কয়েকদিন আগে আমার ছোট চাচার বাসায় হঠাত করে দুপুরের দিকে খেতে যাই। সামনে খাবার টেবিলে যা ছিল তা দিয়েই খেতে বসে পড়ি, এটা আমার জন্য নুতন কিছু না, এই বাসায় এলে আমি এমনি যা পাই তাই খাই। আমার এই চাচীমা বেশ ভাল রান্না করেন। আজ বেশ কয়েক পদের তরকারী ছিল, তবে যে রান্নাটা আমার মনে দাগ কাটলো সেটা হছে, আলু দিয়ে ডালের মত করে একটা রান্না। আলুর ডাল রান্না বলা যেতে পারে। হেসে হেসে তিনি জানালেন, তিনি এই রান্নাটা মাঝে মাঝেই করেন এবং সবাই পছন্দ করে।
আমি প্রথম দেখে বুঝতে পারি নাই, পরে পাতে নিতে গিয়ে চাচীমাকে জিজ্ঞেস করতে তিনি আমাকে এই রান্নার বিস্তারিত জানালেন। আমি খেতে বসেই রেসিপিটা মাথায় নিয়ে নিয়েছিলাম। রাতে বাসায় ফিরেই রান্না করে ফেললাম। আমার রান্না টেষ্টার বুলেট এবং ব্যাটারী খেয়ে আমাকে জানালেন, দারুন। আমি নিজেও রান্না খেয়ে বুঝতে পারলাম, বেশ সুস্বাদু। এবং নিজের মনে বার বার মনে হল, সেরা রান্নাটা হয়ে গেল নাকি! হা হা হা…
আমরা বাসায় নানান পদের ডাল দিয়ে যে ধরনের রান্না করি এটা সেই রকমই। শুধু ডালের বদলে আলু! চলুন দেখে ফেলি। আমি আশা করি সব কিছুই আপনাদের হাতের কাছে আছে, সামান্য ইচ্ছা থাকলেই এই রান্নাটা করতে পারেন। চলুন রান্না ঘরে চলে যাই! দেখুন কি সহজ কিন্তু স্বাদে অতুলনীয়।
আমার আজকের এই সাধারণ রান্নাটা আমি আমাদের ট্রেভেলার টিঙ্কু ভাইয়ের জন্য দিতে চাই, যিনি বিবাহিত হয়েও ব্যচেলর জীবন যাপন করছেন, হা হা হা এবং নিজ হাতে তিনি রান্না করে থাকেন। দূর্দান্ত ব্যাপার!
টিঙ্কু ভাই, উই লাভ ইউ! আপনার রান্না আমাদের সাহস যোগায়! আপনি আনন্দে থাকুন। সময় পেলে এই রান্নাটা একটু করে দেখবেন এবং গরম ভাতের সাথে এক প্লেট খেয়ে দেখার অনুরোধ জানিয়ে গেলাম! (ছবিঃ ফেবু থেকে)
প্রয়োজনীয় উপকরনঃ
– কয়েকটা আলু, ২০০ গ্রামের মত (আলু গুলো সিদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে)
– হাফ চামচের কম হলুদ গুড়া
– পেঁয়াজ কুঁচি, তিনটে মাঝারি
– কয়েকটা কাঁচা মরিচ (৩/৪টা)
– কিছু ধনিয়া পাতার কুঁচি
– পানি (হাফ লিটারের বেশী, রান্না কেমন ঘনত্বের হবে সেটা বুঝে পানি দেয়া ভাল)
– লবন, পরিমান মত, দুই ধাপে (শুরুতে কম দিয়ে রান্না বসাতে হবে)
রসুন বাগারের জন্যঃ
– কয়েক কোষ রসুন, স্লাইস করে কাটা
– তেল (পরিমান মত, কম তেলেই রান্না ভাল)
প্রনালীঃ (ছবি কথা বলে)
আলু সিদ্ধ এবং গলিয়ে ফেলা/ ধাপ ১
আলু সিদ্ধ করে খোসা ছিলে নিন।
ভাল করে মিহীন করে নিন। তবে এটা আপনার ইচ্ছা, চাইলে কিছু টুকরা আকারেও রাখা যায়। যারা আলু বুঝাতে চাইবেন না, তারা পুরাই মিহীন করে ফেলতে পারেন।
মুল রান্না/ ধাপ ২
আলু মীহীন হয়ে যাবার পর পানি দিন এবং সামান্য লবণ যোগে হলুদ, পেঁয়াজ কুঁচি ও কাঁচা মরিচ দিন। আগুন মাধ্যম আছে থাকবে।
কিছুক্ষনের মধ্যে এমন দেখাবে।
চুলা ছেড়ে যাবেন না! আহ দেখতে কি চমৎকার।
এবার ডাল ঘুটনী দিয়ে ভাল করে ঘুটিয়ে দিন।
ওহ…
এবার চুলা বন্ধ করে দিন এবং নামিয়ে রাখুন। দুই চুলা হলে নামিয়ে রাখার দরকার নেই। হা হা হা।
শেষ/ ধাপ ৩
