গ্যালারি

রেসিপিঃ মোরগ মোসাল্লাম (ঈদ উৎসবে জামাইবাবাজীকে)


ঈদ উৎসবে জামাই বাবাজী আপনার বাড়ী এল আর আপনি তাকে বিশেষ কিছু মনে রাখার মত খাবার খাওয়াবেন না, তা কি করে হয়। ছেলের জন্য রান্না না করলেও চলে কিন্তু মেয়ের জামাইয়ের জন্য রান্না না করলে কি চলে? জামাইতো পরের ছেলে, যত আপন করে নিতেই চাইবেন, সে আপন হবে না! তবে এর মধ্যে যদি কিছু খাবার দাবার তাকে খাওয়াতে পারেন, হয়ত সে আপনাকে ভুলবে না! এই যা আর কি?

অন্যদিকে আর একটা ব্যাখ্যা দেয়া যায়, আপনি যদি আপনার মেয়ের জামাইকে ভাল খাবার দাবার (বড় পিস) খাওয়ান তবে আপনার ছেলেও তার শশুর বাড়িতে ভাল খাবার দাবার (বড় পিস) পাবে বা পাওয়ার আশা রাখতে পারবে! আপনি যদি আপনার মেয়ের জামাইকে দিয়ে বাজার সদাই করান তবে আপনার ছেলেও তার শশুরবাড়ি গিয়ে বাজার করবে! যেন নিউটনের ৩য় সুত্র! হা হা হা…

চলুন কথা আর না বলি! কথা বলতে গেলে সময় নষ্ট! তার ছেয়ে চলুন দেখে ফেলি, আজকের বিশেষ রান্না, মোরগ মোসাল্লাম! অন্যদিকে মুরগী মোসাল্লাম না বলাতে হয়ত অনেকে জানতে চাইবেন, মোরগ কেন বলা হল! উত্তর আমারো জানা নেই!  দুনিয়াতে কত কিছু এখনো অজানা!

আপনি চাইলে এই রেসিপিটা দেশী মোরগ দিয়ে রান্না করতে পারেন, আমরা ফার্মের মোরগ দিয়ে রান্না করেছি। জামাই বাবাজীর পছন্দ আগে থেকে জানা থাকলে তাই করবেন! (এদিকে জামাই বাবাজী যদি পাক প্রেমিক হয় তবে বাজারে এখন পাক কুকুরু কু পাওয়া যায়, তা দিয়েও চান্স নিতে পারেন। বাজারে এত পাক জিনিষ যে এড়িয়ে চলাও দুস্কর!)

যাই হোক, এই দিকে আসুন রেসিপি লাভার্স ব্রাদারস এন্ড সিষ্টারস!

প্রয়োজনীয় উপকরনঃ
– মোরগ একটা (আস্ত, বুক কেটে নিলে ভাল করে পরিস্কার করা যায়)
– জয়ফল (১টা ফল ১০ কেজির জন্য ব্যবহার হয়) সামান্য
– জয়ত্রী,  ১ চা চামচ
– জাফরান, সামান্য, এক চা চামচ কোওড়া জলের সাথে ভিজিয়ে রাখুন
– চিনা বাদাম বাটা, ৪ চা চামচ (বাটা বা গ্রাইন্ড করা)
– দারুচিনি, ৪ টুকরা (হাফ ইঞ্চি)
– এলাচি, ৩/৪ টা
– কিসমিস ১০/১২ টা
– তেজপাতা, তিনটা মাঝারি
– আদা ২ টেবিল চামচ
– রসুন দেড় টেবিল চামচ
– ধনিয়া ১ চা চামচ
– জিরা ১ চা চামচ
– কাঁচা মরিচ পেষ্ট/ বাটা/ গ্রাইন্ড (ঝাল বুঝে) ৩ টেবিল চামচ
– টমেটো সস  ২ টেবিল চামচ
– টক দই এক কাপের অর্ধেকের কম
– চিনি ১ চা চামচ
– পরিমান মত লবন
– তেল পনে এক কাপ
– কয়েকটা কাঁচা মরিচ
– বেরেস্তা, এক কাপ (ভাঁজার পর)

(মোরগ বাঁধার জন্য কয়েক ফুট সাদা সেলাই সুতা)

প্রনালীঃ

অনেকে আস্ত মুরগী রান্না করতে বুকটা কেটে নেন না, এতে পরবর্তিতে সুতার ব্যবহারের দরকার হয় না বটে তবে ভিতরটা ভাল করে পরিস্কার করতে এভাবেই ভাল।


