গ্যালারি

বিয়ে শাদীর খাবার দাবার ও অন্য কিছু – ৩ (মাসুম ভাইয়ের বিয়ে)


মাসুম ভাইয়ের বিয়ে। শুনেই একটা আলাদা মজা মনে উঠে আসে! মাসুম ভাই বেইলী রোডের আমার এক ক্লোজ বন্ধুর বন্ধু। আমেরিকায় থাকেন, মাঝে মাঝে আসেন, সেই হিসাবে আমার সাথেও পরিচয় হয়ে উঠেছে। গত বছর একবার দেশে এসেছিলেন, তখন বেশ কয়েকবার আমাদের আড্ডা হয়েছিল। এবার একদিন বেইলী রোডে আড্ডায় আমার বন্ধুটা জানালো, মাসুম ভাই আসছেন এবং আগামী শনিবার বিয়ে, আমাদের সবার যেতে হবে! বিয়ের দাওয়াত পেলে কার মনে না খুশি লাগে! আড্ডার মাঝেই দেখি মাসুম ভাই হাজির, আমাদের অন্যান্য বন্ধুদের সাথে মাসুম ভাইয়ের কোলাকুলি হল এবং অনেক আড্ডা হল। যাবার আগে দাওয়াত দিয়ে গেলেন। বিবাহের দাওয়াত খেতে আমি দিন গুনতে থাকি!

অবশেষে সেই শনিবার এল! আমি অফিস থেকে বেইলী রোডে গিয়ে সেই বন্ধু (যে মাসুম ভাইয়ের সাথে বেশি ক্লোজ) এবং আর এক বন্ধুকে পেয়ে যাই, ওদের বলি, আজ মাসুম ভাইয়ের বিবাহের দাওয়াত মনে আছে, যেতে হবে। আমার বন্ধু বলল, আরে যাব না মানে, মাসুম ভাইয়ের বিয়ে, একটা আলাদা মজা আছে না! বলে রাখি, আমার এই বন্ধুটিও অনেক দিন আমেরিকায় ছিল এবং সেখানে মাসুম ভাইয়ের সাথে টাইমস স্কয়ারের আড্ডা দিত! সে অনেক অনেক ঘটনা। আমেরিকা ফেরত অনেক বাংলাদেশী এখন আর আমেরিকা যেতে চায় না! হা হা হা। নিজের দেশই স্বর্গ!

আমরা তিন বন্ধু হেঁটেই মাসুম ভাইয়ের বিয়েতে রাওয়ানা হই। বেইলী রোড থেকে কাছেই মাসুম ভাইদের বাসা। হাউজিং এর শেষ পান্তে সোসাইটির কমিউনিটি সেন্টারেই বিবাহের আয়োজন করা হয়েছে। অতিথি তেমন বেশি নয়, বেশ ছিমছাম পরিবেশে আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতিতেই এই আয়োজন করা হয়েছে। আমরা একটু আগেই পীছে গিয়েছি! তখনো খাবার দাবার আসে নাই (বাইরের ক্যাটারিং থেকে খাবার নেয়া হয়েছিল বলে বুঝতে পারছি)। আমাদের আরো কয়েক বন্ধু আসলো, শুরু হল চুটিয়ে আড্ডা। অবশেষ রাত সাড়ে দশটার দিকে মোটামুটি আমাদের শেষ ব্যাচ খেতে বসল! এর পর হয়ত শুধু একটা টেবিল বসেছিল!

