয়ে দিন। ভাল করে কষিয়ে/ভেজে নিন। চিনি ও এক চিমটি লবন দিতে ভুলবেন না। যেহেতু জালিতে আগেও লবন দেয়া হয়েছে, তাই এখানে কম লবন দিতে হবে। আর লবন কম হলেতো আমরা শেষে দিতেই পারবো।


ছবি ১৩ মশলার ঘ্রান বের হবে এবং দেখেই বুঝবেন যে, এখন জালি ভাজি দেয়া দরকার। কয়েকটা কাঁচা মরিচ যোগে জালি গুলো দিয়ে দিন।


ছবি ১৪ ভাল করে মিশিয়ে নিন।


ছবি ১৫ এবার আবার মিনিট পাঁচ ঢাকনা দিয়ে কম আঁচে রাখুন। ফাইন্যাল লবন দেখুন, লাগলে দিন, না লাগলে ওকে বলুন।


ছবি ১৬ ব্যস রেডী, পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত।


ছবি ১৭, অসাধারণ স্বাদ। তবে ভেবে দেখুন কত সহজ রান্না এবং এই রান্নাটা কে খাবে না বলুন!

সবাইকে শুভেচ্ছা। আপনারা আমাদের ভালবাসেন বলেই আমরা আছি, থাকবো।

15 responses to “রেসিপিঃ সর্ষে বাটায় জালি (পাঁচ লক্ষ হিট স্পেশাল ও কিছু কথা)

  1. ’’মধ্যবিত্ত এবং হিসাব করে বাজার করা এবং তার থেকে রেসিপির জন্য রান্না করা কঠিন। তবে আপনাদের নিধিদায় বলতে পারি, স্বাদ হয় নাই, মনের মত খাবার না হলে সেটা রেসিপি আকারে প্রকাশ করি নাই। স্বাদ দেখেই রেসিপির জন্য নির্বাচন করেছি। এমন অনেক রান্না আছে, যা প্রকাশ করি নাই, কারন স্বাদ আমার মনের মত হয় নাই! ’’
    এইকথা গুলো একদম বাস্তব কথা 🙂 খুব মনে ধরেছে আমার, এত কষ্ট করে কাজ গুলো করার জন্য এত্ত এত্ত ধন্যবাদ 🙂 শুভকামনা ও শুভেচ্ছা রইল
    ভালো থাকুন খুব ভালো ^_^

    Liked by 1 person

    • ধন্যবাদ বোন।
      আসলে কত কথা জমে আছে, কত সুখ দুঃখ এখন এই ব্লগের সাথে জড়িয়ে আছে। সময়াভাবে সব কিছু ঘুচিয়ে লিখতে পারছি না বলে মাঝে মাঝে দুঃখে আটকে যাই।

      রেসিপি লিখা এবং রান্নাটা পেশা হিসাবে নিতে পারলে ভাল লাগত। সারাদিন এটার পিছনেই পড়ে থাকতাম।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  2. ভাই আপনার রেসিপির নিয়মিত পাঠক না হলেও আপনার ব্লগটি আমার খুব পছন্দের । রান্না বান্না এক্কেবারেই পারিনা তাই মাঝে মাঝেই পড়ে স্বাদ নেওয়ার চেস্টা করি। আপনার শাশুড়ী মায়ের জন্য দোয়া রইল , আল্লাহ উনা্র জান্নাতুল ফেরদাউ নসীব করুন। আর ৫ লক্ষ হীটের জন্য শুভ কামনা

    Liked by 1 person

  3. আপনাকে অভিনন্দন। আপনার রান্না আমাদের খুব ভাল লাগে।

    Like

  4. অভিনন্দন!!!!

    Like

  5. allah apnake aaro onek dur egiye jabar taufik daan korun…apnake o apnar poribar k dunia o akhirate mongol daan korun 🙂

    Like

    • ধন্যবাদ ভাই/বোন।
      আপনার জন্যও দোয়া করি। আপনাদের ভালবাসাই কাম্য। আমাদের চেষ্টা যদি একজন মানুষেরো কাজে লাগে আমরা নিজকে ধন্য মনে করবো।

      আপনার দোয়ায় আমরা অনেক অনেক খুশি হয়েছি।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  6. অনেক অনেক অভিনন্দন উদরাজী ভাই! চালিয়ে যান! 🙂

    Like

  7. অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই পোস্টটির জন্য। আমিও আপনার মত রান্নাঘরে থাকতে পছন্দ করি। এই রেসিপিটা দেখে বাসায় সকলকে রান্না করে খাওয়লাম ও নিজে খেলাম। সত্যিই সেইরকম স্বাদ………….. ধন্যবাদ।

    Like

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]