এবার অন্য একটা কড়াইতে সামান্য তেল নিয়ে তাতে রসুন স্লাইস ভাল করে ভেজে নিন, এটাই রসুন বাগার।
রসুন গুলো হলদে হয়ে গেলে অপর পাত্রে রাখা আলু ডাল গুলো দিয়ে দিন। কাজটা সাবধানে করবেন। তেলেরচিটে যেন গায়ে এসে না পড়ে! রান্নায় সতর্কতা জরুরী। আমি এক হাতে ক্যামেরা অন্য হাতে ঢালছিলাম! আমি এখন অভস্থ্য হয়ে পড়ছি! ক্যামেরা ছাড়া রান্না পারি না! হা হা হা…
এবার ফাইন্যাল লবন দেখুন। লাগলে দিন এবং ভাল করে মিশিয়ে নিন। লবণ কম বেশি কোনটাই চলবে না! ভাল করে চেখে দেখে নিন।
ঠিক নামাবার ২/৩ মিনিট আগে ধনিয়া পাতার কুঁচি দিয়ে দিন।
ভাল করে আবারো নাড়িয়ে নামিয়ে নিন।
ব্যস হয়ে গেল, আলু ডাল!
এত সহজ রান্না, একবার খেয়েই দেখুন না। সব কিছু, মশলা পাতি তো আপনার হাতের কাছেই। আমি আবারো আবারো রান্না করবো!
রান্না একটা বিরাট ভালবাসা, যিনি এই ভালবাসা পেতে চান, আজ এক্ষুনি কাজে নেমে পড়ুন। নিজ হাতে রান্না করে প্রিয়জনদের মুখে তুলে দেয়ার চেয়ে আর কি আনন্দ হতে পারে।
রেসিপি প্রিয় ভাই বোন বন্ধুদের শুভেচ্ছা। ভাল থাকুন।
looks very delicious
LikeLiked by 1 person
ধনব্যাদ বোন। হ্যাঁ, সত্যই বেশ মজার খাবার।
LikeLike
onek mojar hobe mone hochche, thanks apnake
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ আপনাকেও।
খুব সহজ রান্না, একদিন রান্না করে দেখুন। আশা করছি ভাল লাগবেই।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
Ami hossi ekdom oi dhoroner manush, jara nijer mother er ranna sara r karo ranna follow kore na.ami bideshe asi r tai eikhane jemon daoat khai, thik temon daoat khaoai o.joto valo ranna e hok na keno, ami kokhono recipe jante chai na.ei prothom ami apnar ranna dekhe ranna koresi.apnar ranna amar kase ekebarei ghoroa type legese.thanx….ei shujoge bole rakhi j ekhane kintu amar rannar kothin shunam ase MashaAllah (ja ashole amar ammar recipe).valo thakben
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ বোন।
আপনার কমেন্ট পড়ে বেশ আনন্দ পেলাম। হা হা হা। আপনি হয়ত আমার রেসিপি সাইটে নুতন এসেছেন বা আগেও দেখেছেন। আমার রেসিপির টার্গেট গ্রুপ হচ্ছেন আমাদের রান্না না জানা প্রবাসী, দেশী ব্যচেলর ভাই বোন বন্ধু। আমি এক সময়ে প্রবাসে ছিলাম, রান্না না জানায় কত কি আবোল তাবোল খেয়েছি, সেই দুঃখ মনে আছে এখনো। তাই আমি আমার রেসিপি গুলো তাদের জন্যই সাজাই। আরো একটা ক্যাটাগরী আমি মাথায় রাখি যারা নুতন রান্না করতে চান তাদের। ফলে আমি যারা রান্না ভাল পারেন বা করেন তাদের শুধু চোখ বুলিয়ে যেতেই বলি। হা হা হা।
রান্না আমার কাছে একটা ভালবাসার নাম, একটা গুনের নাম। যারা ভাল রান্না করেন আমি সব সময়েই তাদের সন্মান এবং ভালবাসি। রান্নাটা একটা ওস্তাদি বিদ্যাও বটে, আপনি আপনার মায়ের কাছ থেকে শিখে নিয়েছেন জেনে ভাল লাগছে। আমরা কত মজার রান্না হারিয়ে ফেলেছি, শিখে রাখলে এখন কাজে লাগত। আপনার আম্মাকে আমাদের সালাম জানাবেন।
আপনার রান্নায় আমাদের বাংলাদেশ ফুটে উঠুক। বিদেশীদের দাওয়াত দিয়ে আমাদের রান্না খাওয়াবেন। শুভেচ্ছা।
