গ্যালারি

রেসিপিঃ বুটের ডাল ও গরুর গোসত (রাফ এন্ড টার্ফ)


বুটের ডাল দিয়ে গরুর গোসত আমার পছন্দের খাবারের একটা! (হা হা হা, আসলে দুনিয়ার সব খাবারি আমার পছন্দের) আমি চান্স পেলে এই খাবারটা খেতে চাই। তবে এই ধরনের কম্বিনেশনের রান্না হোটেলে হয় বলে এখনো দেখি নাই, বাসাই একমাত্র ভরসা! বাংলাদেশের হোটেল মালিকরা বড্ড বেরসিক, তারা শুধু খালি বুটের ডাল রান্না করেন! এবং মুগ ডালের সাথে খাসীর গোসত রান্না করে থাকে কিন্তু গরুর গোসত দিয়ে কিছু মিশিয়ে রান্না করতে ইচ্ছুক নয়। গরুর গোসতের ঝাল বা ভুনাই যেন তাদের এক মাত্র রান্না! আরে গরুর গোসতের সাথে কত কি দিয়ে রান্না করা হয়! এবং সব গুলোই সুস্বাদু!

চলুন আজ আপনাদের এমনি একটা রান্না দেখাই, আমি নাম দিয়েছি ‘রাফ এন্ড টার্ফ’! বুটের ডাল এবং গরুর গোসত মিক্স। এই রান্নাটা আমি আমাদের পরিবারে অনেকবার রান্না করতে দেখেছি এবং আমার আম্মা বিশেষ করে এটা এমন ভাবে রান্না করতেন যে, সকালেও আমরা রুটি দিয়ে এই তরকারী খেতে পারতাম। বিশেষ করে রুটি বা পরোটা দিয়ে এই খাবারের জুড়ি নেই। চলুন কথা বলে আর কি হবে, সরাসরি দেখে নেই!

উপকরন ও পরিমানঃ 
(আমার কিছু গোসত ও বুটের ডাল কম ছিল, তবুও আমি হাফ কেজির পরিমান দেখিয়ে দিচ্ছি)
– গরুর গোস্তঃ হাফ কেজি
– বুটের দালঃ হাফ কেজি
– পেঁয়াজ কুঁচিঃ বড় তিনটে (দুইটা দিয়ে বেরেস্তা বানিয়ে নিতে হবে)
– গরম মসলা (৩/৪টা এলাচি, দুই/তিন্টে এক ইঞ্চির দারুচিনি)
– আদা বাটাঃ দেড় টেবিল চামচ
– রসুন বাটাঃ দেড় টেবিল চামচ
– কাঁচা মরিচঃ ৩/৪টা (ঝাল বুঝে)
– মরিচ গুড়াঃ হাফ চা চামচ (ঝাল বুঝে)
– হলুদ গুড়াঃ এক চা চামচের কম
– জিরা গুড়াঃ হাফ চা চামচ (না হলে নাই)
– দুই চামচ সিরকা (না হলে নাই, সে ক্ষেত্রে আগুন/পানি/সময় একটু বেশি লাগবে মাত্র)
– লবনঃ পরিমান মত
– তেলঃ সয়াবিন তেল (তেল কমেই রান্না করা ভাল, তেল একটু বেশি দিলে রান্না দেখতে ভাল দেখায়, স্বাদও বাড়ে এটা সত্য কিন্তু তেল স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয় বলে জানা যায়)
– পানিঃ পরিমান মত

প্রনালীঃ
গোসত স্লাইস করে কাটা

এই ধরনের রান্নায় গোসতের হাড় না নেয়াই ভাল। গোসত গুলোকে আপনি চার কোনা করে কেটে নিতে পারেন। স্লাইস/পাতলা হলে সব ছেয়ে ভাল।

ডাল ভিজিয়ে রাখা

রান্না শুরুর আগেই ডাল গুলো ভাল করে ধুয়ে একটা পাত্রে ভিজিয়ে রাখতে পারেন। এতে ডাল মশৃন হবে এবং রান্না সময় বাঁচবে।

বেরেস্তা করে নেয়া

উপরিউক্ত উপকরন যোগাড় করে রান্না শুরু করার সময়ে প্রথমে পেঁয়াজ কুঁচি দিয়ে বেরেস্তা বানিয়ে নিন।