এদিকে আমরা বেশ কয়েকজন বন্ধু এক টেবিলে খেতে বসে ছিলাম, কয়েকজনের সাথে আমি খুব একটা খোলামেলা নই, তবে সবার সাথেই পরিচয় আছে। খাবার টেবিলে এসে গেছে, এখন আমি বিরাট দ্বন্দে পড়ে যাই, মোবাইলে খাবারের ছবি তুলবো কি তুলবো না! মনে মনে ভাবছি, ওরা আবার কি ভাববে? সবাই কি আমার খাবারের ছবি তোলা ভালভাবে নিবে? মানুষ ছবি তোলে মানুষের, আর আমি তুলি খাবার দাবারের! তবুও আমি যেহেতু এই খাবার দাবারের ছবি মিস করতে চাই না, মোবাইল বের করে সাটশাট করে ছবি তুলে ফেলি! কে কি ভাবল তা দিয়ে কাম কি! পরে দেখা হলে বুঝিয়ে বললে হয়ত আমার এই পাগলামি সাধারণ চোখে দেখবে! হা হা হা… চলুন খাবারের ছবি দেখে ফেলি!


খাবারের আগে পানির যোগাড় রাখা চাই!


আমরা শেষ ব্যাচের বলে খাবার দাবারে সেই প্রথম দিকের চাকচক্য নেই। সালাদে প্রচুর পানি জমে গিয়েছিল!


খাসির মাংসের কাচ্ছি। কিছুটা ঠান্ডা এবং তেলের পরিমান একটু বেশি ছিল! তবে আমার কাছে স্বাদ ভালই লেগেছে।


চিকেন রোষ্ট।


বোরহানী! আহ, মাসুম ভাইয়ের খাবার দাবারে এটা স্মরনীয় হয়ে থাকবে। বোরহানীর স্বাদ অসাধারণ হয়েছিল। আমি একাই তিন গ্লাস পান করেছি!


এই ছিল আমার প্লেট! বলতে ভুলে যাচ্ছি, সাথে ছিল একটা করে টিকিয়া, সেটা প্লেট ওয়াইজ সার্ভ করা হয়েছিল।


এবং সর্বশেষ আইটেম, আপনারা সকলেই জানেন, বিবাহের খাবারে এটা না হলে চলে না, শাহী জর্দা! আমি সামান্য নিয়ে খেয়ে দেখেছি, ভাল হয়েছে।

যাই হোক, খাবার দাবার শেষ করে হাত ধুতে বেসিনের দিকে যাচ্ছিলাম, দেখি মাসুম ভাই আমাদের ভাবীকে নিয়ে একটা টেবিলে খেতে (এটা সম্ভবত শেষ ব্যাচের খাওয়া) বসেছেন। হাত ধুয়ে এসে মাসুম ভাইয়ের কানে কানে বললাম, মাসুম ভাই মোবাইলে আপনাদের একটা ছবি তুলতে চাই এবং সেটা ফেসবুকে আপলোড করবো, আশা করি আপত্তি করবেন না। মাসুম ভাই হেসে আমার পিঠে হাত দিয়ে বললেন, এটা কোন ব্যাপার হল, আমার ফেসবুকের সাথে একটা ট্যাগ দিয়ে দেবেন। আমি খুশি হয়ে মাসুম ভাই এবং ভাবীর উলটা দিকে চলে গেলাম, এবং যথারীতি সেই ছবি!

অভিনন্দন মাসুম ভাই এবং ভাবী। আপনাদের সারা জীবন আনন্দে কাটুক, আপনারা সারা জীবন ভাল থাকুন। দেশে বা দেশের বাইরে যেখানেই থাকুন, আমাদের শুভেচ্ছা থাকবে আপনাদের সাথে।

এবার আশা যাক, ফেসবুকের সেই ছবির লিঙ্ক! বর্ননা ছিল, মাসুম ভাইয়ের বিয়ের দাওয়াত খেয়ে এলাম। অভিনন্দন। আমাদের বন্ধুরা এখনো বিয়ে করছে, এটা খুবই খুশির খবর। দাওয়াতের খাওয়া দাওয়া নিয়ে পোষ্ট আসছে!

ফেসবুকে ছবি আপলোড হবার পর আমার ফেবু বন্ধুরা বেশ কিছু কমেন্ট করেছেন, তা পড়ে হাসতে হাসতে আজ সারা দিন গেল! অভিজ্ঞ আর্মি পারসোন্যাল ত্রিশেঙ্কু ভাইয়ের মন্তব্য পড়ে আমি হেসে কুল পাচ্ছিলাম না!

