অনেক দিন পাঙ্গাশ মাছ খাওয়া হচ্ছে না। গত কয়েকদিন আগে মাছ বাজারে গেলে মাছ বিক্রেতা বিশু আমাকে পেয়ে বসে, টাকা লাগবে না! এই পাঙ্গাশটা নিয়ে নেন! সাড়ে ৬ কেজির পাঙ্গাস মাছ দেখে কার না লোভ হবে! আর আমি তো আবার পাঙ্গাশ প্রেমিক! বিশু কেটেই দিতে চেয়েছিল, ছবি তোলার লোভে বাসায় নিয়ে এসে আমি নিজেই কাটলাম। পাঙ্গাশ মাছে তেমন কাটা নেই, চামড়ায় নেই আঁশটে। তাই আমার জন্য এই মাছ কাটা সহজ ব্যাপার বলে মনে হল। আমি খুব একটা মাছ চিনি বলে দাবী করি না, তবে বিশু বলেছিল এটা নদীর পাঙ্গাশ, বাসায় আমার স্ত্রী বললেন, নদীর নয় বড় কোন পুকুরের হবে!
(এই মডেল দিয়ে আর চলবে না! মডেল দিন দিন বড় হয়ে যাচ্ছে, আর মাছ ধরতে চায় না!)
সে যাই হোক, কিছুদিন আগে এক রেসিপি প্রিয় বন্ধু আমাকে মেইল দিয়ে বলেছিলেন, তিনি পাঙ্গাশ মাছ পছন্দ করেন এবং খেতে চান কিন্তু স্ত্রীর ভয়ে এই মাছ বাজার থেকে কিনতে পারেন না। তার স্ত্রী পাঙ্গাশ মাছ দেখলেই ঝগড়া বিবাদ শুরু করে দেন। পাঙ্গাশ ছাড়াও আরো অনেক মাছ তার স্ত্রী পছন্দ করেন না বলে তিনি খেতে পারেন না। এই ধরনের ব্যাপার আসলে আমি মনে করি দুঃখজনক। বিশেষ করে স্বামী স্ত্রীর মাঝে এটা মেনে নেয়া যায় না।
একটা উদাহরণ দেই, আমার আম্মা অনেক মাছ খেতেন না কিন্তু তিনি আমাদের জন্য রান্না করে দিতেন। আমার বাবা প্রিয় মাছ গুলো ছিল আম্মার প্রিয় মাছের পুরাপুরিই বিপরীত। কিন্তু তিনি কখনো রান্না করেন নাই এমন দেখি নাই। রান্না করে আমাদের সাথে নিয়েই বসতেন, আমি প্রায় খেয়াল করতাম, তিনি সেই মাছ গুলো না নিয়েই খেয়ে উঠে যাচ্ছেন। অনেক সময় দেখেছি, তিনি শুধু ডাল ভাজি দিয়েই খাবার খেতেন। আমি মাঝে মাঝে বললে, তিনি বলতেন, তোরা খা। স্বাদ না হলে বলিস। এখনো আমার সেই দিন গুলোর কথা মনে পড়ে।
এদিকে আমার স্ত্রী বিবাহের পর পর কিছুটা এমন করলেও আমি তাকে বুঝাতে পেরেছি যে, হালাল যে কোন খাবার খেলে ইজ্জত যায় না! এখন তিনি আমার চেয়েও বাইর্যা খান, কি খান না সেটা এখন আর খুঁজে পাই নাই! স্বাদ হচ্ছে আসল কথা। স্বাদ হলে যে কোন খাবার খাওয়া যায়, স্বাদ না হলে যে কোন দামী খাবারও পেটে ডুকে না!