দেশি পেঁয়াজে ভাল বেরেস্তা হয়, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজেও হয়। এবার বেরেস্তা গুলো তুলে রাখুন।

মুল রান্না

বেরেস্তা তুলে রাখার পর, সেই তেলে আরো সামান্য তেল দিয়ে সামান্য লবন যোগে কিছু পেঁয়াজ কুঁচি, গরম মশলা (এলাচি, দারুচিনি) ও কাঁচা মরিচ দিয়ে ভাল করে ভেজে পেঁয়াজ কুঁচি গুলো হলদে করে নিতে হবে।  এবার সেখানে আদা, রসুন বাটা দিয়ে আরো কিছুক্ষন ভেজে তাতে এক কাপ পানি দিতে হবে।


এবার সেই কাষানোতে লাল মরিচ গুড়া, হলুদ গুড়া ও জিরা গুড়া দিতে হবে, ভাল করে কষিয়ে তেল উঠিয়ে নিতে হবে। সব মশলা, ভেজষ মিশে একটা চমৎকার ঘ্রান বের হবে।


এবার গরুর গোসত দিয়ে দিন।


মাধ্যম আঁচে ভাল করে মিশিয়ে নিন। কিছুক্ষন জ্বালের পর দেড় কাপ পানি দিন এবং সিরকা দিয়ে দিন (সিরকা না থাকলে হাফ চামচ চিনিও দিতে পারেন, আর চিনি না দিতে চাইলে কিছু বেশি সময় জ্বাল দিতে হবে মাত্র)


এবার ঢাকনা দিয়ে মিনিট ১৫/২০ রাখুন। আগুন মাধ্যম আঁচে থাকবে। মাঝে মাঝে নাড়িয়ে দিতে ভুলবেন না। যদি পানি কমে যায় কিন্তু গোসত নরম না হয় তবে আরো পানি দেয়া যেতে পারে।


ঠিক এই রকম অবস্থায় এসে যাবে, গোসত মোটামুটি নরম এবং স্বাদ টের পারেন। তেল উঠে যাবে।


এবার বুটের ডাল দিয়ে দিন এবং ভাল করে মিশিয়ে নিন।


এবার আবারো দেড়/দুই কাপ পানি দিন।


এবং আবারো ঢাকনা দিন। আবারো মিনিট ১৫/২০ লাগতে পারে। চুলার ধার ছেড়ে যাবেন না, পানি শুঁকিয়ে হাড়িতে লেগে যেতে পারে। মাঝে মাঝে ঢাকনা খুলে নাড়িয়ে দিতে ভুলবেন না।


কেমন ঝোল রাখবেন সেটা আপনি নিজেই নির্ধারন করুন। লক্ষ রাখবেন বুটের ডাল নরম হবে কিন্তু পুরা গলে যেন না যায়।


এবার ফাইন্যাল লবন দেখুন, লাগলে দিন। না লাগলে, ওকে। সব ঠিক থাকলে এবার বেরেস্তা গুলো ছিটিয়ে দিন এবং ভাল করে মাধ্যম আঁচে মিশিয়ে নিন।


ব্যস পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত। আমি তেল কমে রান্না করেছি, আপনি চাইলে আর একটু তেলে শুরু করতে পারেন, বাটিতে তোলার পর আরো ভাল দেখাবে।


কি চলবে নাকি, রাফ এন্ড টার্ফ বুটের ডাল এবং গরুর গোসত। গরম গরম রুটি বা পরোটার সাথে ফাটাফাটি!

রেসিপি প্রিয় সবাইকে শুভেচ্ছা। ভাল থাকুন সবাই। আনন্দে কাটুক আমাদের সবার জীবন।

17 responses to “রেসিপিঃ বুটের ডাল ও গরুর গোসত (রাফ এন্ড টার্ফ)

  1. vaia..ami germany te thaki…husband soho porchi ekhane…jokhn biye hoy dim tao vajte partam na..ammu, sasuri keu nei je dekhay dibe …amr jamai i ranna kora sekhay amk..but, apnar blog pore ki je upokar peyechi ta bolar na..allah apnak abong apnar puro poribar k onk onk sukhe rakhun..ameen.
    Thanks a lot….

