গ্যালারি

রেসিপিঃ এঁচোড় (কাঁচা কাঁঠালের তরকারী)


অনেক দিন ধরে কাঁচা কাঁঠাল দিয়ে তরকারী খাবার ইচ্ছা হচ্ছিলো। কাঁচা কাঁঠাল যোগাড় করা আমাদের মত লোকের পক্ষে সহজ কাজ নয়! বাজারে তেমন চোখে পড়ে না আবার নিজদের গাছ নেই যে, কিছু একটা করবো। এমনি অবস্থায় একদিন আমার ব্যাটারী জানালেন, তিনি কাঁচা কাঁঠাল পেয়েছেন এবং সেটা আমাদের ধরা বুয়ার ভাই কাওরান বাজার থেকে কিনে এনেছেন। কাঁঠাল দেখে আমি আবাক। বেশ বড় এবং শক্ত। গত কয়েক বছরে এই সিজনে একবার ছোট ভাইয়ের বাসায় একদিন কাঁঠাল তরকারী খেয়েছিলাম। আমার কাছে বেশ ভাল লেগেছিল।

কাঁঠাল পেয়ে আমাদের শ্রদ্বেয়া সিদ্দিকা কবিরের বই নিয়ে বসলাম। দেখা যাক সেখানে কাঁঠাল দিয়ে কোন সহজ রেসিপি আছে কিনা। আমার ইচ্ছা ছিল গরুর গোসত কিংবা শুঁটকী দিয়ে কিছু একটা রান্না করার। কিন্তু বই খুজতেই পেয়ে গেলাম একটা সহজ রান্না, এঁচোড়। উপকরনের সব কিছুই ঘরে আছে, শুধু চিংড়ি মাছ এবং সেটা ঘরে আছে। ব্যস, আর কি করা। আমরা লেগে গেলাম।

উপকরনঃ
– কাঁচা কাঠালঃ হাফ কেজি (কাঁঠাল কাটা সহজ নয়, হাতে তেল দিয়ে কাটতে হয়)
– চিংড়ি মাছঃ হাফ কাপ
– পেঁয়াজ কুঁচিঃ মাঝারি দুই তিনটের
– মরিচ গুড়াঃ হাফ চা চামচ (ঝাল বুঝে)
– হলুদ গুড়াঃ হাফ চা চামচ
– জিরা গুড়াঃ দুই চিমটির সামান্য বেশী
– রসুন বাটাঃ ১ টেবিল চামচ
– আদা বাটাঃ ১ টেবিল চামচ
– এলাচিঃ ৪/৫ টা
– দারুচিনিঃ ৪/৫ পিস
– কাঁচা মরিচঃ ৪/৫টা (ঝাল বুঝে)
– লবনঃ পরিমান মত
– তেলঃ সয়াবিন তেল হাফ কাপ
– পানিঃ পরিমান মত
– পাঁচফোড়ন গুড়াঃ এক চা চামচের কম

– হাফ চামচ চিনি (এটা না দিলেও চলে তবে দিলে স্বাদ বেড়ে যায় এবং তরকারীর মলিনতা বাড়ে)

(আলু পরিহার করা হয়েছে। মশলাপাতি আমাদের অনুমান এবং অভিজ্ঞতার আলোকে দেয়া হয়েছে)

প্রনালীঃ

হাতে তেল লাগিয়ে কাঁঠাল কাটা হয়েছে। এবং সিদ্ব করে নেয়া হয়েছে। শুনেছি এভাবে সিদ্ব করে সাধারন ফ্রীজে কাঁঠাল অনেক দিন রেখে দেয়া যায়, প্রয়োজনে বের করে তরকারী রান্না করা যায়।


কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি লবন যোগে ভেঁজে তাতে কাঁচা মরিচ, এলাচ এবং দারুচিনি দিয়ে দিন। ভাঁজা শেষে পেঁয়াজ কুচি হলদে এবং নরম হয়ে যাবে।


এবার আদা, রসুন বাটা দিয়ে আরো কিছুক্ষণ ভেঁজে তাতে চিংড়ি মাছ দিয়ে দিন।  এবং ভাঁজুন।