LikeLiked by 1 person
বেশ নতুন ধরণের একটা রান্না দেখলাম!… এটা এক ধরণের পটেটো স্যুপের মতো মনে হচ্ছে। ট্রাই করে দেখতে হবে। 🙂
LikeLike
ধন্যবাদ শরীফ ভাই।
একটু পাতলা করে রান্না করবেন এবং অবশ্যই রসুন দিয়ে বাগার দিবেন। আশা করছি খেয়ে ভাল লাগবে এবং মনে করবেন।
শুভেচ্ছা। (সময়াভাবে আজকাল নড়াছাড়া করতে পারছি না)
LikeLike
মজা যে হয়েছে বোঝা যায়, আপনার লেখার স্টাইল দারুন।
আমি কচুর মুখীর ডাল খেয়েছি, আলুর টাও ট্রাই করবো অবশ্যই … ধন্যবাদ পোস্ট টির জন্য …
LikeLike
ধন্যবাদ বোন।
আমার একটা চেষ্টা থাকে মাত্র। আমি চাই লেখা পড়তে পড়েই যেন রান্নার প্রতি আগ্রহ জন্মে এবং যিনি পড়ছেন তিনি যেন রান্নাটা মনে গেধে নেন। আমাদের রান্না গুলো সাধারণ এবং একান্ত আমাদের নিজদেরই রান্না, পিউর দেশী।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
অসাধারণ হয়েছে!!!
আমি গ্রুপে ছবি দেখে মনে হয়েছিল হয়ত আলুর সাথে মশুর ডাল মেশানো ছিল, তাই এত্ত কালারফুল!!
শুধু আলু দিয়ে ডালের মত করে কালারফুল তরকারি আসলেই দারুণ!!!
এখন থেকে ডালের খরচ কম্বে বলে মনে হচ্ছে :p
শুভেচ্ছা ও ভালোলাগা
LikeLike
ধন্যবাদ ভাতিজা।
একটু পাতলা করে রান্না করে দেখুন, ভাল লাগবে। হ্যাঁ, এত কম টাকায় এত মজাদার রান্না, আমি নিজেও ভেবেছিলাম। স্বাদ অসাধারণ। বিশেষ করে রসুনের বাগারটার ঘ্রান মনে আনন্দ এনে দেয়।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
Amar ja (vashurer wife) aloo diye tok (sylhety vashay aloor tenga) radhen, r apni radhlen aloor dal…let see, I’ll try it!
LikeLike
ধন্যবাদ বোন।
আপনার জা যে রান্না করতেন তা আমিও খেয়েছি বলে মনে হচ্ছে। আমার জন্ম শ্রীমঙ্গলে, ছোট বেলা আমরা সেখানেই কাটিয়েছি।
আমি ঠ্যাঙার সাথে ভাল পরিচিত। আপনি অনেক বছর পর শব্দটার সাথে আবার পরিচয় করে দিলেন।
একবার রান্না করে দেখতে পারেন, আশা করি ভাল লাগবে।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
patla alu dal amar o prio tobe alo pest er sathe siddho tometo thakle aro mojader hoto. dhonno bad udraj vai….
LikeLike
ধন্যবাদ আলী ভাই।
হ্যা, আপনি আরো ভাল ধরেছেন। এক বা দুইটা টমেটো দিলে স্বাদ আরো বাড়বেই। তবে এটাও মন্দ হয় নাই। টমেটো দিয়ে আর একদিন বানিয়ে খেয়ে দেখবো।
শুভেচ্ছা নিন। আশা করছি মাঝে মাঝে এসে দেখে যাবেন।
LikeLike
আমার নানাবাড়ি রংপুরে বিধায় ছোটবেলা থেকে এই ডাল আমাদের বাসায় আম্মু প্রায় সময় রান্না করে থাকেন। তবে আম্মু আলুর সাথে টমেটো দেন আর বাগাড় দেয়ার সময় রসুনের সাথে জিরেও দেন; আপনিও চাইলে এভাবে রান্না করে দেখতে পারেন, অপূর্ব স্বাদ হয়। আর রংপুরে এই বিশেষ ডালকে আলু-টমেটোর নাড়া বলে সবাই। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ 🙂
LikeLike
ধন্যবাদ বোন।
আপনার আম্মাকে আমাদের সালাম দিবেন। আলু-টমেটোর নাড়া, নামটা শুনে মনটা নাড়া দিয়ে উঠলো। আবার একদিন রান্না করবো। এবং টমেটো দিয়ে। আপনার বর্ননা চোখের সামনে ভেসে উঠছে, মজা না হয়ে যাবে কই!
