খাবার দাবার নিয়ে অনেক কথা, অনেক গল্প। মানুষের জীবনে খাবার দাবার না থাকলে হয়ত মানুষ এই দুনিয়াতে কিছুই করত না! হা হা হা। খাবার দাবারের চিন্তা করতে হয় বলে মানুষ টাকা রুজি করে এবং টাকা রুজির জন্যই বৈধ অবৈধ কাজ করে থাকে! মানে দাঁড়ায় বেঁচে থাকার জন্য খাবারের প্রয়োজনীয়তা আছে বলেই এই দুনিয়াতে আমরা আছি! আপনি কি খাবার খেতে পছন্দ করেন বা করবেন সেটা আসলে নির্ধারিত হয়ে যায় শিশুকালেই! শিশুকালে আপনি আপনার পরিবারে বেড়ে উঠার সময়েই পরিবার তথা বাবা মা আপনাকে যা যা খাওয়ান তাই আমাদের প্রিয় খাবার হয়ে উঠে। তবে স্থান কাল পাত্র ভেদে খাবার নির্বাচিত হয়ে থাকে। আমরা যে খাবার খাই তা অন্য দেশের মানুষের কাছে ভাল খাবার নাও হতে পারে।
এমনি আজ আপনাদের একটা তরকারী/খাবার দেখাবো, যা আমি ছোট বেলায় অনেক খেয়েছি (আপনারাও খেয়েছেন নিশ্চয়)। আমাদের পরিবারে নানান জিওল মাছ দিয়ে সিমের বিচির রান্না হত, স্বাদ এখনো চোখের সামনে। বিবাহ এবং নিজের আলাদা সংসার হবার পরেও আমি এই খাবার অনেক খেয়েছি। আমাদের বড় ছেলে (ছোটু এখনো ছোট) বুলেটের কাছেও এই খাবার মজাদার। সেও হয়ত বড় হয়ে নিজে রান্না করে এমন তরকারী খাবে। যাই হোক চলুন, রেসিপি ও রান্না দেখে ফেলি।
অফিস ফেরার পথে এক কেজি সিমের বিচি কিনে বাসায় ফিরি। পানিতে প্রায় ঘন্টাখানেক ভিজিয়ে রাখি এবং খোসা ছড়াতে (হাফ কেজির)ছড়াতে রাত সাড়ে বারটা। (পরে ফেসবুকের এক বন্ধু থেকে জানলাম সামান্য সিদ্ধ করে নিলেই কম সময়ে খোসা ছাড়ানো যেত) সেদিন আর রান্না করা হয় নাই। গতকাল রান্না করেছি।
মায়েরা, বোনেরা, স্ত্রীরা বা মেয়েরা রান্নাঘরে কি কষ্ট করে রান্না করে আমাদের সামনে হাজির করেন তা নিজে না করলে কিছুতেই বুঝা যায় না বা বুঝতে পারবেন না। রান্নার ব্যাপারে কিছু বলতে গেলে একবার এই ধরনের কাজ করে দেখুন। মায়েরা, বোনেরা, স্ত্রীরা বা মেয়েরা কি ধৈর্য ধরে আমাদের জন্য খাবার তৈরী করেন, তা তাদের সাথে কাজ না করলে বুঝা যায় না। আমি এখন ভাল বুঝতে পারি। আর সেজন্য কোন রান্নাকেই মন্দ বলি না। প্রতিটা রান্নাতেই ভালবাসা জড়িত! হয়ত কিছু কম বা কিছু বেশী, ভালবাসা ছাড়া রান্না হয় না!