এবার হলুদ, মরিচ এবং জিরা গুড়া দিন। ভাল করে মিশিয়ে নিন।


এক কাপ পানি দিন এবং কষাতে থাকুন। ভাল করে কষিয়ে তেল উপরে উঠিয়ে নিন।


ঝোলর স্বাদ দেখে নিন।


এবার সিদ্ব করে রাখা কাঁঠাল দিয়ে দিন।


ভাল করে মিশিয়ে নিন। (এখানে হাফ চামচ চিনি ছিটিয়ে দিন)


এক কাপ পানি দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ডেকে রাখুন, মিনিট ২০ মাঝারি আঁচে রাখুন। মাঝে মাঝে নেড়ে দিতে ভুলবেন না। চুলায় কিছু দিয়ে রান্নাঘর ত্যাগ করা উচিত বলে আমি মনে করি না, মনে রাখি সব কিছুই নিয়ম মাফিক চলবে তা নয়! পানি শুকিয়ে যেতে পারে, লাগলে পানি দিতে পারেন।


কাঁঠালের বিচি এবং আঁশ ভাল করে নরম হল কিনা দেখে নিন। মশলাপাতি কাঁঠালে প্রবেশ করলো কিনা তাও দেখে নিন।


এবার পাঁচফোড়নের গুড়া ছিটিয়ে দিন। এবং ভাল করে মিশিয়ে নিন।


এবার ফাইন্যাল লবন দেখুন। লাগলে দিন, না লাগলে ওকে বলুন। এঁচোড় এ সাধারণত ঝোল রাখা হয় না, বেশ শুকিয়ে ফেলা হয়। খুন্তি দিয়ে নাড়িয়ে নামিয়ে ফেলুন।


ব্যস পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত।


ছবি দেখে আপনাদের কেমন লাগছে জানি না, তবে স্বাদ হয়েছিল অপূর্ব। আমার রান্না টেষ্টার বুলেট এই কাঁঠালের তরকারী খেয়ে জানিয়েছে, অসম!

কাঁঠালটি বেশ বড় এবং আরো অনেক তরকারী করা যাবে। আমার ইচ্ছা আছে গরুর গোসত দিয়ে একটা আইটেম এবং শুঁটকী দিয়ে আরো একটা আইটেম রান্না করবো। আশা করি আপনাদের তা দেখাতে পারবো।

সবাইকে শুভেচ্ছা।

কৃতজ্ঞতাঃ মানসুরা হোসেন

20 responses to “রেসিপিঃ এঁচোড় (কাঁচা কাঁঠালের তরকারী)

  1. আমার এক বন্ধুর সাথে মাত্র এঁচোড় নিয়ে কথা শেষ করেই দেখলাম আপনার এই রেসিপি, সত্যি খেতে ইচ্ছে করছে! এখন আমি কাঁচা কাঠাল কোথায় পাই? ভাইয়ের কাছে শুনলাম টেকনাফে আমাদের সব গাছের কাঁঠাল পাকার পথে, দেখা যাক সংগ্রহ করতে পারলে আপনার রেসিপি কাজে লাগাবো।

    Like

    • হা হা হা… ধন্যবাদ বোন। একেই বলে মিরাকল! হা হা হা… আমিও আপনার স্ট্যাটাস এ গিয়ে এই আলোচনা দেখলাম। হা, এখন কাঁচা কাঁঠাল পাওয়া বেশ দুরহ হবে। আমাদের এটাও বিচি শক্ত হয়ে যাবার পথে ছিল। আরো কাঁচা হলে ভাল হত।

      শুভেচ্ছা। ইচ্ছা থাকলে একদিন খেইয়ে ফেলবেনই!

      Like

  2. কাঠালটি তো বেশ পোক্ত হয়ে গিয়েছে। এখন কচি কাঠাল পাওয়া যাবেনা। কচি কাঠাল খেতে হয় বৈশাখের প্রথম দিকে। আমি যেটা রান্না করেছিলাম সেটার বিচির উপরের খোসাও হয়নি।
    আপনি গরুর চর্বীওয়ালা হাড় সহ গোস্ত, ও চিংড়ী শুটকি দিয়ে রান্না করে দেখেন।

    আমিও ডীপ ফ্রীজে কাঠাল সেদ্ধ করে রেখেছি।

    Like

    • ধন্যবাদ রান্নাতো বোন। হা, এটাই হচ্ছে অভিজ্ঞতা। যাই হোক রান্না যখন শিখে ফেলেছি তখন বিচির উপরে খোসা হয় নাই এমন একটা কাঁঠাল আগামী সিজনে খাব। এত চমৎকার তরকারী আমরা খুব কম খাই কেন? নাকি কাঁঠাল পাকা খাবার জন্যই কাঁচা খাওয়া হয় না!