আগে থেকেই মশলা পাতি সাজিয়ে রাখলে রান্না করতে সময় কম এবং সহজ লাগে।


একে একে সব মশলা দিয়ে দিন।


জাফরান দিতে ভুলবেন না।


টমেটো সস দিতে ভুলবেন না।


টক দই  দিতেই হবে।


এবার ভাল করে মেখে আধা ঘন্টার জন্য রেখে দিন।


রান্না শুরু করার আগে মোরগটাকে সুতা দিয়ে বেঁধে নিন, এতে মোরগের আকার ঠিক থাকবে।


এবার হাড়িতে হাফ কাপ তেল গরম করে কিংবা যে হাড়িতে বেরেস্তা ভেজেছেন সেই হাড়িতে পুরো মোরগটা এবং মশলা গুলো দিয়ে দিন এবং ঢাকনা দিয়ে মাধ্যম আঁচে মিনিট ২০ এর জন্য রেখে দিন। তবে মাঝে মাঝে দেখে নাড়িয়ে দিতে ভুলবেন না।


এই রকম একটা অবস্থায় আসতে (মাংস নরম হল কিনা দেখে নেবেন) বেশী দেরী লাগবে না। দেশী মোরগ হলে আরো কিছু বেশী সময় লাগতে পারে!


এবার বেরেস্তা গুড়া করে ছিটিয়ে দিন এবং নামানোর আগে কয়েকটা কাঁচা মরিচ দিতে পারেন।


ব্যস পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত। আপনার মন মত করে সাজিয়ে প্লেটে নিন।


জামাই বাবাজী নিশ্চয় খুশি হবেন। প্রবাসে (জামাই বাবাজী যদি প্রবাসী হন) যারা থাকেন তাদের কাছে এমন একটা আস্ত মোরগ খেয়ে ফেলা তেমন কিছুই না!

সবাইকে শুভেচ্ছা। রান্না আসলে একটা ভালবাসা, সেই ভালবাসা আপনার হবে না কেন?

22 responses to “রেসিপিঃ মোরগ মোসাল্লাম (ঈদ উৎসবে জামাইবাবাজীকে)

  1. বেশ ইয়ামি দেখা যাচ্ছে!
    মোরগ নিয়ে আমার কোন সমস্যা নাই ভাই! 🙂
    ঈদের শুভেচ্ছা রইলো।

    Like

  2. চমৎকার রেসিপি । আমি চেষ্টা করে দেখব । তবে এবার পারবোনা , কারণ আস্ত মোরগ আপাতত বাসায় নেই ।

    Like

    • হা হা হা…। আপনার রান্নার প্রতি আগ্রহ দেখে ভাল লাগে। আপনি নিঃসন্দেহে ভাল রান্না করেন।

      যাই হোক, আগামীতে নুতন মেহমান আসলে কিংবা প্রিয় মানুষের জন্য এমন একটা রান্না করে তাকে চমকে দিতে পারেন। খেতে বসে সবাই আনন্দ পাবে।

      সদস্য বেশী হলে একই কায়দায় দুটো মোরগ একসাথে রান্না করতে পারেন। সবার জন্য।

      শুভেচ্ছা।

      Like

      • ভাল রান্না করি কিনা সেটা আমার হাতের রান্না যারা খায় তারাই বলতে পারবেন । তবে আপনার কয়েকটা রেসিপি আমার বাসায় হিট । বিশেষ করে চিকেন ফ্রাই । আমার ছোটভাই তো ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে বায়না করে রেখেছিল ঈদের দিন যেন চিকেন ফ্রাই করি । বুঝতেই পারছেন আপনার সাইট থেকে রান্না শিখে , সেটা করার পর কি অবস্থা দাড়ায় ।
        আপনার এবং আপনার ব্যাটারির প্রতিও আমার শুভেচ্ছা রইল ।

        Like

        • ধন্যবাদ বোন।
          আপনি আমাদের রেসিপি দেখে রান্না করেন এটা জেনে আমরা অত্যান্ত আনন্দিত। আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে, শুধু সাহস দেয়া এবং মুল বিষয় ধরিয়ে দেয়া। এবার আপনি বা আপনারা আপনাদের মত করে রান্না করবেন।

          আপনার কমেন্ট এই রেসিপি ব্লগের অন্যতম উপহার।

          আমরা আপনার জন্য সব সময় দোয়া করি। আপনি ভাল থাকুন, আপনার রান্নার খ্যাতি আপনার পরিবারের সবাই জেনে যাক।

          শুভেচ্ছা।

          Like

  3. দেখে তো জিভে পানি আসছে!!
    আগামিকাল একটা চেষ্টা নেবো নাকি, চিন্তা করছি। 🙂

    Like

  4. আমার কমেন্ট কই গেলো? 😦

    Like

    • ধন্যবাদ আপা, গত দুইদিন আমিও নেটের বাইরে ছিলাম। আপনার কমেন্ট আমারো চোখে পড়ে নাই। কোথায় কি হল বুঝতে পারছি না। স্প্যাম এ দেখলাম, কমেন্টটা পাই নাই। যাই হোক, আপনি যাই বলেন সেটাই ভাল হয়!

