কলকাতার ধার দিয়ে বয়ে যাওয়া গঙ্গা নদী দেখে প্রান জুড়ায়ে গেল! বার বার মনে পড়ছিলো আমাদের বুড়িগঙ্গা নদীকে, যে নদীকে আমরা প্রায় গলা টিপেই মেরে ফেলছি দিনের পর দিন। দুনিয়ার অনেক শহরের পাশ দিয়েই আমি নদী দেখেছি এবং সেই নদীকে কত না আদর যত্ন করে রেখে দেয়া হয়েছে, শুধু আমরা পারি না। গঙ্গা নদীর পাড় খুব সুন্দর করে বাঁধাই করে দেয়া, এই গ্রীষ্মেও মনে হচ্ছিলো পূর্ন যৌবনে আছে! সময় থাকলে গঙ্গায় বেড়িয়ে আসতাম। পাশে ঘাট ছিল। যাই হোক, আমাদের কিছুই করার নেই, শুধু দেখেই গেলাম। তবে সারা বাংলাদেশের নদী গুলোর মরন দশার জন্য ভারত দায়ী, আন্তর্জাতিক নদী/পানি আইন ভারত মেনে চললেও আমাদের নদী গুলোর এই করুন অবস্থা হত না।
কি আর বলব, কে শুনবে আমার কথা, না মমতা, না হাসিনা! ভারত রাষ্ট্রের সব কিছুই তাদের জন্যই! হা হা হা, এটাই তো স্বাভাবিক! কলকাতার মূখমন্ত্রী মমতা দিদিকে দিয়েই সব কিছু বুঝা যায়। মমতা দিদির ভোটের সময় আমি কলকাতায় ছিলাম, তিনি পাশ করেছেন দেখে আনন্দিত হয়েছিলাম, ভেবেছিলাম বাংলাদেশের জন্য কিছু হলেও (অন্তত পানির) ভাল হবে, না তিনিও তার রাষ্ট্রের নীতি মেনে চলছেন! তবে মমতা দিদি আসার পর কলকাতার মানুষের অবস্থার কিছুটা হলেও পরিবর্তন এসেছে বলে আমার মনে হয়েছে, যদিও এই পরিবর্তন দেখতে দূরবীন লাগবে। তবে কলকাতার বর্তমান পুলিশ প্রশাসন সহ যোগাযোগ ব্যবস্থায় বেশ পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।
যাই হোক, ইন্ডিয়া নিয়ে আমি আমার উপলব্দি লিখে দিয়েছি! ইন্ডিয়া হচ্ছে অনেকটা আমাদের মেয়ের দুষ্টু জামাইয়ের মত! যৌতুক নিল আবার আমাদের মেয়ের গায়েও হাত তুলে গেল! সব দেখে শুনে আমরাও সিদ্ধান্ত নিতে চাই কিন্তু আমরা ছাড়তে চাইলেও আমাদের মেয়ে আবার ছাড়তে চায় না! কাজে কাজেই মেয়ে জামাইয়ের নানা অন্যায়, আবদার আমাদের মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে মেনে নিতে হয়!
গঙ্গার পাশে ধ্যনে মগ্ন এই নিভৃতচারীকে দেখে জীবনের সংজ্ঞা খুজে পেলাম। জীবন তো এটাই! এটাই জীবন, নদীর পারে ধ্যান!
গঙ্গা দেখা শেষ করে রাস্তায় নামতে হল। আমার রেলের টিকেট ফিরত দিলে কিছু রুপিয়া পাব। রাস্তায় নামতেই পানির পিপাসা লেগে গেল। আর কই যাই, কলকাতায় রাস্তার ধারের শরবত না পান করলে আর কি করবেন? হা হা হা, কলকাতায় রাস্তার ধারের যে দুটো পানীয় না পান করলেই নয়! একটা হচ্ছে লেবু শরবত, অন্যটা হচ্ছে হাতে ঘুটা দিয়ে বানানো লাচ্ছি! এই গরমে দিল খুশ!