আমার চাচীমাও আপনাদের এলাকার। হা হা হা।
শুভেচ্ছা নিন।
LikeLike
vabci aj office theke fere basay jeye eta try korbo.rannar hat amr jothesto kharap.vaia doa koiren…
LikeLike
বউকে দেখালাম তোমার রেসিপি। বললাম কালই…। সে বললো, পরে। তারমানে আমি যখন ব্যাপারটা ভুলে যাবো। তখন সে হঠাৎ ডাইনিং টেবিলে সারপ্রাইজ দিবে। এই হলো তোমার ভাবীর চরিত্র। :O
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ বন্ধু।
এটা মন্দ নয়! তবে এই ভাবনা আমাদের দেশের মানে তাবৎ দুনিয়ার সব স্ত্রীগনেরই বলে আমার মনে হয়!
হা হা হা…।
আনন্দে কাটুক তোমাদের জীবন।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
এইটা তো উত্তরাঞ্চলের খুবই কমন আইটেম।এইটাকে আমারা বলি ডিম আলুর ডাল।কারন এইটায় ডিম আলাদা করে ভুনা করে বা ভেজে ছেড়ে দেয়া হয়।
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ বোন।
আলু ডিমের দম আমার কাছেও প্রিয়। আমার রেসিপিও আছে। বছরে এক দুইবার রান্না হয়ে থাকে।
শুভেচ্ছা নিন।
LikeLike
ধন্যবাদ, আজ বাসায় কেউ নেই ফ্রিজে অবশ্য খাবার রাখা আছে, তারপরেও ভাবছিলাম নতুন কিছু ট্রায় করব, খুজতে খুজতে আপনার লেখাটি পেয়ে গেলাম,
আগে কোনদিন রান্না করিনাই, আপনার রেসিপি দিয়ে শুরু করছি (দোয়া করবেন)
LikeLiked by 1 person
রান্নার শেষে আলুডাল বাটিতে নিয়ে সেদ্ধ ডিমেরে স্লাইস ওপরে ছড়িয়ে পরিবেশন করি ভাতের সাথে। ছুটির সকালে আটার রুটির সাথে পরিবেশন করলে ওপরে ওমলেট ডিমের কুচি ছড়িয়ে দেই। বাগাড় এর জন্য এক এক বার এক একটা বেবহার করি – জিরা বা কালোজিরা বা পাঁচ ফোড়ন। আমার বাসায় এক এক জন এক একটা পছন্দ করে তাই। আমার পছন্দ পাঁচ ফোড়ন। টমেটো দিলে সাধ বদলে যায় – সেটা অন্য রকম মজা। টমোটো দিলে শুধু রশুনের বাগাড় দেই, পরে ধনেপাতা কুঁচি ও কাঁচা মরিচ দিয়ে রান্না শেষ করি। ডিম বাদ থাকে টমেটো আলুডাল এ ।
ভাই আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, বিভিন্ন ধরণের আঞ্চলিক রান্না টেস্ট করার জন্য ও শেয়ার করার জন্য। আপনার সাইট দেখে অনেক ভুলে যাওয়া আইটেম এর কথা মেনে পরে যায়। আপনার পরিবারের সবার জন্য ভালোবাসা রইলো।
LikeLiked by 1 person
এটাকে আমরাও আলুর ডাল বলি। এটিতে মাছ বা ডিম দিয়েও রান্না করা যায়। আর সাথে একটা টেমেটো দিলে আরো আলাদা এবং মজার টেষ্ট পাবেন।
LikeLike
Reblogged this on My Blog.
LikeLiked by 1 person
আমি টমেটো দিয়ে আলুর ডাল বানায়।
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ বোন, খাবার স্বাদ হলে যে কোন খাবারই ভাল লাগে। অনেকে একটু পরিবর্তন করে রান্না করলে আর খেতে চান না, এটা ঠিক নয়।
LikeLike
গতকাল রান্না করেছিলাম।
রসুন বাগার দেবার আগেই পানি শুকিয়ে এসেছিল। আমি আর দেইনি।
LikeLiked by 1 person