আজকাল আপনি মাছ কিনে আপনার ইচ্ছানুযায়ী কেটে কুটে নিয়ে আসতে পারেন। আর যারা বিদেশে আছেন তাদের জন্য তো কথাই নেই, মাছের সব কিছুই কেটে কুটে ধুয়েই প্যাকেটে পাওয়া যায়। যারা ব্যচেলর আছেন, আপনারা এই ধরনের যে কোন মাছ কিনে ফ্রীজে রেখে দিতে পারেন। শুধু সামান্য সময় পেলেই রান্না করে ফেলতে পারেন। ড্রীপ ফ্রীজের রাখা মাছ কমের পক্ষে ঘন্টাখানেক ভিজিয়ে রাখা দরকার। মানে বাসায় ফিরেই আগে মাছ ভিজিয়ে দিন তার পর আপনার প্রয়োজনীয় কাজ গুলো সেরে রান্নাঘরে আসুন এবং মাত্র ৩০ মিনিটে রান্না করে খাবার টেবিলে নিয়ে চলুন।
রান্না কোনই কষ্টকর কাজ নয়। আপনি যদি মনে থাকেন এটা কষ্টকর তা হলে ভেবে দেখুন, সৃষ্টির আদিকাল (মধ্যমকাল হবে হয়ত) থেকেই এই রান্না চলে আসছে। এক সময়ে মানুষ শুধু আগুনে পূড়িয়ে খেত তার পর রান্না করা শিখে গেল, ব্যস এর পর থেকে চলছেই। যদি কষ্টকর কাজ হত তবে রান্না এতদিন চলতে পারত না! হা হা হা। রান্না হচ্ছে ভালবাসা। আপনি ভালবাসলেই এটা আপনার কাছে ধরা দিবে। আর আপনি রান্না থেকে নিজকে পালিয়ে বেড়ালে রান্না আপনার কাছেও ধরা দিবে না!
আপনার আমার বিরাট সৌভাগ্য যে, আমাদের মায়েরা, বোনেরা, মেয়েরা আমাদের রান্না করে খাওয়ান। কিন্তু একবার কি ভেবে দেখেছেন, খাওয়াটা কিন্তু একান্তই নিজের, বেঁচে থাকতে হলে খেতে হবেই, আর এই খাওয়াতে কারো ভাগ চলে না! সুতারাং এই নিজের কাজটা নিজে করবেন না কেন? আপনাকে যদি আপনার আম্মা ছোট বেলা থেকে রান্না করে খাওয়ান তবে তিনি বৃদ্ধা হয়ে গেলে আপনি কেন তাকে খাওয়াবেন না! আমি মনে করি, আমাদের পুরুষ বা ছেলেদের সবার রান্না জানা উচিত। রান্না জানলে কেহ না খেয়ে মরবে না, আবোল তাবোল খেতে হবে না!
চলুন আজ খুব সহজ একটা ব্যচেলর রান্না দেখিয়ে দেই। আমি অফিস থেকে ফিরে মিনিট ৩০শের মধ্যে এই রান্নাটা করে ফেলেছি। সাথে আর একটা সবজি ছিল, ছিল পাতলা ডাল। গরম ভাতের সাথে বেশ মজাই পেয়েছিলাম! আগেই বলে নেই আমার রান্না টেষ্টার বুলেট খেয়ে ভাল বলেছে। তবে এটা পুরানো রান্নাই। এই রকম আরো অনেক রান্না আমি আগেও নেটে দিয়েছি। হাতের কাছে থাকা মশলায় খুব সাধারন রান্না। নূতনদের জন্য এটা চরম একটা রান্না শেখা হতে পারে।
প্রয়োজনীয় উপকরনঃ
– কয়েক টুকরা রুই মাছের পেটি, ছোট করে কাটা ২৫০ গ্রাম/৩০০ গ্রাম হতে পারে
– মাঝারি তিনটে পেঁয়াজ কুঁচি
– কয়েকটা কাঁচা মরিচ
– এক টেবিল চামচ আদা বাটা,
– এক চা চামচ দেশী রসুন বাটা,
– ঝাল বুঝে হাফ চামচ মরিচ গুড়া,
– হাফ চামচ হলুদ গুড়া,
– সামান্য ধনিয়া পাতার কুঁচি
– তেল (পরিমান মত, কম তেলেই রান্না উত্তম)
– পানি (পরিমান মত)
– লবন, পরিমান মত
