গ্যালারি

আড্ডাঃ ঘরে যখন প্রিয় মেহমান ‘মেজো ফুফু’ (খাবারের ছবি সহ)


বর্তমান বাংলাদেশে মেহমান (মেহমানের সংজ্ঞা নিয়ে আলোচনাও হতে পারে) পরিস্থিতি কেমন? আমার দেখায় যতটুকু দেখা যায়, তাতে ভাল বলা যায় না!

আমাদের দেশে উচ্চবিত্তরা মেহমান হারিয়েছে বহু বছর আগেই! উচ্চবিত্তদের কাছে তাদের সাধারণ আত্মীয়রা অনেক আগে থেকেই যেতে ভয় পায়! উচ্চবিত্তরা মেহমান হারিয়ে ফেলার কারন হচ্ছে তারা নিজেরাই! উচ্চবিত্তরা মেহমান দেখলেই মনে করে, তার কাছে টাকা ধার চাইতে এসেছে! আর অন্য দিকে উচ্চবিত্ত নিজেও ভাবেন তার টাকার গোমর যদি নিকট আত্মীয়রা জেনে যায় তবে তো কাম সারা! হা হা হা… দেশের টাকাওয়ালারা নিজেরা নিজের আত্মীয়দের দেখেও দেখে না তাই তাদের কাছেও সবাই যেতে চায় না! টাকাওয়ালাদের কাছে অনাত্মীয়রাই মেহমান! এই সকল অনাত্মীয়দের ঘরে থাকার জায়গা দেয়ার দরকার নেই, হোটেলে রেষ্টুরেন্টে পার্টি, আড্ডা দেশ বিদেশ।

দেশের গরীব মানুষদের এখনো মেহমান আছে। গরীবের কাছে গরীব যায়, মন খুলে কথা বলে, সুখ দুঃখের আলাপ সারে। নিজের কাজ না থাকলেও, নিজের পকেটে টাকা না থাকলেও ধার করে মেহমানদারী করে! শহরে এই মেহমানদারী প্রকট বলে দিনের পর দিন মানুষ বাড়ছেই! হা হা হা…

বাকী থাকল মধ্যবিত্ত! মধ্যবিত্তের প্রকার ভেদ প্রচুর! উচ্চমধ্যবিত্ত, মধ্যমধ্যবিত্ত, নিন্মমধ্যবিত্ত! জেলা শহর গ্রাম ভেদেও মধ্যবিত্তদের প্রকার ভেদ করা যায়, ঢাকাইয়া মধ্যবিত্ত, নোয়াখাইল্যা মধ্যবিত্ত, বরিশাইল্ল্যা মধ্যবিত্ত, সিলোটি মধ্যবিত্ত, ময়মনসিংহ মধ্যবিত্ত আরো কত কি! এই মধ্যবিত্তদের মেহমানদারী এখন কেমন? আমার মতে সমাজে এরাই বেশী চাপের মধ্যে আছে! নিজে পারে না মেহমান হতে, না পারে মেহমানদারী করতে! ইঙ্কামের তুলনায় বেঁচে থাকার চেষ্টা, যানযটে সময় পার করে জায়গামত যাওয়া, রোগে শোকে কাবু হয়ে এই মধ্যবিত্ত গ্রুপটা এখন মেহমান বিমুখ, ফলাফল নিজেরাও মেহমান হতে চায় না! যাই হোক, তবুও কথা থেকে যায়!

এবার আসুন মেহমানের প্রকার ভেদ নিয়ে আলোচনা করি। মেহমান আসলে দুই প্রকার, সল্প সময়ের মেহমান (এরা সামান্য সময়ের জন্য আসেন, দেখা বা দাওয়া থাকলে তা করে চলে যান) এবং দীর্ঘ সময়ের মেহমান (এদের জন্য রাত্রে থাকার ব্যবস্থা করতে হয়)। সল্প সময়ের জন্য যারা মেহমান হয়ে আসেন, তারা মুলত সেই গ্রুপের মতই! যে সকল মেহমানের জন্য রাত্রে থাকার ব্যবস্থা করতে হয়, তাদের গ্রুপ আবার ভিন্ন। অর্থ্যাত হোষ্টের তুলনায় এরা দূর্বল! হা হা হা।।

তবে যত যাই বলি না কেন? আর কিছু দিন পরে মেহমান হারিকেন দিয়ে খুঁজেই বের করতে হবে! মেহমান হবার ইচ্ছা এখন আর কারোই মনে জাগে না! দেশের অর্থ সামাজিক অবস্থার জন্য এখন আর কেহ মেহমান বা মেহ্মান্দারীও করতে চায় না! সময়, সুযোগ ও অর্থ – সব মিলিয়ে গেষ্ট, হোষ্ট কারো জন্যই এখন আর সঠিক নয়!

এবার কাজের কথায় আসি। আমি নিজে ছোট বেলায় (ম্যাট্রিকের পর) অনেক আত্মীয়ের বাসায় মেহমান হয়ে গেছি। এমন কি এখনো মনে পড়ে আমার এক চাচার শশুরবাড়ীতেও আমি দীর্ঘ মেহমান ছিলাম, প্রায় পনর দিন বেড়িয়েছি সেই নানুর কাছে, খাইয়েছিলেন এবং মনে পড়ে টাকাও দিয়েছিলেন, শহর দেখিয়েছিলেন নিজ হাতে। আর চাচা, ফুফু, মামা, খালা এদের বাড়ীতেতো লাইন লাগিয়েই রাখতাম! কোন সময়ে কার বাড়ী বা বাসায় যাব! সেই সময়ের কথা!

