অনেক অনেক রান্না করে ও রেসিপি নোট করেও সাইটে প্রকাশ করতে পারি না। কখনো সময়, কখনো বা অন্য কিছু (রেসিপি জটিল হলেও)! আবার অনেক সময় এমন হয় যে, কয়েকদিন পুরানো হয়ে গেলে সেই রেসিপি আর দিতে ইচ্ছা হয় না! কাজে কাজেই এমন অনেক রেসিপির ছবি আমার কাছে আটকে আছে। এত প্রকারের রান্নার রেসিপি জমিয়ে প্রকাশ করে ফেলেছি যে, এমন আমি নিজেও কি আছে আর কি নেই সেটাও মনে রাখতে পারি না! আমি নিজেও সার্চ দিয়ে রেসিপি খুঁজি! কখনো ডাবল বা একই রান্না দুইবার আসছে কি না বা হচ্ছে কি না তা দেখতে আমিও সার্চ করে দেখে নেই।
যাই হোক, আজ সন্ধ্যায় আমাদের দেশের অন্যতম ব্লগার এবং অনলাইন এক্টিভিষ্ট শ্রদ্ধেয় Trishonku Mallick ভাই জানতে চাইলেন, তোমার চিতল মাছের কোফতার রেসিপির লিংকটা দাও না।
ফেবু কমেন্ট লাইনে এই কমেন্ট দেখে আমার মনে পড়লো, আমরা চিতল মাছের কোফতা রান্না করেছিলাম। কিন্তু রেসিপি আকারে প্রকাশ করা হয় নাই! আমি ছবি খুঁজতে বসে পড়লাম, হ্যাঁ ছবি আছে। যাই হোক, ত্রিশাঙ্কু ভাই একজন খাদ্য রসিক, আমি ফেবু ফিড লাইনে উনার কাছে অনেক কিছু জানতে পারছি। খাদ্য নিয়ে ত্রিশাঙ্কু ভাইয়ের আগ্রহ আমার কাছে ভাল লাগে। আজকের এই চিতলের কোপ্তা কারী আমাদের ত্রিশাঙ্কু ভাইয়ের জন্যই। আমি আশা করি, ছবি দেখেই তিনি বুঝে যাবেন কি করে রান্না হল। বর্ননা তো আছেই।
কোপ্তা বানানোঃ
চিতল মাছ পুতা দিয়ে ছেঁচে চামচ দিয়ে মাছের মাংস বের করে নিন।পাটা পুতায় বেঁটে মাছের মাংস মিহীন করে নিন। এর পর নিমোক্ত মশলা দিয়ে ভাল করে মেখে রাখুন।
– চিতলের কিমা, ৫০০ গ্রাম, হাফ কেজি
– পেঁয়াজ কুঁচি, ২ টেবিল চামচ
– মরিচ গুড়া, হাফ চা চামচ
– হলুদ গুড়া, হাফ চা চামচ
– জিরা, ১ চা চামচ
– গোল মরিচ, হাফ চা চামচের কিছু কম
– আদা বাটা, হাফ চা চামচ
– রসুন হাফ চা চামচ
– সরিষার তেল, ২ টেবিল চামচ
– লবন, ১ চা চামচ
ভাল করে মেখে নিন। এবার কোপ্তা ভাঁজার জন্য প্রস্তুত হউন।
কড়াইতে তেল (গা গা তেলে ভাজাই উত্তম) গরম করে তাতে চিতলের কোপ্তা কাই থেকে গোল গোল করে কোপ্তা ভাঁজুন। (যারা চিতলের চামড়া পছন্দ করেন তারা চামড়া নিয়ে তার ভিতরে এই কাই দিয়ে গোল বা লম্বা করে ভেজে নিতে পারেন, আমরা চামড়া নিতে পারি নাই।)
এক পিট হয়ে গেলে অন্য পিট উল্টিয়ে দিন।
মোটামুটি ভেজে সোনালী করে নিতে হবে তবে আবার বেশি কড় কড়ে ভাজা নয়। এভাবে কোপ্তা গুলো ভেজে তুলে রাখুন। (এবং উক্ত কড়াইতেই রান্না শুরু করতে পারেন। তেল কম হলে সামান্য দিন বা বেশি হলে উঠিয়ে ফেলুন।)
কারী রান্নাঃ
এবার কারী রান্নায় লেগে পড়ুন। সাধারণ ঝোল রান্নার মতই। সামান্য লবণ যোগে প্রথমে পেঁয়াজ কুঁচি ভেজে নিন এবং এর পর একে একে নিন্মোক্ত মশলা দিতে থাকুন।
– পেঁয়াজ কুঁচি, মাঝারি তিনটে * এটা দিয়েই শুরু করা হয়েছিল
– আদা বাটা, দুই টেবিল চামচ
– রসুন বাটা, দুই টেবিল চামচ
– কাঁচা মরিচ, কয়েকটা
– মরিচ গুড়া, হাফ চামচ (ঝাল বুঝে কম বেশি)
– হলুদ গুড়া, হাফ চামচ
– হাফ কাপ টক দই
– হাফ চা চামচ চিনি
– পানি, এক কাপ
– লবণ, পরিমান মত
– তেল (ভাঁজার পরের)
মশলা ভাজা হয়ে গেলে এবার টক দই দিয়ে দিন।
মাধ্যম আঁচে নাড়িয়ে ভাল করে কষিয়ে নিন।
এবার মরিচ হলুদ গুড়া দিন এবং আবারো মিশিয়ে নিন।
তেল উঠে এই অবস্থায় এসে যাবে।
মুল রান্নাঃ
এবার ভেজে রাখা কোপ্তা গুলো দিয়ে দিন।
ভাল করে মিশিয়ে নিন, আগুন অল্প আঁচে থাকবে। মিনিট পাঁচ এভাবে থাকবে।
এর পর এক দেড় কাপ (বুঝে) পানি দিয়ে আবারো ভাল করে মিশিয়ে নিন।
এবার ঢাকনা দিয়ে মাধ্যম আঁচে মিনিট ২০ রাখুন। মাঝে মাঝে নাড়িয়ে দিতে ভুলবেন না।
এই অবস্থায় এসে যাবে।
আরো কয়েকটা কাঁচা মরিচ আস্ত দিতে পারেন (ডেকোরেশনের জন্য)। ধনিয়া পাতার কুঁচি দিলে স্বাদ বেড়ে যাবে। এবং এই সময়েই ফাইন্যাল লবণ দেখুন, লাগলে দিন। না লাগলে ওকে!