      গোসত এবং শুঁটকী দিয়ে রান্নার জন্য কাঁঠাল রেখেছি। আশা করি রান্না করে ফেলবো।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  3. Achor(kacha kathaler torkari) amar a jibone bes koyek bar kheyechi. Kacha kathaler salpota abong rannar ghamelar’r karone hoyto poribare a khabartir( sussadhu holeo) prochalon kume geche.Aj anekdinpor ACHOR ranna dekhe satti-i give pani alo.Amar chesta thakbe achirei ACHOR khaoer chesta karbo.UDRAZI BHAI ke anek anek dhannabad uncomon tasty ACHOR’er jannoy..Shaon Chowdhury

    Like

    • ধন্যবাদ শাওন ভাই। আপনার কমেন্ট দেখে খুব আনন্দিত হয়েছি। আপনি কমেন্ট করে এই ব্লগ ও আমাদের আনন্দ দিলেন, আমি আপনাকে সন্মান করি। কাঁঠালের এঁচোড় আসলে আমাদের বেশী খাওয়া হয় না, এখন মনে হচ্ছে বছরে দুই একবার খেতেই হবে।

      আপনি রান্না ভালবাসেন এবং রান্না করতে পারেন সেটা আমি জানি, রান্না নিয়ে আপনার আর সোহাগ ভাইয়ের সাথে আমার জমে ভাল। আমাদের আরো দেশীয় রান্না নিয়ে কথা বলতে হবে। দেশের হারিয়ে যাওয়া রান্না গুলো তুলে আনতে হবে।

      শুভেচ্ছা। ভাল থাকুন। মাঝে মাঝে এসে কমেন্ট করে যাবেন।

      Like

  4. কাচা পাকা উভয় রকম কাঠালই আমার পছন্দ। আপনার দেওয়া ছবি দেখে খেতে মন চাইছে। কচি কাঠাল আর বুটের ডাল দিয়ে কাবাব বানালে পুরো গোস্তের স্বাদ আসে। আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে আগামী বার করে দেখতে পারেন।

    Like

    • ধন্যবাদ বোন।
      আমি এখন আর পাকা কাঁঠাল খেতে চাই নাই। কাঁঠাল নিয়ে আমার বেশ কিছু লেখা নানান ব্লগে আছে, আমি নিজেও একজন কাঁঠাল প্রেমিক। কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল, এই ফলের তুলনা চলে না। এক কাঁঠাল কত জনে খায়। কাঁঠালের কিছুই ফেলনা নয়।

      কচি কাঠাল আর বুটের ডাল দিয়ে কাবাব বানালে পুরো গোস্তের স্বাদ আসে। আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে আগামী বার করে দেখতে পারেন। – আপনার এই রেসিপি আমার চোখের সামনে ভাসছে। আমি বুঝতে পারছি। আমার নোট বইতে লিখে নিলাম। সুযোগ পেলেই রান্না করে ফেলবো।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  5. ওরে, আমার যে ক্ষিদা লেগে গেল। দারুণ প্রিয় এই তরকারি। এই বছর খাওয়া হয়নি। প্রতিবছর বড় আপু ফেনী থেকে রান্না করে পাঠায়। ভাইয়া, আপনি একেকটা রেসিপি দেন আর স্মৃতি জেগে ওঠে।

    Like

    • ধন্যবাদ ছোট বোন।
      আসলে আমি চাই আমাদের ছোট বেলায় কিংবা আমরা যা খাই তার সব রেসিপি আমাদের সাইটে উঠে আসুক। কোন না কোন দিন আমাদের কাজে লাগবে। না খেতে পারলেও ছবি দেখে মনে পড়বে। সে জন্য আমাদের এই প্রচেষ্টা।