রেসিপি লাভার্স বন্ধু, ভাই বোন সবাইকে শুভেচ্ছা। যারা এখনো বিয়ে করেন নাই, তাদের প্রতি অনুরোধ, দিল্লীর নাড়ু খাবেন যখন আর দেরী কেন? তবে আমাকে দাওয়াত দিতে ভুলবেন না। দাওয়াত পেলে আমি খাবারের ছবি তুলবো এবং যথারীতি পোষ্ট! হা হা হা। হয়ত এটাই একদিন একটা সেরা স্মৃতি হয়ে যাবে। ভাল থাকুন সবাই।

কৃতজ্ঞতাঃ বন্ধু শ্যামল ও বন্ধু কবির (আমার লেখালেখি এবং রেসিপিতে যারা সব সময় সাপোর্ট ও উৎসাহ দিয়ে থাকে। আমার জন্য কিছুতেই ওদের না নেই!)

বিয়ে শাদীর খাবার দাবার ও অন্য কিছু – ২ (নীলার বিয়ে)
বিয়ে শাদীর খাবার দাবার ও অন্য কিছু – ১ (মুনার বিয়ে)

আপডেটঃ ১৪/০১/২০১৪ইং

এই ছবিটাও ফেসবুকে তুলে দিয়েছি, আমাদের বন্ধু মাসুম ভাইয়ের বিয়ের ছবি দেখে আপনারা অনেক কি ভাবছেন? হা হা হা… আজ দেখি মাসুম ভাই ভাবীকে নিয়ে বেড়াতে বের হয়েছেন। পথে চান্স পেয়ে কয়েকটা ছবি তুলে ফেলি! দেখুন আমাদের সদ্য বিবাহিত মাসুম ভাই এবং ভাবীকে! চমৎকার জুটি। দুইজনকেই বেশ দিল খোলা মনে হল। দোয়া করি, ভাল থাকুন আপনারা।

10 responses to “বিয়ে শাদীর খাবার দাবার ও অন্য কিছু – ৩ (মাসুম ভাইয়ের বিয়ে)

  1. Masum Bhai ke ovinondon janacchi.

    Like

  2. বর কনে কে অসামঞ্জস্য লাগছে ।( বরের ও মেকাপ দেয়া উচিত ছিল , বিয়ের দিনে কনে দেরকে এতো মেকাপ দেয়া হয় যে তাতে অনেক কনের বয়স কমে যায় ) তবে যাই হউক সবই আল্লাহ্‌র ইচ্ছা । আল্লাহই এদের মধ্যে জোড়া বেঁধে দিয়েছেন ।আল্লাহ যেন তাদেরকে সুখী করেন এই দোয়া করি।

    Like

    • ধন্যবাদ বোন।
      আসলে সবই কোপাল। বিয়ে শাদীর জোড়ী উপরওয়ালা নিজ হাতে লিখেন বলে জানা যায়! হা হা হা…

      না, পরের দিন এই বন্ধু ও ভাবীর সাথে দেখা হয়েছিল, তাদের বেশ লাগছিলো। ভাবী ঢাকাতে একটা স্কুলে মাস্টারী করেন, আশা করছি আগামী মাস ৬/৭ এর মধ্য আমেরিকা যেয়ে মাষ্টারী করবেন। হা হা হা।

      আপনার দোয়া মাসুম ভাই ও পরিবারের কাজে লাগবে নিশ্চয়।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  3. আমি তো প্রথমে মনে করেছিলাম অন্য কিছু,
    এখন দেখছি অইরকম কিছুনা 😛
    অনেক সুন্দর একটা কাপল!!

    আমার জেনারেশন এর বিয়েশাদি ঈ শুরু হয়ে গেছে :3

    Like

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]