পরিবেশনাঃ
বাটিতে তুলে পরিবেশন করুন। ব্যস হয়ে গেল চিতলের কোপ্তা কারী। শুধু ঝোল দিয়েই ভাত খেয়ে উঠা যায়! হা হা হা…
এখানে বলে রাখা ভাল যে, আমি ছোট বেলায় বা মায়ের হাতে যে কয়েকবার চিতলের কোপতা খেয়েছি তাতে আমি উনাকে চিতলের চামড়া দিয়ে কোপ্তা মুড়িয়ে দিতে দেখেছি এবং আমার এখনো মনে আছে চামড়া সহ বা উলটে কোপ্তা খেতে হত, চিতল মাছের চামড়াও বেশ মজাদার। তবে আমরা চিতলের চামড়া কাজে লাগাতে পারি নাই। চিতলের বড়ে গুলো চামড়া দিয়ে মুড়িয়ে ভেজে নেয়া যেত। যাই হোক, আগামীতে আবার চিতল কিনলে, চেষ্টা করবো। বাকী সব কিছুই আশা করি সঠিক আছে। চিতলের কোপতা কারী, বেশ মজাদার এবং সুস্বাদু।
কৃতজ্ঞতাঃ মানসুরা হোসেন (কোপ্তা বানানোর অংশটা তিনি করে আমাকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন, আমিও প্রথম কোপ্তা বানানো শিখলাম।)
সবাইকে শুভেচ্ছা।
চিতল মাছের স্বাদ আলাদা। আমি আপনার এই রান্নার মত রান্না খেয়েছি।
LikeLike
ধন্যবাদ সাইফুল ভাই।
কোপ্তায় চামড়া এখন অনেকেই আর দিতে চায় না। তবে আমরা চামড়া জড়ানো কোপ্তাই বেশি খেয়েছি ছোট বেলায়।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
সুন্দর রেসিপি
আমার ও ফলি (চিতল) মাছের কোপ্তা খেতে ভালো লাগে, আমাদের বরিশালে ছোট চিতল কে ফলি বলে , মূলত এটা দিয়েই কোপ্তা বানানো হয়
আর বড় চিতল মাছ কখনো আমাদের বাসায় আনা হয় না। আমরা ফলি মাছ এর মাংসের কিমা কাটা ছাড়িয়ে প্রয়োজনীয় মশলা দিয়ে আবার চামড়া দিয়ে মুড়িয়ে( পুরো মাছের আস্ত চামড়া) ভেজে কেটে আবার এপিঠ ওপিঠ করে ভাজা হয়। কোনো তরকারি রান্না করা হয় না এটা দিয়ে। এমনি ই খেতে দারুণ!! শেষে দেখলাম আপনিও আগে এভাবে খেয়েছেন
আর বড় চিতল মাছ দিয়ে করতে পারবেন বলে মনে হয় না, এটার চামড়া অনেক শক্ত এবং ভারী ( আমি ঠিক জানিনা) , তাও ট্রাই করতে পারেন।
ফলি মাছের কোপ্তা এর জন্য মাংস নেয়ার পরে অবশিষ্ট কাঁটা মশলা মাখিয়ে ভেজে খেতেও দারুণ লাগে
শুভেচ্ছা ও ভালোলাগা
LikeLike
ধন্যবাদ ভাতিজা।
ছোট ফলি মাছ এখন অনেক পাওয়া যাচ্ছে, দেখি আবার চেষ্টা করবো।
কোপ্তা খেতে ভালই লাগে।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
Darun jinish eata.
LikeLike
ধন্যবাদ মিঠু ভাই।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
ফেবু স্ট্যাটাস – https://www.facebook.com/udraji/posts/10200991557466080?stream_ref=10
LikeLike
উদর,
তোমাকে এত্তগুলা ধন্যবাদ।
আমার চিতল প্রায় কেনাই হয়না, গাদা নিয়ে কি করবো সে চিন্তায়।
LikeLike
ধন্যবাদ আপনাকেও।
আপনার তাগিদে আমি এই রেসিপিটা কমপ্লিট করেছি। আমি জটিল রান্না গুলো বার বার পরিহার করে পালিয়ে বেড়াই! হা হা হা…
আশা করি আপনি আমার চেয়ে অনেক ভাল রান্না করবেন এবং মজাদার হবে।
শুভেচ্ছা।
LikeLike