রেলের টিকেট ফিরত দিতে প্রায় ঘন্টা খানেক সময় নষ্ট করে ফেললাম। লাইন এবং এদিক সেদিক করে। ফাইন্যালি টাকা পাবার আগে কাউন্টারে ভাংতি নেই! আমি টাকা ভাংতি করতে বাইরে বের হয়ে গেলাম। কি করে টাকা ভাংতি করা যায়! কিছু একটা খেতে টাকা ভাংতি করতে হবে। এদিকে আমাকে লাইনে না পেয়ে আমার কলকাতা মডেল ইমরান প্রায় বেহুঁশ! কোথায় গেলেন সাহাদাত ভাই! ফেলে চলে গেলেন না তো! হা হা হা, আরে ইমরান মিয়া, এই সাহাদাতের কলিজা অনেক বড়, সারা জীবন মানুষের উপকারই করে আসছে! হা হা হা। যাই হোক টাকা ভাংতি করে আবার রেল কাউন্টারে প্রবেশ করতেই ইমরান আমাকে খুজে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল। টাকা নিয়েই বের হয়ে ইমরানকে বললাম, চল আগে দুপুরের খাবার খেয়ে নেই। ফুটপাতের খাবার খাব না বলে ভাবছিলাম, এদিক সেদিক ভাল কোন হোটেল আছে কি না তা খুজছিলাম। না, ফেয়ালী প্লেস একটা বানিজ্যিক এলাকা, আমাদের মতিঝিল এলাকার মত। ফুটপাতেই সব কিছু! হা হা হা।। রাস্তার ধারের বাসমতী চালের বিরিয়ানীর দিকে নজর পড়ল। দেখেই মনে ভরে যাবার দশা! না খেয়ে পারি নাই, দারুন। মাত্র ৬৫রুপিতে চিকেন বাসমতী চালের বিরানী! আমার কাছে সস্তাই মনে হল। আমার মডেল ইমরান নিজেই এই বিরিয়ানি হাতে নিয়ে বলল, সাহাদাত ভাই ছবি তুলেন!
রাস্তার ধারের চিকেন বিরিয়ানী খেয়েই আমি কাইত! ছেলেটার বাড়ি ছিল ফরিদপুরে, এখন কলকাতায়। এত সুন্দর স্বাদের রান্না, এত ঝরঝরে চাল যে, আমাকে এই বিরিয়ানীর কথা অনেক দিন মনে রাখতেই হবে। আমি রেসিপিটা শুনে এসেছি, আসলে কলকাতায় মশলাপাতি এতই ভাল পাওয়া যায় যে, রান্না করলেই স্বাদ হতে বাধ্য। (এই লিঙ্কে ক্লিক করে আরো ছবি দেখা যেতে পারে)
টাকা ভাংতি করেছিলাম রাস্তার ধারের এই হ্যান্ড মেইড লাচ্ছি খেয়ে! ঘুটনী দিয়ে এখনো লাচ্ছি বানানো হয়। আমাদের দেশে এই সিষ্টেম হয়ত এক সময় থাকলেও, এখন আর কোথায়ও নেই! ট্রেডিশন ধরে রাখার এই চেষ্টা ভাল না লেগে উপায় নাই!
আমি আর দেরী করতে চাইলাম না। তবে হাতের তখনো সময় আছে, টেক্সি চড়ার ইচ্ছা থাকলেও কলকাতাকে আরো কাছ থেকে দেখার ইচ্ছা বাসে চড়ে বসলাম। ফেয়ালী থেকে এয়ারপোর্ট, মাত্র ১০ রুপিয়া ভাড়া। অনেক সস্তা মনে হল, ট্রেক্সিতে নিঃসন্দেহে ২৫০রুপি লাগবেই! কলকাতা দেখতে হলে বাসে ছড়াই উত্তম বলে আমি মনে করি। বাসে তেমন ভীড় নেই। যাত্রীর তুলনায় বাস কম নয়। এসি বাস ছিল, উঠি নাই! একই রাস্তায় বাস, ট্রাম সহ যাবতীয় নানান পরিবহন তবুও কোন দূর্ঘটনা নেই! আমি আজ সকালের কলকাতার কয়েকটা প্রত্রিকা দেখেছি, কোন দূর্ঘটনার খবর নেই। তবে একটা মারাত্বক খুনের ঘটনা ছিল, তা হচ্ছে প্রেমিকাকে টিজ করায় প্রেমিক স্কুলে ঢুকে উক্ত ছেলেটাকে গুলি করে খুন করে ফেলেছে! (এদিকে পত্রিকা দেখে যা মনে হল, তাতে আগামীতে হয়ত মোদী সরকার এসে যাবে! মোদী কট্টরবাদী, দেখা যাক কি হয়!)
