গ্যালারি

রেসিপিঃ কচি মূলা ও শুঁটকী (একান্ত ব্যক্তিগত রান্না)


যারা রান্না করেন, তারা কি পছন্দ করেন, এটা পরিবারের কেহ খুঁজে দেখেন না! তাদের জন্য অনেক পরিবারে কোন কথাই উঠে না। এই শতকে এসেও এখনো আমাদের অনেকের মানষিকতা সামান্যও পাল্টে নাই। যে মাতা/পিতা সারা জীবন কষ্ট করে সন্তানদের রান্না করে খাইয়ে মানুষ করে সেই সন্তান, সামান্যর জন্যও মা/বাবা’কে সাহায্য করে না, ছাড় দেয় না!

আমি ভেবে কুল পাই না, এমন অকৃতজ্ঞ কিছু সন্তানের দেখা আমি ফেইসবুক সহ নেটে নানা ব্লগে পেয়ে থাকি। ব্লগে কিছু প্রগতিশীল বলে দাবী করা এমন ছেলে দেখি, যারা ছেলেরা পরিবারে রান্না করছে এটা সইতেই পারে না! (ওদের কাছে ছেলেদের রান্না জানাটা মনে হয় দোষের! রান্না ওরা ধরেই নিয়েছে মেয়েদের কাজ!)। আসলে  আমাদের সামাজিক অবস্থা এবং পারিবারিক কাঠামো এমনই যে, নৈতিকতার কোন শিক্ষাই এখন আর চলে না বা হচ্ছে না! দিনের পর দিন আমরা আরো নিষ্ঠুর ব্যবস্থার দিকে চলে যাচ্ছি। পড়ালেখা জানা পরিবার থেকে অশিক্ষিত পরিবার কিংবা ধনী থেকে গরীব পরিবার, সব জায়গাতেই একই অবস্থা!

যারা আমার এই ব্লগ পড়ছেন এবং আপনার যদি ছেলে সন্তান থাকে তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, আপনার ছেলেকে রান্নাঘরে নিয়ে চলুন। ছোট বেলা থেকেই তাকে রান্না শিখান, রান্না জানলে আপনার ছেলে কখনোই মুল্যবোধহীন হয়ে বড় হয়ে উঠবে না। সে বুঝতে পারবে, একজন মা কি করে, কত কষ্ট করে সন্তানের জন্য রান্না করেন। মা’দের বলছি, ছেলেদের আদর করেন ভাল কথা কিন্তু কোন ছাড় দেবেন না। এতে ছেলে বড় হয়ে আপনাকেই ছুড়ে ফেলবে (যদিও সরি ‘মা’, আপনারা কোন প্রতিদানের জন্য এই সেবা করেন না)। রান্না জানলে ছেলে বড় হয়েও মায়ের কথা, বোনের কথা মনে রাখবে, এটা নিশ্চিত।

যাই হোক, আশা করছি, যা বলতে চেয়েছিলাম আজকের গল্পে তা ভাল করে বলতে না পারলেও আপনারা আমার প্রিয় রেসিপি পাঠক/পাঠিকা ভাই বোন বন্ধুরা বুঝতে পারছেন।

আজ আপনাদের জন্য আমার একটা ব্যক্তিগত রান্নার রেসিপি দিচ্ছি। এটা শুধু আমি নিজে আমার জন্যই রান্না করেছিলাম এবং একাই আমি নিজে খেয়ে শেষ করেছিলাম! হা হা হা…

প্রয়োজনীয় উপকরনঃ
– কচি মূলা (ডাটা টাইপ, এক আঁটি, কেটে কুটে যা হয়)
– আলু একটা (মূলার মত করে কাটতে হবে)
– দুইটা চ্যাপা শুঁটকী (পরিমান বুঝে নিতে হবে, বেশী হলে বেশী শুঁটকীর ঘ্রান হবে, তখন খেতে ভাল নাও লাগতে পারে)
– মাঝারি দুটো পেঁয়াজ কুঁচি
– কয়েকটা কাঁচা মরিচ
– এক চা চামচ রসুন বাটা
– হাফ চা চামচ আদা বাটা
– হাফ চা চামচ হলুদ গুড়া
– হাফ চা চামচ মরিচ গুড়া, ঝাল বুঝে
– লবন (পরিমান মত)
– তেল (পরিমান মত, কম তেলেই রান্না উত্তম)
– পানি (পরিমান মত)