আজ আমার মেজো ফুফুর কথা বলবো। হ্যাঁ, আমার ফুফুরা তিনজন। তিনজনের বাসা বাড়ীতেই আমি মেহমান হয়েছি নানা সময়ে, নানান উছিলায়! বিশেষ করে আমার মেজো ফুফুর কথা উল্লেখ করতেই হয়। তিনি আমার দেখা সেই আমলেই সেরা স্টাইলিষ্ট ছিলেন, ফুফা সোনালী ব্যাংকের উচ্চপদে চাকুরী করতেন, বড় জেলা শহরে বিরাট বাসা নিয়ে থাকতেন (সেই সময়ে সব চেয়ে ব্যাংকের চাকুরীজীবিদের অনেক মুল্য ছিল কারন সেই সময়েই উনারা অনেক ভাল বেতন পেতেন, লোকেও সন্মান করত), কাজে কাজেই থাকার সমস্যা ছিল না, গেলেই রুম পেতে দেরী হত না! ফুফু টাকাও দিতেন, ভাল ভাল রান্না করে খাওয়াতেন। রাতে আমাদের ফুফু, ফুফাত ভাই বোনদের নিয়ে চলত আড্ডা! এখন সেই সব স্মৃতি হয়ে গেছে! এই তো মনে হয় সেই দিনের কথা, বেড়ানোর কথা মনে হলেই সোজা দৌড় ফুফুর বাসায়!

বিয়ে থা করে আমি নিজেও এখন সং! এখন আর চাইলেও সহজে মেহমান হতে পারি না আবার লিমিটেশনের কারনে তেমন মেহমানদারীও করতে পারি না! দুনিয়া এখন ছোট। এদিকে আমাদের মত পরিবার গুলোর এখন ছেলে মেয়ে কম বলে আমি চাইলেও আমার ভাই/বোনের ছেলে বা মেয়েকে এনে রাখতে পারি না। আর নিজের ছেলে মেয়েদেরো যেতে দিতে পারি না (নানান কারনে)! বলতে গেলে আমাদের জেনারেশনেই মেহমান হাওয়া হয়ে যাচ্ছে।

যাই হোক, অনেকদিন পর আমাদের ঘরে একজন প্রিয় মেহমান এলেন। হ্যাঁ, তিনি আমার সেই মেঝো ফুফু। উনাকে দেখে আমি/আমরা অনেক অনেক খুশি হয়েছি। তিনি এক বেলাই খেলেন আমাদের বাসায়। আমার যদি সামর্থ্য থাকত তবে আমি উনার জন্য আরো আরো অনেক আয়োজন করতাম। তবে আমি লক্ষ্য করলাম, তিনি শুধু সাদা ভাত, শসা এবং গরুর গোসতের রান্নাটাই বেশী পছন্দ করেছেন (যদিও আমি উনাকে এই বয়সে গরুর গোসত খেতে নিষেধ করেছি)। হা হা হা…

চলুন আমাদের রান্না গুলো দেখে ফেলি।


সাদা ভাত।


প্লেন পোলাউ।


সামান্য ধনিয়া পাতা কাঁচা মরিচের ভর্তা।


দেশী শষা।


লেবু, কাঁচা মরিচ, টমেটো।


চিকেন।


বিফ (আমি ইচ্ছা করেই ক্যারোলীর গোসত কিনেছি যা কিছুটা নরম এবং একটু বয়সীদের জন্য ভাল হবে ভেবে)।


মাছ এবং মটরশুঁটি।


টমেটো টক।


এই হচ্ছে আমার প্লেটের ছবি! আমি বেশি খাই না! হা হা হা…

যাই হোক, ফুফুর উচ্ছিলায় একটা চরম আড্ডা হল। খাবার গুলোতে ইচ্ছা করেই তেমন কোন ঝাল দেয়া হয় নাই। ফুফু খেয়ে বলেছেন, ভাল হয়েছে, আনন্দ পেয়েছেন।

সবাইকে শুভেচ্ছা। নিশ্চয় আপনাদেরও এমন অনেক মজাদার স্মৃতি আছে, আপনাদেরও এমন মজাদার ফুফু, খালা, চাচী, মামী আছে। যদি মনে পড়ে তবে আজই উনাদের খবর নিন কিংবা না বলেই মেহমান হয়ে যান বা নিজেই মেহমানদারী করে ফেলুন। দুই দিনের দুনিয়া! সময় কিন্তু বেশি নাই!

কৃতজ্ঞতাঃ মানসুরা হোসেন (আমি খুব একটা হেল্প করতে পারি নাই, অফিসের ব্যস্ততার কারনে।)

7 responses to “আড্ডাঃ ঘরে যখন প্রিয় মেহমান ‘মেজো ফুফু’ (খাবারের ছবি সহ)

  1. আপনার এই বিভিন্ন স্বাদের লেখাগুলি কিন্তু খুব চমৎকার হচ্ছে, পাঠক হিসেবে আমার খুব ভালো লাগছে, প্লিজ লেখা চালিয়ে যান।

    আচ্ছা, ক্যারোলীর গোসত কোনটা? গরুর কুঁজের মাংস একটু নরম হয়, এটা কি সেই মাংস?

    Like

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]