    Like

    • ধন্যবাদ বোন।
      আমি নিজেও এক সময় প্রবাসী ছিলাম। সেই সময় আমি রান্না না জানার কারনে কত কি খেয়েছি, কত বেলা বিস্কুট কিংবা আবোল তাবোল খেয়ে থাকেছি তা ইয়োত্তা নেই। অথচ হাতের কাছে সবই ছিল।

      আমার আমার রান্না গুলো প্রবাসী, ব্যচেলর এবং নুতন যারা রান্না করতে চান তাদের জন্যই সাজাই। আমি চেষ্টা করি যাতে রেসিপির একটা প্রিন্ট নিয়েই রান্না করে ফেলতে পারেন। প্রথম রান্নাটা কিছুটা হলেই যেন তিনি পরেরটা ভাল করতে পারেন।

      আমার চোখে রান্না দুনিয়ার সেরা ভালবাসা। আপনার প্রিয়জনকে আপনি যদি ভাল রান্না করে খাওয়ান, এর চেয়ে আর কি ভালবাসার প্রমান হতে পারে।

      বোন, আপনার কমেন্ট পড়ে আরো আরো উতসাহিত হলাম। যতদিন বেঁচে আছি আমি এই কাজ করে যেতে চাই। দোয়া করবেন।

      শুভেচ্ছা আপনাদের জন্যও। আপনারাও আনন্দে থাকুন।

      Like

  2. via. apni thik bolechen..khubi koruna hoy jokhn amader jeneration er meyera bole,’ porasuna korechi ki ranna korar jonno??’
    It is a big big credit to cook good and make your loved ones happy…allah jeno amk aro valo korar toufiq den..r sejonno apnar sahajjo obossoi joruri..after all apnar ta dekhei je ranna kori!!! 😀 😀

    Like

    • ধন্যবাদ বোন,
      রান্না যে ভালবাসা এটা এখনো অনেকই বুঝতে চান না। আমি অনেক প্রগতিশীল দেখেছি যারা ফেবু কিংবা টিভিতে বা বক্তিতায় নিজদের আকাশের মত উদার বলেন কিন্তু সামান্য রান্নাঘরে গিয়েও দেখেন না কি করে তার জন্য রান্না করছেন একজন মা, বোন কিংবা স্ত্রী, মেয়ে!

      অনেকেতো এখনো ভুলেই পড়ে আছেন যে, রান্না হচ্ছে মেয়েদের কাজ! রান্না করলে পুরুষরা নাকি মেয়ে হয়ে যায়। কম তো দেখছি না। রান্না হচ্ছে একটা আলাদা যোগত্যা। আপনি পারলে এর পুরা কৃতিত্ব আপনার। আর আপনি যেহেতু নিজে নিজের জন্য খেয়ে থাকেন তা হলে নিজে কেন রান্না করবেন না!

      আবারো শুভেচ্ছা নিন বোন। আপনারা আমাদের পছন্দ করেন বলেই আমরা এখনো রেসিপি দিতে সাহসী হই। আমাদের প্রচেষ্টা চলবে।

      Like

  3. ধন্যবাদ বোন,
    আমি প্রবাসে থাকি। আপনার এই সাইট থেকে আমি অনেক প্রকারের রান্না শিকেছি।

    Like

    • ধন্যবাদ বোন,
      আমি বোন না ভাই! হা হা হা।।
      শুনে খুব খুশি হলাম। আশা করি এভাবেই একদিন সেরা রান্নার কারিগর হয়ে উঠবেন।

      প্রথম বার ভাল না হলে ২য় বার হবেই। রান্না একটা প্র্যাক্টিক্যাল ব্যাপার, সুতারাং বার বার চেষ্টা করতেই হবে।

      শুভেচ্ছা। আশা করছি মাঝে মাঝে এসে আমাদের দেখে যাবেন।

      Like

  4. অনেক ধন্যবাদ! আপনার রেসিপি দেখে রান্না করলাম, তবে মুরগির মাংস দিয়ে। মুরগির মাংস একটু তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয়ে গেছে। স্বাদ দারুণ হয়েছে 🙂

    Like

  5. ভাই আপনি কতটুকু তেল দিয়েছিলেন।

    Liked by 1 person

  6. Oneek opokar holo vai,,,,donnobad

    Like

  7. It is very useful for us,, thanks a lot

    Like

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]