যথা সময়ে বিকেল ৫.২০ মিনিটে কলকাতা দমদম এয়ারপোর্টে প্রবেশ করে ফেললাম। আমার কলকাতার ইমরানকে রেখে আমি এয়ারপোর্টে প্রবেশ করলাম। ওকে কিছু উপদেশ এবং কিছু টাকা দিতে চাইলাম, টাকা গুলো নিল না। জানালো এই এক রাত এবং কিছু ঘন্টায় আমি যা করেছি, তাই যথেষ্ট! ইমরান পারবে, এটা কোন ব্যাপার না! কত শহরে আমি একাকী থেকেছি, আমিও তখন ইমরানের বয়সিই ছিলাম। হা হা হা।
এয়ারপোর্টে এই কাপ কফির দাম নিলো ১২০ রুপি। আর এক বোতল পানি কিনেছিলাম ২০ রুপিয়া দিয়ে, তবুও পকেটে কিছু রুপিয়া বেঁচে ছিল, কি কিনবো খুজে পাচ্ছিলাম না। এয়ার পোর্টে এক জাপানি ভদ্রলোকের সাথে আলাপ জমিয়ে তুললাম, কাজুমাসা সাসাকি, বেশ ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গেল। পরে ফেসবুকে চ্যাট হয় পরদিন। তার লেখা আপনাদের সামনে তুলে দিতে ইচ্ছা হচ্ছে, সে লিখেছে I arrived Japan very safely. This travel is very exciting and feel many peoples kindness, include your met. আমি তাকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রন জানিয়েছিলাম (দেশের বাইরে আমরা নিঃসন্দেহে এক একজন রাষ্ট্রদূত!)। সে আবার লিখলো And I think I must study English very hard. so that I feel more happy next travel. আরে জাপানী পাগলা, ভাব বিনিময়ে ভাষা জানার দরকার নাই!
নিজের ছবি তোলার খুব একটা শখ আমার আর বাকী নেই! মাঝে মাঝে দুই একটা কাউরে দিয়া তোলাতে চেষ্টা করি, প্রমান হিসাবে রাখার জন্য। কলকাতার দমদম এয়ারপোর্টে এমনি কয়েকটা ছবি তুলে দিয়েছেন, কলকাতার এক বাঙ্গালী, তিনি এয়ার পোর্টে চাকুরী করেন। তার তোলা এই ছবিটা আমার কাছে সেরা মনে হয়েছে, যেভাবে বলেছি, তিনি সেটা বুঝতে পেরেছেন! উল্লেখ্য আমি তাকে বলেছিলাম, আমার নিচের দিকের ছবি তুলে দিতে।
বিদায় কলকাতা, বিদায় ভারত। ২১ ঘন্টার কলকাতা! বেঁচে থাকলে আবারো দেখা হবে হয়ত। স্ত্রী পুত্রদের নিয়ে একবার তাজমহল দেখার ইচ্ছা আছে, আশা করি মরার আগে উপরওয়ালা আমার এই খায়েশ পূর্ন করবেন।
বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট নেমে মাথায় হাত! বিরাট লাইন!
বিদেশ না গেলে দেশের মায়া বুঝা যায় না! এয়ারপোর্টে নেমেই সেই মায়াটা বাস্তবে বুঝা যায়।
কিছু কথা থেকে যায়। কলকাতা থেকে ঢাকা এবং ইমিগ্রশন দিয়ে বের হয়ে রাস্তায় নেমে কি করে বাসায় ফিরে যাব ভাবতে ভাবতে শেয়ারে একটা গাড়ী পেয়ে গেলাম (এভাবে গাড়ী চড়া বাংলাদেশে উচিত নয়, তবুও কি করবো)। রামপুরা আসতে সময় লেগেছিল, প্রায় ২ ঘন্টা। দুঃখজনক ব্যাপার। তবুও স্ত্রী পুত্রদের কাছে ফিরে আসতে পেরে আনন্দিত হয়েছি। ছোট ৬ মাসের ছেলে যখন আব্বু আব্বু করে ঢাকল, তখন মনে আর কোন দুঃখ রইল না!
ভালো লাগলো ভ্রমণকাহিনী!