      হা, শহরে এখন আর এমন রান্না হয় না। কাঁচা কাঁঠাল কে এত কষ্ট করে কাটবে। রান্নাঘরে কে এত সময় দিবে? তবু আমাদের নুতুন প্রজন্মকে খাইয়ে চিনিয়ে দিতে হবে। আমার ছেলে এটা খেয়েছে, সে নিশ্চয় অনেকদিন মনে রাখবে।

      সামনে আরো মজার রেসিপি আছে। আমি বাড়ী বা গ্রামে গেলে সেই সকল রেসিপি বা রান্না শিখে আসবো।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  6. মামির দেশ মেহেরপুর ওনাদের দেশে এই সিজনে প্রতিদিন কাচা কাঠালের তরকারী রান্না হয়। চার দিন ছিলাম সত্যি অনেক মজাদার …আপনার ছবি দেখে লোভ লাগলো অনেক

    Like

    • ধন্যবাদ বোন।
      আপনাকে দেখে হিংসা লাগে! ইস, এমন করে যদি দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াতে পারতাম! আপনি ইতিহাস নিয়ে আছেন, সেই জায়গা গুলোতে কি কি রান্না হয় বা তারা কি কি খায় সেই সকল বিষয় একদম আপনার ভ্রমনে অনুপস্থিত! হা হা হা… যা খেয়েছেন তার দুই একটা ছবি চাই! আগামীতে খাবার দাবারে কিছুটা জোর চাই!

      শুভেচ্ছা।

      Like

  7. কাচা কাঁঠাল জিনিসটা আমার অনেক প্রিয়।

    আমাদের পাশের বাসার এক দাদি ভাল রান্না করতে পারেন।

    ফারহানা ফেরদৌসি আন্টির আইডিয়াটা ভাল লেগেছে। জিনিসটা হেলদি হত। একদিন ট্রাই করে দেখতে পারেন। আর অবশ্যই আমাকে জানাবেন।

    শুভেচ্ছা

    Like

    • ধন্যবাদ ভাতিজা,
      এটা আসলে অভিজ্ঞ হাতের রান্না হলেই ভাল। আমাদের দাদী/চাচীরাই এমন রান্না ভাল করেন। সবাই সব কিছু ভাল রান্না করতে পারে না! তবে অভিজ্ঞতা যে কোন রান্নাকে ভাল করে তুলে।

      ফারহানা বোনের আইডিয়া আমার কাছেও ভাল লেগেছে। রেসিপিটা আমার চোখের সামনে চলে এসেছে। আশা করি আগামীতে চান্স পেলে একদিন টেষ্ট করেই ফেলবো।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  8. অনেকদিন আগে একবার কাচা কাঠাল দিয়ে শুটকী রান্না খেয়েছিলাম । আজ অনেকদিন হল কাচা কাঠাল খাওয়া হয় নি । নিজের বাড়িতে কাঠালের গাছ না থাকলে এটা পাওয়া দুষ্কর । সুন্দর এবং সহজ রেসিপি শিখলাম ।ধন্যবাদ । হাতের কাছে কখনো কাচা কাঠাল পেলে রান্না করবো ।

    Like

  9. অনেকদিন আগে একবার কাচা কাঠাল দিয়ে শুটকী রান্না খেয়েছিলাম । আজ অনেকদিন হল কাচা কাঠাল খাওয়া হয় নি । নিজের বাড়িতে কাঠালের গাছ না থাকলে এটা পাওয়া দুষ্কর । সুন্দর এবং সহজ রেসিপি শিখলাম ।ধন্যবাদ । হাতের কাছে কখনো কাচা কাঠাল পেলে রান্না করবো ।

    Like

  10. পিংব্যাকঃ এক নজরে সব পোষ্ট (https://udrajirannaghor.wordpress.com) | BD GOOD FOOD

  11. এচোড় রান্নার বর্ননাটা দারুন হয়েছে, এভাবে রান্না করেছিলাম, মেসের ৮ জনকে ফ্রি খাওয়ানো হয়েছিল, কোন মাছ দেওয়া হয়নি অথচ রান্নার খুব তারিফ হয়েছিল

    Liked by 1 person

  12. দাদা একটা প্রসন, বোলছিলাম কাঠাল প্রসার কুকারে কটা সিটি দেবো?

    Like

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]