চলুন মাছ পাঙ্গাশ মাছের ঝোল রান্না দেখি। সাধারন ও সহজ রান্না এবং না ভেঁজেই।
উপকরনঃ (সাধারন মাছ রান্না)
– পাঙ্গাশ মাছঃ বড় ৫ টুকরা
– পেঁয়াজ কুঁচিঃ মাঝারি চারটে
– রসুন বাটাঃ ৩ টেবিল চামচ
– আদা বাটাঃ ২ টেবিল চামচ
– মরিচ গুড়াঃ ১ চা চামচ (ঝাল বুঝে)
– হলুদ গুড়াঃ ১ চা চামচ
– জিরা গুড়াঃ ৩ চিমটি
– কাঁচা মরিচঃ ৫/৬ টা (ঝাল বুঝে)
– লবনঃ পরিমান মত
– কাঁচা বিলাতি ধনিয়া পাতাঃ কুচি পরিমান মত
– তেলঃ সয়াবিন তেল হাফ কাপের চার ভাগের একভাগ (আমি কম তেলেই রান্না করি)
– পানিঃ পরিমান মত
প্রনালীঃ
পছন্দ সই টুকরা বেঁচে নিন। লবন পানি যোগে ভাল করে ধুয়ে নিন। পাঙ্গাশ নরম মাছ বলে সব কিছু সাবধানে করা উচিত।
কড়াইতে তেল গরম করে সামান্য লবন যোগে পেঁয়াজ কুচি ভাঁজুন এবং হলদে ভাব এলে তাতে আদা রসুন দিয়ে দিন এবং আরো কিছু ক্ষন ভাঁজুন।
এবার এক কাপ পানি দিয়ে ঝোল বানিয়ে নিন এবং তাতে মরিচ গুড়া, হলুদ গুড়া এবং জিরা গুড়া দিয়ে দিন। ব্যস নাড়াতে থাকুন, এটাই হচ্ছে ঝোল। তেল উপরে উঠে যাবে এক সময়।
এবার মাছের টুকরা গুলো দিন। বিছিয়ে। হোটেলে এই ধরনের রান্না চওড়া সসমেনে রান্না হয় (আগামীতে এমন বড় মাছ রান্না করলে দেখিয়ে দেব) কড়াই ছোট হলে মাছের টুকরা গুলো ভেঙ্গে যেতে পারে।
কিছুক্ষনের জন্য ঢাকনা দিয়ে রাখুন, আগুনের আঁচ থাকবে হালকা বা মাঝারি।
পানি বা ঝোল কমে গেলে আবারো পানি দিতে পারেন। যতক্ষন না মাছ ভাল সিদ্ব হয় এবং মশলা মাছে প্রবেশ করে।
সারা কাড়াই ধরে নাড়িয়ে দেয়া উত্তম। খুন্তি দিয়ে মাছ উল্টাতে গেলে মাছে ভেঙ্গে যাবে। এভাবে আরো মিনিট ২০ মাধ্যম আঁচে রাখুন।
ধনিয়া পাতার কুচি দিন। ফাইন্যাল লবন দেখুন, লাগলে দিন। ঝোল কেমন রাখবেন তা আপনার ইচ্ছা তবে ঝোল একটু বেশি রাখাই উত্তম কারন গরম ভাতের সাথে ঝোল প্রয়োজন আছে।
পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত। আরো কিছু ধনিয়া কুচি ছিটিয়ে দিতে পারেন।
আমার রান্না টেষ্টার বুলেট সবার বড় টুকরা টা খেয়েছিল। কেমন হয়েছে তা জিজ্ঞেস করতেই, হাসছিলো! রান্না করে ছেলের মুখের কথা বন্ধ করতে পারাটা আমি মনে করি একজন পিতার জন্য সৌভাগ্য! হা হা হা…
রান্নার অপর নাম ভালবাসা। রান্না শিখুন, প্রিয়জনদের জন্য রান্না করুন। ভালবাসা বেঁচে থাকবে চীরকাল, দুই দিনের দুনিয়ায় আর কি আছে?
আমাদের ফ্যামিলির কেউই পাঙ্গাস মাছ পছন্দ করে না, যদিও এটা সস্তা ।
আমার কাছে পাঙ্গাস মাছের কেমন একটা আঁশটে গন্ধ মনে হয়। তাছাড়া স্বাদ ভালো লাগে না। ( প্লিজ কিছু মনে করবেন না, এটা একান্তই আমার নিজস্ব অভিমত)
শুভেচ্ছা
LikeLike
ভাতিজা,
হা, কিছু পাঙ্গাশে একটা আলাদা ঘ্রান হয় সেটা মাছটাকে কিভাবে চাষ করা হল তার উপর নির্ভর করে। সাধারণত নদী বা বড় পুকুরের পাঙ্গাশে এমন ঘ্রান হয় না। বড় পাঙ্গাশ একবার খেয়ে দেখতে পার।
পাঙ্গাশ মধ্যবিত্ত পরিবারের আমিষ যোগায়, আমি এই মাছকে স্যালুট দেই।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
আমি তেমন এই মাছ পছন্দ করি না তবে বড় হলে খাই। ভাল লাগে।
LikeLike
ধন্যবাদ বোন।
হা, বড় যে কোন মাছের স্বাদ ই আলাদা। আমিও বড় পছন্দ করি। কিন্তু কেনার সামর্থ নেই! বড় মাছের দাম এখন আকাশ ছোঁয়া!