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ রনি ভাই।
এবারে ভাবছিলাম কলকাতার বড় বড় পুরাতন হোটেল গুলো নিয়ে একটা সিরিজ লিখবো। কিন্তু রেলের টিকেট না পাওয়া এবং এত দিন না থাকতে পারার কারনে চলে আসতে হল। তাই চলতি পথে রাস্তার খাবার দাবারই প্রধান্য পেয়েছে।
সময় কম থাকার কারনে অনেক কিছু করা হয় নাই। যাই হোক, আগামীতে আবারো কলকাতা যাব ভাবছি।
গল্প ও রান্না’য় কিছু গল্প না করলে পাঠক ধরে রাখবো কি করে? তা ছাড়া বাইরের খাবার দাবার দেখাতে পেরেও আমি আনন্দিত হই।
কিছু দিনের মধ্য থাইল্যান্ড যাবার একটা চান্স আছে, থাইল্যান্ডের কিছু লোকাল ফুড নিয়ে এবার কাজ করবো ভাবছি।
শুভেচ্ছা নিন।
LikeLike
উদারজি
খুব ভাল লাগলো পড়ে। যদি আগে যোগাযোগ হোত কোলকাতা আপনার songi hote partam. Ami
kolkatai thaki. apnar lekha porte khub bhalo lage. koekta recipe ami try
korechi. Jogajog rakhle bhalo lagbe. amar age 63 year retired. ami ekbar
onekdin age Dhaka giechilam. Abar jete ichhe kore kinto mone hoi khub
expensive hobe tai sahose kulai ne. adab.
arun bikas das
LikeLike
ধন্যবাদ ব্রাদার।
আপনার নাম আমি আমার নোটে তুলে নিলাম।
আগামী বার কলকাতায় গেলে আপনাকে খুজে বের করবো।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
bhaiya blog niye amr idea 0%
fb te amra notification pai,akhane ki amon system ache? apni amr comment er ansr diyechen kina ta chk korar jonno koro ber j akhane asechi bole ses kora jabe na hi hi 😀
LikeLike
ধন্যবাদ বোন।
আপনি যখন কমেন্ট করছেন তখন একটা ফিল্ড আসে, নোটিফাই। সেখানে টিক দিয়ে দিন ফলে উত্তর হলেই তা আপনার মেইলে চলে যাবে। আর যদি আপনার নিজস্ব ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগ থাকে তবে সেখানেও আপনি নোটিফিকেশন পেতে পারেন।
ধন্যবাদ।
LikeLike
ভাইয়া, ভাল লিখেছেন। আপনার বর্ননায় সব জীবন্ত। চোখের সামনেই দেখতে পেলাম। কলকাতায় যাব ভাবছি।
LikeLike
ধন্যবাদ বোন।
আমি চেষ্টা করে যাই মাত্র। আপনাদের ভাল লাগে জেনে খুশি হলাম।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
3ta porbo porlam সাহাদাত উদরাজী bhaiya…… ami sadharon manus ..apner moto boro lekhoker lekha niye prosongsa korar vasa ta apatoto khuje passi na tobe sudu atotuku e bolbo ”meyer sathe sathe apni o kintu dusto jamai er preme pore gechen ha ha ha ”
LikeLike
ধন্যবাদ বোন।
হা হা হা…
আমি কলকাতা ভালবাসি সেই ছোট বেলা থেকে। আপনার কথা পড়ে হাসছি।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
আমার এক ফেবু বন্ধু এই লেখাটা শেয়ার করেছিল, বলে চোখে পড়ল!! অসাধারন!!! আপনারে ফ্রেন্ড রিকয়েস্ট পাঠালাম, পরের বার কলকাতা এলে আলাপের ইচ্ছা রইল!!!
LikeLike
ধন্যবাদ ব্রাদার।
আপনার নামটা নোটে তুলে নিলাম। আগামীবার কলকাতা যাবার আগে আপনার সাথে যোগাযোগ করে নিব।
শুভেচ্ছা নিন।
LikeLike
Amar Mayer jonmo kolkatai & Amma Mara jabar age ghureu ascen tobe seta chilo treatment er jonne amar onek ichha okhane ghure asbo. Apnar lekha pore kmn jani nostalgic lagche
LikeLike
ধন্যবাদ বোন,
চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন। সামান্য ভিসা মেনেজ করেই রেলে আরামে কলকাতা ঘুরে আসুন। আপনার মায়ের জন্য দোয়া করি। কলকাতা এবং ঢাকায় অনেক মানুষ আছেন যারা এদিকে জন্মে ওদিকে গিয়েছেন, আবার ওদিকে জন্মে এদিকে এসেছেন।
শুভেচ্ছা।
LikeLike