প্রনালীঃ 

শাক ভাজি বা রান্না করে মূলার এই ডাটা গুলো আলাদা করে নিন এবং লম্বা করে কাটুন (অনেকটা নিন্মের ছবির মত)


সাথে আলুও একই ভাবে কেটে ধুয়ে নিন এবং একটা পাত্রে গা গা পানি দিয়ে, সামান্য লবন যোগে মাঝারি সিদ্ব করে নিন। পানি ফেলে নিন, এতে মূলার ঘ্রান কিছুটা কমে যাবে এবং রান্নায় সময় বাঁচবে।


এবার মুল রান্নায় আসুন। কড়াইতে তেল গরম করে তাতে প্রথমে সামান্য লবন যোগে পেঁয়াজ কুঁচি ভেঁজে একে একে আদা, রসুন দিয়ে দিন এবং ভাঁজুন। এর পরেই চ্যাপা শুঁটকী দিয়ে দিন। ভাজতেই চ্যাপা শুঁটকী মিশে যাবে।


এবার সামান্য পানি দিন।


এবার মরিচ গুড়া, হলুদ গুড়া এবং কয়েকটা কাঁচা মরিচ দিন এবং ভাল করে কষিয়ে ঝোল বানিয়ে ফেলুন। (প্রয়োজনে আরো সামান্য পানি দিতে পারেন)


এবার হাফ সিদ্ব মূলা আলু দিয়ে দিন।


ভাল করে সামান্য সময়ে মিশিয়ে নিন।


এবার হাফ কাপ পানি দিন।


ব্যস ঢাকনা দিয়ে রাখুন মিনিট ১৫ এর জন্য। এই সময়ে আগুনের আঁচ মাধ্যম থাকবে।


ফাইন্যাল লবন দেখুন। লাগলে দিন, না লাগলে ওকে! ঝোল কেমন রাখবেন এটা আপনি নিজে নির্ধারন করুন। আমি গা গা ঝোল রেখেছিলাম। (ঝোল দ্রুত কমাতে চাইলে ঢাকনা তুলে আগুন বাড়িয়ে দিতে পারেন)


ব্যস পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত।


আমার আমি। নিজের জন্য নিজের রান্না! ব্যাটারী ও বুলেট শুঁটকী খেতে চায় না, আর মূলা তো চলেই না!

সামনে মূলার দিন আসছে, বড় মূলার রান্না দেখতে চাইলে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন, মুলা রান্না (সাধারন), পূর্বের রেসিপি।

সবাইকে শুভেচ্ছা।

6 responses to “রেসিপিঃ কচি মূলা ও শুঁটকী (একান্ত ব্যক্তিগত রান্না)

  1. আহ! মূলা! আমাদের দু’জনেরই খুব প্রিয় সবজি। মূলা দিয়ে শুটকি আমিও রান্না করি। তবে পেঁয়াজ আর আদা দেইনা। ইলিশের মাথা দেই। সাথে বোম্বাই মরিচ।

    সিলেটে সবজি দিয়ে শুটকি রান্না করলে তেল ছাড়া হাতে মাখিয়ে রান্না করে। আর মাছ দেয়। খেতে কিন্তু খুবই সুস্বাদু হয়।

    আলহামদুলিল্লাহ! আমি আমার এক মাত্র পুত্রকে রান্না শিখিয়েছি। প্রায়ই ফোন করে সে বিভিন্ন রান্নার রেসিপি জেনে নেয়।

    Like

    • ধন্যবাদ রান্নাতো বোন।
      আপনার সাথে আমার মিল অনেক। বিশেষ করে কিছু রান্নায় মিলটা অঙ্কে খুঁজে পাই।

      কুম্ভকর্ন ভাই মুলা পছন্দ করেন জেনে খুশি হলাম। মুলা ভাল মনের মানুষের খাবার্!

      আমাদের ভাগিনা রান্না করে জেনে আমি মহা খুশি হই। ছেলেরা রান্না করছে জানলে আমি তাদের পুরস্কার দিতে চাই।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  2. এই ধরণের শুটকি রান্নায় তেল না দিলেও চলে । মুলার শুটকি আমারও খুব পছন্দের ।

    Like

  3. apni ei ranna taay shesher dike olpo roshun+kacha morich+dhoniapata+piayaj chheche diye dekhte paaren eita amar shobcheye pochhonder shutki tel chhara. ami dukkhito ami bangla lekhar software download kori naai.

    Like

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]