উপকরন ও পরিমানঃ (আমাদের ঘরের সাধারন রান্না)
– হাফ কেজি সিমের বিচি (খোসা ছাড়ানোর পর যা হয়)
– কয়েকটা মাগুর মাছ (হাফ কেজি বা তার কিছু কম)
– দুইটা/তিনটে মাঝারি পেঁয়াজ কুঁচি
– রসুন বাটা, এক টেবিল চামচ
– আদা বাটা, এক টেবিল চামচ (দেশী হলে কিছুটা কম লাগবে)
– এক চা চামচ হলুদ গুড়া (সামান্য কম হলেও চলবে)
– হাফ চা চামচ বা তার কম লাল মরিচ গুড়া, ঝাল বুঝে
– কয়েকটা কাঁচা মরিচ
– কিছু ধনিয়া পাতার কুঁচি
– লবন, পরিমান মত (শুরুতে কম দিয়েই রান্না শুরু করা উচিত, লাগলে পরে দিতে পারবেন)
– পানি, পরিমান মত
– তেল, পরিমান মত
প্রনালীঃ
সামান্য তেলে পেঁয়াজ কুচি হাফ চামচ লবন দিয়ে ভাজুন।
পেঁয়াজ কিছুটা নরম হলে হাফ কাপ পানি দিয়ে দিন, কয়েকটা কাচা মরিচও দিয়ে দিন। এবং ভাল করে কষিয়ে নিন।
এবার হলুদ ও মরিচ দিন। এবং ভাল করে কষিয়ে তেল উঠিয়ে নিন। মিক্স মশলার একটা আলাদা ঘ্রান বের হবে।
এবার মাছ দিয়ে দিন এবং ভাল করে মিশিয়ে মিনিট পাঁচ মাধ্যম আঁচে রাখুন।
এবার সিমের বিচি দিন এবং ভাল করে মিশিয়ে নিন।
এমন দেখাবে। এভাবে হাল্কা আঁচে আরো মিনিট পাঁচেক রাখুন।
এবার এক কাপ পানি দিন (গরম পানি হলে ভাল, না হলে সাধারন তাপমাত্রার পানি হলেও চলবে)
ঢাকনা দিয়ে মিনিট ২০ মাধ্যম আঁচে রাখুন। মাঝে মাঝে নাড়িয়ে দিতে ভুলবেন না।
যদি সিমের বিচি নরম না হয় তবে আরো কিছু পানি দিতে পারেন। আর নরম হয়ে গেলে তো কথাই নাই।
ফাইন্যাল লবন দেখুন, লাগলে দিন এবং ভাল করে আবার নাড়িয়ে নিন। ব্যস, সব ঠিক থাকলে ধনিয়া পাতার কুচি ছিটিয়ে দিন।
পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত।
আমি তেল কমে রান্না করেছি। আপনারা চাইলে আর একটু তেল দিয়ে রান্না করতে পারেন। সামান্য কিছু তেল বেশি হলে, বাটিতে বাড়লে আরো ভাল দেখাত! যাই হোক, স্বাদে কোন তুলনা হবে না। আমি ইচ্ছা করেই তেল কম খাই!
গরম ভাতের সাথে একবার খেয়েই দেখুন! আশা করি ভুলে যেতে পারবেন না। আমার রান্না টেষ্টার বুলেট খাবার সময় তেমন কিছু বলে নাই, তবে রাতে ঘুমাতে গিয়ে জানাল, ‘তোমাদের ছোট বেলা ভালই কেটেছে! সব সময় ভাল খাবারই খেতে!’