ঘুষের টাকা এবং চুরির টাকা না থাকলে এখন বড় মাছ কেনা প্রায় অসম্ভব!
শুভেচ্ছা।
LikeLike
আমিও বড় পাঙ্গাসের ভক্ত। কুম্ভকর্ণ খান না। উনাকে ইলিশ বা কই মাছ ভেজে দেই। আর কিছু নাহলেও নিজের জন্য আমি পাঙ্গাস কিনি।
LikeLike
রান্নাতো আপা,
আমি এই জন্য আপনার সাথে আছি। আপনি ও আমি কোন কিছু বাছাবাছি করি না! আমরা যা পাই তা খাই। হা হা হা…
কুম্ভকর্ন ভাইকে সালাম দিবেন এবং বলবেন, বাছাবাছি করলে খবর করে ফেলবো!
শুভেচ্ছা।
LikeLike
Pangas, fish…. I LOVE you! I LOVE ..ha, ha ,ha,:)
LikeLike
Pangas, fish…. I LOVE you! I LOVE ..ha, ha ,ha,:) (মি ঠু…।)
LikeLike
I LOVE U Pangas fish!
LikeLike
ধন্যবাদ রেদোয়ান ভাই।
হা হা হা……
আরো জোরে বলেন, আশে পাশে কেহ নাই!
শুভেচ্ছা।
LikeLike
I love pangash.
LikeLike
হা হা হা…।। ছেলেরা পাঙ্গাশ পছন্দ করবেই!
LikeLike
apnar ginni e mone hoy thik boleche. nodir pangas eto boro hole dekhte eto sundor hoar kotha na….chamra puru hobe r prochur tel hoar kotha (jodio mach khub valo chini temon na)
tobe ekta kotha boli…ekbar (souvaggo/dur) vaggo hoyecilo nodir bisaal ek pangas khaoar…..macher porote porote tel hoye bicchiri gondho hoye gecilo ota..tai nodir bisaall pangas dekhe lovee pore kenar age vebe dekha utchit. nitanto e kinte hole oneker sathe share e kinle valo hoy…..
LikeLike
ধন্যবাদ নীল দর্পন বোন।
হা, আমি ভাল মাছ চিনি না। মাছ বিক্রেতা যা বলে তা বিশ্বাস করি। বাসায় এনে ব্যাটারীর ঝারি! এই হচ্ছে কোপাল! কোপালে যা লিখা থাকে তা হবেই।
মাছ টাতে গন্ধ বা বাজে কোন ঘ্রান ছিল না। থাকলে দুঃখ পেতাম। যাই হোক, কয়েকদিনেই খেয়ে শেষ করে ফেলেছি। আমার বুলেট বেশ পছন্দ করেছে!
শেয়ারে মাছ কেনা এখন আর হয়ে উঠে না। আগে দেখতাম মাছ কেটে বিক্রি করছে, এখন চোখে পড়ে না।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
নতুন মডেলের কী খবর?
LikeLike
হা হা হা…।।
নুতন মডেলের জন্য আমিও অপেক্ষা করছি!
শুভেচ্ছা।
LikeLike
পাঙ্গাস মাছ আমি সব সময় ডিপ ফ্রাই করি, অতিরিক্ত তেল বাহির করে ফেলার জন্য, তবে মাছ ভাজার আগে লবণ, হলুদ, রশুন বাটা ও লেবুর রস দিয়ে ম্যারিনেট করে নেই (আমি যে কোন মাছের ক্ষেত্রেই এই কাজটা করি) এতে মাছের আঁশটে গন্ধটা থাকে না ।
LikeLike
পিংব্যাকঃ এক নজরে সব পোষ্ট (https://udrajirannaghor.wordpress.com) | BD GOOD FOOD
আমি রান্না করেছি ভালো হয়েছে
LikeLiked by 1 person