      তবে জামাইবাবাজীদের অভিজ্ঞতা আপনার আছে! আপনার মেয়ে জামাই এলে কি কি রান্না করেন তা জানতে চাই।

      শুভেচ্ছা। ভাল থাকুন।

      Like

  5. মোরগ মোসাল্লাম আমাদের আদি ঐতিহ্যের একটা খাবার, যেটা আস্ত ছাড়া হয় না।
    আপনার মোরগ রান্নার পদ্ধতি খুবই ভাল লেগেছে।

    বিশেষ করে বুক চিরে পরিস্কার করার ব্যাপারটা।

    তবে রান্না শেষে একটু ঘি আর মোরগ মোসাল্লামের জন্য আরেকটু ছোট দেশি মোরগ হলে দারুণ হত। 🙂 (মনে হয়)

    শুভেচ্ছা আর ভালোলাগা

    Like

    • ধন্যবাদ ভাতিজা।
      হ্যাঁ, চমৎকার লিখেছো।

      কয়েকদিন আগে ঘি দিয়ে একটা আইটেম বানিয়েছিলাম, কেহ খেতে চায় নাই। আর দেশী মুরগী! আমাদের মত পরিবার গুলো এখন আর দেশীতে চলে না! কারন দাম অনেক বেশী এবং তেমন গোসত না থাকাতে ছেলে মেয়েরাও পছন্দ করে না। যারা কে এফ সি বা এমন খাবারের দোকানে মোরগ খেয়েছে বা খায় তারা দেশী মোরগ পছন্দ করে না।

      তবে মাঝে মাঝে কিনে আনি, স্বাদ এবং চোহারা দেখার জন্য!

      শুভেচ্ছা।

      Like

  6. আমি মোরগ মোসাল্লামের মোরগ বাবাজীকে আগে মসলা দিয়ে অল্প পানিতে সেদ্ধ করে নেই। ( সেই পানি পরে মসলা কষানোতে ব্যাবহার করি) তারপর ডুবো তেলে লালচে, বা সোনালি করে ভেজে মসলা কষিয়ে মোরগ দিয়ে একটু পানি দেই, যাতে মোরগের ভেতরটা ভেজা ভেজা হয়। মসলা গায়ে গায়ে মাখা মাখা হলে নামিয়ে পরিবেশন করি। পাকিস্তানেও এমন করে করে।

    আমার জামাই বাবাজী মাশাল্লাহ! দাওয়াত দিলে সে বেশীর ভাগ সময় বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে পালিয়ে বেড়ায়। তার নাকি লজ্জা করে। তবে নাতি আমার মাশাল্লাহ একাই একশো। একটি মোরগ মোসাল্লাম উড়িয়ে দিতে পারবে। :p

    Like

    • ধন্যবাদ আপা,
      আপনার রান্নার স্টাইল টা নোটে টুকে নিলাম। পরের বারে আপনার মত করে রান্না করবো।

      হা হা হা…। আপনি ভাল জামাইবাবাজী পেয়েছেন। এটা আপনার ভল কোপাল। এমন জামাই নিঃসন্দেহে ভাল। যারা খালি খাই খাই করে, তারা ভাল জামাই নয়! হা হা হা… এদিকে জামাইদের আবার বেশী আদর যত্ন করাও ভাল নয়! মাথায় উঠে যায়।

      (আপনার জামাই চরিত্র আমারো! দাওয়াত দিলে পালিয়ে বেড়াই!)

      আপনার নাতির জন্য ভালবাসা। এই নাতি আমাদের মান সন্মান রাখবে। শশুর বাড়ীতে গিয়ে নানুর রান্নার কথা বলবে। হা হা হা।।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  7. জিভে জল এসে গেল……
    ইয়ামি…ইয়ামি…

    Like

  8. ধন্যবাদ ভাই মজাদার খাবারটির জন্য। যে সকল জামাইয়েরা এ খাবারটা শশুরবাড়িতে খেয়েছেন তাদের প্রতি ঈর্ষা হচ্ছে!

    Like

    • হা হা হা…।। ধন্যবাদ আনিস ভাই।
      আসলে সত্য কথা কি, এখকার জামাইদের এমন সৌভাগ্য আর হয় না বললে চলে! জামাইরা নিত্য যায়, ডিম দিয়ে খেয়ে ফেলে আর তখনই কেল্লা ফতে! এই ধরনের খাবারের জন্য, যেমন জামাই তেমন শাশুড়ী হতে হয়!

      হা হা হা…… তাই বিবাহ করতে দেখে শুনে করবেন এবং নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় রাখবেন।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  9. পিংব্যাকঃ এক নজরে সব পোষ্ট (https://udrajirannaghor.wordpress.com) | BD GOOD FOOD

  10. ami india theke….apner ei recipe sharing is unique..kintu apnar kono non veg ranna te bisesh kore gosth jateote khakhono kasmiri morich er byabhawar dekhini…ja kintu flavour charao..beautiful rich color dey…ei morich ki bangladeshe use hoi na…na apni kono karone use koren na…janar ichha roilo ……valo thakben with your family

    Liked by 1 person

সুরঞ্জনা এর জন্য একটি উত্তর রাখুন জবাব বাতিল