সবাইকে শুভেচ্ছা।
আমি বিয়ের আগে কখনো সিমের বিচি খাইনি। কিন্তু এখন আমি সিমের বিচির ভক্ত।
তবে আমি বিচি আধ-সেদ্ধ হলে মাছ দিয়ে কষিয়ে ঝোল দেই। মাছ এতো সময় জ্বাল দেইনা।
LikeLike
ধন্যবাদ আপা, দেরীতে উত্তর দেয়ার জন্য ক্ষমা করবেন। আসলে সময় পাওয়া মুস্কিল হয়ে পড়ছে।
হ্যাঁ, আপনি যেভাবে করেন তাও ঠিক আছে। ঘরে রুই মাছ আছে, আর একদিন রান্না করতে পারি। আপনার মত করেই চেষ্টা করবো।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
অনেক দিন হয় এটা করা হয় না আমার অনেক প্রিয় খাবার। দেখি এর মধ্যেই আবার করবো।
LikeLike
ধন্যবাদ বোন। আশা করি আবারো রান্না করবেন। এটা আসলেই চমৎকার খাবার। আমার কাছে আরো কিছু সিমের বিচি আছে, দেখি আর কোন জীওল মাছ পাই কি না। না পেলে রুই মাছ দিয়ে রান্না করবো। শুভেচ্ছা।
LikeLike
পারলে একটু হলুদ কম ব্যবহার করেন। হলুদ ব্যবহার করা হয় মাছ/মাংসের জীবানু (কৃমি) ধ্বংস করার জন্য। কিন্তু জিনিসটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। এখনে যেমন এক চিমটি ব্যবহার করলেই হতো, কিন্তু আপনি মরিচের সমান দিয়েছেন। দেখতেও খারাপ লাগছে খেতেও হয়তো একটা বাজে গন্ধ লাগবে।
LikeLike
ধন্যবাদ অমি ভাই।
ফেইসবুকের ফুডোগ্রাফিতেই এই আলোচনা চলুক। আমার রান্না খারাপ হয় নাই, হলুদের ঘ্রানও ছিল না। আমি রাঁধুনি ব্যান্ডের হলুদ মরিচ ব্যবহার করি। যাই হোক হলুদ মানুষের জন্য কেমন ক্ষতিকর তা আমার জানা নেই।
https://www.facebook.com/groups/Foodography1/permalink/340934029381897/
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। ভাল থাকুন।
LikeLike
vaia recipe ta dakhei khete issa korse. are sai jonnoi aj mall theke magur mas neye asce, tobe kaca semer bece pai ni.sukna ta payese.vejeye norom kore ranna korte hoy.vabse apner tar moto to are test hobe na.sukna semer bece deye kevabe ranna korle test hobe jode aktu janaten tahole onek khuse hotam vaia.
LikeLike
ধন্যবাদ বোন, শুকনা সীমের বিচিকে একটু ভেজে পানিতে চুবিয়ে রাখুন আধাঘন্টা। তারপর খোসা ছড়িয়ে রান্না করুন। তবে এই ক্ষেত্রে সিমের বিচি আগে দিতে হবে এবং সিমের বিচি কিছুটা নরম হয়ে গেলে মাগুর মাছ দেবেন এবং যথারীতি রান্না করবেন। স্বাদ হবেই। শুভেচ্ছা থাকল।
LikeLike
শোল কিংবা বাইন মাছ দিয়ে এটা আরো মজাদার।
LikeLike
পিংব্যাকঃ রেসিপিঃ রুই মাছের পেটি ও শিমের বিচি | রান্নাঘর (গল্প ও রান্না)
আমিও সীম বিচির ভক্ত. রুই মাছ দিয়ে মাঝে মাঝেই রান্না করি. এখানে শুধু ফ্রোজেন বিচি পাওয়া যায়. আমি সব সময় বিচি আগে কষে নেই, তার পর মাছ দেই. এখানে Fava bean নামক একধরনের বাচি পাওয়া যায়. সেটা দিয়েও এভাবে মাগুর বা রুই রান্না করলে মজা হয়. আপনার রান্না তরকারী দেকতে মোটেও খারাপ হয়নি – হলুদও বেশি হয়নি. মজাদার দেখতে হয়ছে. রেসিপি দেখানোর জন্য ধন্যবাদ.
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ আপনাকেও।
আনন্দে কাটুক সময়। প্রবাসে আজকাল বাংলাদেশের প্রায় সব খাদ্য দ্রব্য পাওয়া যায় এটা আনন্দের।
শুভেচ্ছা নিন।
LikeLike