প্রনালীঃ
তেল গরম করে তাতে কিছু লবন যোগে পেঁয়াজ কুঁচি ভেজে আদা ও রসুন দিন এবং ভাল করে ভাঁজুন, কয়েকটা কাঁচা মরিচ দিন। পেঁয়াজ কুঁচি নরম হয়ে যাবে এবং কিছু মিশেও যাবে।
ভাল করে ভাজা হয়ে গেলে হাফ কাপ পানি দিন এবং আবারো কষিয়ে নিন।
এবার মরিচ ও হলুদ গুড়া দিন বং ভাল করে মিশিয়ে নিন।
তেল না উঠা পর্যন্ত নাড়ুন এবং কম আঁচে রাখুন।
এবার মাছ গুলো দিয়ে দিন।
মাছের টুকরা আপনি আপনার ইচ্ছানুযায়ী কাটতে পারেন।
এবার ভাল করে মিশিয়ে মাধ্যম আঁচে মিনিট পা রাখুন।
এবার এক কাপ পানি দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন এবং আগুন বাড়িয়ে মিনিট ১৫/২০ রাখুন। মাঝে মাঝে নাড়িয়ে দিতে ভুলবেন না। পানি কম দিলে এই সময় আরো কমে আসবে।
ঠিক এই অবস্থায় আসতে সময় লাগবে না। এই পর্যায়ে ফাইন্যাল লবন দেখুন। লাগলে দিন, না লাগলে ওকে। মনে রাখবেন, লবন কম বেশি হলে তরকারী বা যে কোন রান্নাই মুখে লাগে না, তাই শুরুতে কম দিয়ে শুরু করে এই পর্যায়ে সঠিক মাত্রায় করে নিতে হয়।
এবার ধনিয়া পাতার কুঁচি দিয়ে দিন। হাতের কাছে ধনিয়া পাতা না থাকলে কিছু ভাজা জিরা গুড়া ছিটিয়ে দিতে পারেন, আর জিরা গুড়া না থাকলেও দুনিয়া বসে থাকবে না, খাওয়া চলবে।
নাড়িয়ে মিশিয়ে নিন। মাছ নাড়াতে সাবধানে, রান্নার পর মাছ নরম হয়ে যায় তাই নাড়াতে সাবধান না হলে মাছের টুকরা ভেঙ্গে যেতে পারে।
সরাসরি বাটিতে। পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত।
দারুন! দেখতে যেমন, খেতেও তেমন। নিজের রান্না হলেতো কথাই নাই! হা হা হা…
মাছ রান্না আসলে কিছুই না, ঠিক এইভাবে আপনি আপনার ইচ্ছানুযায়ী বেশ কয়েক পদের মাছ রান্না করে ফেলতে পারেন। যারা কাঁচা মাছ ডাইরেক্ট রান্না খেতে পারেন না, তারা শুধু সামান্য লবন হলুদ যোগে মাছ আগে ভেজে নিতে পারেন এবং বাকী রান্না এই রকমই।
ব্যচেলর ভাই বোন বন্ধু, রান্নাকে আপন করে নিন। একদিন রান্নাই আপনাকে বাঁচিয়ে তুলবে, এমন কি রান্নাই আপনাকে হিরো করে তুলতে পারে। কার সময় কখন কে জানে।
সবাইকে শুভেচ্ছা।
(রুই মাছের আরো রান্না পূর্বেও দেয়া আছে, রুও মাছ লিখে সার্চ করে দেখে আসতে পারেন।)
machta age beje nile aro bhalo hoto na ….
LikeLike
ধন্যবাদ বোন।
আমাদের দেশের কুমিল্লা সহ নানান অঞ্চলের লোকজন যে কোন মাছই ভেজে রান্না করেন। আমি সব মাছ ভাঁজার পক্ষে নই। কারন তাজা মাছ কেন ভাজবো। আর ভাঁজলে ২ দফা তেল পেটে যায়, মাছের প্রকৃত স্বাদ বুঝা যায় না। হা হা হা।।
যাই হোক, আমি রেসিপির শেষে ভাঁজার কথাও উল্লেখ করেছি, যাদের ইচ্ছা ভেজে রান্না করতে পারেন।
শুভেচ্ছা নিন।
LikeLike